আল্লাহ গুপ্ত ভান্ডার ছিল (হাদিসে কুদছী)
كَمَا رَوَى فِي الْحَدِيثِ الْقُدْسِيِّ: كُنْتُ كَنْزًا مَخْفِيًّا، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُعْرَفَ، فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِأُعْرَفَ
-“যেমনটি হাদিসে কুদসীতে আছে:- ‘আল্লাহ তা’আলা বলেন: আমি গুপ্ত ধণভান্ডার ছিলাম অত:পর আমার ভিতর পরিচিত হইবার প্রেম জাগল অত:পর সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে পরিচিত হইলাম।” (মেরকাত)(ক্বাজী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মোস্তফা হানাফী: তাফছিরে আবু ছাউদ, ২য় খন্ড, ২০৫ পৃ:; ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী: তাফছিরে কবীর, ২৮তম খন্ড, ২১৫ পৃ:; তাফছিরে নিছাপুরী, ১ম খন্ড, ২৬৯ পৃ: ও ২য় খন্ড, ১৪৬ পৃ:; তাফছিরে মাজহারী, ১০ খন্ড, ৩০৩ পৃ:; তাফছিরে মারাগী, ২০তম খন্ড, ১৪৫ পৃ:; আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী আল হানাফী: তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম খন্ড, ৩০ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ম খন্ড, ১৯৮ পৃ: এবং ৫৮৩৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; গাউছে পাক: ছেররুল আছরার, ৫৪ পৃ:; আল্লামা ইমাম ইসমাঈল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ১২৯ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মউজুয়াতুল কবীর, ৯৩ পৃ:;)
ইহা মূলত সরাসরি সনদ দ্বারা প্রমাণিত নয় তবে হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দেদ, আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) এবং আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে খলিল ইবনে ইব্রাহিম আবুল মুহাছিন কাওয়াকিজী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
لَكِنَّ مَعْنَاهُ صَحِيحٌ-“কিন্তু এর মাআনা বা অর্থ ছহীহ্।”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কবীর, ৯৩ পৃ:; আল লু’উ লু’উ মারছু, হাদিস নং ৪১৬;)
পাশাপাশি “কাশফুল খফা, ২য় খন্ড” কিতাবেও আল্লামা ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটি উল্লেখ করে লিখেছেন,
لَكِنَّ مَعْنَاهُ صَحِيحٌ-“ইহার মাআনা ছহীহ্।” এরপর ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
قَوْلِهِ تَعَالَى {وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْس إِلَّا ليعبدون} أَيْ لِيَعْرِفُونِ كَمَا فَسَّرَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا
-“আল্লাহ তা’আলার বানী: ‘আমি জিন ও মানুষ জাতিকে আমার ইবাদতের তথা আমার পরিচয় লাভের জন্য সৃষ্টি করেছি’ অর্থাৎ আমার পরিচয় লাভের জন্য যেমন তাফছিরে করেছেন হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)।”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মওজুয়াতুল কবীর, ৯৩ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২০১৬; আল লু’উ লু’উ মারছু, হাদিস নং ৪১৬;)
সুতরাং এই হাদিসের ‘মাআনা’ বা অর্থ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর তাফছিরের সাথে মিল রয়েছে। ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর বর্ণনা মোতাবেক ইহার মাআনা ছহীহ্। তথাপিও বিশ্বনন্দিত ইমাম ও মোফাচ্ছেরগণ যারা আহ্লে ক্বাশ্ফের আলিম ছিলেন তাঁদের কিতাবে ইহাকে হাদিস বলে উল্লেখ করেছেন। আর ওলীগণের কাশ্ফ পবিত্র কোরআন দ্বারা ঈশারাতান প্রমাণিত। এজন্যই এই হাদিসের ব্যাপারে ‘তাফছিরে রুহুল মাআনীতে’ আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেন,
إنه ثابت كشفا، وقد نص على ذلك الشيخ الأكبر قدس سره في الباب المذكور،
-“নিশ্চয় ইহা ক্বাশফের দ্বারা প্রমাণিত। সর্বজন স্বীকৃত, শায়খুল আক্বার ইমাম মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (কু: ছে:) এ ব্যাপারে نص ‘নছ’ তৈরী করেছেন।”(আল্লামা মাহমুদ আলুছী: তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ২৭ তম খন্ড, ৩০ পৃ:; আল মাসনু, ১৪২ পৃ: হাশিয়া;)
যখন ‘ক্বাশফের দ্বারা’ ইহা প্রমাণিত হয়ে গেছে এবং ইমামগণ ইহা গ্রহণ করেছেন তখন এর উপর ‘হাদিস নয়’ এরকম কটুক্তি করা যুগের ইমামগণের কটুক্তির নামান্তর, আর হাদিস শরিফে রয়েছে:
فَمَنْ أَهَانَ الْعَالِمَ فقد أَهَانَ اللَّهَ أَهَانَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -“যারা আলিমগণকে তিরস্কার করে তারা যেন আল্লাহ তা’আলাকে তিরস্কার করল, আল্লাহ তাদেরকে কিয়ামতের দিন তিরস্কৃত করবেন।”(তাফছিরে কবির, ২য় খন্ড, ১৮৯ পৃ:;)