খারেজী ও নাসেবী (আহলে বাইত বিদ্বেষী) মতাদর্শী আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, আবূ বকর জাকারিয়া, ড. ইমাম হুসাইনের ধোঁকাবাজি ও মিথ্যাচারের জবাব
ধোঁকাবাজ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর “হাদিসের নামে জালিয়াতি” বইয়ে প্রিয় নবী ﷺ এঁর হাদিসঃ “আমি ইলমের শহর আর আলী তাঁর দরজা”- এটিকে আরেক ধোঁকাবাজ আলবানীর মতো জাল জয়ীফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। আবূ বকর জাকারিয়া তো ডাইরেক্ট শিয়াদের বানানো বলে বলে চিল্লায়। আর ড. ইমাম হুসাইন “জাল হাদিসের কবলে আমাদের ইসলাম” বইয়ের ৪০ তম হাদিসে এটাকে জাল বলেছে।
মাওলা আলী (রঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: আমি বিদ্যা বা হিকমতের ঘর আর ‘আলী হলেন সে ঘরের দরজা। [মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৯৬]
মিশকাতের এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আহলে হাদিসদের hadithbd ওয়েবসাইটে রয়েছে,
ব্যাখ্যা: (أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ)
অন্য বর্ণনায় আছে, (أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ)
মাসাবীহ-এর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, (أَنَا دَارُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا) অর্থাৎ আমি ‘ইলমের ঘর আর ‘আলী (রাঃ) হলো তার দরজা।
অন্য আরেকটি বর্ণনায় অতিরিক্ত এসেছে, (فَمَنْ أَرَادَالْعِلْمَ فَلْيَأْتِهِ مِنْ بَابِهِ) অর্থাৎ যে ‘ইলম চায় সে যেন তার কাছে তার দরজা দিয়ে আসে। এর অর্থ হলো, ‘আলী (রঃ) তার দরজাসমূহ থেকে একটি দরজা। তবে এখানে নির্দিষ্ট করা মানে এক প্রকার সম্মান দেয়া। তাঁর দিকে সম্পৃক্ত করার কারণ হলো তিনি কতিপয় সাহাবীর চেয়ে বেশি সম্মানিত ও জ্ঞানী ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
একটু অন্তরের চোখ দিয়ে খেয়াল করুন এবং হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুন, যাকে শুধুমাত্র মুমিনরাই ভালবাসবে তাঁর প্রেম জাগ্রত করে আবার দেখুন, একটা হাদিস আলাদাভাবে শব্দগত ভিন্নতায় চারটা বর্ণনায় এসেছে বলে মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতের রেফারেন্সে এরা লিখেছে। তাহলে প্রত্যেকটা সনদ যদি যঈফও ধরে নেয়া হয়, তাহলেও তো এই হাদিস কখনো জাল হতে পারে না। কেননা যঈফ সনদের হাদিস একাধিক সূত্রে বর্ণিত হলে সেটা শক্তিশালী হয়ে যায় এবং হাসান লি গয়রিহী স্তরে উপনীত হয়। আমার মুখের কথা কিংবা কোন মুহাদ্দিসের কথা নয় আহলে হাদিসদের hadithbd ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই এটা প্রমাণ করছি-
মিশকাতের ১৭১৯ নং হাদিসকে এরা যঈফ লিখেছে। কিন্তু এর ব্যাখ্যায় লিখেছে যে, “এই হাদীস দ্বারা এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ক্ববরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া যায়, আর এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এই ব্যাপারে এ ছাড়া আরো অন্যান্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যা আবূ রাফি‘র হাদীসকে শক্তিশালী করে।”
মিশকাতের ১৯২৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায় রয়েছে, ‘আশূরার দিন নিজ পরিবারের প্রতি প্রশস্ততার সাথে খরচ করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে ‘আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন। ইবনুল জাওযী, ইবনু তায়মিয়্যাহ্, আল ‘উকায়লী, আয্ যারকাশী এর মতে হাদীসটি বানোয়াট। তবে বায়হাক্বী (রহঃ)-এর মতে হাদীসটি বহু সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় এটি শক্তিশালী হয়ে ‘হাসান’ হয়েছে। লেখক বলেন, আমার মতে নির্ভরযোগ্য মত হচ্ছে ইমাম বাইহাক্বীর মত। কারণ হাদীসটির বহু সূত্র একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। য‘ঈফ সানাদগুলো একত্র হয়ে শক্তি অর্জন করেছে। আল্লাহ’ই এ ব্যাপারে অধিক জানেন।
আশা করি, মুমিনদের জন্য এর চেয়ে বেশি দলিলের প্রয়োজন নাই। তবুও আরো দঢ় মনোবল সৃষ্টির জন্য বলি-
লেখক ও গবেষক শহিদুল্লাহ বাহাদুর ভাই “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরুপ উন্মোচন” বইয়ে তিনি এই হাদিসটির আটটির মত সূত্র উল্লেখ করে এটাকে আল হাদিস হিসেবে প্রমাণ করেছেন এবং তিনি এই প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য উল্লেখ করে দেখিয়ে দিয়েছেন এটা জাল কিংবা জয়ীফ সনদের হাদিস নয় (আর উসূলে হাদিস সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রাখা ব্যক্তিও এটা জানে যে, একই হাদিস একাধিক জয়ীফ সনদে বর্ণিত হলেও সেটা আর জয়ীফ থাকে না, একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে এবং হাসান লিগইরিহীর স্তরে উপনীত হয়)। তিনি দেখিয়েছেন যে, শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ এটাকে “হাসান” স্তরের হাদিস বলে উল্লেখ করেছেন, ইমাম হাকিম নিশাপুরী রহঃ এটাকে “সহিহ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ুতী রহঃ ও এটাকে হাসান বলেছেন এবং মোল্লা আলী রহঃ শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ এঁর মত উল্লেখ করেছেন।
মাওলা আলী (রঃ) বলেন, সে মহান সত্তার কসম! যিনি বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নবী ﷺ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মু’মিন ব্যক্তিই আমাকে ভালোবাসবে, আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা (বিদ্বেষ) পোষণ করবে। (সহীহ মুসলিম ১৪৩, শব্দগত ভিন্নতায়- সূনান আন নাসাঈ ৫০১৮, ৫০২২, সূনান ইবনে মাজাহ ১১৪, সূনান আত তিরমিজি ৩৭৩৬)
অন্য একটা ভবিষ্যদ্বাণী যার সারকথা এই যে,
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “হে আলী! তোমার উপমা ঈসা আলাইহিস সালাম এঁর মত। ঈসা আলাইহিস সালাম কে ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করে একদল পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা হলো খ্রীষ্টান, আর তাঁকে হিংসা করেও একদল পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা ইহুদী। অনুরুপ তুমি আলির সাথেও হবে। একদল তোমার ভালোবাসাতে অতিরঞ্জিত করে পথভ্রষ্ট হবে, আরেক দল তোমার সাথে হিংসা বিদ্বেষ রেখে পথভ্রষ্ট হবে।” (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড-১, পৃষ্ঠা নং-১৬০; ফাজায়েলে সাহাবা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ডঃ ২, পৃষ্ঠা নং-৬৩৯, হাদিস নং-১০৮৭)
মাওলা আলী (আঃ) বলেন, ‘‘আমার ব্যাপারে দুই ব্যক্তি ধ্বংস হবে। প্রথম হল, আমার ভালোবাসায় সীমা অতিক্রমকারী এবং দ্বিতীয় হল, আমার বিদ্বেষে সীমা অতিক্রমকারী। (কিতাবুস সুন্নাহ ৯৭৪)
আমরা শিয়াদের মত অতিরঞ্জিত করে জাল হাদিস বানায় না, আবার আল হাদিসকে অস্বীকার করে জাল ও শিয়াদের বানানো বলেও চালায় না।
আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই মুকাশাফাতুল কুলুবে বর্ণিত মাওলা আলী আলায়হিস সালাম এঁর কালামঃ যে ব্যক্তির মাঝে ৬টি অভ্যাস পাওয়া যায় সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত ও জান্নাতের অধিকারী।
১. যে আল্লাহ’কে চিনে তার ইবাদত করলাে।
২. যে শয়তানকে চিনে তার বিরােধিতা করলাে। (মানুষরুপী শয়তানও কিন্তু থাকে)
৩. যে বাতিল (ভ্রান্ত) কে চিনে তা বর্জন করলাে।
৪. যে হক্ব (সত্য) কে চিনে তার অনুসরণ করলাে।
৫. যে আখিরাতকে চিনে তার কামনায় ছিলাে ।
৬. যে দুনিয়াকে চিনে একে পরিহার করলাে।
আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,
“আর অবশ্যই আমি (আল্লাহ) বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর।”(সূরা আরাফঃ ১৭৯)
“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে যারা (হক্ব কথা শুনার ব্যাপারে) বধির এবং (হক্ব কথা বলার ব্যাপারে) বোবা, যারা উপলব্ধি করে না (বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না)।” (সূরা আনফালঃ ২২)