আমি ছিলাম গুপ্ত ভান্ডার, ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার, অতঃপর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম।
প্রচলিত জাল হাদীসের ৮১ পৃষ্ঠায় মাওলানা মতিউর রহমান এবং হাদীসের নামে জালিয়াতি বইয়ের ২২৪ পৃষ্ঠায় দুই বইয়ের লেখক উক্ত হাদিসকে জাল বলে প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
তারা উক্ত হাদীসের মূল শব্দ পরিবর্তন করেছে। মূল হাদীসের কিতাবে আমি জগতকে সৃষ্টি করলাম অনুরূপ কোথাও নেই। হাদীসে আছে, রাসূল (ﷺ) এর নূর মােবারক সৃষ্টি করলাম তার নূর মােবারক হতে সবকিছু সৃষ্টি করলাম। যেমন হাদিসগুলাে নিম্নে দেওয়া হলঃ
দলীল নং-১
🕋 বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুর রহমান শাফুরী শাফেয়ী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাব নুযহাতুল মাযালিসের ১/৪২২ পৃষ্ঠায় হযরত কা’ব আহ্বার (رحمة الله) বর্ণনা করেন:
لما اراد الله تعالى أن يخلق المخلوقات بسط الارض و رفع السماء و قبض قبضة من نوره و قال لها كوني محمدا فصار عمودا من نوره فعلا حتى انتهى الى حجب العظمة فسجد و قال في سجوده الحمد الله فقال الله سبحانه و تعالى لهذا خلقتك محمدا منك ابدا الخلق وبك أختم الرسل۔
-“যখন আল্লাহ তা’য়ালা সমস্ত বিশ্ব জগত সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি যমীনকে সম্প্রসারিত করলেন ও আসমানকে বুলন্দ করলেন এবং তিনি গ্রহণ করলেন নিজ নূর হতে মুষ্টি নূর এবং এটাকে খেতাব করে বললেন, তুমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হয়ে যাও। তখন তাঁর নূরের একটি স্তম্ভ হয়ে গেল। অনন্তর তা উধ্বদিকে চলল, তা আযমতের পর্দা সমূহে গিয়ে পৌঁছল। তারপর তা সিজদায় পতিত হল তা নিজ সজদায় বললাে,
الحمد الله
“সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর”। তখন আল্লাহ সুবহানাহুও তা’য়ালা বললেন, এজন্যই আমি তােমাকে সৃষ্টি করলাম এবং তােমার নাম রাখলাম মুহাম্মদ। তােমার হতেই আমি সৃষ্টির সূচনা করব এবং তােমাকে দিয়ে রাসূলগণের বা রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটাব।”
দলীল নং-২
🕋 নুযহাতুল মাযালিস কিতাবে উপরে উল্লেখিত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে,
وقال ابن عباس رضي الله عنهما لما أراد الله تعالى خلق المخلوقات وخفض الأرض ورفع السموات قبض قبضة من نوره ثم قال لها كوني حبيبي محمد فطاف اور محمد صلى الله عليه وسلم بالعرش قبل آدم بخمسمائة عام وهو يقول الحمد لله فقال الله تعالى من اجل ذلك سميتك محمدا (نزهة المجالس)
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা যখন মাখলুকাতের সৃজন করতে ইচ্ছা করলেন, তখন পৃথিবীকে নিম্নে স্থাপন ও আসমান সমূহের উচ্চে স্থাপন ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি নিজ দূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহণ করে ঐ মুষ্টিবদ্ধ নূরকে বললেন, তুমি আমার হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ) হয়ে যাও। অতঃপর সে নূর-ই-মুহাম্মদ (ﷺ) আদম সৃষ্টির পাঁচশ বছর পূর্বে আরশ তাওয়াফ করেছিল। তাওয়াফকালে তিনি বলেছিলন الحمد الله (সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, এ হেতু আমি তােমার নামকরণ করলাম- মুহাম্মদ।
● আল্লামা আব্দুর রহমান শাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাজালিস ২/৭৪পৃ.,মাকতাবাতুল আলকাসতালিয়্যাহ মিশর।
দলীল নং-৩
🕋 বিশ্ববিখ্যাত দার্শনীক ইমাম গাযযালী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ কানজুদ্দাকায়েক’র ১৫ পৃষ্ঠায় কিতাবের শুরুতে এভাবে বর্ণনা করেছেন: অনাদি ও অনন্ত সত্ত্বা আল্লাহ রাব্বল আলামীন যখন একা ও অপ্রকাশিত ছিলেন, তখন তার আত্নপ্রকাশের সাধ ও ইচ্ছা জাগরিত হলাে, তখন তিনি একক সৃষ্টি হিসেবে নবী করিম (ﷺ) এর নূর মােবারক পয়দা করলেন এবং নাম রাখলেন মুহাম্মদ (ﷺ)।
● অধ্যক্ষ, হাফেজ এম.এ.জলীল: নূর নবী, পৃ-১
দলীল নং-৩
🕋 ১ নং দলীলের ন্যায় হুবহু হাদিস দিয়ে দলীল পেশ করেছেন ইমাম ইবনুল যওযী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মাওলিদুল আরুস (যা আল মাকতাবাতু সাকাফিয়্যাহ, বয়রুত। থেকে মুদ্রিত) ১৬ নং পৃষ্ঠায় কা’ব আহবার (رحمة الله) হতে হাদিসটি বর্ণনা করেন।
দলীল নং-৩
🕋 আল্লামা আলুসী বাগদাদী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে লিখেছেন। আল্লাহর বাণী রাসূল (ﷺ) এর মাধ্যমে বলেন,
کنت کنزا مخنيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف
-“আমি অজ্ঞাত গুপ্তভান্ডার ছিলাম। আমি পরিচিত হতে পছন্দ করলাম। তখন আমি সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করলাম যেন আমি পরিচিত হই।”
● আল্লামা আলুসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ২৭ পারা ২২ পৃষ্ঠা।
● আল্লামা সা’দ উদ্দিন মাসউদ তাফতানী মুনতাহিল মাদারিক : ১৪২ পৃষ্ঠা।
● আল্লামা মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী : ফতুহাতে মকিয়াঃ অধ্যায় নং -১৯৮, পৃ- ১৪২।
● আল্লামা মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী : ফতুহাতে মকিয়াঃ অধ্যায় নং -১৯৮, পৃ- ১৪২।
🕋 আল্লামা আলুসী (رحمة الله) উক্ত বর্ণনার পর বলেন –
انه ثابت کشفا و قد نص على ذالك الشيخ الأكبر قدس سره في الباب المذكور
-“নিশ্চয় এই বক্তব্যটি কাফের দ্বারা দৃঢ় বা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত। তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন আল্লামা শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) তার ফতুহাতে মক্কীয়াহ গ্রন্থের এক অধ্যায়ে।”
● আল্লামা আলুসী আল বাগদাদী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ২২ পারা ২২ পৃষ্ঠা
অপরদিকে আল্লাহ পরিচিত হওয়ার জন্য সৃষ্টি জগত সৃষ্টির ব্যাপারে আরও কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়।
🕋 আহলে হাদীসের অন্যতম আলেম ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাওকানী – সূরা যারিয়াত, আয়াত নং-৫৬, ব্যাখ্যায় লিখেন,
وقال مجاهد: إن المعني: إلا ليعرفوني. قال الثغلبي: وهذا قول حسن
-” (আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য) ইমাম মুযাহিদ (رحمة الله) এর ব্যাখ্যায় বলেন,আল্লাহর পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন সব কিছু।
👉 ইমাম ছা’লাবী (رحمة الله) বলেন ইহা হযরত হাসান বসরী (رحمة الله)’র অনরূপ বক্তব্য।
● শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ৫৯২ পৃ.
আবার এক জামাত ইমামগন শধু একক অনুরূপভাবে-
🕋 হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সংকলন করেছেন যে – অর্থাৎ,
“আল্লাহর তার পরিচয়ের জন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।”
● ইমাম আলুসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১৫/৫০ পূ.
● ইমাম বগভী: তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীলঃ ৪/২৩৫ পূ.।
● ইমাম ছালাভী : তাফসীরে ছা’লাভী : ৪/২১২।
● ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে আহকামুল কোরআন : ১৭৫৫ পূ.।
● আল্লামা শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ৫৯২ পৃ.।
🕋 আল্লামা শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) এ রেওয়াতটি এভাবে বর্ণন করেন,
کنت کنزا لم اعرف فاحببت ان اعرف فخلقت خلق و تعرفت اليهم فعرفونی
● ফতুহাতে মক্কিয়া ৪৩/৪ বাব ১৯৮
🕋 আল্লামা ইমাম আলুসী (رحمة الله) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আল্লামা ইমাম সাখাভী (رحمة الله) এর কওল মাকাসিদুল হাসান হতে নকল করে বর্ণনা করেছেন –
كنت كنزا لا اعرف فخلقت خلقا فعرفتهم بي فعرفوني تفسير روح المعاني ٢٥/٢٧
🕋 আল্লামা আজলুনী (رحمة الله) তাঁর কাশফুল খাফার মধ্যে আল্লামা মােল্লা আলী কারী। (رحمة الله)’র নিন্মােক্ত কথা উল্লেখ করেছেন,
: قال القاري لكن معناه صحيح يستفاد {وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون} أي اليعرفون كما فسره ابن عباس رضي الله عنهما و المشهور على الألسنة كنت کنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت خلقا فبي عرفوني و هو و عشرون كثيرا في كلام
الصوفية و اعتمدوا و بنوا عليه اصولا لهم
-“আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন এ হাদিসটির মমার্থ সহিহ, আর তা বুঝা যায়, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) সূরা জারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ- আমার পরিচয়ের জন্য আমি মানুষ ও জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি।
● আল্লামা আলুসী বাগদাদী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১৫ পারা: ৫০ পৃষ্ঠা।।
● আজলুনী : কাশফুল খাফা : ২১২১ পৃ.হাদিস ২০১৪
🕋 অপরদিকে আল্লামা ইমাম বাগভী (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাসের (رضي الله عنه) বক্তব্য এভাবে বর্ণনা করেন:অর্থাৎ- আমার পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করলাম মানুষ ও জ্বিন জাতি।
● আল্লামা ইমাম বগভী : তাফসীরে মুআলিমুত তানযীল : ৪/২৩৫
🕋 অপরদিকে আল্লামা আবু সাউদ উমাদি (رحمة الله) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
{وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون} أي ليعرفون كما أعرب عنه قوله عليه الصلاة والسلام يقول الله تعالی گنت کنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق ১৩০\২
সূত্র, প্রমানিত হাদীস কে জাল বানানোর স্বরুপ উন্মোচন
মুফতি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাহাদুর