বিষয়ভিত্তিক আয়াতঃ উপমার সম্পর্কে কিছু তথ্য
পবিত্র কোরআনের প্রায় ৪০ জায়গায় এ ধরনের উপমা ব্যবহৃত হয়েছে। (আমসালু ফিল কোরআনিল কারিম : ৫৭)।
উপমা দেয়া হয়েছে; কিন্তু ‘মেসাল-উপমা শব্দ’ ব্যবহার করা হয়নি এ ধরনের উপমাকে সুপ্ত উপমা বলে। সুপ্ত উপমার সংজ্ঞায় জালালুদ্দিন সুয়ুতি বলেন, ‘উপমাব্যঞ্জক শব্দের স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও এ ধরনের বাক্য এমন ভাব প্রকাশ করে, যা উপমার মতোই এবং উপমা ব্যবহারের সম-উপকার দেয়।’ (আল ইতকান : ২/১৬৭)।
স্পষ্ট উপমা (আমসালুল মুসাররিহা), সুপ্ত উপমা (আমসালুল কামিনাহ), বহুল প্রচলিত কথা-প্রবাদ-বচন (কওলুল মুহাককি)। (মাবাহেস : ৪৮)।
এক নজরে আল-কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে উদাহরণ-উপমা ও যুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনঃ
উপমা তুলে ধরার নির্দেশঃ
১.সূরা ইয়াসিন : ১৩
২.সূরা ইউনুস : ২৪
জ্ঞানীদের জন্যই উপমাঃ
১.আল আনকাবুত : ৪৩
২.সূরা ইবরাহীম : ২৫
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নূরের উপমাঃ
(সুরা নূর : আয়াত ৩৫)
কাফিরদের উপমা অন্ধ, বধিরঃ
১. সূরা রাদ : ১৬
২. সূরা আনফাল : ২২
৩. সূরা বনি ইসরাইল : ৭২
৪. সূরা আরাফ : ১৭৯
৫. সূরা হাজ্ব : ৪৬
৬. সূরা বাকারা, আয়াত ১৭-২০
কাফিরদের ব্যপারে অন্যান্য উপমাঃ
১. ইশাইয়া ৪৫ : ৯-১০
২. সূরা আল-বাকারা: ১৭১
৩. সূরা ইবরাহীম : ১৮
৪. সূরা আল-আ’রাফ: ৪০
মুশরিকদের উপমাঃ
১.সূরা আল-হাজ্জ: ৩১
২.সূরা আল-আনকাবুত: ৪১
৩.সূরা আর-রা’দ: ১৪
বহু প্রভু থাকলে সব ধ্বংস হয়ে যেতঃ
১. সূরা বনি ইসরাইল : ৪২
২. সূরা আম্বিয়া : ২২
৩. সূরা নিসা : ৮২
ওয়াদা ভঙ্গকারীর উপমাঃ
(সূরা ইউনুস: ২২-১৩)
রিয়াকারীর উপমাঃ
(সূরা আল-বাকারা: ২৬৪)
বিপথগামীদের উপমাঃ
(সূরা আল-আনআ’ম: ৭১)
মশার উপমাঃ
(সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৬)
আল্লাহর পথে ব্যয়ের উপমাঃ
(সূরা বাকারা, আয়াত ২৬১)
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
উপমার দৃষ্টান্তঃ
۞ আয়াত ১ :
‘আল্লাহ তাআলা নিঃসন্দেহে মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। প্রকৃতপক্ষে যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল এবং সঠিক। আর যারা অবিশ্বাসী তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহর মতলবই বা কি ছিল। এ দ্বারা আল্লাহ তাআলা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে সঠিক পথও প্রদর্শন করেন। তিনি অনুরূপ উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন কাকেও বিপথগামী করেন না। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৬)
۞ আয়াত ২ :
“পবিত্র বাক্য পবিত্র বৃক্ষের মত। যার শিকড় ( জমিনে) সুদৃঢ় ও শাখা-প্রশাখা উর্ধ্বে বিস্তৃত।”
“এই বৃক্ষ প্রতিপালকের নির্দেশে অহরহ ফল দান করে, আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।” (সূরা ইব্রাহীম : ২৪-২৫)
“অসার বাক্যের তুলনা এক অসার বৃক্ষ যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।” (সূরা ইব্রাহীম : ২৬)
۞ আয়াত ৩ :
“তাদের কাছে সেই জনপদের বাসিন্দাদের উপমা তুলে ধরুন।’ (সূরা ইয়াসিন : ১৩)।
۞ আয়াত ৪ :
‘তাদের কাছে দুনিয়ার জীবনের উপমা তুলে ধরুন।’ (সূরা ইউনুস : ২৪)।
শিক্ষা গ্রহণের জন্য উপমা
۞ আয়াত ৫ :
…وَ يَضْرِبُ اللهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
‘এবং আল্লাহ্ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।’[সূরা ইবরাহীম : ২৫]
۞ আয়াত ৬ : আল্লাহর নূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপমা
۞ اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ ۖ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ ۖ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ ۚ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٍ ۗ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
আল্লাহ্ আসমানসমূহ ও যমীনের নূর, তাঁর নূরের উপমা যেন একটি দীপাধার যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত, তা জ্বালানো হয় বরকতময় যায়তূন গাছের তৈল দ্বারা যা শুধু পূর্ব দিকের (সূর্যের আলোকপ্রাপ্ত) নয় আবার শুধু পশ্চিম দিকের (সূর্যের আলোকপ্রাপ্তও) নয়, আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তৈল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; নূরের উপর নূর! আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে হেদায়েত করেন তাঁর নূরের দিকে। আল্লাহ্ মানুষের জন্য উপমাসমূহ বর্ণনা করে থাকেন এবং আল্লাহ্ সব কিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
[আন নূর (আলো) ২৪ঃ৩৫]
۞ আয়াত ৭ : দান-সদকার উপমা
‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ । [সূরা বাকারা, আয়াত ২৬১]
বোধগম্যতার জন্য যুক্তি, উপমা-দৃষ্টান্ত পেশঃ
۞ আয়াত ৮ :
“আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য পেশ করি; জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৩]
۞ আয়াত ৯ :
“মানুষের জন্য আমি এ উদাহরণগুলি পেশ করি, হয়ত তারা চিন্তাভাবনা করবে।” [সূরা হাশর, আয়াত ২১]
রিয়াকারীর উপমা, নিয়ামতের শোকর আদায়ঃ
۞ আয়াত ১০ :
হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করো এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাতকে বরবাদ করে দিয়ো না সেই ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল, কিন্তু এক প্রবল বৃষ্টি তা ধুলে পরিষ্কার করে দিলো। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পাবে না যা তারা উপার্জন করেছে। (সূরা আল-বাকারা: ২৬৪)
ওয়াদা ভঙ্গকারীর উপমাঃ
۞ আয়াত ১১ :
তিনিই তোমাদেরকে জলে ও স্থলে ভ্রমণ করান। যখন তোমরা নৌকায় আরোহণ কর আর তা লোকজনকে নিয়ে অনুকূল হাওয়ায় বয়ে চলে, তারা আনন্দিত হয়। (হঠাৎ) নৌকা তীব্র বাতাসের কবলে পড়ে, আর চতুর্দিক থেকে আসতে থাকে ঢেউয়ের পর ঢেউ। তারা বুঝতে পারে, অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তখন আল্লাহকে ডাকতে থাকে তার ইবাদতে নিঃস্বার্থ হয়ে। ‘যদি তুমি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দাও তবে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।’ অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে বাঁচিয়ে দেন, তখনই তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অনাচারে লিপ্ত হয়। (সূরা ইউনুস: ২২-১৩)
সরলপথে থাকা, নিয়ামতের শোকর আদায়।
۞ আয়াত ১২ :
“তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা আল্লাহ তোমাদের মধ্যে সম্প্রতি স্থাপন করে দিয়েছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁরই অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই। তোমরা এক আগুনের গর্তের কিনারে অবস্থান করছিলে, তা থেকে আল্লাহ তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। (সূরা আলে-ইমরান: ১০৩)
কাফিরদের উপমাঃ
۞ আয়াত ১৩ : কাফেরদের উপমা
‘তাদের উপমা ঐ ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন আগুন তার চারপাশ আলোকিত করল, আল্লাহ তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিলেন এবং তাদেরকে ছেড়ে দিলেন অন্ধকারে। তারা কিছু দেখছে না। তারা বধির-মূক-অন্ধ। তাই তারা ফিরে আসবে না। কিংবা আকাশের বর্ষণমুখর মেঘের ন্যায়, যাতে রয়েছে ঘন অন্ধকার, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎচমক। বজ্রের গর্জনে তারা মৃত্যুর ভয়ে তাদের কানে আঙুল দিয়ে রাখে। আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন। বিদ্যুৎচমক তাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়। যখনই তা তাদের জন্য আলো দেয়, তারা তাতে চলতে থাকে। আর যখন তা তাদের উপর অন্ধকার করে দেয়, তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, অবশ্যই তাদের শ্রবণ ও চোখসমূহ কেড়ে নিতেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা বাকারা, আয়াত ১৭-২০]
