সূফীতত্ত্ব ও সূফিয়ায়ে কেরাম পর্ব (১)
📝মুহাম্মদ আলী
সাইয়েদুত তায়িফাতাঈন ইমাম জুনাইদ মুহাম্মাদ আবূল কাশেম খররায (রাঃ) (ওফাত: ২৯৭ হিজরী)।
সকল ওলামা তাঁর মর্যাদা ও নেতৃত্বের ওপর একমত। এমনকি আছির (র:) বলেছেন: ‘তিনি যুগের বিশ্বসেরা আলেম ছিলেন।’ ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) তাঁর জীবনী গ্রন্থে বলেন: ‘তিনি হাদীস শুনেছেন, ফিকহ হাসেল করেছেন এবং ইবাদত বন্দেগিতে ডুবেছিলেন।
একারণে আল্লাহ তাঁকে ইসলামের সাগর দিয়েছেন।
এমন কিছু বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন, যা তাঁর যুগে অন্য কেউ অর্জন করেনি। সব বিষয়ে জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল। এক পর্যায়ে তিনি ‘সাইয়্যিদুত তায়িফাতাঈন: আলা ফুকাহা’ নামে খেতাব প্রাপ্ত হন। শায়খ ইবনে তায়মিয়া তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন: জুনাইদ রহঃ হলেন দলের সর্দার, হেদায়েতের ইমাম…. এক পর্যায়ে তিনি বলেন : ‘যে ব্যক্তি তাঁর বিরোধিতা করবে, সে ভ্রষ্ট। তিনি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোন শক্র সৈন্যের নেতা উপটোকন পাঠালে আমি তা আমার নিজের জন্য গ্রহণ করতে অপছন্দ করি। সেগুলো আমি যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যয় করেছি।
‘ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ একটি উক্তি হলো: ‘প্রতিটি উম্মতের একটি শক্তিশালী শ্রেষ্ঠাংশ থাকে। আর এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ হলেন সূফীগণ।’ তিনি বলেন, “তাসাউফ হলো আল্লাহর সাথে পবিত্রতা অর্জনের একটি বিনিময়।” নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হারিসা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলে তিনি তেমনটি বলেছিলেন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) তাঁর কাছে প্রশ্ন করলেন: “হে হারিসা! তোমার ভোর কিভাবে হয়? তিনি উত্তরে বললেন, আমি দুনিয়াকে ত্যাগ করে রাত জেগে ইবাদত করি এবং দিনে ইবাদত পিপাসা তৈরি করি।আমার মনে হয়, আমি যেন আমার রবের আরশকে আমি স্বচক্ষে দেখেছি।
আমি প্রত্যক্ষ করতে পারছি যে, জান্নতাবাসীরা জান্নাতে আনন্দ উপভোগ করছেন। আর দোজখবাসীরা দোযোখে সাহায্য পার্থনা করছে।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) তাঁকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বুঝতে পেরেছ। এটিকে গুরত্বের সাথে বিবেচনা করো।’ তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর অন্তরকে আল্লাহ ঈমানের নূরে আলোকিত করেছেন। যদি কেউ কোন জান্নাতবাসীকে দেখতে চায়, তবে হযরত হারিসা (রাঃ)-কে দেখা উচিৎ। তিনি যে উক্তি করেছেন, তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করুন।
তাঁর উক্তিতে মকামুল ইহসানের পরিচয় ভেসে উঠে। অতঃপর নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) তাঁকে ‘তুমি ঠিকই বুঝতে পেরেছ এটিকে গুরত্বের সাথে বিবেচনা কর’ বলে যে উক্তি করেছেন,এটিকেও গভীরভাবে পর্যালোচনা করুন। এভাবে যে সকল ব্যক্তিগণ ইহসান চর্চা করেন, তাঁরা সকলেই মহান আল্লাহর তাওফিক মাকামুল ইহসানের অধিকারী হবেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা পৃথিবীতে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে। মূর্খরা তাঁদেরকে যখন সম্বোধন করে, তখন তাঁরা বলেন, তোমাদের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তা (সালাম) নিশ্চিত করা হয়েছে। আর যে সকল বান্দা সিজদারত অবস্থায় এবং (নামাযে) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাত কেটে দেন, তাঁরাও পৃথিবীতে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করেন।’
মূলঃ শায়খ সাইয়েদ ইউসুফ রেফায়ী হাশেমী। (কুয়েত)
অনুবাদঃ মুহাম্মদ আবদুল হাই আন নদভী।
(পরবর্তী পর্ব, ক্রুসেড যুদ্ধে সূফীদের ভূমিকা।)