লেখক: Abu Ayub Al Quadry
বিষয়বস্তু:
★ আমীরে মুয়াবিয়া (রা) নাকি মাওলা আলী (রা) এর প্রতি বিদ্বেষ রাখতেন
★ আমীরে মুয়াবিয়া (রা) নাকি হযরত সাদ (রা) কে বলেছিলেন মাওলা আলী (রা) কে গালি দিতে ইত্যাদি আপত্তির জবাব
শিয়া – রাফেজিরা আমীরে মুয়াবিয়া (রা) কে নিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে। অপবাদ ও অভিযোগের মাধ্যমে তাঁকে মুনাফিক, কাফির, শরাবি, ইত্যাদি তকমা লাগিয়ে তার মান ও মর্যাদাকে আঘাত করার চেষ্টা করে । তাই আমার ইমানি দায়িত্ব হিসাবে পর্ব ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্ত অভিযোগ বা অপবাদ ও তার সাপেক্ষে যেসব প্রমাণাদি পেশ করে সেগুলোর খন্ডন করব এবং যথাযথ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ যাতে বিতর্কের অবসান ঘটে এবং চিরকালের জন্য তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
শিয়াদের অভিযোগ আমীরে মুয়াবিয়া (রা) মুনাফিক ছিলেন নাউযুবিল্লাহ কারণ তিনি মাওলা আলী (রা) এর বিদ্বেষি ছিলেন এবং সেই বিদ্বেষে তাঁকে গালি দিতেন । এই মর্মে প্রথমে তারা সাধারণত যেসব হাদিসগুলো পেশ করে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، – وَاللَّفْظُ لَهُ – أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ زِرٍّ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَىَّ أَنْ لاَ يُحِبَّنِي إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يُبْغِضَنِي إِلاَّ مُنَافِقٌ .
অর্থঃ তাবেয়ী জির বিন হুবাইশ হতে বর্ণিত তিনি বলেন , হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু – ফরমান ,সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম করেন এবং জীবকূল সৃষ্টি করেন,আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যক্তিই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।
(১)মুসলিম শরীফ হাদীস নং-১৪৪
(২)মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,খন্ড-১ হাদীস নং-১০৬২
(৩)তিরমিজি শরীফ, খন্ড-৪, হাদীস নং-৩৭৩৬
(৪)ইমাম নাসায়ি,সুনান আসসুগরা,বাব- আলামাতুল মুনাফিক,হাদীস নং-৪৯৮২
(৫)নাসায়ি সুনানুল কুবরা,বাব-ফারকু বাইনাল মোমিন ওয়াল মুনাফিক হাদীস নং-৭২৫৭
(৬)ইবনে মাজাহ, বাব- ফাজায়েলুস সাহাবা,হাদীস নং-১১৪
(৭)মুসনাদে আবু ইয়ালা,হাদীস নং-৪২৫
(৮)মুসনাদে হুমাইদ, হাদীস নং-৫৮
(৯)সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং- ৬৯২৪
(১০)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, খন্ড-১২,হাদীস নং- ৩১৪৪৫
(১১)মুসনাদে বাজ্জার, হাদীস নং-৫১৪
(১২)ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ফাজায়েলে সাহাবা,হাদীস নং-১০৭২
(১৩)ইমাম আবু নুয়াইম,হিলইয়াতুল আউলিয়া,হাদীস নং-৫৩৪৪
(১৪)খতিব বাগদাদি, তারিখে বাগদাদ,খন্ড-১৪,পৃষ্ঠা-৪২৬
(১৫) শারহে উসুলে এইতেকাদ, হাদীস নং-২১৬৬
(১৬) ইমাম হাকিম, মারেফাতে উলুমে হাদীস নং-৩৭২
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ وَسَمِعْتُهُ أَنَا مِنْ عُثْمَانَ بْنِ مُحَمَّدٍ قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبِي نَصْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي مُسَاوِرٌ الْحِمْيَرِيُّ عَنْ أُمِّهِ قَالَتْ سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ تَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِعَلِيٍّ لَا يُبْغِضُكَ مُؤْمِنٌ وَلَا يُحِبُّكَ مُنَافِقٌ
অর্থ: হযরত উম্মে সালমা হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলীকে (রাঃআঃ) উদ্দেশ্য করে বলতে শুনেছি কোন মোমিন তোমার প্রতি বিদ্বেষ রাখবে না আর কোন মুনাফিক তোমাকে মুহাব্বত করবে না।
১)মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৪১৩
২)ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ফাজায়েলুস সাহাবা, হাদীস নং-১১৬৯
حدثنا أبو جعفر أحمد بن عبيد الحافظ بهمدان ثنا الحسن بنعلي الفسوي ثنا إسحاق بن بشر الكاهلي ثنا شريك عن قيس بن مسلم عن أبي عبد الله الجدلي عن أبي ذر رضي الله عنه قال ما كنا نعرف المنافقين الا بتكذيبهم الله ورسوله والتخلف عن الصلوات والبغض لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه
অর্থ: আবু জির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা মুনাফিক চিনতাম শুধু আল্লাহ ও তার রাসুল ﷺ কে অস্বীকার করার মাধ্যমে, নামাজে গাফিলতির মাধ্যমে এবং মাওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষের মাধ্যমে।
(হাকিম আল মুস্তাদরাক,খন্ড-৩,হাদীস নং-৪৬৪৩)
