আল্লাহ তা’আলা যে উদ্দ্যেশে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রশ্ন: “লাও লাকা লা মা খালাকতুল আফলাক” (হে রাসূল,
আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম
না) – এই হাদীসে কুদসী সম্পর্কে বিজ্ঞ উলামায়ে দ্বীন ও
শরীয়তের মুফতীবৃন্দের অভিমত কী? এটি কোন্
হাদীসগ্রন্থে বিদ্যমান? রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কারণেই
সৃষ্টিকুলের উৎপত্তি হয়েছে, এ কথা কি সত্য? এই
রওয়ায়াতের সমর্থনে আরও আহাদীস আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, মহানবী (দ:)-এর কারণেই হযরত আদম (আ:) ও সমগ্র
জগতের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি না হলে আরশ ও ফরশ, লওহ ও
কলম, বেহেশত ও দোযখ, গাছ ও পাথর এবং অন্যান্য সকল
সৃষ্টি অস্তিত্ব পেতো না। এর সমর্থনে অনেক হাদীস
বিরাজমান।

হাদীস নং-১ : হাকিম নিজ ‘মোসতাদরেক’, বায়হাকী তাঁর
‘দালাইল আন্ নবুওয়া’, তাবরানী নিজস্ব ‘কবীর’, আবূ নুয়াইম
তাঁর ‘হিলইয়া’, এবং ইবনে আসাকির নিজ
‘তারিখে দিমাশক’ পুস্তকে উদ্ধৃত করেন হযরত আমীরুল
মো’মেনীন ফারুকে আ’যম (রা:)-এর বাণী: “হুযূর পূর নূর (দ:)
বলেন যে মহান আল্লাহ বলেছেন, আদম (আ:) যখন গন্দুম
খেলেন, তখন তিনি আরয করেন, এয়া আল্লাহ! মোহাম্মদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়াস্তে আমায়
মাফ করুন। এমতাবস্থায় আল্লাহ বলেন, ওহে আদম!
তুমি কীভাবে তাঁর কথা জানলে যেহেতু
আমি তাঁকে এখনো সৃষ্টি করি নি? আদম (আ:) উত্তর দেন,
এয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে সৃষ্টি করে আমার মাঝে রূহ
ফোঁকার পরে আমি মাথা তুলে দেখতে পাই
আরশে লেখা রয়েছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ (দ:)’। তাই আমি বুঝতে পারি যে আপনার
সবচেয়ে প্রিয় কারো নাম-ই আপনার নামের
পাশে আপনি যুক্ত করেছেন। অতঃপর আল্লাহ বলেন,
ওহে আদম! তুমি সত্য বলেছ। নিশ্চয় মহানবী (দ:) আমার
সবচেয়ে প্রিয়ভাজন, আর তাই তুমি যখনই তাঁর অসিলায়
আমার কাছে চেয়েছ, তখনই আমি তোমায় ক্ষমা করেছি।
রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না
।” (ইমাম সুবকী কৃত ’আশ্ শিফাউস্ সিকাম’
এবং শেহাবউদ্দীন খাফাজী প্রণীত ‘নাসীম আর-রিয়াদ’
বইগুলোতেও বর্ণিত)
হাদীস নং-২ : হাকিম তাঁর ‘মোসতাদরেক’ গ্রন্থে এবং আবূ
শায়খ নিজ ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী’ পুস্তকে হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন,
যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ:)-কে বলেছেন,
ওহে ঈসা! মহানবী (দ:)-এর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার
উম্মতকেও তা করতে বলো। রাসূলুল্লাহ (দ:)
না হলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত
বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না ।” (ইমাম তাকিউদ্দীন
সুবকী রচিত ‘শিফাউস্ সিকাম’ ও শায়খুল ইসলাম আল-
বুলকিনী প্রণীত ‘ফতোওয়া’ এবং ইবনে হাজর রচিত ‘আফদাল
আল-কুরআন’ গ্রন্থগুলোতেও উদ্ধৃত)
হাদীস নং-৩ : ইমাম দায়লামী নিজ ‘মুসনাদ আল-ফেরদউস’
কেতাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)
থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “রাসূলে খোদা (দ:)
বলেছেন যে হযরত জিবরীল আমীন (আ:) তাঁর কাছে আসেন
এবং উদ্ধৃত করেন আল্লাহর বাণী, ‘আমি (খোদা স্বয়ং)
আপনাকে (রাসূল-এ-পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লামকে) সৃষ্টি না করলে বেহেশত
বা দোযখ সৃষ্টি করতাম না’।”
হাদীস নং-৪ : ইবনে আসাকির উদ্ধৃত করেন হযরত সালমান
ফারিসী (রা:)-কে, যিনি বলেন: “হযূর পূর নূর (দ:)-এর কাছে
জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী,
‘(হে রাসূল) আপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই
আমি সৃষ্টি করি নি। আমি বিশ্বজগত ও এর মধ্যে যা কিছু
আছে তার সবই
সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আপনার মহান
মর্যাদা সম্পর্কে। আমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না,
যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম ’।”
হাদীস নং-৫ : ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর
আসকালানী বলেন, “এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত
করে যে মহানবী (দ:)-কে সৃষ্টি করা
না হলে আল্লাহতা’লা আসমান-জমিন, বেহেশ্ত-দোযখ,
চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।”
এই বিষয়ে আরও অনেক আহাদীস আছে যা ইমাম আহমদ
রেযা খান সাহেব তাঁর ‘তাজাল্লী আল-এয়াকীন
বি আন্না নাবিই-ইয়ানা সাইয়্যেদিল মুরসালীন’
শিরোনামের চমৎকার গ্রন্থে সংকলন করেছেন; আর
নিঃসন্দেহে সত্যপন্থী বুযূর্গানে দ্বীন ও উলামাবৃন্দ
মহানবী (দ:)-কে ’হযরত আদম (আ:) ও বিশ্বজগত সৃষ্টির কারণ’
হিসেবে সম্বোধন করেছেন। তাঁদের এ সব বাণী সংকলন
করলে বিশালাকৃতির বই হবে। এর মধ্য থেকে কিছু
বাণী উদ্ধৃত করা হলো:
উদ্ধৃতি-১ : ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-
হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম
ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন:
আল্লাহতা’লা যখন হযরত বাবা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেন,
তখন তিনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ
তিনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”এয়া আল্লাহ!
আপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন ’আবূ
মোহাম্মদ’ (মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ
উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।”
তিনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (দ:)-এর নূর (জ্যোতি)
দেখতে পান। হযরত আদম (আ:) জিজ্ঞেস করেন,
“এয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?”
আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান
নবী (দ:)-এর জন্ম। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং জমিনে মোহাম্মদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)।
আমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও
জমিনকে সৃষ্টি করতাম না ।”
উদ্ধৃতি-২ : সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর
‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন: “প্রিয়নবী (দ:) হলেন
সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ
(অসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না ।”
উদ্ধৃতি-৩ : ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর কৃত
‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:)
না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।”
উদ্ধৃতি-৪ : ইমাম বুসিরী (রহ:)-এর কাব্যের ব্যাখ্যামূলক
পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন: “হুযূর করীম
(দ:) অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল
হতো না। হযরত আদম (আ:)-কে আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী (দ:)
অস্তিত্বশীল না হলে আমি তোমোকে সৃষ্টি করতাম না ।
হযরত আদম (আ:) হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা, আর
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে সৃষ্ট। তাই হযরত
আদম (আ:)-কে যেহেতু রাসূলে খোদা (দ:)-এর অস্তিত্বের
কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী (দ:)-
এর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, সকল
অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন বিশ্বনবী (দ:) ।”
উদ্ধৃতি-৫ : কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা খালেদ
আযহারী মন্তব্য করেন: “রাসূলে পাক (দ:)-এর কারণেই
দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।”
উদ্ধৃতি-৬ : মোল্লা আলী কারী লেখেন: ”রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর
আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগত অস্তিত্ব
পেতো না এবং আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল
থাকতো না।”
উদ্ধৃতি-৭ : আল্লামা আবূল আয়াশ আবদুল
আলী লাখনৌভী নিজ ‘ফাওয়াতিহ আর-রাহমূত
শরহে মোসাল্লাম আস্ সুবূত’ পুস্তকে লেখেন:
“রাসূলে খোদা (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে সৃষ্টিকুল
আল্লাহর রহমত-বরকত (আশীর্বাদ)-ধন্য হতো না।”
মহানবী (দ:) সৃষ্টিকুলের অস্তিত্বের মূল, এই প্রতিপাদ্য
বিষয়ের সত্যতা ও প্রামাণিকতা সম্পর্কে বিতর্ক একমাত্র
মূর্খ লোকেরাই করতে পারে। হুযূর পূর নূর (দ:)-এর কারণেই
আল্লাহ পাক সমগ্র বিশ্বজগত সৃষ্টি করেন।
— সমাপ্ত —

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment