আলিমের চেহারার দিকে নজর করা ইবাদত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আলিমের চেহারার দিকে নজর করা ইবাদত

عن أنس مرفوعاً النَّظَرُ إِلَى وَجْهِ الْعَالِمِ عِبَادَةٌ

-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আলিমের চেহারার দিকে নজর করাও ইবাদত।”(দায়লামী শরীফ, হযরত আনাস (রাঃ) হতে মরফূ রুপে হাদিস নং ৬৮৬৭; হযরত ছাময়ান ইবনে মাহদী তাঁর ‘নূছখায়’ হযরত আনাস রাঃ হতে মারফূ রূপে; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ২৮৫ পৃ:; কাজী শাওকানী: ফাওয়াইদুল মাজমুয়া, হাদিস নং ৫২; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানা, ৪৪৬ পৃ:;)  ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এভাবে উল্লেখ করেছেন,

وَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ: قُلْتُ يَا جِبْرِيلُ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ لِأُمَّتِي؟ قَالَ: الْعِلْمُ، قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ؟ قَالَ: النَّظَرُ إِلَى الْعَالِمِ، قُلْتُ: ثُمَّ أَيُّ؟ قَالَ: زِيَارَةُ الْعَالِمِ، 

-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেন: আমি জিব্রাইল (عليه السلام) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্রাইল আমার উম্মতের জন্য উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন: ইলিম। আমি বললাম এরপর কোনটি? তিনি বললেন: আলিমের দিকে নজর করাও উত্তম ইবাদত। আমি বললাম এরপর কোনটি? তিনি বললেন: আলিমের সঙ্গলাভ।”(ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী তাফছিরে কবীর শরীফ, ২য় খন্ড, ১৯১ পৃ:;)  

এ বিষয়ে নিচের রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,

عن أنس مرفوعا نَظْرَةٌ فِي وَجْهِ الْعَالِمِ أَحَبُّ إِلَى اللَّه مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً صِيَامًا وَقِيَامًا،

-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ৬০ বছর নফল নামাজ ও নফল রোজার চেয়েও অধিক পছন্দনীয়।”(ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ১২৫১; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়াত, হাদিস নং ৫৬২; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২৮১১; তাজকিরাতুল মওজুয়াত, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ৫৬২;)  

ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, ولا يصح ইহা ছহীহ্ নয়। আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) এর ولا يصح  নীতিমালাটিকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেন-

قَوْلَ السَّخَاوِيِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِي الضَّعْفَ وَالْحُسْنَ إِلَّا أَنْ يُرِيدَ بِهِ أَنَّهُ لَا يَثْبُتُ وَكَانَ الْمُنُوفِي فَهِمَ هَذَا الْمَعْنَى حَتَّى قَالَ فِي مُخْتَصَرِهِ إِنَّهُ بَاطِلٌ لَا أَصْلَ لَهُ 

-“ইমাম ছাখাবী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎)‘র বক্তব্য হাদিসটি ‘ছহীহ্ নয়’ (তিনি বলেন) তার ছহীহ্ হওয়ার নিষেধ দ্বারা হাদিসটি ‘হাছান’ ও দ্বায়িফ হওয়াকে নিষেধ করে না। তবে যদি ইহার মধ্যে এরুপ উদ্দেশ্য হয় যে, ইহার কোনভাবেই প্রমাণিত না তখন সংক্ষেপে এভাবে বলেছেন, إِنَّهُ بَاطِلٌ নিশ্চয় ইহা বাতিল, لَا أَصْلَ لَهُ ইহার কোন ভিত্তি নেই।”(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারূল মারফূআ, ১/৩৪৯ পৃ. হা/৫০২, লাখনভী, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৫ পৃ.) 

এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,

عن أنس مرفوعا بلفظ: النّظر إِلَى وَجه الْعَالم عبَادَة وَالْجُلُوس مَعَه عبَادَة وَالْكَلَام مَعَه عبَادَة

-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূরূপে বর্ণিত আছে, আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ও তাদের সাথে বসা ইবাদত সমতুল্য, এবং তাদের সাথে কথা বলাও ইবাদত।”(মুসনাদে ফিরদৌস, হাদিস নং ৬৮৬৭; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ১২৫১; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২৮১১; তাজকিরাতুল মওজুয়াত, ১ম খন্ড, ২১ পৃ:;)  এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,

عَن أُسَامَة بن زيد الْجُلُوس فِي الْمَسْجِد لانتظار الصَّلَاة بعد الصَّلَاة عبَادَة وَالنَّظَر فِي وَجه الْعَالم عبَادَة ونوم الصَّائِم عبَادَة وَنَفسه تَسْبِيح.

-“হযরত উসামা ইবনে জায়েদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, মসজিদে নামাজের পরে নামাজের উদ্দেশ্যে বসে থাকাও ইবাদত, আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত, রোজাদারের ঘুমও ইবাদত, তাদের চুপ থাকা তাসবীহ সমতুল্য।” (মুসনাদে ফিরদৌস, হাদিস নং ২৬৪৫; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৬৩৯৮; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৫৭৩৭; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২০৭৪৩; আল্লামা ছানআনী: তানভীর শরহে জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৩৬০৫;) এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,

أَنْبَأَنَا الْحَرِيرِيُّ قَالَ أَنْبَأَنَا الْعُشَارِيُّ قَالَ نا الدَّارَقُطْنِيُّ قَالَ نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْهَيْثَمِ الْخَيَّاطُ قَالَ نا سُلَيْمَانُ بْنُ الرَّبِيعِ النَّهْدِيُّ قَالَ نا هَمَّامُ بْنُ مُسْلِمٍ عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَمْسٌ مِنَ الْعِبَادَةِ قِلَّةُ الطَّعَامِ عِبَادَةٌ وَالْقُعُودُ فِي الْمَسَاجِدِ عِبَادَةٌ وَالنَّظَرُ إِلَى الْكَعْبَةِ عِبَادَةٌ وَالنَّظَرُ في المصحف من غيرأن يَقْرَأَ عِبَادَةٌ وَالنَّظَرُ فِي وَجْهِ الْعَالِمِ عِبَادَةٌ.

-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: পাঁচটি জিনিস ইবাদত: কম খাদ্য গ্রহণ করা ইবাদত, মসজিদে বসে থাকা ইবাদত, কা’বার দিকে তাকানো ইবাদত, কোরআনের পান্ডুলিপির দিকে তাকানো এবাদত এবং আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত।” (আল ফেরদৌছ, হাদিস নং ২৯৬৯; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৬০৮১; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৬৬০০; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৪৩৪৯৩; আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৩৯৫০; ইলালু মুতানাহিয়া ফিল আহাদিছিল ওয়াহিয়া, হাদিস নং ১৩৮৬; আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ৫২২ পৃ:; আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৬৬০০;) 

এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে আল্লামা মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: 

عَن أبي هُرَيْرَة باسناد ضَعِيف -“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে দ্বায়িফ সনদে।”(আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ৫২২ পৃ:;)  লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানীও হাদিসটিকে ضعيف দ্বায়িফ বলেছেন।(আলবানী: ছিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ১৭১০;)  এবিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,

وَأخرج الدَّارَقُطْنِيّ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: خمس من الْعِبَادَة: النّظر إِلَى الْمُصحف وَالنَّظَر إِلَى الْكَعْبَة وَالنَّظَر إِلَى الْوَالِدين وَالنَّظَر فِي زَمْزَم وَهِي تحط الْخَطَايَا وَالنَّظَر فِي وَجه الْعَالم

-“ইমাম দারে কুতনী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) নবী করিম ( ﷺ‎‎) থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবীজি ( ﷺ‎‎) বলেছেন: পাঁচটি বিষয় ইবাদত:- কাবা ঘরের দিকে তাকানো, পিতা-মাতার চেহারার দিকে তাকানো, জম জমের দিকে তাকানো ও আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত।”(তাফছিরে দুর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৫৫ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৬৫৯৯; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিছ, হাদিস নং ৪৫০৬১; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৬০৮০; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৪৩৪৯৪; আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৩৯৫৫; আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ৫২২ পৃ:;)  

এই হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়, আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত। এরূপ আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন:-

حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ قَالَ: ثنا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ ثَوْرٍ، عَنْ مَكْحُولٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَمْسٌ مِنَ الْعِبَادَةِ ذَكَرَ إِحْدَاهُنَّ قَالَ: وَالنَّظَرُ إِلَى الْكَعْبَةِ عِبَادَةٌ

-“হযরত মাকহুল ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ‎‎) বলেছেন: পাঁচটি বিষয় ইবাদত। এর মধ্যে একটির কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন: কাবা ঘরের দিকে তাকানো ইবাদত।”(ইমাম ফাকেহী: আখবারে মক্বা, হাদিস নং ৩২৮;)  

এই হাদিসের রাবী ‘ইসহাক্ব ইবনে ইব্রাহিম ইবনে আলা’ নির্ভরযোগ্য। ইমাম আবু হাতিম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার প্রশংসা করেছেন। ইমাম ইবনে হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৪০৬;)  

ইমাম মাসলামাহ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।(ইমাম মুগলকাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৭৮;)  আরেকজন রাবী ‘বাকিয়া ইবনে ওয়ালিদ’ নির্ভরযোগ্য রাবী। যেমন,

بَقِيَّةُ بنُ الوَلِيْدِ بنِ صَائِدِ بنِ كَعْبِ بنِ حَرِيْزٍ الحِمْيَرِيُّ “বাক্বিয়া ইবনে ওয়ালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে হারিজ হিময়ারী” সে মূলত ছহীহ্ মুসলীমের রাবী এবং ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ব্যাপারে ভাল সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যার সম্পর্কে ইমামগণের উক্তি লক্ষ্য করুন:

عَنِ ابْنِ المُبَارَكِ، قَالَ: بَقِيَّةُ كَانَ صَدُوقاً -“ইমাম ইবনে মোবারক ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: সে সত্যবাদী।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;)  

ইয়াইয়া ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে জিজ্ঞাসা করা হল,

 وَسُئِلَ أَيُّمَا أَثْبَتُ: هُوَ أَوْ إِسْمَاعِيْلُ؟ -“জিজ্ঞাসা করা হল, কে অধিক প্রমাণিত সে (বাক্বিয়া) নাকি ইসমাঈল?  

قَالَ: كِلاَهُمَا صَالِحَانِ. উত্তরে তিনি বলেন, তারা দুই জনেই নেক বান্দাহ।”(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;)  

قَالَ يَعْقُوْبُ بنُ شَيْبَةَ: بَقِيَّةُ: ثِقَةٌ، حَسَنُ الحَدِيْث :ইমাম ইয়াকুব ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: বাক্বিয়া বিশ্বস্ত ও তার হাদিস উত্তম।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;) 

وَقَال مُحَمَّد بْن سعد: كان ثقة -“মুহাম্মদ ইবনে সা’দ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে বিশ্বস্ত।”(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;)  

وَقَال أَحْمَد بْن عَبْد اللَّهِ العجلي: ثقة -“আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইজলী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: সে বিশ্বস্ত।”(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;)  

وَقَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ النَّسَائِيُّ: إِذَا قَالَ: حَدَّثَنَا وَأَخْبَرَنَا، فَهُوَ ثِقَةٌ، 

-“ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন: যখন সে এভাবে বর্ণনা করবে: ‘হাদ্দাছানা’ অথবা ‘আখবারানা’ তখন অবশ্যই তার হাদিস বিশ্বস্ত বলে স্বীকৃত। {এভাবেই এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে}(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮;)  

عثمان الدارميّ، عَنِ ابن مَعِين: بقيّة ثقة. قلت لَهُ: هُوَ أحبّ إليك أو محمد بْن حرب؟ فقال: ثقة وثقة. 

-“উছমান ইবনে দারেমী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হতে বর্ণনা করেন, বাক্বিয়া বিশ্বস্ত। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কাছে কে বেশী পছন্দনীয় বাক্বিয়া নাকি মুহাম্মদ ইবনে হারব? তিনি বলেন: সে বিশ্বস্ত এবং সেও বিশ্বস্ত।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;)  

وقال ابن عَدِيّ: ولبقيّة حديث صالح، -“ইমাম ইবনে আদী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: বাক্বিয়া হাদিস বর্ণনায় নেক।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;)  

وروى له مسلم حديثا واحدا -“ইমাম মুসলীম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।”(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ১ম খন্ড, ৪৭২-৭৩ পৃ:;)  

استشهد به البخاري في “الصحيح” -“ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯;)  

وقال الحاكم في سؤالات مسعود: بقية ثقة مأمون :ইমাম হাকেম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) মাসউদ এর ছওয়ালে বলেন: বাক্বিয়া বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য।”(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ১ম খন্ড, ৪৭২-৭৩ পৃ:;)  অতএব, এই রাবীর হাদিস গ্রহণযোগ্য।

এর আরেকজন রাবী ‘ছাওর’ তার মূল নাম হল 

ثور بن يزيد بن زياد ‘ছাওর ইবনে ইয়াজিদ ইবনে যিয়াদ’। মুহাম্মদ ইবনে সাদ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), উছমান ইবনে সাঈদ দারেমী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম দুহাইম ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম ইয়াকুব ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎),, ইমাম ইবনে মাঈন ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম ওয়াকী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম বুখারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম আহমদ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৮৬২;)  

হযরত মাকহুল ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) তো নিজেই তাবেঈ ও সর্বজন বিধিত বিশ্বস্ত। অতএব, এই হাদিস ছহীহ্ হওয়াতে কোন বাধা নেই। মুস্তাদরাকে হাকেম শরীফে এরূপ একটি রেওয়ায়েত রয়েছে:

حَدَّثَنَا عَبْدُ الْبَاقِي بْنُ قَانِعٍ الْحَافِظُ، ثنا صَالِحُ بْنُ مُقَاتِلِ بْنِ صَالِحٍ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ بْنِ عُتْبَةَ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ سَالِمٍ، ثنا يَحْيَى بْنُ عِيسَى الرَّمْلِيُّ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: النَّظَرُ إِلَى وَجْهِ عَلِيٍّ عِبَادَةٌ 

-“হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আলী (رضي الله عنه) এর চেহারার দিকে নজর করা ইবাদত।”(মুস্তাদরাকে হাকেম, ৫ম খন্ড, ১৭৬১ পৃ:;)  

ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه) ও ইবনে মাছউদ (رضي الله عنه) থেকেও আরো ২টি রেওয়ায়েত রয়েছে। ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه) এর রেওয়ায়েতটি সম্পর্কে ইমাম হাকেম নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) বলেন: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ -“এই হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ।” হযরত আলী (رضي الله عنه) একজন প্রকৃত মুত্তাকী আলিম সাহাবী, আর আলিমের চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত তা এই হাদিস দ্বারাও সমর্থিত হয়। এ বিষয়ে সমর্থিত আরেকটি রেওয়ায়েত রয়েছে, 

عَنْ ابْن عَبَّاس مجالسه الْعلمَاء عبَادَة -“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন, আলিমগণের মজলিস বা বৈঠক এবাদত।”(মুসনাদে ফেরদৌস, হাদিস নং ৬৪৮৬; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ১০ খন্ড, ৬৪ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১১০৫৭;)  

যিয়ারত ও মজলিস একই কথা, কারণ মজলিসের মাধ্যমেই আলিমের দিকে নজর করা সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন, عَنِ الْحَسَنِ الْبَصْرِيِّ: النَّظَرُ فِيهِ عِبَادَةٌ -“হযরত হাছান বছরী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন: আলিমের দিকে তাকানো ইবাদত।”(তাফছিরে কবিরে, ২য় জি: ১৯২ পৃ:;)  

সর্বোপরি “আলিমের চেহারার দিকে নজর করা ইবাদত” ইহা উল্লেখিত হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়। যেমনিভাবে ‘মায়ের’ চেহারার দিকে তাকালে কবুল হজ্বের সওয়াব লাভ হয় তেমনি আলিমের চেহারার দিকে তাকালে ঐরূপ সওয়াব লাভ হয়। এতগুলো রেওয়ায়েত দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত থাকার পরেও জনাব আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তিনার ‘হাদিসের নামে জালিয়াতী’ বইয়ের ৪৪৮ পৃষ্টায় এই হাদিসটিকে জাল বলে উড়িয়ে দিলেন। ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎)সহ অন্যান্য ইমামগণ কেউ হাদিসটিকে ছহীহ্ নয় বলেছেন, কেউ মওজু বা ভিত্তিহীন বলেননি। অথছ জাহাঙ্গীর সাহেব পাইকারী বলে দিলেন- “মুহাদ্দিছগণ বাক্য দুটিকে মিথ্যা বা বানোয়াট হাদিস বলে উল্লেখ করেছেন।” কতবড় মিথ্যাচারিতা দেখুন!

এতগুলো রেওয়ায়েত দ্বারা হাদিসটি প্রমাণিত হওয়ার পরেও কোন ইমামের রেফারেন্স ছাড়াই কওমীদের বড় আলেম জনাব আব্দুল মালেক সাহেব তিনার ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ বইয়ের প্রথম প্রকাশের ৯৪ পৃষ্টায় বলে দিলেন-

“লোক মুখে প্রসিদ্ধ উপরোক্ত কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস নয়।”

কি ভয়ঙ্কর খেয়ানত। মনে হচ্ছে তিনারা আল হাদিসকে জাল হাদিস বানানোর ঠিকাদারী নিয়েছেন!

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment