সেলিব্রিটিজম বর্তমান সময়ের বড় এক ফিতনা। বিশেষ করে অনলাইন জগতে এই সেলিব্রিটিজম ফিতনার খুব সয়লাভ হয়েছে। অথচ, আমাদের সালাফরা সবসময় এই সেলিব্রিটিজম তথা নিজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার ভয় করতেন। তারা সবসময় রিয়া, আত্মতৃপ্তি, খ্যাতি ইত্যাদির ভয় করতেন যেন তাদের আমল গুলো ইখলাস শূন্য না হয়। আপনাকে কি অনেক কম মানুষ ফলো করে? তাহলে আপনার জন্য সুসংবাদ।
☛রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”সুসংবাদ তার জন্য, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে আল্লাহর পথে প্রস্তুত রয়েছে। তার চুল এলোমেলো, পা ধূলিময়। সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে দেওয়া হয় না এবং কোনো বিষয়ে সুপারিশ করলে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না।”(সহিহ বুখারী:২৮৮৬)।
আমাদের সালাফরা পর্দার অন্তরালে কাজ করতে বেশি ভালোবাসতেন। তাদের খ্যাতি সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক এটা তারা চাইতেন না, খ্যাতি বিমুখতা পছন্দ করতেন।
☛ইমাম ইবনে মুহাইরিয রহিমাহুল্লাহ দোয়া করতেন,”হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই মানুষের কাছে যেন আমার বেশি সুনাম না থাকে।”(তাফসির ইবনে কাসির:৬/৩৪২)।
☛ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ এর চাচা একবার তার সাথে দেখা করতে এলেন। তিনি দেখলেন, ইমাম আহমাদ খুব অস্থির সময় কাটাচ্ছেন। তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন,”চাচা, যাদের খ্যাতি কম তারা কতই না ভালো আছে!”(তারিখে দিমাশক:৫/৩০৯)।
☛ইমাম আইয়্যুব আস সিখতিয়ানি রহিমাহুল্লাহ যখন কোনো মজলিসের পাশ দিয়ে যেতেন, তখন তিনি লোকদের সালাম দিতেন। লোকেরা উচ্ছ্বসিত হয়ে তার সালামের উত্তর দিত। তখন তিনি আফসোস করতেন এবং বলতেন,”মনে হয়, আমাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরো বলতেন,”আমার আশঙ্কা হয়, খ্যাতির কারণে আমার কোনো আমল আল্লাহর দরবারে টিকবে না।”(তাওয়াদুয়ু খুমুল:৫৬)।
☛ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহিমাহুল্লাহ বলতেন,”তুমি নিজেকে সবসময় সুনাম সুখ্যাতির আড়ালে রাখার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি, তুমি যে সুখ্যাতি পছন্দ করো না, এটাও আড়ালে রাখবে।”(সিফাতুস সাফওয়া:৪/১৩৭)।
☛ইমাম ফুদাইল ইবনে ইয়াজ রহিমাহুল্লাহ বলেন,”কিছু গুণ আছে, যেগুলো অর্জন করলে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন।
১) সম্ভব হলে এমনভাবে থাকার চেষ্টা করবে যে, তুমি মানুষকে চিনবে কিন্তু মানুষ তোমাকে চিনবে না।
২) তুমি শুধু শুনবে, কিছু বলবে না।
৩) তুমি অন্যের মজলিসে বসবে কিন্তু তোমার মজলিসে কেউ বসবে না।”
(সিয়ারু আলামিন নুবালা:৩/১১৬)।
হ্যাঁ, আমাদের পুণ্যাত্মা সালাফগণ এমনই ছিলেন। তারা সবসময় নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টা করতেন এবং এতে অনেক খুশি হতেন।
☛ইমাম হাসান রহিমাহুল্লাহ বলেন, একবার আমি ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহিমাহুল্লাহ এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে একটি কূপের কাছে নিয়ে এলেন। সেখান থেকে অনেকে পানি পান করছিল। তিনিও সেখান থেকে ভিড়ের মধ্যে পানি পান করলেন। কিন্তু অত্যধিক ভিড়ের মধ্যে কেউ তাকে চিনলো না এবং তাঁর সাথেও ধাক্কাধাক্কি করলো। আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক তখন আমাকে বললেন,”এটাই জীবন। যেখানে আমাকে কেউ চিনবে না আর সম্মানও করবে না।”(সিফাতুস সাফওয়া:১/৪০৬)।
তাই অনলাইনে নিজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক, সেলিব্রিটি হিসেবে আমি বেড়ে উঠি এইরকম চিন্তাভাবনা যেন আমাদের অন্তরে না আসে। আমাদের দ্বারা যদি আল্লাহ অনেক মানুষকে উপকার করেন তবে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমরা মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করবো না, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিই কামনা করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সেলিব্রিটিজমের ফিতনা থেকে হিফাজত করুন এবং সবসময় নিচের কথাটি মনে রাখার তৌফিক দিন,”দুনিয়াতে অনেকে সুখ্যাত কিন্তু আসমানে তারা অখ্যাত। আবার আসমানে অনেকে সুখ্যাত কিন্তু দুনিয়াতে অখ্যাত।”
©️মুহাম্মদ রাহাত উদ্দিন