۞ আয়াত ১৪ :
“যারা তাদের প্রভু সাথে তর্ক করে তাদের ধ্বংস নিশ্চিত। একটা মাটির পাত্র কি কখনও কুমারের সাথে তর্ক করে? মাটি কি তাকে বলে, “থামো, তুমি ভুল করে বানাচ্ছ!”
۞ আয়াত ১৫ :
“মাটির পাত্রটা কি অভিযোগ করে, “তুমি এত খামখেয়ালি কেন?” কতই না মন্দ (অদ্ভুত) বিষয় এটা, যদি একটা শিশু জন্ম নিয়েই তার বাবা-মাকে প্রশ্ন করে, “আমি জন্ম হলাম কেন? আমাকে এরকম করে জন্ম দিলে কেন?” (ইশাইয়া ৪৫ : ৯-১০)
۞ আয়াত ১৬ :
কাফিরদের উপমা এরূপ, কোন ব্যক্তি এমন কিছু কে আহ্বান করে যারা শুধুমাত্র চীৎকার ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় না। তারা বোবা, বধির ও অন্ধ, কিছুই বুঝে না। (সূরা আল-বাকারা: ১৭১)
۞ আয়াত ১৭ :
যারা তাদের পালনকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তাদের আমলের উদাহরণ হচ্ছে- সেই ছাই ভস্মের মতো যার ওপর দিয়ে প্রবল বাতাস বয়ে যায় ধূলিঝড়ের দিন। তাদের উপার্জনের কোন অংশই তাদের হস্তগত হবে না। (সূরা ইবরাহীম : ১৮)
۞ আয়াত ১৮ :
যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে এবং এগুলো থেকে অহংকার করে, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ বন্ধ। তারা ততোক্ষণ জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না যতোক্ষণ না সুঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করতে পারবে। (সূরা আল-আ’রাফ: ৪০)
۞ আয়াত ১৯ :
(হে রাসূল আপনি) বলুন, যারা মূর্খ ও যারা জ্ঞানী তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ [সূরা যুমার : ৯]
কাফিরদের আমল বরবাদঃ
۞ আয়াত ২০ :
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করবো, তারপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব। (সূরা আল-ফুরকান: ২৩)
বিপথগামীদের উপমাঃ
۞ আয়াত ২১ :
আমরা কি এমন কাউকে আহ্বান করবো, যে আমাদের কোন উপকার কিংবা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না। আমরা কি পেছনের দিকে ফিরে যাব আল্লাহর হেদায়েতের পর, ঐ ব্যক্তির মতো যাকে শয়তান বনভূমিতে বিপথগামী করে দিয়েছে, ফলে সে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে? আর তার সহচররা তাকে পথের দিকে ডেকে বলছে। এসো আমাদের কাছে। (সূরা আল-আনআ’ম: ৭১)
কাফিরদেরকে অন্ধ, বধির এর সাথে উপমাঃ
۞ আয়াত ২২ :
…قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَ الْبَصِيْرُ…
…‘বলুন,‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান?’…[সূরা রাদ : ১৬]
۞ আয়াত ২৩ :
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ
‘আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির ও মূক যারা কিছুই উপলব্ধি করে না।’[সূরা আনফাল : ২২]
۞ আয়াত ২৪ :
وَ مَنْ كَانَ فِيْ هٰذِه أَعْمَى فَهُوَ فِى الْآخِرَةِ أَعْمَى وَ أَضَلُّ سَبِيْلًا
‘আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।’[সূরা বনি ইসরাইল : ৭২]
۞ আয়াত ২৫ :
…فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَ لكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِي الصُّدُوْرِ
…‘বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়,বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।’ [সূরা হাজ্ব : ৪৬]
কাফেররা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট
۞ আয়াত ২৬ :
…لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَ لَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَ لَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُولَائِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَائِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
…‘তাদের হৃদয় আছে,কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না,তাদের চোখ আছে,তা দিয়ে দেখে না এবং তাদের কান আছে,তা দিয়ে শোনে না,এরাই পশুর ন্যায়,বরং তারা তার চেয়েও নিকৃষ্ট। তারাই গাফেল।’
[সূরা আরাফ : ১৭৯]
মুশরিকদের উপমাঃ
۞ আয়াত ২৭ :
‘তারা কি অন্যের দ্বারা সৃষ্ট নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা?’ [সূরা তূর : ৩৫]
۞ আয়াত ২৮ :
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করলো, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে ছিল। অতপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করলো। (সূরা আল-হাজ্জ: ৩১)
۞ আয়াত ২৯ :
যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অপরকে অভিভাবক বানায় তাদের উদাহরণ মাকড়সার মতো। সে ঘর বানায়। আর সব ঘরের মধ্যে একমাত্র মাকড়সার ঘরই অত্যন্ত দুর্বল। (সূরা আল-আনকাবুত: ৪১)
۞ আয়াত ৩০ :
সত্যের আহ্বানে একমাত্র তাঁরই এবং তাঁকে ছাড়া তারা যাদেরকে ডাকে, এরা তাদের কোন কাজে আসে না। ওদের দৃষ্টান্ত এমন যে, কেউ দু’হাত পানির দিকে প্রসারিত করলো, যেন পানি তার মুখে পৌঁছে যায়, অথচ পানি কখনোই তার মুখে পৌঁছায় না। কাফিরদের যতো আহ্বান তা সবই বিফল। (সূরা আর-রা’দ: ১৪)
আল্লাহ্ ব্যতীত একাধিক স্রষ্টা থাকলে কি হত?
۞ আয়াত ৩১ :
…لَوْ كَانَ فِيْهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَا…
…‘যদি এই উভয়ের মধ্যে (আকাশ ও পৃথিবীতে) আল্লাহ ব্যতীত বহু উপাস্য থাকত তা হলে উভয়ই (আকাশ ও পৃথিবী) ধ্বংস হয়ে যেত’…। [সূরা আম্বিয়া : ২২]
۞ আয়াত ৩২ :
…وَ لَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ لَوَجَدُوْا فِيْهِ اخْتِلَافاً كَثِيْرًا
‘…যদি তা (কুরআন) আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও নিকট থেকে আসত,তবে তারা তাতে অনেক অসংগতি পেত।’ [সূরা নিসা : ৮২]
۞ আয়াত ৩৩ : নেককারদের উপমা
আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন খরচ করে, তখন অপব্যয়ও করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং এ দুয়ের মাঝামাঝি মধ্যপন্থ অবলম্বন করে।’ (সূরা ফুরকান : ৬৭)।
۞ আয়াত ৩৪ : জাহান্নামীদের শাস্তির বর্ণনা
তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ১৫]
পুনঃরুত্থান
۞ আয়াত ৩৫ :
فَسَيَقُوْلُوْنَ مَن يُّعِيْدُنَا قُلِ الَّذِيْ فَطَرَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ
‘তারা বলবে,কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে? বলুন, তিনিই যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন।’
[সূরা বনি ইসরাইল : ৫১]
۞ আয়াত ৩৬ :
فَانْظُرْ إِلَى آثَارِ رَحْمَتِ اللهِ كَيْفَ يُحْيِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ ذٰلِكَ لَمُحْيِ الْمَوْتَى وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ
‘আল্লাহর অনুগ্রহের ফল সম্পর্কে চিন্তা কর,কীভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর এটাকে পুনর্জীবিত করেন,এভাবেই আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন,কারণ,তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ [সূরা রূম : ৫০]
۞ আয়াত ৩৭ :
وَ يَقُوْلُ الْإِنْسَانُ ءَإِذَا مَامِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا أَوَ لَا يَذْكُرُ الْإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَ لَمْ يَكُ شَيْئًا
‘মানুষ বলে,‘আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব?’ মানুষ কি স্মরণ করে না যে,আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না?’ [সূরা মারইয়াম : ৬৬-৬৭]
۞ আয়াত ৩৮ :
أَ يَحْسَبُ الْإِنْسَانُ أَ لَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهُ بَلَى قَادِرِيْنَ عَلَى أَنْ نُّسَوِّيَ بَنَانَهُ
‘মানুষ কি মনে করে যে,আমি তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারব না? বস্তুত আমি তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’ [সূরা কিয়ামাহ : ৩-৪]
হিকমতের সাথে সদুপদেশ
۞ আয়াত ৩৯ :
أُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত (প্রজ্ঞা) ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ [সূরা বাকারা : ২৫৮]
সৃষ্টিজগতের নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করাঃ
۞ আয়াত ৪০ :
أَفَلَا يَنْظُرُوْنَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ وَ إِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ وَ إِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ وَ إِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
‘তারা কি উটের দিকে লক্ষ্য করে না যে,কীরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে,আর আসমানের দিকে যে কীরূপে সুউচ্চ করা হয়েছে, আর পর্বতমালার দিকে যে, কীরূপে দাঁড় করানো হয়েছে, আর যমিনকে যে, কীরূপে সম্প্রসারিত করা হয়েছে?’ [সূরা গাশিয়াহ্ : ১৭-২০]
۞ আয়াত ৪১ :
إِنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَ الْأَرْضِ وَ اخْتِلَافِ الّيْلِ وَ النَّهَارِ وَ الْفُلْكِ الَّتِيْ تَجْرِيْ فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَ مَا أَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَ بَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَّ تَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ وَ السَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَ الْأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে,রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে,যা মানুষের হিত সাধন করে,তা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে,আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে বারি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে,বায়ুর দিক পরিবর্তনে,আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ [সূরা বাকারা : ১৬৪]
۞ আয়াত ৪২ :
قُلْ لَّوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُوْلُوْنَ إِذًا لَّابْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيْلًا
‘বলুন,‘যদি তাঁর সাথে আরো উপাস্য থাকত,যেমন তারা বলে,তবে তারা আরশ-অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অন্বেষণ করত।’ [সূরা বনি ইসরাইল : ৪২]
পবিত্র কুরআনে আরও বিভিন্ন আয়াতে এরূপ বর্ণিত আছেঃ
۞ আয়াত ৪৩ :
“তারা কি চিন্তা করে না’ (أَفَلَايَتَفَكَّرُوْنَ),
۞ আয়াত ৪৪ :
“তারা কি গবেষণা করে না’ (أَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ),
۞ আয়াত ৪৫ :
“তারা কি লক্ষ্য করে না’ ( أَلَمْيَرَوْا),
۞ আয়াত ৪৬ :
“তারা কি (সৃষ্টি প্রক্রিয়া) অবলোকন করে না’ (أَفَلَايَنْظُرُوْنَ)
۞ আয়াত ৪৭ :
“তোমরা কি বোঝ না’ (أَفَلَا تَعْقِلُوْنَ),
۞ আয়াত ৪৮ :
“এতে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবান জাতির জন্য’ (لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ)
۞ আয়াত ৪৯ :
‘অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শনসমূহ বিবৃত করেছি’ (فَصَّلْنَا الآيَاتِ لِّقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ)।