সূরা হুযরাতের ১/২/৩ নম্বর আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসিরঃ-
লেখকঃ-মুহাম্মদ আযম
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
(১) অর্থঃ মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
অর্থাৎ তোমাদের জন্য অপিরহার্য যেন মূলতঃ তোমাদের থেকে কখনো (নবী করীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম থেকে) অগ্রগামিতা সম্পন্ন না হয়- না কথায়, না কাজে। কারণ, অগ্রগামী হওয়া রসূল করীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের প্রতি আদব ও সম্মানের পরিপন্থী। রসূল পাকের দরবারে আদব ও বিনয় রক্ষা করা অপরিহার্য।
শানে নুযুলঃ কিছু সংখ্যক লোক ঈদুল আযহার দিনে নবী করীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের পূর্বেই কোরবানী করে নিলে তাদের নির্দেশ দেয়া হল কোরবানী পুনরায় করেন।
হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেক বর্ণিত, কিছু লোক রমযানে একদিন পূর্বেই রোযা রাখা আরম্ভ করে দিতো তাদের প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হয়েছে “রোযা পালনের বেলায় আপন নবী ( সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম।) থেকে অগ্রগামী হয়োনা।”
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَرْفَعُوٓا۟ أَصْوَٰتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ ٱلنَّبِىِّ وَلَا تَجْهَرُوا۟ لَهُۥ بِٱلْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَٰلُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
(২) অর্থঃ মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।
অর্থাৎ, যখন হুযুরের দরবারে কিছু আরয করো, তখন আস্তে নিচু স্বরে আরয করো! এটাই দরবার-ই রেসালতের আদব ও সম্মান।
হুযুর সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের মহত্ব,সম্মান,
হুযুরের দরবারের প্রতি আদব ও সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আহবান করার বেলায় পূর্ণ শালীনতা বজায়ে রাখা হয়। যেভাবে পরস্পরের মধ্যে একে অপরকে নাম ধরে ডাকে, সেভাবে নবী করীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে আহবান না করে; বরং আদব, সম্মান, গুণবাচক ও সম্মানজনক এবং মহত উপাদি সহকারে আরয করে যা কিছু আরয করার আছে ; কারণ আদব করা না হলে সৎকর্মসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবার আশান্কা রয়েছে।
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَٰتَهُمْ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱمْتَحَنَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
(৩) অর্থঃ যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَرْفَعُوٓا۟ أَصْوَٰتَكُمْ
মুমিনগণ! তেমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর হযরত আবু বকর সিদ্দীক্ব ও হযরত ওমর ফারূক্ব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা ও কোন কোন সাহাবী অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করাকে নিজেদের জন্য অপরিহার্য করে নিলেন এবং তাঁরা পবিত্রতম দরবারে অতি নীচু স্বরে কিছু আরয করতেন।
কাযী আবু বকর ইবনে-আরবী (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম)-এর সম্মান ও আদব তাঁর ওফাতের পরও জীবদ্দশায় ন্যায় ওয়াজিব। অনুরূপ যে মজলিশে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম)- এর হাদীস পাঠ অথবা বর্ণনা করা হয়, তাতেই হট্টগোল করা বেয়াদবি। কেননা, নবীজর কথা যখন তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হত তখন সবার জন্য চুপ করে শুনা ওয়াজীব ও জরুরী ছিল। এমনিভাবে ওফাতের পর যে মজলিসে সেসব বাক্যাবলী শুনানো হয় সেখানে হট্রগোল করাও বেয়াদবি।
(সূরা হুযারাত আয়াত: ১/২/৩)
তাফসিরঃ কানযুল ঈমান, মা’আরেফুল কোরআন]