আলিমের পিছনে নামাজ পড়া নবীর পিছনে নামাজর মতই
لِقَوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى خَلْفَ عَالِمٍ تَقِيٍّ فَكَأَنَّمَا صَلَّى خَلْفَ نَبِيٍّ
-“আল্লাহর নবী ( ﷺ) এর বাণী হল, যে ব্যক্তি কোন মুত্তাকী আলিম এর পিছনে নামাজ আদায় করল সে যেন নবীর পিছনে নামাজ আদায় করল।” ৯৯৯৯, ইমাম আসকালানী: আদ দেরায়া, ১ম খন্ড, ১৬৮ পৃ:; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৭৬৪ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; মাবছুত লিছ ছারাখছী, ১ম খন্ড, ৪২ পৃ:; ইমাম আইনী: আল বেনায়া শরহে হেদায়া, ২য় খন্ড, ৩৩১ পৃ:; এনায়া, ১ম খন্ড, ৩৪৯ পৃ:; আল মুহিতুল বুরহানী, ১ম খন্ড, ৪০৫ পৃ:; ফাতওয়ায়ে শামী, ১ম খন্ড, ৫৬২ পৃ:; হেদায়া, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃ:; বাহরুর রায়েক, ১ম খন্ড, ৩৭০ পৃ:; বাদাউছ ছানাঈ, ১ম খন্ড, ৪৮৩ পৃ:; ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ২য় খন্ড, ২৬ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২৫১৪;
হাদিসটি অন্যভাবেও উল্লেখ আছে,
عن أبي هريرة مَرْفُوعًا مَنْ صَلَّى خَلْفَ عَالِمٍ مِنَ الْعُلَمَاءِ فَكَأَنَّمَا صَلَّى خَلْفَ نَبِيٍّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ.
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী ( ﷺ) এর বাণী হল, যে ব্যক্তি কোন উলামাদের মধ্যে কোন আলিম এর পিছনে নামাজ আদায় করল সে যেন নবীদের মধ্যে একজন নবীর পিছনে নামাজ আদায় করব।” ১৩০০। তাফছিরে নিছাপুরী, ১ম খন্ড, ২২৫ পৃ:; তাফছিরে কবীর, ২য় খন্ড, ৪০১ পৃ:; শরহে বুখারী লিছ সাফারী, ২য় খন্ড, ৯১ পৃ:;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম যায়লায়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) غريب গরীব বলেছেন।(ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ২য় খন্ড, ২৬ পৃ:;) এই হাদিসটি উল্লেখ করার সময় শারিহে বুখারী আল্লামা শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে উমর ছাফিরী শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৯৫৬ হিজরী বলেছেন:
وثبت عن أبي هريرة رضي الله عنه مرفوعاً: من صلى خلف عالم من العلماء فكأنما صلى خلف نبي من الأنبياء
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে মারফু সূত্রে প্রমাণিত আছে, যে ব্যক্তি উলামাদের মধ্যে কোন আলিমের পিছনে নামাজ পড়বে, সে যেন নবীগণের মধ্যে কোন একজন নবীর পিছনে নামাজ পড়ল।”(শরহে বুখারী লিছ সাফারী, ২য় খন্ড, ৯১ পৃ:; ইহা শুধুমাত্র আলিমগণের ফজিলত বুঝানোর জন্যই। কারণ আমাদের নবীর পরে কোন নবী নেই।)
ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, فلم أقف عليه بهذا اللفظ. -“ইহার সম্পর্কে আমি অবগত নই।” নিশ্চয় আল্লামা শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে উমর ছাফিরী শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর নিকট ইহার সনদ জানা ছিল তাই তিনি এই হাদিসকে ثبت প্রমাণিত বলেছেন। তবে নামাজের ক্ষেত্রে উত্তম ব্যক্তি তথা মুত্তাকী আলিমদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন লক্ষ্য করুন,
أَخْبَرْنَاهُ أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْمَحْبُوبِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ مَسْعُودٍ، ثنا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، أَنَا يَحْيَى بْنُ يَعْلَى، عَنِ الْقَاسِمِ الشَّيْبَانِيِّ، عَنْ مَرْثَدِ بْنِ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيِّ وَكَانَ بَدْرِيًّا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ سَرَّكُمْ أَنْ تُقْبَلَ صَلَاتُكُمْ فَلْيَؤُمَّكُمْ خِيَارُكُمْ، فَإِنَّهُمْ وَفْدُكُمْ فِيمَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ
-“মারছাদ ইবনু আবী মারছাদ (رضي الله عنه) যিনি বদরী সাহাবী তিনি বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: তোমাদের নামাজ কবুলিয়াতের ক্ষেত্রে তোমাদের গোপন দিক হল, তোমাদের উত্তম ব্যক্তিরা যেন ইমামতি করে; কেননা উত্তম ব্যক্তিরাই তোমাদের ও তোমাদের রবের মাঝে প্রতিনিধি।”(মুসনাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৪৯৮১; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৭৭৭; সুনানু দারা কুতনী, হাদিস নং ১৮৮২;)
অন্য কিতাবে আছে فَلْيَؤُمَّكُمْ عُلَمَاؤُكُمْ، -“তোমাদের আলিম ব্যক্তিরা যেন ইমামতি করে।”(ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ২৭০১; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২০৪৩৪; ইমাম মানাভী: ফায়জুল কাদির, হাদিস নং ৩২২৮; ইমাম যায়লায়ী: নাছবুয়া রায়া, ২য় খন্ড, ২৬ পৃ:;) এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
أَخْبَرَنَا أَبُو حَازِمٍ الْحَافِظُ، وَأنبأ أَبُو أَحْمَدَ الْحَافِظُ، أنبأ أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَسَدٍ الْهَرَوِيُّ، ثنا حُسَيْنُ بْنُ نَصْرٍ، ثنا سَلَّامُ بْنُ سُلَيْمَانَ، ثنا عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ وَاسِعٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اجْعَلُوا أَئِمَّتَكُمْ خِيَارَكُمْ، فَإِنَّهُمْ وَفْدُكُمْ فِيمَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ
-“হযরত ইবনু উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম ( ﷺ) বলেছেন: তোমাদের উত্তম ব্যক্তিদের ইমাম নিযুক্ত কর। কেননা উত্তম ব্যক্তিরাই তোমাদের ও তোমাদের রবের মাঝে প্রতিনিধি।”(ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৫১৩৩; সুনানু দারা কুতনী, হাদিস নং ১৮৮১; ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ২য় খন্ড, ২৬ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২০৪৩২;)
এই হাদিস গুলো থেকে মুত্তাকী আলিমদের ইমামতির অগ্রাধিকার এবং আলিমগণের পিছনে নামাজ আদায় করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আমাদের নবী রাসূল ( ﷺ) হলেন সর্বশেষ নবী এবং তার পরে কোন নবী নেই। এখানে আলিমগণের মর্যাদা বুঝানোর জন্যই হয়ত এরূপ বলা হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, এই হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটিকে জাল না বলে, তিনি বলেছেন: আমি এই শব্দ গুলো জানিনা। আল্লামা শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে উমর ছাফিরী শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটিকে প্রমাণিত বলেছেন। কিন্তু জনাব আব্দুল মালেক সাহেব তিনার ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ বইয়ের প্রথম প্রকাশের ১০০ পৃষ্টায় কোন ইমামের রেফারেন্স ছাড়াই বলে দিলেন- “তবে পূর্বোক্ত উক্তিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস নয়; যদি তা বহু লোকের নিকট তাঁর হাদীস হিসেবেই সমধিত প্রসিদ্ধ।”
পূর্বসূরী ইমামগণ আমানতদারীর সাথে বলেছেন আর আব্দুল মালেকরা নিজেদের মনগড়া কথা বলে থাকেন! যা এক প্রকার হাস্যকরই বটে।