“আলীর যিকর ইবাদত” হাদিসের অপব্যাখ্যার জবাব:
উম্মাহাতুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (দ.) ইরশাদ করেন,
ذكر عَليّ عبَادَة
“আলীর যিকর করা ইবাদত।” (ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৪৪ পৃ. হা/৩১৫১, আল্লামা মুত্তাকী হিন্দ, কানযুল উম্মাল, ১১/৬০১ পৃ. হা/৩২৮৯৪, ইমাম ইবনু আসাকির, তারিখে দামেস্ক, ৪২/৩৫৬ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-জামেউস সাগীর, ৪১২ পৃ. হা/৪৩৩২)
হাদিসটির সঠিক ব্যাখ্যা:
আমাদের কতিপয় নব্য শিয়াগণ এ হাদিসের অপব্যাখ্যা করে বুঝাতে চান যে, আল্লাহ আল্লাহ নাম জপা যেমনিভাবে ইবাদত তেমনিভাবে আলী আলী নাম জপাও ইবাদত। নাউযুবিল্লাহ! অথচ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় কোন সুফি, কোন হাদিসের ব্যাখ্যাকার এমনটি বলেননি।
মহান রব ইরশাদ করেন-
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
“আমি আপনার জন্য আপনার যিকরকে সম্মুন্নত করেছি।” (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত নম্বর-৪)
উপরের হাদিসে ‘যিকর’ যে অর্থে ব্যবহার হয়েছে এ আয়াতেও ‘যিকর’ শব্দটি সে অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
এ আয়াতের ‘যিকর’ শব্দের ব্যাখ্যায় একদল হাদিসের ইমাম হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসুল (দ.) ইরশাদ করেন,
أَتَانِي جِبْرِيلُ، فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ لَكَ: كَيْفَ رَفَعْت ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ. قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ معي
-“আমার নিকট হযরত জিবরাঈল (আ.) আগমন করলেন আর বললেন, আমার রব ও আপনার রব আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, কীভাবে আপনার যিকরকে সম্মুন্নত করা হয়েছে ? তিঁনি (দ.) বললেন, মহান আল্লাহই ভালো জানেন। হযরত জিবরাঈল (আ.) বললেন, মহান রব বলেছেন, যখনই আমার ‘যিকর’ (আলোচনা) হবে তখনই আমার সাথে আপনারও আলোচনা হবে।” (ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ, হা/৩৩৮২, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, হা/১৩৮০, ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৮/৫৪৭ পৃ.) ইমাম হাইসামী (রহ.) বলেন, হাদিসটির সনদ ‘হাসান’। (মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২৫৪ পৃ. হা/১৩৯২২)
উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিসে কুদসী থেকে বুঝতে পারলাম ‘যিকর’ শব্দটি আলোচনা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এবার আমরা লক্ষ্য করে দেখি কথিত শিয়াদের ব্যাখ্যা মুহাদ্দিগণ আদৌ গ্রহণ করেছেন কিনা।
আল্লামা মুনাভী (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَالْمرَاد ذكره بالترضي عَنهُ أَو بِذكر مناقبه وفضائله وَنَحْو ذَلِك
অর্থাৎ: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাঁর (আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর) প্রতি সন্তুষ্টির সাথে তাঁর আলোচনা করা অথবা তাঁর মানাকিব এবং ফজিলত ইত্যাদি দ্বারা আলোচনা করা।
(আল্লামা মুনাভী, আত-তাইসীর বি শরহু জামেয়িস সাগীর, ২/২০ পৃ. এবং মুনাভী, ফয়জুল কাদীর, ৩/৫৬৫ পৃ.)
আল্লামা সান‘আনী (রহ.) বলেন-
أي ذكركم مناقبه وفضائله وصفاته الشريفة.
