সাহাবায়ে কেরামের নবীপ্রেম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নাপিতকে দেখেছি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর চুল কাটছে আর সাহাবীরা তাঁর চতুর্পাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোন চুল যেন মাটিতে না পড়ে তা যেন কারো না কারো হাতে পড়ে। (সহিহ মুসলিম ৫৯৩৭)

উরওয়াহ ইবনে মাসউদ (যিনি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন) কুরাইশদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন-

“হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে।

আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূল ﷺ যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। (সহিহ বুখারী ২৭৩২)

আবদুর রহমান ইবনু আবূ কুরাদ (রাঃ) বলেন, একদিন নবী ﷺ উযূ করলেন। সাহাবায়ে কিরাম তাঁর উযূর পানি স্বীয় শরীরে মর্দন করতে লাগলেন। নবী ﷺ তাঁদেরকে বললেনঃ কিসে তোমাদেরকে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করল? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এঁর ভালবাসা। তখন নবী ﷺ বললেনঃ যার আন্তরিক বাসনা যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসবে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ তাঁকে ভালোবাসবেন, সে যেন যখন কথা বলে সত্য বলে, যখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা হয় সে তা যথারীতি ফেরত দেয় এবং যার প্রতিবেশী আছে, সে প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীসুলভ উত্তম আচরণ করে। [মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার (كتاب الآداب), হাদিস নম্বরঃ ৪৯৯০, শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী ১৫৩৩]

আবূ জুহায়ফা রাঃ বলেন, (একদা) আমাকে নবী ﷺ এঁর নিকটে নেয়া হল। নবী ﷺ তখন আবতাহ নামক স্থানে দুপুর বেলায় একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। বেলাল (রাঃ) তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে যোহরের নামাজের আযান দিলেন এবং (তাঁবুতে) পুনঃপ্রবেশ করে নবী ﷺ এঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। সাহাবায়ে কেরাম এটা নেয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন। (সহীহ বুখারী ৩৫৬৬)

তিনি আরো বলেন, তারা তাঁর ওযূর পানির জন্য প্রতিযোগীতা করছে। কেউ সামান্য পানি পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তার সাথীর ভিজা হাত হতে নিয়ে নিচ্ছে। (সহিহ বুখারী ৩৭৬)

নামাজ শেষে লোকজন দাঁড়িয়ে গেল এবং নবী ﷺ এঁর উভয় হাত ধরে তারা নিজেদের মাথা ও চেহারায় বুলাতে লাগলেন। (আবূ জুহায়ফা (রাঃ) বলেন) আমিও নবী ﷺ এঁর হাত মোবারক ধরে আমার চেহারায় বুলাতে লাগলাম। তাঁর হাত তুষার চেয়ে স্নিদ্ধ শীতল ও কস্তুরীর চেয়ে অধিক সুগন্ধ ছিল। (সহীহ বুখারী ৩৫৫৩)

জন্ম আমার নবীর যুগে হলে কেমন হতো!! 

দু’নয়নে রাসূলে পাক (ﷺ) দেখলে কেমন হতো!!

যাঁর পরিবারবর্গকেও পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে, উনাকে নাকি পাক বলা যাবে না!! এমনকি দেখলাম রাসূলে পাক বলার কারণে এক মাহফিলে নাত শরীফ পরিবেশনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আরো এক ভিডিও দেখতে পেলাম যেখানে আরেক নামধারী আহলে হাদিসপন্থী মৌলভী ড. ইমাম হুসাইন খুব সুন্দরভাবে রাসূলে পাক বলা যাবে না বলে অপব্যাখ্যা করল এবং ভিডিওটাতে খুব সুন্দরভাবে ইমাম হুসাইন রাঃ তথা আহলে বাইতের প্রতি তার বিদ্বেষ প্রকাশ পেল। আর না হয় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা যাদের পবিত্র বলেছেন তাদেরকে পাক-পবিত্র বললে বা পাক পাঞ্জাতন বললে সমস্যা কোথায়!! হ্যা, সমস্যা তখন হবে যখন এই পাঁচজনের বাইরে উম্মাহাতুল মুমিনীনসহ আরো অন্যান্যদেরকে আহলে বাইত হিসেবে অস্বীকার করবে, পথভ্রষ্ট শিয়ারা যেমনটা করে।

সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতঃ “হে নবীর পরিবারবর্গ- আল্লাহ তো এটাই চান যে, তোমাদের থেকে প্রত্যেক অপবিত্রতা দূরীভূত করে দেবেন এবং তোমাদেরকে পবিত্র করে অতীব পরিচ্ছন্ন করে দেবেন” নাজিল হওয়ার পর প্রিয় নবী ﷺ, মাওলা আলী রাঃ, ফাতিমাহ রাঃ, হাসান রাঃ ও হুসাইন রাঃ কে চাদরাবৃত করে মহান আল্লাহ কর্তৃক তাদেরকে পবিত্র করার কথা জানিয়ে দেন। এজন্য এই পাঁচজনকে পাক পাঞ্জাতন বলেও অভিহিত করা হয়।

আম্মাজান আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সকালে বের হলেন। তার পরনে ছিল কালো নকশী দ্বারা আবৃত একটি পশমী চাদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাকে চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনিও চাদরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লেন। ফাতিমাহ (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর ‘আলী (রাঃ) এলেন তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপরে বললেনঃ “হে আহলে বাইত! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের হতে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করে তোমাদের পবিত্র করতে চান।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ঃ ৩৩)। [সহীহ মুসলিম ৬১৫৫, সূনান আত তিরমিজিতে (৩২০৫) উমার ইবনু আবী সালামাহ রাঃ কর্তৃক বর্ণিত উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামাহ রাঃ এঁর ঘরে যখন এ আয়াত নাজিল হয়]

এছাড়াও সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আর যখন (এই) আয়াতঃ “অতঃপর (হে মাহবুব!) যে ব্যক্তি আপনার সাথে (ঈসা সম্পর্কে) বিতর্ক করে এর পরে যে, আপনার নিকট জ্ঞান (ওহী) এসেছে, তবে তাদেরকে বলে দিন, ‘এসো, আমরা ডেকে নিই আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমরা তোমাদের পুত্রদেরকে এবং আমরা আমাদের নারীদেরকে ও তোমরা তোমাদের নারীদেরকে; আর আমরা আমাদের নিজেদেরকে ও তোমরা তোমদের নিজেদেরকে। অতঃপর মুবাহালাহ্ (বিনীত প্রার্থনা) করি। তারপর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত দিই।”(সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ৬১) 

অবতীর্ণ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসায়ন (রা.) কে ডাকলেন। তারপর বললেন, 

হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার-পরিজন।  

(সহীহ মুসলিম ৬১১৪)

ফিতনা ফাসাদকারী, মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ’র লানত। মাহফিলে নাত পরিবেশনের সময় বাধা সৃষ্টির পেছনে এসব ফিতনা সৃষ্টিকারীরাই দায়ী। আমার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,

“যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত, তবে তোমাদের মধ্যে ফ্যাসাদই বৃদ্ধি করত এবং তোমাদের মাঝে ছুটোছুটি করত, তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির অনুসন্ধানে। ” (সূরা তাওবাহ ৪৭)

“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা যমীনে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করো না’, তারা বলে, ‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী।” (সূরা বাকারাহঃ ১১)

“এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।” (সূরা মুনাফিকুনঃ ১)

“সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু এরা তা অনুভব করতে পারে না।” (সূরা বাকারাহঃ ১২)

“আল্লাহ ও ঈমানদারদের তারা ধোঁকা দিতে চায়,আসলে তারা অন্য কাউকে ধোঁকা দিচ্ছে না বরং নিজেদেরই প্রতারিত করছে,অথচ তাদের সে অনুভূতি নেই।” (সূরা বাকারাহ ৯)

“তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আর এ উপায়ে তারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। তারা যা করে তা কতই না মন্দ! তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরী করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।” (সূরা মুনাফিকুন ২, ৩)

“যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদেরকে যমীনে বিপর্যয় (ফ্যাসাদ) সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি মুত্তাকীদেরকে পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য করব?” (সূরা ছোয়াদ ৩৮ঃ ২৮)

“সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহগুলোকে স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদকারী হয়ে বিচরণ করো না।” (সূরা আ‘রাফ, আয়াত ৭৪)

“ওহে যারা ঈমান এনেছ! ভালো বিষয়গুলো যা আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বৈধ করেছেন সেসব তোমরা নিষিদ্ধ করো না, আবার বাড়াবাড়িও (সীমালঙ্ঘন) করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ ভালোবাসেন না সীমালঙ্ঘন কারীদের।” (সূরা আল মায়িদাহঃ ৮৭)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment