আল্লাহর ভালবাসা’ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত
(১) ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না। তোমরা সৎকাজ কর, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোককে ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)।
(২) ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট মুশরিকদের চুক্তি কি করে বলবৎ থাকবে? তবে যাদের সাথে মসজিদুল হারামের সন্নিকটে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে, তোমরাও তাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকবীদেরকে পসন্দ করেন’ (তওবা ৯/৭)।
(৩) ‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত। তারা যদি তোমার নিকট আসে তবে তাদেরকে বিচার নিষ্পত্তি কর না, অথবা তাদেরকে উপেক্ষা কর না। তুমি যদি তাদেরকে উপেক্ষা কর তবে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার নিষ্পত্তি কর তবে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার কর; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন’ (মায়েদা ৫/৪২)।
(৪) ‘বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (আলে ইমরান ৩/৩১)।
(৫) ‘নারী, সম্মান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্ত্ত। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল’ (আলে ইমরান ৩/১৪)।
(৬) ‘তোমরা যা ভালবাস তা হ’তে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূন্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, আল্লাহ অবশ্যই সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত’ (আলে ইমরান ৩/৯২)।
(৭) ‘না, তোমরা প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনকে ভালবাস এবং আখিরাতকে উপেক্ষা কর’ (ক্বিয়ামত ৭৫/২০-২১)।
(৮) ‘তুমি যাকে ভালবাস ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীদেরকে’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৬)।
(৯) ‘তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হ’ল যদিও তোমাদের নিকট ইহা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপসন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না’ (বাক্বারাহ ২/২১৬)।
(১০) ‘মানুষ অবশ্যই তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে অবশ্যই এ বিষয়ে অবহিত এবং সে অবশ্যই ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল’ (‘আ-দিয়াত ১০০/৬-৮)।
আল্লাহর ভালবাসা
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু জাবর (رضي الله عنه) বলেন, আমি আনাস (رضي الله عنه)-কে নবী করীম (ﷺ) থেকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ঈমানের নিদর্শন হ’ল আনছারদের ভালবাসা এবং নিফাক্বের নিদর্শন হ’ল আনছারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা (বুখারী হা/১৭; মিশকাত হা/৬২০৬)।
(২) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়াম হ’ল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পসন্দের ছিয়াম। আর সবচেয়ে পসন্দের ছালাত হ’ল দাঊদ (আঃ)-এর ছালাত। কারণ তিনি রাতে অর্ধেকাংশ ঘুমাতেন, তিনভাগর একভাগ ছালাত আদায় করতেন এবং ছয়ভাগের একভাগ ঘুমাতেন। আর তিনি একদিন ছিয়াম রাখতেন এবং একদিন ছিয়াম ছেড়ে দিতেন (মুসলিম হা/২৭৯৬)।
(৩) বারা ইবনু আযেব (আঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আনছারগণ মুমিনদের ভালবাসেন এবং মুনাফিক্বদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করেন। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষন করবে আল্লাহ তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবেন (বুখারী হা/৩৭৮৩; মিশকাত হা/৬২০৭)।
(৪) আনাস ইবনু মালেক (رضي الله عنه) হ’তে বর্নিত, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ক্বিয়ামত কবে সংঘঠিত হবে? তিনি তাকে বললেন, তুমি এর জন্য কী প্রস্ত্তত গ্রহণ করেছ? সে বলল, আমি এর জন্য অধিক কিছু ছালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ আদায় করতে পারেনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও রাসূলকে ভালবাসি। তিনি বললেন, তুমি যাকে ভালবাস তারই সাথী হবে (বুখারী হা/৬১৭১)।
(৫) ইবনু আববাস (رضي الله عنه) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের মধ্যে দু’টি বৈশিষ্ট্য থাকায় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। যথা (১) সহনশীলতা এবং (২) ধৈর্যশীলতা (মুসলিম হা/১২৭; মিশকাত হা/৫০৫৪)।
(৬) আয়েশা (رضي الله عنه) হ’তে বর্ণিত, মাখযূম গোত্রের এক নারীর চুরির ঘটনায় কুরাইশগণ চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর প্রিয়পাত্র উসামা ইবনু যায়েদ (رضي الله عنه) ছাড়া কে আর তাঁর নিকট বলার সাহস করবে? (বুখারী হা/৩৭৩২)।
(৭) আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ হাঁচিকে ভালবাসেন এবং হাই ওঠাকে অপসন্দ করেন। যখন কারো হাঁচি ওঠবে তখন আল্লাহর প্রশংসা করবে। আর প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক্ব হ’ল যখন তা শুনবে তখন তার উত্তর দিবে। আর হাই আসে শয়তানের নিকট থেকে। তখন তোমরা সাধ্যমত ওটাকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। কেননা শয়তান সে সময়ে অট্টহাসি দেয় (বুখারী হা/৬২২৩; মিশকাত হা/৪৭৩২)।
(৮) আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, কোথায় আজ সেই ব্যক্তিরা যারা আমার ইযযতের জন্য পরস্পর ভালবেসেছিল, আজকে আমি তাদেরকে আমার ছায়ার নীচে আশ্রয় প্রদান করব, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না (মুসলিম হা/৬৭১৩; মিশকাত হা/৫০০৬)।
(৯) আবু হুরায়রা (ﷺ) বলেন, আল্লাহর নিরানববইটি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি সেগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তিনি বিজোড় এবং বিজোড়কে পসন্দ করেন (বুখারী হা/৬৪১০)।