-“আলীর যিকর ইবাদত মানে অর্থাৎ হযরত আলী (রা.)’র মর্যাদা, ফযীলত এবং সম্মানিত গুণাবলী আলোচনা করা ।” (আল্লামা সান‘আনী, আত-তানভীর শরহু জামেয়িস সাগীর, ৬/১৭৮ পৃ. হা/৪৩৩২-এর আলোচনা।)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারা একটু ভেবে দেখুন! শিয়াদের মনগড়া শিরকিপূর্ণ ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন নাকি নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন।
সনদ পর্যালোচনা:
দ্বিতীয়ত. এ হাদিসের সনদটি অত্যন্ত দুর্বল, এটি আমার নিছক মনগড়া বক্তব্য নয়; বরং আহলে হক মুহাদ্দিসদের অভিমত। যদিও আলবানী এটিকে বাড়াবাড়ি করে জাল বলেছে, আমরা তার সাথে একমত নই। (আলবানী, যঈফু জামে, হা/৩০৪৯)
আল্লামা মুনাভী (রহ.) এ সনদ সম্পর্কে লিখেন-
وفيه الحسن بن صابر قال الذهبي: قال ابن حبان منكر الحديث
সনদে ‘হাসান ইবনু সাবির আল-কাসানী নামক রাবি রয়েছেন, ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন, ইমাম ইবনু হিব্বান (রহ.) বলেন, তিনি আপত্তিকর হাদিস বর্ণনাকারী।” (আল্লামা মুনাভী, ফয়জুল কাদীর, ৩/৫৬৫ পৃ.)
আল্লামা সান‘আনী (রহ.) বলেন-
فيه الحسن بن صابر الكسائي قال الذهبي: قال ابن حبان منكر الحديث
-“সনদে ‘হাসান ইবনু সাবির আল-কাসানী নামক রাবি রয়েছেন, ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন, ইমাম ইবনু হিব্বান (রহ.) বলেন, তিনি আপত্তিকর হাদিস বর্ণনাকারী।” (আল্লামা সান‘আনী, আত-তানভীর শরহু জামেয়িস সাগীর, ৬/১৭৮ পৃ. হা/৪৩৩২-এর আলোচনা।)
তবে ইমাম যাহাবী (রহ.) তার এক কিতাবে উল্লেখ করেন- قال ابن حبان: منكر الحديث جداً -“ইমাম ইবনু হিব্বান (রহ.) বলেন, তিনি অত্যন্ত আপত্তিকর হাদিস বর্ণনাকারী।” (ইমাম যাহাবী, দিওয়ানুদ দ্বুআফা, ১/৮১ পৃ. ক্রমিক. ৯১১)
এছাড়াও উক্ত রাবীর একটি হাদিস উল্লেখ করে ইমাম যাহাবী (রহ.) লিখেন- وهذا كذب. -“এটি (তার) মিথ্যাচার।” (ইমাম যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, ১/৪৯৬ পৃ. ক্রমিক. ১৮৬৬, ইমাম যাহাবী, দিওয়ানুদ দ্বুআফা, ১/৮১ পৃ. ক্রমিক. ৯১১, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৩/৫৮ পৃ. ক্রমিক. ২২৯৪)
ইমাম যাহাবী, ইমাম ইবনু জাওযী (রহ.) এবং শাওকানী এটিকে ভিত্তিহীন বর্ণনা বলেছেন। (ইমাম ইবনু জাওযী, কিতাবুল মাওদ্বুআত, ২/২১৬ পৃ., শাওকানী, ফাওয়াইদুল মাজমুআ, ৩৫৯ পৃ., ইমাম যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, ১/৪৯৬ পৃ. ক্রমিক. ১৮৬৬)
উসূলে হাদিসের দাবী হলো সাধারণ দুর্বল রাবির হাদিস ফাজায়েলে আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, কিন্তু অত্যন্ত দুর্বল এবং মুনকার হাদিস বর্ণনাকারী গ্রহণযোগ্য নয়। আফসোসের বিষয় হচ্ছে এ কথিত অজ্ঞ শিয়াদের সামনে হাদিসের মান আলোচনা করলেও আমরা হয়ে যাই নাকি আহলে বাইতের দোষমন !