আয়াতঃ
তিনি প্রথম, তিনি শেষ,তিনি প্রকাশ্য,তিনি গোপন। এবং তিনি সব কিছু জানেন। (সূরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)
শ্যাইখ আব্দুল,হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী আলাইহির রহমাতু অর রিদ্বওয়ান “মাদারিজুন নবুওয়াত” এর ভূমিকায় লিখেছেন যে, এই আয়াত শরীফে আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসাও রয়েছে আবার রসূলে আকরাম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসাও রয়েছে। (শানে হাবীবুর রহমান, পৃঃ ১৭)
-= *ব্যাখা* =-
উক্ত আয়াত শরীফে পাঁচটি গুনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে: (১) প্রথম (২) শেষ (৩) প্রকাশ্য (৪) গুপ্ত (৫) তিনি সব কিছু জানেন।
*প্রথম* বলা হয়েছে এই জন্যই যে, তাঁর নূরকে সর্ব প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে। নবী করীম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “সর্ব প্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
আরো একটি কারণ হচ্ছে এই যে, সর্ব প্রথম আমাদের নবীজীকে নবী বানানো হয়েছে। নবী করীম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি ওই সময়েও নবী ছিলাম যে সময় (হযরত) আদম মাটি ও পানির মধ্যে ছিলেন।
*শেষ* বলার কারণ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে সর্ব শেষ নবী হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আর তাঁকে সর্ব শেষ আসমানী কিতাব “আল ক্বুরআন” দান করেছেন।
-= *ব্যাখা* =-
রসূলে আকরাম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে *”প্রকাশ্য”* বলা হয়েছে এই জন্যই যে, তিনি সকলের নিকটে প্রকাশ্য। তাঁকে মুসলমানও চেনে,কাফিরও চেনে; চন্দ্রও চেনে, সূর্যও চেনে, যমীনও চেনে, আসমানও চেনে;এক কথায় সমস্ত বস্তু চেনে যে, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্ তা’আলার রসূল। কিন্তু কাফিররা চেনা ও জানা সত্ত্বেও ঈমান নিয়ে আসেনি। আল্লাহ্ তাআলা ক্বুরআন মজীদে ইরশাদ করেছেন, “তারা নবীকে ঠিক তেমনই চেনে, যেমন নিজেদের ছেলেদেরকে চেনে।”
*”গুপ্ত”* বলার কারণ হচ্ছে এই যে, তিনি বাহ্যিকভাবে মানুষ হলেও, আমাদের মতো মানুষ নন। তাঁকে আল ক্বুরআনে “নূর” বলা হয়েছে।হাদীস শরীফে এসেছে, রসূলে করীম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, “তোমরা আমার মতো কিভাবে হতে পারো? আমাকে আমার প্রতিপালক পানাহার করান।”
-= *ব্যাখা* =-
নবী করীম স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, *”তিনি সব কিছু জানেন”*
এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেলো, যা কিছু হয়েছে আর যা কিছু হবে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে সব কিছু অবগত করে দিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে যে, *হুজুর স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদি সৃষ্টি থেকে জান্নাতীদের জান্নাতে এবং জাহান্নামীদের জাহান্নামে পৌঁছানো পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় বস্তুর বর্ণনা প্রদান করেছেন।*
(বুখারী,১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৫৩; মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯০)
আরো একটি হাদীসে হুজুর বলেন যে, *আল্লাহ্ তাআলা আমার সামনে গোটা পৃথিবীকে উপস্থাপন করে দিয়েছেন। ফলতঃ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, সমস্ত বিষয়াদি আমি এমন ভাবে অবলোকন করছি যেন আমি নিজের হাতের তালুকে দেখছি।*
(আল মাওয়াহিব, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৫৯)