জিজ্ঞাসা–৫৯৪: আসসালামু আলাইকুম। জনাব! স্বামী কি স্ত্রীর যৌনাঙ্গে মুখ লাগাতে পারবে? বা স্ত্রী কি স্বামীর পুরুষাঙ্গে মুখ লাগাতে পারবে? উত্তেজনাবশত লাগালে কী হবে? স্বামী এবং স্ত্রী যদি নিজেদের উত্তেজনা উঠানোর জন্য মুখ লাগাতে চায়, তাহলে বৈধ হবে কি? মোটকথা, বিস্তারিত জানানোর জন্য বিনীত আবেদন করছি।–অয়ন।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের দেহ থেকে সব উপায়ে সুখ নেয়ার অনুমতি ইসলামে আছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ
‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।’ (সূরা বাকারা ২২৩)
অন্যত্র তিনি বলেন,
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
‘তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।’ (সূরা বাকারা ১৮৭)
তবে এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। যথাক্রমে-
১- যে উপায়ে সুখ নেয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল আছে, তা পরিহার করতে হবে। যেমন, মলদ্বারে সহবাস এবং ঋতুবতী ও প্রসব পরবর্তী সময়ে নির্গত রক্তস্রাব অবস্থায় সহবাস।
২- স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে সুখ ভোগ করার সময় ইসলামী শিষ্টাচার ও নীতি-নৈতিকতার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
সহবাসের সঠিক নিয়ম বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন- জিজ্ঞাসা নং–৫৭৮।
দুই. এবার আসা যাক, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের লজ্জাস্থান মুখে দেয়া প্রসঙ্গে। এ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধতার ব্যাপারে কোরআন হাদিসে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না বিধায় বিষয়টিকে অকাট্য হারাম বলার সুযোগ নেই। তবে এর মাঝে ইসলামী শিষ্টাচার-বহির্ভূত কিছু দিক রয়েছে। যেমন,
১. লজ্জাস্থান থেকে নির্গত নাপাক (বীর্য, মযি ইত্যাদি) জিহ্বা, মুখ ইত্যাদিতে লাগবে। আর জরুরত ছাড়া নাপাক স্পর্শ করাকে ফকিহগণ বৈধ মনে করেন না।
২. মানুষের শরীরের সবচে’ সম্মানিত অঙ্গ হলো চেহারা। আর লজ্জাস্থান হলো নাপাকির জায়গা। সুতরাং সম্মানিত জায়গাকে নাপাকির জায়গায় স্পর্শ করানো অবশ্যই নিন্দনীয়।
৩. মুখ দ্বারা আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করা হয়, যিকির করা হয়। এই মুখে নাপাক লাগানো এবং নাপাকির স্থান চুমো দেয়া বা Suck করা বড় গর্হিত কাজ।
৪. মুখের অনেক জীবাণু লজ্জাস্থানে রোগ সংক্রামণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া লজ্জাস্থানের জীবাণু মুখে এবং মুখের ভায়া হয়ে ভেতরে রোগ সংক্রামণ করার আশংকা থাকে। দুর্ঘটনাবশত ধারালো দাঁতও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এসব কারণে ফকিহগণ এটাকে মাকরুহ বলেছেন। তবে সহবাসের পূর্বে নাপাক না লাগার শর্তে কিছু ফকিহ লজ্জাস্থানে চুমু দেয়ার (লেহন নয়) অবকাশ দিলেও এটাকে পরিহার করাকে উত্তম বলেছেন। যেমন, প্রসিদ্ধ হানাফি ফকিহ বুরহানুদ্দীন মাহমুদ ইবন তাজুদ্দীন রহ. বলেন,
إذا أدخل الرجل ذكره في فم امرأته يكره لأنه موضع قراءۃ القرآن فلا یلیق به إدخال الذکر به
‘যদি পুরুষ নিজের লজ্জাস্থান স্ত্রীর মুখে প্রবেশ করায় তাহলে তা মাকরুহ হবে। কেননা, মুখ কোরআন তেলাওয়াতের স্থান। সুতরাং এখানে লজ্জাস্থান প্রবেশ করানো অনুচিত।’ (আল্মুহীতুল বুরহানী ৮/১৩৪)
আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (৯/৩২)– এসেছে,
وصرح الحنابلة بجواز تقبیل الفرج قبل الجماع ، وکراہته بعدہ
‘হাম্বলি ফকিহগণ স্পষ্টভাবে বলেছেন, সহবাসের পূর্বে হলে স্ত্রীর লজ্জাস্থান চুমো দেয়া জায়েয এবং পরে মাকরুহ।’
দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা উত্তরে লিখেছেন,
تقبیل أحد الزوجین فرج الآخر میں ان آداب کی رعایت ناممکن ہے، پھر زبان جس سے اللہ کا ذکر کیا جاتا ہے اس سے شرمگاہ کو بوسہ لینا وغیرہ کسی بھی طرح مناسب معلوم نہیں ہوتا، نیز یہ جانوروں کا طریقہ ہے؛ اس لیے بہرصورت ایک مسلمان کو اس سے پرہیز کرنا چاہیے، باقی اگر کسی نے غلبہ شہوت میں ایسی حرکت کرلی اور شرمگاہ پر نجاست نہیں لگی ہوئی تھی تو ناجائز یا حرام نہیں کہا جائے گا۔
‘স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের লজ্জাস্থানে চুমো দেয়ার মাঝে এসব (ইসলামী) শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ রাখা অসম্ভব। তাছাড়া যবান যা দ্বারা আল্লাহর জিকির করা হয় তা দ্বারা লজ্জাস্থানে চুমো ইত্যাদি দেয়া কোনোভাবেই সঙ্গত মনে হয় না। এটা পশুদের স্বভাবও বটে। তাই একজন মুসলমানের উচিত সর্বাবস্থায় এ থেকে বিরত থাকা। তবে কেউ যদি অত্যাধিক উত্তেজনার কারণে এ কাজ করে ফেলে এবং লজ্জাস্থানে নাপাকি না থাকে তাহলে নাজায়েয কিংবা হারাম বলা যাবে না।’
(http://www.darulifta-deoband.com/home/ur/Halal–Haram/150188)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
জিজ্ঞাসা–৫৭৮:আসসালামু আলাইকুম। অনেক বইতে দেখি সহবাসের সময় স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে দেখা জায়েজ নাই, এতে নাকি স্বামীর চোখের জ্যোতি কমে যায়। আমি সহবাস সম্পর্কিত এ ধরণের সকল বিধি নিষেধ, সকল মাসয়ালা মাসায়েল আর নিয়মগুলো জানতে চাচ্ছি। একেক জায়গায় একেক ধরণের নিয়মকানুন দেখতেছি। আমি বুঝতেছি না আমি কোনটার উপর আমল করব? জানালে উপকৃত হব, ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক। –নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. স্ত্রী সহবাসের সময় যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত, সংক্ষেপে তা নিম্নে পেশ করা হল-
১- নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা। এ মর্মে আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِيأَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ
স্ত্রী সহবাসও সদকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদিস্ত্রী সহবাস এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার গুনাহ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে। (মুসলিম ২২০১)
২- সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে,
كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)
৩- সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া–
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
৪- যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ. نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে।’ ( দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)
৫- মলদ্বারে সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺবলেছেন,
لا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। (ইবন মাজাহ ১৯২৩)
৬-ঋতুবতী অবস্থায় সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ ৩৯০৪)
আরো জানার জন্য দেখুন–জিজ্ঞাসা নং–৮২।
৭- একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا وُضُوءًافإنه أنشط للعود
যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)
তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُএরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ( আবু দাউদ ২১৯)
ফরয গোসলের নিয়ম জানার জন্য দেখুন–জিজ্ঞাসা নং–৩৭৫।
দুই. সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো জায়েয আছে। হাদিসে এসেছে, বাহয বিন হাকীম তিনি তাঁর পিতা তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, একদা তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের গোপনাঙ্গ কী গোপন করব, আর কী বর্জন করব?’ তিনি বললেন, احْفَظْ عَوْرَتَكَ ، إِلَّا مِنْ زَوْجَتِكَ ، أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ ‘তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকটে লজ্জাস্থানের হেফাযত কর।’ সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা আপোসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।’ সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেউ যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, اللهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ مِنَ النَّاسِ ‘মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাঁকে লজ্জা করা হবে।’ (আবূ দাঊদ ৪০১৯, তিরমিযী ২৭৯৪)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবন হাজর আসকালানী রহ. বলেন,
وَمَفْهُومُ قَوْلِهِ (إِلَّا مِنْ زَوْجَتك) يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ يَجُوزُ لَهَا النَّظَرُ إِلَى ذَلِكَ مِنْهُ ، وَقِيَاسه أَنَّهُ يَجُوزُ لَهُ النَّظَرُ
‘তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া’ (إِلَّا مِنْ زَوْجَتِكَ)-এর দ্বারা বোঝা যায়, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো জায়েয। যুক্তিও বলে, এটা জায়েয হবে। (ফাতহুল বারী ১/৩৮৬)
ইবন কুদামা আল মাকদেসী রহ. বলেন,
وَيُبَاحُ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْ الزَّوْجَيْنِ النَّظَرُ إلَى جَمِيعِ بَدَنِ صَاحِبِهِ ، وَلَمْسُهُ ، حَتَّى الْفَرْجِ … ؛ وَلِأَنَّ الْفَرْجَ يَحِلُّ لَهُ الِاسْتِمْتَاعُ بِهِ ، فَجَازَ النَّظَرُ إلَيْهِ وَلَمْسُهُ ، كَبَقِيَّةِ الْبَدَنِ
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সমস্ত দেহের দিকে তাকানো, স্পর্শ করা, এমনকি যৌনাঙ্গের ক্ষেত্রেও বৈধ। কেননা, যৌনাঙ্গে মিলন হালাল। সুতরাং শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত তা দেখা ও স্পর্শ করাও জায়েয। (আল মুগনী ৭/৭৭)
হাশিয়াতুত দাসুকী (২/২১৫)-তে আছে,
وَحَلَّ لَهُمَا ، أَيْ لِكُلٍّ مِنْ الزَّوْجَيْنِ … نَظَرُ كُلِّ جُزْءٍ مِنْ جَسَدِ صَاحِبِهِ ، حَتَّى نَظَرُ الْفَرْجِ ، وَمَا وَرَدَ مِنْ أَنَّ نَظَرَ فَرْجِهَا يُورِثُ الْعَمَى مُنْكَرٌ لا أَصْلَ لَهُ
স্বামী-স্ত্রীর জন্য জায়েয একে অপরের সমস্ত দেহের দিকে তাকানো, এমনকি যৌনাঙ্গের দিকেও। বলা হয়, স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে তাকালে স্বামীর চোখের জ্যোতি কমে যায়-একথার কোনো ভিত্তি নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
জিজ্ঞাসা–৮২: মুহতারাম, আমার একটা গোনাহ হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীর হায়েজ চলাকালীন আমি সহবাস করে ফেলেছি। এখন আমি কী করলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব: হায়েয অবস্থায় জেনেশুনে স্ত্রী সহবাস করা হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُواْ النِّسَاء فِي الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىَ يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা : ২২২)
হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত আছে, নবী ﷺবলেন, যে ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করে অথবা স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে অথবা গণক ঠাকুরের নিকটে যায়- সে মুহাম্মাদ ﷺ উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা (কুরআন) অবিশ্বাস করে। (জামে তিরমিযী ১৩ ইবনু মাজাহ ৬৩৯)
সুতরাং প্রথমত আপনি আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করুন।
তাছাড়া হায়েযের শুরুর দিকে সহবাস হলে এক দীনার আর শেষ দিকে হলে অর্ধ দীনার সদকা করার কথা কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাওবা-ইস্তিগফারের পাশাপাশি উপরোক্ত নিয়মে সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে।
প্রকাশ থাকে যে, দীনার একটি স্বর্ণমুদ্রা। যা বর্তমান হিসেবে ৪.৩৭৪ গ্রাম সমপরিমাণ স্বর্ণ।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২০১; বাযলুল মাজহূদ ২/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৭; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৮)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী