ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বলেন : ইমাম আযম রাঃ রমজান মাসে ঈদের দিন সহ ৬২ বার কুরআন খতম আদায় করতেন । (দিনে এক খতম , রাতে এক খতম , তারাবীহতে সারা মাসে এক খতম , ঈদের দিনে এক খতম )। তিনি প্রচুর সম্পদ দান করতেন। ইলম শিক্ষাদানে খুবই ধৈৰ্যশীল ছিলেন । নিজের সম্পর্কে কৃত সমালােচনা কেবল শুনে থাকতেন, একটুও রাগ করতেন না। তিনি বিরতিহীন ত্রিশ বছর ধরে রােজা রেখেছেন। ত্রিশ বছর যাবৎ এক রাকাত নামাযে সম্পূর্ণ কুরআন মজীদ খতম করতে থাকেন । চল্লিশ (বা ৪৫) বছর পর্যন্ত ইশার ওজু দিয়ে ফজরের নামায আদায় করেছেন । যে স্থানে তাঁর ওফাত হয় সেই স্থানে তিনি সাত হাজার বার কুরআন পাক খতম করেছেন। (আল খায়রাতুল হিসান , পৃষ্ঠা- ৫০)
এখন আবার অনেকের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হতে পারে এত এত ইবাদত, এত কম সময়ে এত বেশি কুরআন খতম কি করে করতেন!! হ্যা, এগুলো সাধারণদের পক্ষে সম্ভব নয়, আল্লাহওয়ালা তথা আল্লাহর বন্ধু বা আউলিয়ারা এমন হয়। বুখারীর হাদিসে কুদসীতে রয়েছে, সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,
“যে ব্যক্তি আমার কোন অলি বা বন্ধুর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা দ্বারাই কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ‘ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই…. সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি।..
হযরত মাওলা আলী রাঃ ঘোড়ার উপর আরোহন করার সময় এক রিকাবে পা রাখতেন তখন কুরআন তিলাওয়াত শুরু করতেন আর অপর রিকাবে কদম রাখার আগে আগে সম্পূর্ণ কুরআন খতম করে নিতেন। (শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, পৃষ্ঠা ২১২)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, দাউদ (‘আলায়হিস সালাম) এঁর জন্য কুরআন (যাবুর) তেলাওয়াত সহজ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর পশুযানে গদি বাঁধার আদেশ করতেন, তখন তার উপর গদি বাঁধা হতো। অতঃপর তাঁর পশুযানের উপর গদি বাঁধার পূর্বেই তিনি যাবুর তিলাওয়াত করে শেষ করে ফেলতেন। তিনি নিজ হাতে উপার্জন করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। (সহিহ বুখারী ৩৪১৭)
এমনকি ভন্ড আহলে হাদিসদের আল হাদিস, বাংলা হাদিস এপ্সেও দেখলাম, সুনান আত তিরমিজির ২৯৪৬ নং হাদিসের শেষের দিকে রয়েছে, হযরত উসমান (রাঃ) বিতরের শেষ রাকাআতে সম্পূর্ণ কুরআন শেষ করতেন। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহঃ) কা’বা শরীফে এক রাকাআতে সম্পূর্ণ কুরআন শেষ করেছেন। তবে ধীরেসুস্থে সহীহশুদ্ধ করে কুরআন তিলাওয়াত করা সকল আলিমদের মতে বেশি পছন্দনীয়। (হ্যা, আমরাও বলি সাধারণদের পক্ষে শুদ্ধভাবে এত তাড়াতাড়ি কুরআন খতম সম্ভব নয়)
হ্যাঁ, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের অসংখ্য ক্ষমতা (মু’জিযা ও কারামত) দিয়ে থাকেন এবং প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মুনাফিকরা নবীজির জ্ঞান নিয়ে সমালোচনা করলে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় আমাদের নবী ﷺ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত নামাজসমূহ আদায়ের পরপর মিম্বরে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির সূচনা থেকে পূর্বে যা ঘটেছে, ভবিষ্যতে যা ঘটবে, এমনকি জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর নিজ স্থানে প্রবেশের কথাও জানিয়ে দেন। (সহীহ মুসলিম ৭১৫৯, সহীহ বুখারী ৩১৯২, সুনান আবূ দাউদ ৪২৪০)। এছাড়াও প্রিয় নবী ﷺ বলেনঃ আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। (অর্থাৎ তিনি এমন সংক্ষিপ্ত কথা বলতেন যা শব্দ বা উচ্চারণের দিক থেকে হত অল্প কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক) (সহীহ বুখারী ৭২৭৩)