উদ্ধৃত হাদীসগুলির মাধ্যমে বোঝা যায় মাওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষ রাখা মুনাফিকের চিহ্নের মধ্যে একটি চিহ্ন।
আমীরে মুয়াবিয়া (রা) কে মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করার, যে প্রথম কারণটি তারা পেশ করে তা হলো আমীরে মুয়াবিয়া (রা) নাকি বিদ্বেষ বসত মাওলা আলী (রা) কে গালাগালি করতেন। কিন্তু বিষয় হলো, তাদের এই দাবির বাস্তবতা কি এবং তাদের দাবি বা অভিযোগ প্রমাণের সাপেক্ষে যে দলিল পেশ করে তা দেখে নেওয়া দরকার। তারা তাদের দাবির সাপেক্ষে যেসব দলিল পেশ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিম্নোক্ত হাদীস।
باب مِنْ فَضَائِلِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رضى الله عنه
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، – وَتَقَارَبَا فِي اللَّفْظِ – قَالاَ حَدَّثَنَا حَاتِمٌ، – وَهُوَ ابْنُ إِسْمَاعِيلَ – عَنْ بُكَيْرِ بْنِ مِسْمَارٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ فَقَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلاَثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَنْ أَسُبَّهُ لأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَهُ خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نُبُوَّةَ بَعْدِي ” . وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ ” لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ” . قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا فَقَالَ ” ادْعُوا لِي عَلِيًّا ” . فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ( فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ) دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ ” اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلِي ”
অর্থ : আমির ইবনে সা’দ তার পিতা সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃআ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমীরে মুয়াবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান (রাঃআ) সা’দ (রা) কে আমীর বানালেন এবং বললেন,
আলী (রাঃ আঃ) কে গালি দিতে তোমাকে কিসে বাধা দেয় ?
সা’দ বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে যে তিনটি কথা বলেছেন তা মনে করে আমি কখনও তাকে গালি দিবো না। ঐসব কথার মধ্য হতে যদি একটিও আমি লাভ করতে পারতাম তাহলে তা আমার জন্য লাল উটের চেয়েও বেশি পছন্দনীয় হতো।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আলী (রাঃআঃ) এর উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি, মাওলা আলীকে কোন যুদ্ধের সময় প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলে তিনি বললেন, মহিলা ও শিশুদের মাঝে আমাকে রেখে যাচ্ছেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এতে আনন্দবোধ কর না যে, আমার কাছে তোমার মর্যাদা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর মতো। তবে মনে রাখতে হবে যে, আমার পর আর কোন নবী নেই।
খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেবো যে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার রাসুলও তাকে ভালবাসে। এ কথা শুনে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। তখন তিনি বললেন, আলীকে ডাকো। আলী আসলেন, তাঁর চোখ উঠেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে লালা দিলেন এবং তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করলেন। পরিশেষে তাঁর হাতেই বিজয় তুলে দিলেন আল্লাহ।আর যখন এই আয়াতঃ “আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকি তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকো অবতীর্ণ হলো, তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রাঃআঃ) কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার।
(১)সহীহ মুসলিম কিতাবুল ফাজায়েল, হাদীস নং-৬০০২
(২)সুনানে তিরমিজি, কিতাবুল মানাকিব,হাদীস নং-৩৩৫৮
(৩)সুনানে নাসায়ি, কিতাবুল খাসায়েস হাদীস নং-৭১৬৯
(৪)হাকিম আল মুস্তাদরাক, কিতাবুল মারেফাত, হাদীস নং-৪৫৫২
প্রথমত : উক্ত হাদীসের উপর আমার জবাব , উক্ত হাদীসে تَسُبَّ শব্দ যার অর্থ গালি হলেও নিন্দা বা দোষ ত্রুটি বর্ণনা করাও হয়ে থাকে। যেমন আরবী হতে ইংরেজি অভিধান মু’জামুল মাআনিতে تَسُبَّ এর শব্দের অর্থ লেখা আছে blaspheming -নিন্দা,opprobrium – যার অর্থও নিন্দা
অর্থাৎ উক্ত অংশটির مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ অর্থ হবে আবু তুরাবকে নিন্দা করতে কিসে বাধা দেয়..?
দ্বিতীয়ত: উক্ত হাদীস সম্পর্কে যদি বলা যায়, উলামায়ে কিরামদের মধ্যে অনেকেই অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ ইতিবাচক ব্যাখ্যা দিয়েছেন আবার কেউ কেউ নেতিবাচক।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম নববী, ইমাম কুরতুবী, আল্লামা আলুসি আরো অনেকে। আমি তাঁদের ব্যাখ্যার দিকে না গিয়ে উক্ত হাদীসের উপর যৌক্তিক ও দলিল ভিত্তিক আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। তাই কারোর যদি আমার ব্যাখ্যা খন্ডন করার হয় সে যেন যথাযথ যুক্তি ও দলিল পেশ করে। আর কেউ যেন এটা মনে না করে আমার বক্তব্য খন্ডন করতে উলিমাদের উক্তি দিয়ে খালাস হওয়ার সুযোগ আছে কারণ যৌক্তিকতার খাতিরে উলামায়ে কিরামদের সাথে দ্বিমত করা যেতে পারে । তাই হাদিস সম্বন্ধে আমি যে যৌক্তিক আলোচনা করবো বা দলিল পেশ করবো, তাদেরকেও যুক্তি ও দলিল দিয়েই তা খন্ডন করতে হবে। যাইহোক হাদীসের বিষয়বস্তুর দিকে আসা যাক।
যদি তাদের অর্থ ধরা যায় تَسُبَّ অর্থ গালি তারপরেও,তাদের অভিযোগ প্রমাণিত নয় কারণ হাদীস লক্ষ করলে বোঝা যায় আমীরে মুয়াবিয়া (রা) সা’দ (রা) কে আমীর হিসাবে নিয়োজিত করে তাকে মাওলা আলী (রা) কে গালি দিতে বাধা কিসের সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মাত্র অর্থাৎ আলীকে গালি দিতে তোমার জিভে বাঁধে কিনা। যদি বাঁধে তার কারণ কি, এটাই ছিলো তাঁর উদ্দেশ্য।তাঁর জিজ্ঞাসাতে প্রমাণ হয়না তিনি সা’দ (রা)কে গালি দিতে হুকুম দিয়েছিলেন বরং প্রমাণ হয় তিনি সা’দ রা) কে আমীর বানিয়ে,তার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন যে মাওলা আলী (রা)কে গালি দিতে বাধা কেন (ভয় ও নাকি তার মর্যাদা)? অর্থাৎ জিজ্ঞাসা করে দেখছিলেন অপর দিক থেকে উত্তর কি আসে এমন তো নয় তাদের মধ্যে বিভেদের কারণে মাওলা আলী (রা) এর প্রতি কোন অশালীন মন্তব্য মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন!! আসলে উদ্দেশ্য ছিলো হযরত সা’দ (রা) এর ধারণা জানা তাই যখন হযরত সা’দ (রা) এর কাছ থেকে আশানুরূপ উত্তর পেলেন,তার কোন প্রতিউত্তর করলেন না। যদি গালি দেওয়ার হুকুম দিতেন তাহলে হযরত সা’দ (রা) এর উত্তরের পর আমীরে মুয়াবিয়া (রা) তার প্রতি উত্তরে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু বলতেন।তাঁর চুপ থাকা প্রমাণ করে,যে উত্তর তিনি আশা করছিলেন সেটাই পেয়েছিলেন তাই কোন প্রতিউত্তর করেননি।
শিয়াদের দাবী অনুযায়ী তিনি যদি বিদ্বেষ বসত মাওলা আলী (রা) কে গালি দিতেন , তাহলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকবে, তিনি যাকে আমীর বানিয়েছেন তার কাছ থেকে মাওলা আলী (রা) এর প্রশংসা শুনে রাগের প্রকাশ না দেখিয়ে কিংবা তার প্রতিউত্তর না করে কিংবা তাকে চুপ করে যাওয়ার জন্য আদেশ না করে তার ফজিলত শুনতে থাকলেন!! কিছু বললেন না কেন .? মাওলা আলী (রা) এর ফজিলত শুনে প্রতিউত্তর না করা প্রমাণ করে শিয়াদের এই অভিযোগ অবান্তর।কারণ কেউ কারোর প্রতি বিদ্বেষ রাখে আর তারই নিযুক্ত আমীরের কাছ থেকে সেই ব্যক্তির প্রশংসা শুনে চুপ থাকবে তা হতে পারে না।
তৃতীয়ত : আপনারা জানেন যে, হাদিসের দুইটি অংশ থাকে একটি সনদ আর একটি মতন। উপরের হাদিসে যে ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে মতন আর যার মারফত আমরা এই ঘটনা জানতে পারছি তাকে রাবি বলে এবং রাবিদের সিলসিলাকে সনদ বলে।হাদিসের উসুল সম্পর্কে যারা সামান্য জ্ঞান রাখেন তারা জানেন যে, অনেক সময় সহীহহ হাদিসের মতন সহীহ নাও হতে পারে বা মতনের উপর সন্দেহ থাকতে পারে।হাদিসে অনেক প্রকার আছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে খবরে ওয়াহিদ। মানে যে হাদিসটি শুধুমাত্র একজন সাহাবীর বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় তাকে খবরে ওয়াহিদ হাদিস বলে থাকে।
উপরের হাদিসটিও খবরে ওয়াহিদ হাদিস।আর খবরে ওয়াহিদের মতন সন্দেহাতীত নয় তাতে সন্দেহ থাকে যেমন উসুলুশ শাশীর ২৮৯ পৃষ্ঠা, ইসহাক হাকিম আল রুমির (৯৫০হিজরি) লিখিত শারহ ফিকহুল আকবারের ৮১ পৃষ্ঠায় এবং আলাউদ্দিন বুখারীর (৮৪১ হিজরি) লিখিত কাশফুল আসরারের-১৪ পৃষ্ঠায়
فهو كذالك فى حق السنّة الّا انّ الشبهة فى باب الخبر فى ثبوته من رسول الله صلى الله عليه وسلم واتصاله به ولهذا المعنى صار الخبر على ثلثة اقسام صحّ من رسول اللهصلى الله عليه وسلم وثبت منه بلاشبهة وهو المتواتر وقسم فيه ضرب شبهة وهو المشهور قسم فيه ا حتمال و شبهة وهو الاحاد
অর্থ : খবরের মধ্যে উহা নবী (সাঃআঃ) থেকে প্রমাণিত কিনা এবং নবী করিম (সাঃআঃ) পর্যন্ত বর্ণনা দ্বারা পৌছেছে কিনা তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে থাকে এ জন্য খবর তিন প্রকার ১. যা নবী করিম (সঃআঃ) হতে সন্দেহাতীত ভাবে সহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে তাই খবরে মুতাওয়াতির ২. যাতে একপ্রকার সন্দেহ রয়েছে তা হল খবরে মাশহুর ৩. যাতে সন্দেহ সংশয় উভয় রয়েছে তাকে খবরে আহাদ বলে।
অতএব বলা যেতে পারে যে বর্ণনাতে সরাসরি সন্দেহ থাকে সেটাই খবরে ওয়াহিদ। উদ্ধৃত বর্ণনায় বর্ণনাদাতা হচ্ছেন একমাত্র সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, তার থেকে একমাত্র বর্ণনাকারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন আমির বিন সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস। তিনি ব্যতীত হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাসের কাছ থেকে কোন সাহাবী বা তাবেয়ি এই বর্ণনা শুনেছেন বলে তার প্রমাণ নেই । তাছাড়া আমির বিন সা’দের কাছ থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন বুকাইর বিন মিসমার, তিনি ছাড়া অন্য কোন রাবি পাওয়া যায়নি। যদি আরো খুলে বলা যায় হাদীসটি খবরে ওয়াহিদ তো বটেই, সনদের দিক থেকে অতিমাত্রায় গরীব প্রকৃতির।আর যারা উসুল সম্বন্ধে জ্ঞাত, তারা জানেন উসুলে হাদীস অনুযায়ী গরীব হাদীসের মতনও গরীব হয়। যেমন ইবনে সালেহ তার লিখিত উলুমে হাদীস গ্রন্থের ৪৭০ পৃষ্ঠায় লেখেন
الحديث الذي يتفرد به بعض الرواة يوصف بالغريب”، وكذلك الحديث الذي يتفرد فيه بعضهم بأمر لا يذكره فيه غيره إما في متنه وإما في إسناده .
অর্থ: গরিব সেই হাদীসকে বলা হয়, কতক রাবি একক যা বর্ণনা করে অনুরূপ কোন রাবি যদি হাদীসের কোন অংশ একাকী বর্ণনা করে, সেক্ষেত্রে সনদ হোক আর মতনের অংশ হোক উভয় গরিব।
তাই কারোর উপর আরোপিত অভিযোগকে প্রমাণ করতে সন্দেহাতীত দলিল বা প্রমাণ লাগে যা এক মাত্র খবরে মুতাওয়াতিরে সম্ভব।এমন খবর যার মধ্যে সন্দেহের অবকাশ আছে তার উপর ভিত্তি করে কাউকে দোষী বানানো
স্বার্থপরতা ও গা জোয়ারি ছাড়া কিছুই না।
তাছাড়া সনদে বুকাইর বিন মিসমার রয়েছে।যার ব্যাপারে ইমামগণ সমালোচনা করেছেন যেমন নিম্নে তার দলিল দেওয়া হলো।
بكير بن مسمار (1) أخبرنا ابن حماد قال: قال البخاري بكير بن مسمار أخو مهاجر بن مسمار روى عنه أبو بكر الحنفي في حديثه بعض النظر
অর্থ : খবর দিলেন ইবনে হাম্মাদ তিনি বলেন ইমাম বুখারী বলেছেন বুকাইর বিন মিসমার হলো মুহাজির বিন মিসমারের ভাই, আবু বকর হানাফি তার থেকে বর্ণনা করে থাকেন তার হাদীসে সমালোচনা আছে ।
তাহজিবুল কামাল, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২
إسناده ضعيف ؛ لضعف بكير بن مسمار،
ইহার সনদ জইফ, বুকাইর বিন মিসমার জইফ হওয়ার কারণে
তারিখুল বাগদাদ, খন্ড-৬ পৃষ্ঠা-৩০৩.
ابن حبان بينه وبين بكير بن مسمار أخي مهاجر بن مسمار فذكر هذا في الضعفاء فقال: كان مرجئا يروي ما لا يتابع عليه وهو قليل الحديث على مناكير فيه
অর্থ: ইবনে হিব্বান বর্ণনা করেন বুকাইর বিন মিসমার ছিলেন মুহাজির বিন মিসমারের ভাই এবং আরো বলেন সে জইফের অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে ছিলো। সে যেটা অনুসরণ করতো না সেই বর্ণনা থেকে বিরত থাকতো আর এমন কিছু হাদীস ছিলো যেগুলো মুনকার ছিলো।
লিসানুল মিজান, রাবি নং-১৬১৯
★ উক্ত হাদীসের মতন শুধু সন্দেহজনক নয় বরং একজন রাবি মুনকার হাদীস বর্ণনাতে অভিযুক্ত। আর যে নিজেই অভিযুক্ত, তার সাক্ষ্য দ্বারা কারোর প্রতি আরোপিত অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় হয়তো কেউ বলতে পারে মুসলিম শরীফের হাদীসের উপর জেরাহ করেন কি করে? মুসলিম শরীফের হাদীসও অস্বীকার করবেন?
এর উত্তরে আমি বলবো হ্যাঁ কারণ মুসলিম হোক আর বুখারী হোক কিংবা হাদীসের যেকোন গ্রন্থ হোক খবরে ওয়াহিদ অস্বীকার করার সুযোগ আছে, কারণ খবরে মুতাওয়াতিরে মতন যতটা নিক্ষুত বা সন্দেহাতীত হয় খবরে ওয়াহিদের হয় না। তাছাড়া ইমাম মুসলিম যত বড় মুহাদ্দিস হন তিনি ফেরেশতা নন যে তিনি নির্ভুল! ইজতেহাদ একেবারে নিখুঁত হবে এমন নয়, ভুল হতেই পারে। যেহেতু সনদে একজন রাবি বিতর্কিত তাই এমন সাক্ষ্যের মাধমে আরোপিত অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। তাই বলা যায় উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে শিয়াদের অভিযোগ প্রমাণ হয় না।
পরের প্রমাণ হিসাবে শিয়ারা যে বর্ণনা পেশ করে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
بَاب فَضْلِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ مُسْلِمٍ، عَنِ ابْنِ سَابِطٍ، – وَهُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ – عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، قَالَ قَدِمَ مُعَاوِيَةُ فِي بَعْضِ حَجَّاتِهِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ سَعْدٌ فَذَكَرُوا عَلِيًّا فَنَالَ مِنْهُ فَغَضِبَ سَعْدٌ وَقَالَ تَقُولُ هَذَا لِرَجُلٍ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ” مَنْ كُنْتُ مَوْلاَهُ فَعَلِيٌّ مَوْلاَهُ ” . وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ ” أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي ” . وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ ” لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ الْيَوْمَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ” .
অর্থ: সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃআঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুয়াবিয়া (রাঃআঃ) একবার হজ্ করতে আসেন। সা’দ (রাঃআঃ) তার নিকট সাক্ষাৎ করতে এলে (রাঃআঃ) লোকেরা মাওলা আলী (রা) এর সম্পর্কে অশোভন উক্তি করে। এতে সা’দ (রাঃআঃ) অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, তোমরা এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে কটূক্তি করলে যার সম্পর্কে আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আমি যার মাওলা,আলী তার মাওলা। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আরো বলতে শুনেছি তুমি আমার কাছে ঐরূপ যেরূপ ছিলেন হারূন (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট। তবে আমার পরে কোন নবী নেই। আমি তাঁকে( নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে)বলতে শুনেছিঃ আজ (খায়বার যুদ্ধের দিন) আমি অবশ্যই এমন ব্যক্তির হাতে (যুদ্ধের) পতাকা অর্পণ করবো, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে।
সুনানে ইবনে মাজাহ,কিতাবুল মুকাদ্দামা,হাদীস নং-১২১
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং-৩১৩৫৯
উক্ত হাদীসও তাদের দাবীর আরো একটি দলিল।তবে এর উত্তরে প্রথমে বলবো এখানে কিন্তু আমীরে মুয়াবিয়া কোন অশোভন উক্তি করেননি,না তিনি কাউকে এমন করতে আদেশ দিয়েছেন বলে উক্ত হাদীসে জানা যায়।বরং হাদীসে আছে আমীরে মুয়াবিয়া (রা) হজে এসেছিলেন সেখানে হযরত সা’দ (রা) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। হজে উপস্থিত লোকেরা মাওলা আলী (রা) এর সম্বন্ধে কিছু অশোভন উক্তি করে। বিষয় হলো হজে উপস্থিত লোকেরা যদি মাওলা আলী (রা) এর সম্বন্ধে অশোভন উক্তি করে তার জন্য আমীরে মুয়াবিয়া (রা) দায়ী হবেন কেন?
তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজে উপস্থিত অন্যান্যরা কেউ অশোভন উক্তিগুলি না শুনলো, না কেউ বর্ণনা করলো। পূর্বের ন্যায় এখানে শুধু হযরত সা’দ (রা)ই মাওলা আলী (রা) কে গালি দিতে শুনলেন আর তিনিই একমাত্র তা বর্ণনা করলেন, সেক্ষেত্রে বর্ণনা সম্বন্ধে একটা সন্দেহ থেকেই যায়।
উক্ত হাদীসটি সনদের দিক থেকেও গ্রহনযোগ্য নয় তার কারণ নিম্নে উল্লেখ করলাম।
উক্ত হাদিসে আব্দুর রহমান নামে একজন রাবী আছে তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে যেমন :
قيل ليحيى بن معين: سمع عبد الرحمن من سعد بن أبي وقاص؟ قال: لا. قيل: من أبي أمامة؟ قال: لا. قيل: من جابر؟ قال: لا؛ هو مرسل
অর্থ : ইহাহইয়া ইবনে মাইনকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন আব্দুর রহমান হযরত সা’দের কাছ থেকে হাদীস শুনেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, না। জিজ্ঞাসা করা হলো আবু উমামা থেকে? তিনি উত্তর দিলেন, না। জিজ্ঞাসা করা হলো হযরত জাবির থেকে? তিনি উত্তর দিলেন, না।
তাহজিবুত তাহজিব খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৮০
সনদ পর্যালোচনা করার পর জানা যায় উক্ত হাদীসে আব্দুর রহমান ইবনে সাবিত কোন হাদীসই সরাসরি হযরত সা’দ (রা) থেকে শোনেননি অতএব বলা যেতে পারে হযরত সা’দ (রা) যে বর্ণনা করেছেন তা প্রমাণিত নয়। যেহেতু বর্ণনাটির যথাযথ সাক্ষী নেই সেক্ষেত্রে যথাযথ সাক্ষী না থাকায় এটা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং এই প্রমাণের দ্বারা কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না । এখানেও তাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যাত।
তাদের অভিযোগের সাপেক্ষে তারা আরো একটি দলিল পেশ করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো
وقال أبو زرعة الدمشقي: ثنا أحمد بن خالد الذهبي أبو سعيد ثنا محمد بن إسحاق عن عبد الله بن أبي نجيح عن أبيه قال: ” لما حج معاوية وأخذ بيد سعد بن أبي وقاص فقال يا أبا إسحاق إنا قوم قد أجفانا هذا الغزو عن الحج حتى كدنا أن ننسى بعض سننه فطف نطف بطوافك، قال: فما فرغ أدخله دار الندوة فأجلسه معه على سريره ثم ذكر علي بن أبي طالب فوقع فيه فقال: أدخلتني دارك وأجلستني على سريرك ثم وقعت في علي تشتمه؟
অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে নাজিহ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন যখন হযরত আমীরে মুয়াবিয়া হজে গেলেন হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের হাত ধরলেন এবং বললেন হে আবু ইসহাক যুদ্ধ আমাদেরকে হজ থেকে আঁটকে রেখেছিলো সম্ভাবনা ছিল আমরা তার নিয়মগুলো ভুলে যেতাম। এখন আপনি তাওয়াফ করতে থাকুন আপনাকে তাওয়াফ করতে দেখে আমরাও তাওয়াফ করবো। যখন হজ থেকে বেরিয়ে এলেন তখন দারুল নাদওয়াতে নিয়ে গেলেন আর আমীরে মুয়াবিয়া তার ঘরের খাটে নিজের সাথে হযরত সা’দকে বসালেন। অতঃপর হযরত আলীর কথা উঠলে তাঁর সম্বন্ধে উল্টাপাল্টা বলতে শুরু করে দেন হযরত সা’দ বললেন আপনি নিজের ঘরের খাঠের উপর নিজের সাথে বসিয়ে মাওলা আলীকে গালি দেওয়া শুরু করে দিলেন?
আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খন্ড-৭ পৃষ্ঠা-৩৭৬
উক্ত বর্ণনাটি আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর প্রতি শিয়ারা তাদের অভিযোগ প্রমাণার্থে যে দলিলগুলো দেয়, তার মধ্যে এটি অন্যতম।তবে এই বর্ণনার উপর আমার জবাব হলো উক্ত হাদীস ও এর পূর্বের হাদীস লক্ষ করলে দেখা যায় এর পূর্বের বর্ণনায় ছিলো আমীরে মুয়াবিয়া (রা) হজে এলে হযরত সা’দ (রা) নিজে আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর নিকট সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন কিন্তু উক্ত বর্ণনায় আছে আমীরে মুয়াবিয়া (রা) হযরত সা’দ (রা) এর হাত ধরে বলেছেন হে আবু ইসহাক যুদ্ধ আমাদেরকে হজ থেকে আটকে রেখেছিলো সম্ভাবনা ছিলো আমরা তার নিয়মগুলো ভুলে যেতাম। এখন আপনি তাওয়াফ করতে থাকুন আপনাকে তাওয়াফ করতে দেখে আমরাও তাওয়াফ করবো। এবং পরে হজ শেষ হলে তিনি হযরত সা’দ (রা) কে নিজের সাথে নিয়ে যান অথচ পূর্বের বর্ণনায় ছিলো হযরত সা’দ (রা)ই দেখা করতে গিয়েছিলেন আমীরে মুয়াবিয়া (রা) তাকে নিয়ে যাননি। কিন্তু উক্ত বর্ণনায় সা’দ (রা) নিজে সাক্ষাৎ করতে যাননি বরং আমীরে মুয়াবিয়া (রা) হযরত সা’দ (রা)কে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সর্বক্ষেত্রে হযরত সা’দ (রা)ই মাওলা আলী (রা)কে গালি দিতে শোনেন আর কেউ গালি দিতে শুনেননি বা সে বিষয়ে বর্ণনা করেননি।তাহলে বলা যেতে পারে আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর উপর অপবাদ দিতে বার বার হযরত সা’দ (রা) এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। এছাড়া উক্ত বর্ণনায় একই ঘটনায় মতনের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিচ্ছে তাই এতে সন্দেহ থেকে যায় । আর এই সন্দেহকে গাঢ়ো করে মুহাম্মদ বিন ইসহাক নামক এক বিতর্কিত রাবির উপস্থিতি।তার বিতর্কিত হওয়ার প্রমাণ নিম্নে দিলাম।
محمد بن إسحاق بن يسار المطلبي المدني صاحب المغازي صدوق مشهور بالتدليس عن الضعفاء والمجهولين
অর্থ: মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বিন ইয়াসার আল মাতলাবি আল মাদানি সুদুক, আর জইফ ও মাজহুল বর্ণনাকারীদের হতে তাদলিস করাতে পরিচিত ছিলেন।
ইবনে হাজার আস্কালানি, তাবকাতুল মুদাল্লিসিন, পৃষ্ঠা-৫১
أخبرنا محمد بن الحسين القطان ، قال: أنبأنا دعلج بن أحمد ، قال: أنبأنا أحمد بن علي الأبار قال: نبأنا إبراهيم بن زياد سبلان قال: نبأنا حسين بن عروة قال: سمعت مالك بن أنس يقول: محمد بن إسحاق كذاب
অর্থ : খবর দিয়েছেন মুহাম্মাদ বিন হুসাইন কাতান তিনি বলেন আমাকে খবর দিয়েছেন দালা’জ বিন আহমাদ, তিনি বলেন আমাকে খবর দিয়েছেন আহমাদ বিন আলি আল আবার তিনি বলেন আমাকে জানিয়েছেন ইবরাহিম বিন জিয়াদ সাবলান তিনি বলেন আমাকে জানালেন হুসাইন বিন উরওয়াহ তিনি বলেন মালিক বিন আনাসকে বলতে শুনেছি
মুহাম্মদ বিন ইসহাক কাজ্জাব ছিলো।
তারিখে বাগদাদ খন্ড-১ পৃষ্ঠা-২২৩
حَدَّثَنَا مُحَمد بْنُ جَعْفَرِ بْنِ يزيد، وَمُحمد بن أحمد بن حماد، قالا: حَدَّثَنا أَبُو كلابة عَبد الملك بن مُحَمد، حَدَّثني سليمان بن داود، قَال: قَال لِي يَحْيى بْنُ سَعِيد القطان أشهد أن مُحَمد بن إسحاق كذاب،
অর্থ : মুহাম্মাদ বিন জা’ফার বিন ইয়াজিদ ও মুহাম্মদ বিন আহমাদ বিন হাম্মাদ বলেন আমাদের আবু কিলাবাহ আব্দুল মালিক বিন মুহাম্মাদ বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমাকে সুলাইমান বিন দাউদ বলেন ইয়াহিয়া বিন সাইদ আলকাতান আমাকে বলেছেন
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক কাজ্জাব ছিলো।
(ইবনে আদি আল কামিল ফি জৌফাউল রিজাল)
উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বিন আলা মাতলাবি আল মাদানি মুদাল্লিস এবং কাজ্জাব রাবি,তাই তার সাক্ষ্যতে সন্দেহ তো দূরের কথা তার সাক্ষ্য বা বর্ণনা গ্রহণযোগ্যই নয়। তাই বলাবাহুল্য শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর উপর যে অভিযোগ আনে তা তাদের অপপ্রচার বৈকি। যাইহোক এর পরবর্তী পর্বে থাকবে সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর উপর শিয়াদের বিভিন্ন অভিযোগ এবং তা পর্যালোচনা করে তার যথাযথ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ।