আযানের আগে ও পরে দরুদ শরীফ পড়ার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আযানের আগে ও পরে দরুদ শরীফ পড়ার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে আযানের আগে ও পরে সালাতুস সালাম বা দরুদ সালাম পাঠ করা খুবই উত্তম ও নেকির কাজ। পক্ষান্তরে অন্যান্য ফেরকার মতে তা বিদাত ও খারাপ কাজ। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর বিধান কি এ বিষয়ে আলোচনা প্রদত্ত হল।

(১) প্রথমে আযানের পড়ে দরুদ নিয়ে আলোচনা করি।
➖➖➖➖➖➖➖
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ
ﺍﻟﻌﺎﺹ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻌﻢ ﺍﺫﺍ ﺍﺳﻤﻌﺘﻢ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ
ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺛﻢ ﺻﻠﻮﺍ
ﻋﻠﻲ ﺻﻠﻮﺓ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻬﺎ
ﻋﺸﺮﺍ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)হতে বর্ণিত রাসুল (ﷺ)
বলেছেন হে মুসলমানেরা যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন তার অনুরূপ শব্দ তোমরাও বলবে। অতঃপর যখন
আযান শেষ হবে আমার উপর দরুদ পাঠ করবে। সুতরাং যে আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে তাকে আল্লাহ ১০টি নেকী বা প্রতিদান দান করবেন।
(সহিহ মুসলিম, মেশকাত শরীফ, বাবুল আযান, পৃষ্ঠা ৬৩)

হাদিসটি প্রথমত, মুসলিম শরীফের হাদিস। দ্বিতীয়ত, স্পষ্ট আযানের পর দরুদের কথা উল্লেখ আছে।
একবার চিন্তা করুন মানুষ কত বড় নিমুক হারাম হলে আযানে দরুদকে অস্বীকার
করে ? ওহাবি মসজিদ গুলো দেখুন আযানের আগে তো দূরের কথা আযানের পরেও দরুদ পড়েনা। এর দ্বারা বোঝা যায় ওহাবিদের নিকট প্রমাণ উদ্যেশ্য নয় মূলত আমার নবীর
দরুদকে প্রতিরোধ করাই তাদের উদ্দেশ্য।

(২) আযানের আগে দরুদ সালাম।
➖➖➖➖➖➖➖➖
প্রথমে ওহাবিদের একটা অভিযোগের জবাব দেই।
তাদের অভিযোগ হলো আযানের সাথে দরুদ পড়া মূলত আযানের শব্দ বৃদ্ধি করা।সুতরাং এটা হারাম।তাদের জবাবে নিম্নুক্ত হাদিসই যথেষ্ট।

দলীল নং- ০১
➖➖➖
ﻋﻦ ﺑﻼﻝ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻌﻢ ﻻ ﺗﺜﻮﺑﻦ ﻓﻲ ﺷﻴﺊ ﻣﻦ
ﺍﻻﺻﻠﻮﺍﺕ ﺍﻻ ﻓﻲ ﺻﻠﻮﺍﺓ ﺍﻟﻔﺠﺮ
ﻋﻦ ﺑﻼﻝ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻌﻢ ﻻ ﺗﺜﻮﺑﻦ ﻓﻲ ﺷﻴﺊ ﻣﻦ
ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻻ ﻓﻲ ﺻﻠﻮﺍﺓ ﺍﻟﻔﺠﺮ

হযরত বেলাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (ﷺ) আমাকে এরশাদ করেছেন কেবল ফযরের নামাজের পূর্বে তাছবিব বা সতর্ক বাণী ঘোষণা কর।

(ইবনে মাজাহ, তিরমীজি, মিশকাত শরীফ খণ্ড ১, পৃষ্টা ৬৩)
এই হাদিস দ্বারা শুধু ফজরের নামাজে তাসবিব প্রমানিত হল পরবর্তিতে মুতাআখখিরিন আলেমগন এটাকে সব আযানের আগে পড়া উত্তম বলেছেন।

দলীল নং- ০২
➖➖➖
ﻭ ﻛﺬﺍﻟﻚ ﺗﺠﺐ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻓﻲ ﻛﻞ
ﺩﻋﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻭﻟﻪ ﻭﺍﺧﺮﻩ
অর্থঃ প্রত্যেক দোয়ার আগে ও পরে দরুদ শরিফ পাঠ করা হল ওয়াজিব।
[তাফসিরে রুহুল বয়ান খণ্ড,৭. পৃষ্ঠা – ২২৭.]

আর আযানের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ হল দোয়া। সুতরাং আযানের আগে ও পরে দরুদ পড়া উত্তম কাজ।

দলীল নং- ০৩
➖➖➖

বনি নাজ্জার গোত্রের জৈনেক মহিলা ওনার বাড়ী মসজিদে নববীর পাশে ছিলো। তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহর শপথ হযরত বিলাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) প্রত্যেক ফজরের
আযানের পূর্বে এই দোয়াটা পড়তেন,
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﻲ ﺍﺣﻤﺪﻙ ﻭﺍﺳﺘﻌﻴﻨﻚ
ﻋﻠﻲ ﻗﺮﻳﺶ ﺍﻥ ﻳﻘﻴﻤﻮﺏ ﺩﻳﻨﻚ
ঐ সাহাবী আরো বলেন আমি কখনো দেখি নাই যে তিনি এই দোয়াটা ছাড়া কখনো আযান শুরু করেছেন।
[আবু দাউদ শরীফ ১ম খণ্ড ,বজলুল মাঝহুদ (আবু দাউদের শরাহ) খণ্ড -১, পৃষ্ঠা- ২৯৮,বায়হাকি খণ্ড ১ ,পৃষ্ঠা ৪২৫.]

সুতরাং প্রমাণ হল আযানের আগে দোয়া পাঠ করা জায়েয। আর দরুদ হল একপ্রকার দোয়া।

দলীল নং- ০৪
➖➖➖➖
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ ﻣﻦ ﺳﻦ
ﻓﻲ ﺍﻻﺳﻼﻡ ﺳﻨﺔ ﺣﺴﻨﺔ ﻓﻠﻪ ﺍﺝ
ﺍﺟﺮﻫﺎ ﻭﺍﻻﺟﺮ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﺑﻬﺎ
অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামে একটা সুন্দর ও উত্তম প্রথা আবিষ্কার করলো বা চালু করলো তার জন্য উত্তম প্রতিদান আছে এবং যারা তার উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান আছে।
[সহিহ মুসলিম, মেশকাত শরীফ পৃষ্টা- ৩৩.]

দলীল নং- ০৫
➖➖➖
ﺍﻥ
ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﻼﺀﻛﺘﻪ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ
ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻤﻮﺍ ﺗﺴﻠﻴﻤﺎ

নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেস্তাগণ নবী (ﷺ) এর ঊপর দরুদ পড়েন, হে ঈমানদারগণ তোমরাও তার উপর দরুদ ও সালাম পড়।
(আল আহযাব ৫৬)

অত্র আয়াতের তাফসীরে বলা হয় মাকরুহ সময় বাদে সর্বদা দরুদ পড়া জায়েয। তাহলে আযানের আগে নাজায়েয হবে কেন?

দলীল নং- ০৬
➖➖➖
কোন কিছু হারাম প্রমাণ করতে তার জন্য হারামের দলিল লাগে কেননা শরীয়তের বিধান হল-
ﺍﺻﻞﺍﻻﺷﻴﺎ
ﺍﻻﺑﺎﺣﺔ
অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুই মূলত বৈধ থাকে। পরবর্তী ফরযের দলিল থাকলে ফরয হয়, সুন্নাতের দলিল থাকলে সুন্নাত হয়, আর হারামের দলিল থাকলে হারাম হয়। আর কোন দলিল না থাকলে বৈধ হয়।

এখন আপনারা একটা দলিল দেখান যেখানে আযানের আগে দরুদ হারাম বলা হয়েছে।তাহলে আপনারা কিসের ভিত্তিতে হারাম বলেন?
রাসূল (ﷺ) এর দরুদ পড়লে তো খারাপ লাগে শয়তানের তাহলে আপনাদের কেন খারাপ লাগে?

ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻚ ﻳﺎﺳﻴﺪﻱ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ

আযানের পূর্বে ও পরে রাসূলে কারীম (ﷺ)
এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করা শুধুমাত্র
জায়েজই নয় বরং উত্তম। ইহা শরীয়ত স্বীকৃত
একটি গ্রহনযোগ্য ইবাদত। যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। আজানের আগে ও পরে দুরুদ সালাম পড়া জায়েজ!

আযানের আগে সালাতু সালাম পড়া যে বৈধ, যে সব কিতাবে রয়েছে তা নিচে দেওয়া হলো ৷
১. দুররুল মুখতার:১/৭৮পৃ: কিতাবুত তাহারাত
২. ইমাম তিরমিযী: আস সুনান: ৪/১৯২পৃ:হাদীস:১৭২৬
৩. আবূ দাউদ বাবুল আযান,১/৭৭পৃ
৪. ফতোয়ায়ে শামী:১/৩৮৩পৃ: ৷
৫. জালাউল ইফহাম:২৫২পৃ: ৷
৬. আল্লামা মোল্লা আলী কারী:শরহে শিফা:২/
১০৭পৃ:,বৈরুত৷
৭. ফতহুল বারী শরহে বুখারী:৮/৭১২পৃ: ৷
৮. তাফসীরে ইবনে কাসীর:৪/৫২৫পৃ৷
৯. নাসাঈ:১/২৪৮পৃ: ৷
১০. শিফা শরীফ:২/৪৩পৃ,বৈরুত ৷

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment