আপত্তি:কোরআনে নবীজিকে হেদায়াতি হিসেবে নুর বলা হয়ছে সৃষ্টি হিসেবে না।
কোরআনে ত কোরান, ইসলাম,ইমান ইত্যাদিকেও নুর বলা হয়েছে এখন কি বলবেন এগুলোও নুরের তৈরি অথচ এগুলোকে নুরের তৈরি বললে ইমান থাকবে না।সুতরাং নবীজি হেদায়াতি নুর সৃষ্টি নুর নয়।
জবাব:এই ধরনের কথা যারা বলে আল্লাহ তাআলা তাদের মূলত ইলম দেন নি এইজন্য তারা উল্টাপাল্টা কথা বলে।প্রথমেই বলে দিই আমরা নবীজিকে হেদায়াত হিসেবেও নুর বলি সৃষ্টি হিসেবেও নুর বলি।এখন আসেন নুর কয় প্রকার সেটি জেনে নিই।
নুর দুই প্রকার একটা হচ্ছে নুরই হিস্সি (ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য নুর) আরেকটি হচ্ছে নুর ই আকলি (বিবেকগ্রাহ্য নুর)
‘নূর-ই হিস্সী’ (نورحسّى) বলা হয় ওই নূরকে, যা চোখে দেখা যায়। যেমন- রোদ, চেরাগ (প্রদীপ)ও বিজলী (বিদ্যুৎ) ইত্যাদির আলো। আর ‘নূর-ই আক্বলী’ (نورعقلى) বলা হয় ওই নূরকে, যাকে চোখ তো অনুধাবন করতে পারেনা, কিন্তু বিবেক বলে যে, এটা নূর, এটা রুশ্নী। এ অর্থে ‘ইসলাম’কে, ‘ক্বোরআন’কে, ‘হিদায়ত’কে এবং ‘ইল্ম’কে ‘নূর’ বলা হয়।কখনো কখনো এমন জিনিসকেও নুর বলা হয় যেখান থেকে আলো প্রকাশ পায়।এই অর্থে সূর্যকেও নুর বলা হয়
এখন ক্লিয়ার নুর শব্দটা কোন জায়গায় কোন অর্থে ব্যবহৃত হবে।আপনি রোদ কে হেদায়াতি নুর যেমন বলতে পারবেন না তেমনি কোরান শরীফকে সৃষ্টি নুর বলতে পারবেন না।জায়গার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহৃ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি ও হেদায়াত উভয় দিক দিয়ে নুর। নবীজির মাধ্যমে মানুষ সৎপথ প্রাপ্ত হয় হেদায়াত পায় এইদিক দিয়ে হেদায়াতি নুর আবার নবীজিকে নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে এইদিক দিয়ে নবীজি সৃষ্টি নুর।নবীজির থেকে অনেক সময় নৃুর প্রকাশ পেয়েছিল এইজন্য নবীজিকে এইদিক দিয়েও নুর বলা হয়।নিচে এটা সম্পর্কে হাদিস শরীফ পেশ করা হবে
এবার আসেন সূরা মায়েদায় ১৫ নং আয়াতে কোন দিক দিয়ে নূর বলা হয়েছে এটার আলোচনা করি।আয়াত দ্বারা নবীজিকে দুই দিক দিয়ে নুর বলা যায়।যেহেতু হেদায়াতি নুর এটা আমরাও মানি প্রতিপক্ষরাও মানে সেহেতু এটার আলোচনা করবনা। সৃষ্টি নুরের টা আলোচনা করব।
উসুলে তাফসিরের নিয়ম হলো যখন কেউ
কোন আয়াতের ব্যাখ্যা করতে চাইবে সে প্রথমে দেখবে এই আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াতে আছে কিনা, তারপর দেখবে এটার ব্যাখ্যা হাদিস শরীফে আছে কিনা,তারপর দেখবে এটার ব্যাখ্যা হিসেবে সাহাবাদের কোন উক্তি আছে কিনা,তারপর দেখবে পুর্ববর্তী আলেমদের কিতাবে কোন উক্তি আছে কিনা।আমি ধাপে ধাপে আল্লাহ তওফিক দিলে সব উল্লেখ করব।
যেহেতু কোরানে স্পষ্ট করে বলা হয়নি নবীজি নুরের তৈরি। এইজন্য হাদিস দিয়ে নুর শব্দের ব্যাখ্যা করতে হবে তাই আমি প্রথমে হাদিস শরীফে নুর শব্দের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কিনা দেখি।
১)মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে বর্ণিত, হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসে উল্লেখ আছে-
ﻳﺎ ﺟﺎﺑﺮ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗﺪ ﺧﻠﻖ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺎﺷﻴﺎﺀ ﻧﻮﺭ ﻧﺒﻴﻚ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (ইমাম বোখারীর দাদা ওস্তাদ) মোয়াম্মার হতে, তিনি ইবনে মুনকাদার হতে, তিনি হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেনঃ
”হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন- আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ’র রাসূল [ﷺ]! আপনার উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত হোক, আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে নবী করীম [ﷺ] বললেন- ”হে জাবের, আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম সমস্ত বস্তুর পূর্বে তাঁর ‘নিজ নূর হতে’ তোমার নবীর নূর পয়দা করেছেন। (আল জুয্উল মাফকুদ অংশ, হাদিস নং ১৮, বৈরুত থেকে প্রকাশি ২০০১)।
২)“হযরত আবু কিরসাপা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন,আমি ও আমার মা এবং আমার খালা রাসুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট বায়াত গ্রহন করলাম।অতঃপর আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন আমার মা ও খালা আমাকে বললেন হে প্রিয় ছেলে! আমরা রাসুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মত সুশ্রী,সুভাষী ও নম্রভাষী কাউকে দেখিনি।যখন তিনি কথা বলতেন তখন আমরা তাঁর পবিত্র মুখ মোবারক থেকে নূর বের হতে দেখতাম।
Reference :
★ইমাম সৈয়ুতিঃখাসায়েসুল কোবরাঃ১/১১১পৃঃ,হাদিসঃ২৮৫
★ইবনে হাজর হাইতামীঃমাযমাউয যাওয়াইদঃ৮/২৭৯পৃঃ,হাদিসঃ১৪০৩২
★ইমাম নাবহানীঃহুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিনঃ৬৬৩পৃঃ
★ইমাম তাবরানীঃমু’জামুল কবীরঃ৩/১৮পৃঃ,হাদিসঃ২৫১৮
৩) عن عائشة رضي الله عنها قالت : كنت في الشجر ثوبا لرسول الله صلي عليه و سلم فانطفا المصباح و سقطت الابرة من يدي فدخل علي رسول الله صلي الله عليه و سلم فاضاء من نور و جهه فجدت الابرة-
অর্থ : “হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাপড় মোবারক সেলাই করেছিলাম। এমন সময় প্রদীপটি (কোন কারণে) নিভে গেল এবং আমি সুচটি হারিয়ে ফেললাম। এরপরই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে আমার অন্ধকার ঘর আলোময় হয়ে গেল এবং আমি (ঐ আলোতেই) আমার হারানো সুচটি খুজে পেলাম”। (ইমাম ইবনে হায়তামী (রাঃ) এর আন-নে’মাতুল কোবরা আলার আলম গ্রন্থে ৪১ পৃষ্ঠা)।
৪) যারকানী শরীফ ৪র্থ খন্ড ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ
لَمْ يَكُنْ لَهٗ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظِلُّ فِى شَمْسٍ وَلاَ قَمَرٍ لِاَنَّهٗ كَانَ نُوْرًا
অর্থঃ- “সূর্য চন্দ্রের আলোতে নবী করিম [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না। কেননা, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” (যারকানী)
৫) ইমাম কাযী আয়ায (رحمة الله عليه) শিফা শরীফের ১ম খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ
وَمَا ذُكِرَمِنْ اَنَّهٗ كَنَ لاَ ظِلَّ لِشَخْصِهٖ فِى شَمْسٍ وَلاَ قَمَرٍ لِاَنَّهٗ كَانَ نُوْرًا
অর্থঃ- নূরের দলীল হিসেবে ছায়াহীন দেহের যে রেওয়ায়াত পেশ করা হয়, তা হচ্ছে- “দিনের সূর্যের আলো কিংবা রাতের চাঁদের আলো- কোনটিতেই হুযুর [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না। কারণ তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” (শিফা শরীফ)
৬)
(৬) মিশকাত শরীফের হাদিসে নবী করিম [ﷺ] এরশাদ করছেনঃ-
وَاَنَا رُؤْيَا اُمِّي اَلَّتِيْ رَاْتُ اَنَّه خَرَجَ نُوْرٌمِّنْ بَطْنِهَا وَاَضَائَتْ لَهَا قُصُوْرُ الشَّام
অর্থঃ-“আমার জন্মের প্রাক্কালে তন্দ্রাবস্থায় আম্মাজান দেখেছিলেন- একটি নূর তাঁর গর্ভ হতে বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত আলোকিত করেছে। আমি আমার মায়ের দেখা সেই নূর।” (মিশকাত শরীফ)
৭)
হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমায়েছেনঃ
ﺍﻧﺎ ﻣﻦ ﻧﻮﺭ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺨﻠﻖ ﻛﻠﻬﻢ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻯ
”আমি অাল্লাহর নূর হতে এবং সমস্ত মাখলূক(সৃষ্টি) আমার নূর হতে সৃজিত।”
[সূএঃ শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী; মাদারেজুন নবুওয়াত]
এইসমস্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে নবীজিকে নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়ছে এটা স্বয়ং রসুল সাল্লাল্লাহৃ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেছেন তাছাড়া নবীজি হযরত আয়েশা রা. এর ঘরে প্রবেশ করলে ঘর আলোকিত হয়ে যায় তারপর সুঁচ খুজে পেল।নবীজির চেহারা দিয়ে নুর বের হত।সূর্যের আলোতে নবীজির ছায়া পড়ত না।এইসব কি প্রমান করেনা নবীজি নুর দ্বারা সৃষ্টি।অনেকে বলবে এগুলো ত মোজেজা এগুলো দিয়ে নবীজিকে নুর প্রমান করা যাবেনা আমি বলব নবীজি যে নুরের তৈরি এটাও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোজেজা।কারন হাসসান বিন সাবিত নবীজিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
ﺍﻧﻚ ﻭﻟﺪﺕ ﻣﺒﺮﺍ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻋﻴﺐ
ﻛﺎﻧﻚ ﺧﻠﻘﺖ ﻛﻤﺎ ﺗﺸﺎﺀ
অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনি সর্বপ্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই আগমন করেছেন।আঁপনার এই সুরত মনে হয় যেন আঁপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই সৃষ্টি করা হয়েছে।(সহীহ মুসলিম শরীফের ২য় জিলদের ৩০১ পৃ:)
সুতরাং নুরের সৃষ্টি হওয়া এটাও রসুলের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েছে অর্থ্যাৎ এটাও রসুলের মোজেজা আপনারা একটা মোজেজা মানেন আরেকটা মানেন না কেন।সুতরাং আমরা হাদিস থেকে নুর শব্দের ব্যাখা পেলাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুরের সৃষ্টি।
এখন দেখব সাহাবা ও তাবেয়িদের নবীজির নুর মোবারক সম্পর্কে কোন উক্তি আছে কিনা।
১)ইমাম তিরমিযী তাঁর ‘শামা-ইল’ শরীফে হযরত হিন্দ ইবনে আবূ হালাহ থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সেটাতে বর্ণিত হয়েছে-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَمًا يَّتَلَأْلَأُ وَجْهُه كَتَلَأْلُأِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ
অর্থ: হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহত্ব ঔজ্জ্বল্যমন্ডিত ছিলেন। তাঁর নূরানী চেহারা তেমন আলোকদীপ্ত ছিলো যেমন মাসের চতুর্দশ রাতের পরিপূর্ণ চাঁদ।
২) দারেমী শরীফে ইমাম দারেমী হযরত রুবায়্যি’ বিনতে মু‘আত্তভিয্ ইবনে আফরা থেকে বর্ণনা করেছেন-
قَالَتْ يَا بُنَىَّ لَوْ رَأَيْتَهٗ رَأَيْتَ الشَّمْسَ طَالِعَةً
অর্থ: হে আমার বৎস! যদি তুমি ওই মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখতে, তবে উদিত সূর্যই দেখতে পেতে।
৩) ইমাম দারেমী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْلَجَ الثِّنْيَتَيْنِ اِذَا تَكَلَّمَ رُئِىَ كَالنُّوْرِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثُنَايَاهُ
অর্থ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সমুখস্থ দাঁত মুবারকগুলোর মধ্যবর্তীতে জানালা (ফাঁক) ছিলো। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন ওই দাঁত মুবারকগুলো থেকে আলো বের হতো।
কোন কোন রেওয়ায়তে আছে- ওই আলোকরশ্মি দ্বারা রাতে সুঁচ তালাশ করে নেওয়া হতো। আ’লা হযরত আলায়হির রাহমাহ্ বলেন- (পংক্তি)
سوزن گم شده ملتى هےتبسم سے ترے – رات كو صبح بناتاهے اوجالا تيرا
অর্থ: হে আল্লাহর রসূল! আপনার হাসি থেকে উদ্ভাসিত নূর বা আলোতে হারিয়ে যাওয়া সুঁচ খুঁজে পাওয়া যায়। রাতকে ভোর করে দেয় আপনার উজালা।
তিরমিযী, আহমদ, বায়হাক্বী ও ইবনে হাব্বান হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- كَاَنَّ الشَّمْسُ تَجْرِىْ فِىْ وَجْهِهٖ
অর্থ: তাঁর চেহারা মুবারকে যেন সূর্য চমকাতো।
সুতরাং সাহাবা ও তাবেয়িদের উক্তি দ্বারা আমরা নুর শব্দের ব্যাখ্যা পেলাম নবীজি আপাদমস্তক নুরুন আলা নুর।
এখন উল্লেখ করব পুর্ববর্তী আলেমদের উক্তি যাদের মধ্যে অনেকে সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতে নুর শব্দ দ্বারা বোঝাইছেন নবীজির নুরানি সত্ত্বা।
১)আল্লামা ইসমাঈল হক্কী (রা) বলেন-
قيل المراد باالاول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثانى القران-
অর্থঃ বলা হয়েছে যে, প্রথমটা অর্থাৎ নূর দ্বারা রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে এবং দ্বিতীয়টা অর্থাৎ কিতাবে মুবীন দ্বারা কুরআন কে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯)
আর অগ্রসর হয়ে বলেন-
سمى الرسول نورا لان اول شيئ اظهره الحق بنور قدرته من ظلمة العدم كان نور محمد صلي الله عليه و سلم كما قال اول ما خلق الله نورى-
অর্থ: আল্লাহ তায়া’লা রসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম রেখেছেন নূর। কেননা আল্লাহ তায়া’লা তাঁর কুদরতের নূর থেকে সর্বপ্রথম যা প্রকাশ করেছেন তা তো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর মোবারক। যেমন তিনি ফরমায়েছেন- আল্লাহ তায়া’লা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক কে সৃষ্টি করেছেন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯)।
২) তাফসীরে সাভী, সূরা মায়েদা, ১৫ নং আয়াত قَدْ جَائَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ- “আল্লাহপাক তাঁকে নূর বলে আখ্যায়িত করার কারণ হচ্ছে- তিনি সকল দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নূর সমূহের মূল উৎস।( অর্থ্যাৎ তিনি হেদায়াতি ও সৃষ্টি উভয়দিক দিয়ে সকল নুরের উৎস)
৩) ইমাম আবুল ফারাহ আব্দুর রহমান যওজী (রহ) {ওফাত.৫৯৭হি.} বলেন-
-“আল্লাহর বাণী : তােমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে “নূর” এসেছে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (রহ) বলেন, উক্ত নূরের মর্মার্থ হল নূর নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নূরাণী সত্ত্বা।”
★ ইমাম যওজী : যা’দুল মাইসরি ফি উলুমুত তাফসীর : ২৬১ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়া বয়রুত।
৪)
ইমাম হাফেজ আবুল ফযল ক্বাযী আয়ায (রা) বলেন-
