অলি আল্লাহর দরবার এবং মহান ক্ষমা পাওয়ার জায়গা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

অলি আল্লাহর দরবার এবং মহান ক্ষমা পাওয়ার জায়গা

মাওলানা মোহাম্মদ আজিবুর রহমান আল কাদেরী

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন আমার বান্দা নফল ইবাদাত (সাধনা)র মাধ্যমে আমার এতই নিকটবর্তী হয়ে যায় এক পর্যায়ে আমি নিজেই তাকে ভালবাসি। আর আমি যখন কাউকে ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে আমি তার চক্ষু হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে আমি তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে তার পা আমার কুদরতী দ্বারা শক্তিশালী হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে। এমতাবস্থায় সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তা অবশ্যই দান করি। (বুখারি শরীফ ২য় খন্ড, মেশকাত শরীফ-১৯৭ পৃষ্ঠা)।
প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক মাওলানা জালালুদ্দীন রুমি (রহঃ) বলেছেন অলি আল্লাহর দরবার, আল্লাহর দরবার। কেউ যদি আল্লাহর সান্নিধ্যে বসতে চায়, সে যেন অলি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে যায়। অধিকন্তু অলি আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার এবং বসার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহই দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে- হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সাদেকিনদের (অলি আল্লাহ) সঙ্গী হয়ে যাও। (সুরা তাওবা আয়াত-১১৯)
সূরা মায়িদা ৩৫ নং আয়াতে আরো এরশাদ হয়েছে- হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহর পথে উসিলা তালাশ কর।
অলি আল্লাহ অর্থ হল আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ পাক স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে কতিপয় সৌভাগ্যবান লোক নির্বাচন করে নেন। তারাই অলি আল্লাহ। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ যেমন স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করেছেন অনুরূপ তাদের সঙ্গপ্রাপ্ত এবং পরবর্তীতে তাদের ফয়েজ প্রাপ্ত আউলিয়া কেরাম ও দ্বীন ধর্ম প্রচারে রেখেছেন অসামাণ্য অবদান। আউলিয়া কেরাম আল্লাহর বন্ধু যাদের জন্য সুসংবাদ ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে- মনে রেখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোন ভয়ভীতি নেই এবং তারা চিন্তিত হবেন না তারা হলেন সে সব ব্যক্তি যারা ঈমান এনছেন এবং যাদের আল্লাহ ভীতি রয়েছে তাদের জন্য সু সংবাদ হচ্ছে পার্থিব জীবনে ও পারলৌকিক জীবনে আল্লাহর বাক্য সমূহের কোন পরিবর্তন হয় না। এটাই হলো মহান সফলতা। (সুরা ইউনুস আয়াত ৬২-৬৪)
উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় আউলিয়া কেরামের মর্তবা মহান আল্লাহর দরবারে কত বেশী। তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। তাদের সংস্পর্শে আসলে মানুষ হয় ধন্য। গুনাহগার আসলে নেককারে পরিণত হয় আর জাহান্নামী আসলে পেয়ে যায় জান্নাতের রাস্তা। সহীহ বুখারী শরীফের একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন বনী ইসরাঈলের ১জন পাষন্ড খুনী। কথায় কথায় মানুষ খুন করে ফেলা যার নেশা। ৯৯ জন মানুষ হত্যা করে একদিন মনে মনে চিন্তা করলো আমি যেভাবে মানুষ মেরে দুনিয়া থেকে
্থ ফাযিল স্নাতক তৃতীয় বর্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা।
বিদায় করে দিচ্ছি। ঠিক এভাবে একদিন আমাকেও তো যেতে হবে। পরকালের কঠিন শাস্তির কথা ভেবে সে একদিন ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ল কোন এক অজানা পথে মুক্তির সন্ধানে। পথিমদ্যে দেখা হলো এক লোকের সাথে। এ লোকের নিকট বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো। ৯৯ জন মানুষ খুনের কথা শুনে লোকটি চমকে উঠলো এবং বলে একজন মানুষ খুন করলে যেখানে জাহান্নামের শাস্তি পেতে হয় সেক্ষেত্রে তুমি ৯৯ জন মানুষ খুন করে মুক্তির আশা করছো? অসম্ভব। একথা শুনে খুনি ব্যক্তিটি আরো হতাশ। প্রকারান্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো সে বলে উঠলো। ৯৯ জন খুনের অপরাধে যদি