আরশ কেঁপে উঠল, ফেরেশতারা পাখা মেলে ছায়া দিল
—
হযরত কাতাদাহ্ (রাঃ) বলেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, সা’দ বিন মু’আয রাঃ এঁর জানাযাহ যখন (সামনে) রাখা হয়েছিল, তখন নবী ﷺ বললেনঃ তার (সা’দ বিন মুআয রাঃ) জন্য পরম করুণাময়ের (আল্লাহ’র) আরশ কেঁপে উঠেছে। (সুবহানাল্লাহ। একজনের দর্শন ক্ষমতা কেমন! অন্যজনের মর্যাদা কেমন!) (সহীহ মুসলিম ৬২৪১)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, উহুদ যুদ্ধের দিন যখন আমার বাবা (আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর রাঃ)-কে বস্ত্রে ঢেকে আনা হলো এমতাবস্থায় যে, অঙ্গচ্ছেদন করা (নাক-কান হাত-পা কেটে ফেলা) হয়েছে। আমি তার কাপড় সরাতে চাইলে লোকেরা আমায় বারণ করল। আমি আবারও কাপড় সরাতে চাইলে আমার সম্প্রদায় আমাকে বারণ করল। আমি আবারও কাপড় সরাতে চাইলে আমার সম্প্রদায় আমাকে বারণ করল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই তার বস্ত্র সরালেন কিংবা তিনি সরানোর নির্দেশ দেয়ায় সরানো হলো। রাসূলুল্লাহ ﷺ একজন কান্নারত নারীর শব্দ শুনে প্রশ্ন করলেন, ইনি কে? লোকেরা বললেন, আমরের মেয়ে কিংবা বললেন, ‘আমরের বোন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তুমি কান্নাকাটি করছো কেন? অথচ ফেরেশতারা তাকে তুলে নেয়া পর্যন্ত পাখা মেলে ছায়া দিচ্ছিল। (সহীহ মুসলিম ৬২৪৮)
এই আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেনঃ বসে (নফল) নামাজ আদায় করলে, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ের অর্ধেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর দরবারে হাযির হলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ বসে বসে নামাজ আদায় করছিলেন। এ দৃশ্য দেখে আমি আমার মাথায় হাত রাখলাম। (নামাজ শেষে) তিনি ﷺ বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রা.)! কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমাকে তো বলা হয়েছে যে, আপনি ইরশাদ করেছেনঃ বসে নামাজ আদায়কারীর নামাজে অর্ধেক সাওয়াব হয় অথচ আপনি বসে বসে নামাজ আদায় করছেন। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ তা-ই। কিন্তু আমি তো তোমাদের মতো নই। [সহীহ মুসলিম ১৬০০, সুনান আবূ দাউদ ৯৫০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫২]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহ্ তা’আলার জন্যে অবনত মস্তকে সিজদায় পড়ে না আছে।
অতঃপর বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কমই হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে, আল্লাহ তা’আলার কাছে কাকুতি-মিনতি করতে। বর্ণনাকারী (আবূ যার গিফারী রাঃ) বলেন, আমার মন চায় আমি যদি একটি বৃক্ষ হতাম আর তা কেটে ফেলা হতো। (সূনান আত তিরমিজী ২৩১২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪১৯০)
আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম! আমি যা জানি যদি তা তোমরা জানতে তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। (সহীহ বুখারী ৬৬৩১)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আছো আমার মত? (সহীহ বুখারী ১৯৬৫, ৬৮৫১, ৭২৪১-৪২, ১৯৬১-৬৪, ৭২৯৯)
অজ্ঞাত এক কবির ভাষায়,
‘মুহাম্মাদ ﷺ একজন মানুষ; তবে আমাদের মত নয়।
ইয়াকুত একটি পাথর; তবে অন্য পাথরের মত নয়।
ইমাম আহমদ রযা খান রহঃ লিখেন, (অনুবাদ)
“উপমা তোমার কেউ দেখেনি কখন,
তোমারই মত কেউ হয়নি সৃজন,
সম্রাট-মুকুট তব শিরে তো শোভে,
দোজাহানে তুমিই তো এমনি রাজন।”