و قد سماه الله تعالى فى و سراجا منيرا فقال تعالي قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين و قال تعالى انا ارسلناك شاهدا و مبشيرا و نذيرا و داعيا الى الله باذنه و سراجا منيرا و قال فى غير هذا الموضع انه كان لاظل لشخصه في شمس و لا قمر لانه كان نورا الذباب كان لا يقع على جسده و لا ثيابه-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া’লা কোরআন করীমে তাঁর নাম রেখেছেন নূর ও সিরাজুম্ মুনীর। যেমন তিনি ফরমায়েছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। আরো ফরমায়াছেন, আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি হাজের ও নাজেররূপে, আল্লাহর অনুমক্রিমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজুম মুনীর ) রূপে। নিশ্চয়ই তাঁর ছায়া ছিল না. না সূর্য়ালোকে না চন্দ্রালোকে কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীল ও পোশাক মোবারকে মাছি বসত না। (শিফা শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪২)।
এখানে দেখা যাচ্চে মুফাসসিরিনে কেরামদের অনেকে এই আয়াতে নুর দ্বারা নবীজির নুরানি সত্ত্বাকে বোঝাইছেন এখন বলুন এরা কি আপনাদের থেকে হাদিস কোরান কম বোঝেছিল নাকি?
তাছাড়া আল্লাহ সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতে নুর শব্দটাকে মুতলাক(শর্তহীন) রেখেছে।যাতে নুর শব্দটা সব দিক দিয়ে রসুল (দ) যে নুর এটা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।রসুল (দ) হেদায়াত ও সৃষ্টি আরো যত প্রকারের নুর আছে সব দিক দিয়ে যাতে বোঝায় এইজন্য মুতলাক রেখেছেন।উসুলে ফিকহের কায়দা হচ্ছে মুতলাক কে সন্দেহজনক দলিল দ্বারা মুকাইয়দ(শর্তযুক্ত) করা যাবে না।তাহলে আপনি নুর শব্দটাকে শুধুমাত্র হেদায়াত বলে মুকাইয়দ করতেছেন কেন?এটা কি উসূলে ফিকহের নিয়ম বিরুদ্ধ নয়?
এখন দেখব ওহাবিদের বড় আলেম রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি সাহেব কি বলেছেন।
আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) এর শানে ফরমায়েছেন, তােমাদের কাছে আল্লাহর নিকট হতে এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।”
★ সুরা মায়েদা আয়াত নং-১৫
“এ আয়াতের নূর দ্বারা হাবিবে খােদা এর পবিত্র সত্তাকে বুঝানাে হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা আরাে বলেন,
-হে নবী ! আমি তাে আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজে মুনীর) রূপে পাঠিয়েছি। আর মুনীর উজ্জ্বলকারী ও আলােকদাতাকে বলে ।
সুতরাং মানুষের মধ্যে কাউকে উজ্জ্বল করা যদি অসম্ভব হতাে তাহলে হযরত (ﷺ) এর পবিত্র সত্তার অন্তর্গত কিন্তু
– তিনি ও তাঁর মােবারক সত্তাকে এমনভাবে পবিত্র করেছেন যে, তিনি নিখুঁত নূরে পরিণত হন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে নূর ফরমায়েছেন। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে,রাসূল ও এর ছায়া ছিল না এবং এটাও প্রকাশ্যমান যে, নূর ব্যতীত সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে।”
★ মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী : ইমদাদুস সুক, পৃ-৮৫, কুতুবখানায়ে এশায়াতুল উলূম, মুহাল্লা মুফতি, সাহারানপুর, ভারত, প্রকাশসাল বিহীন।
ওহাবিদের বড় আলেম বলতেছে আয়াতে নুর দ্বারা নবীজির নুরানি সত্ত্বা বোঝাইছে আর তারা বলতেছে হেদায়াতি নুর সৃষ্টি নুর নয়। এখন কার কথা মানবেন তাদের কথা নাকি তাদের মুরুব্বিদের কথা।আল্লাহ সবাইকে বোঝার তওফিক দান করুক।ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