জাহান্নামে যেতেই হবে সুতরাং আর একজন অবশিষ্ট রাখার কোন মানে হয় না। এসো তোমাকে দিয়েই একশত পূর্ণ করি বলেই তরবারী চালিয়ে ঐ লোকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। সর্বশেষ হত্যাকান্ডের পর আবারো তার অন্তর কঁেেপ উঠলো। পরকালের শাস্তির ভয় তাকে তটস্থ করে ফেলল। এবার সে পুনরায় মুক্তির আশায় সম্মুখপানে এগিয়ে চলল। কিছুদুর গিয়ে দেখা হলো আরেক লোকের সাথে। খুনি লোকটি তাকে অতীত জীবনের সমস্ত ঘটনা সহ মুক্তির পথ খোঁজার বিষয়টি খুলে বলে জিজ্ঞাসা করলো আমার মুক্তির পথ আছে কি? লোকটি অনেক চিন্তা ভাবনা করে জবাব দিলেন আমাদের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন অনেক দয়াবান। বান্দার অপরাধ যতবড় হোক না কেন তার রহমতের একটা ফোঁটা তার চাইতে অনেক বড়। সুতরায় একাগ্রচিত্তে তাওবা করলে অনেক বড় বড় গুনাহ আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিতে পারেন। অতএব হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। সুতরাং তুমি সামনের দিকে চলো। কিছু দুর গেলে একজন বুযুর্গ (অলি) ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবে। তার হাতে তুমি তওবা কর। একথা শুনার পর তার অন্তরের জানালা দিয়ে যেন এক অনাবিল শান্তির বাতাস বইয়ে গেলো। আবিস্কার করলো নিজেকে পুনরায়। ফিরে পেল হারানো জীবন। বিপদসংকুল সমুদ্র হতে তার তীরটিকে যেন নিয়ে এলো তীরে। কাল বিলম্ব না করে পরামর্শ মোতাবেক এগিয়ে চলে সম্মুখপানে সেই বুযুর্গ ব্যক্তির সাক্ষাতের আশায়। কিন্তু হায় কিছুদুর যেতে না যেতেই মৃত্যুর ফেরেশতা আযরাঈল হাজির। সামনে এক কদম যাওয়ার সুযোগ নেই। নিমিষেই বের হয়ে গেল তার দেহ থেকে প্রাণ বায়ু।নিস্তেজ দেহটি পড়ে রইলো মাটিতে। এদিকে দেহ হতে বিচ্ছিন্ন আত্মাকে নিয়ে ফেরেশতাদের মাঝে দেখা দিল দ্বন্দ্ব। একদল বলে আমরা নিয়ে যাবো বেহেশতে। অন্যদল বলে না আমরা নিয়ে যাবো জাহান্নামে। কারণ সে একশত খুনির আসামি। আর বেহেশতের ফেরেশতাদের দাবী সে গুনাহাগার হতে পারে না। যেহেতু তওবার উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হয়েছে। সেহেতু তাকে আমরা বেহেশতে নিয়ে যাবো। দুজন ফেরেশতার এই বিতর্ক মীমাংসার জন্য মহান রাব্বুল আলামীন পাঠিয়ে দিলেন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে আর একদল ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করে বললেন-লোকটি অলি আল্লাহর দরবারে যাওয়ার জন্য যেখান থেকে রওয়ানা দিয়েছে সে জায়গা থেকে আল্লাহর অলির দরবারে দূরত্ব কতটুকু মেপে দেখ অতপর দেখ ঐ সম্পুর্ণ জায়গাটুকু দুইভাগ করে কোন ভাগে গিয়ে লোকটির মৃত্যু হয়েছে প্রথমভাগে মৃত্যু হলে সে জাহান্নামী আর দ্বিতীয় ভাগে মৃত্যুবরণ করলে সে বেহেশতী। কারণ সে তওবার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং বেশীর ভাগ অতিক্রম করে কাছাকাছি পৌছে গেছে। ফেরেশতারা পরিমাপ করে দেখলেন। লোকটি প্রথম ভাগ অতিক্রম করে দ্বিতীয়ভাবে একহাত সামনে তথা দ্বিতীয় ভাগে গিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ফয়সালা দিলেন। আল্লাহর এই বান্দা বেহেশতে যাবে। অতএব তার আত্মা বেহেশতের ফেরেশতাদের হাতে সোপর্দ করা হলো আর তারা নিয়ে গেলেন বেহেশতে। সুতরাং বুঝা গেলো একশত খুনের মত এতবড় অপরাধের পরও যদি কেউ আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে তওবা করতে পারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আরো প্রমাণিত হয়ে গেলো অলি আল্লাহর দরবারে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অশেষ বরকত। সুতরাং আমরা সুন্নি মুসলমানরা ধন্য এজন্য যে আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ কেবলা জামান গাওস আলহাজ হাফেজ কারী সায়্যেদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী তিনি প্রত্যেক বছর বাংলার জমিনে ২/৩ বার আসেন আর উনার হাতে আমাদের মত নগণ্য ব্যক্তিসহ হাজার হাজার ভক্ত মুরিদ তারা তাদের গুনাহসমূহকে তওবা করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেয়ে যায়। কাজেই মহান আল্লাহর কাছে অপরাধ ক্ষমার জন্য হুজুর কেবলার কাছে আসতে হবে এবং উনার দরবারের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment