‘সমকামীতা’ ও এর অতীত-ভবিষ্যত !

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করছেন কেবল তাঁরই ইবাদাত করার জন্য এবং তার দেখানো সহজ-সরল পথ ইসলামকে মেনে চলার জন্য। তিনিই মহান আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করছেন আমাদের আদি পিতা ‘আদম (আ.)’ ও আদি মাতা ‘হাওয়া (আ.)’ কে। এবং তাদের থেকেই সূত্রাপাত করেছেন এই মানব জাতির। তিনিই আল্লাহ যিনি পুরুষদের জন্য স্ত্রীর বৈধতা দিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন অপার ভালোবাসা। তিনিই একমাত্র আল্লাহ যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ফোঁটা বীর্য থেক, অতঃপর সুবিন্যস্ত করেছেন বিভিন্ন আকার-আকৃতিতে। তিনিই আমাদের মধ্য থেকে নির্বাচন করেছেন যুগল নর ও নারী এবং দিয়েছেন বৈবাহিক ক্ষমতা।

মহান আল্লাহ বলেন,

তিনিই পানি(বীর্য) থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।-(সূরা আল ফুরকান- ৫৪)

‘সমকামিত’-?

যখন কোনো পুরুষ কিংবা নারী নিজেদের যৌন খোদা মেটানোর জন্য কিংবা নিজেদের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় ফুটিয়ে তোলার জন্য নিজেদের (একই লিঙ্গের মানুষের) মধ্যে যৌনাচার/ ব্যাভিচার সৃষ্টি করে তাকেই সহজ ভাষায় ‘সমকামীতা’ বলে। আর তা তখনই হয় যখন শয়তানের প্ররোচনায় তারা নিজেদের কুপ্রবৃত্তির অনুসারী হয়। তাই কোনো পুরুষ কিংবা নারী যখন এই অসভ্য নোংরামীতে নিজেকে নিমজ্জিত রাখবে(!) তখন কোনক্রমেই একজন মুসলিম তাদের এই কৃতকর্মকে সমর্থন করতে পারে না! বরং এইসব কর্মকে ঘৃণাসহ নির্মূলের ব্যবস্হা নেওয়াই তার নৈতিক দায়িত্ব।

কেন ‘সমকামীতার’ বিরুদ্ধে আমরা?

এই প্রশ্নে যাবার পূর্বে আরেকটু মনে করিয়ে দেই যে আমরা নিজেদেরকে ‘মুসলিম’ দাবি করি। আর যখন এই দাবি আমাদের অন্তর থেকে সৃষ্টি হবে তখন নিজেদেরকে একটি চক্রের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে হবে। যখনই এই চক্রের ব্যাঘাত ঘটবে তখনই বুঝতে হবে আমরা সঠিক পথে নাই। আর যখন সঠিক পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো তখন শয়তান নামক রাক্ষস আমাদেকে গলঃধকরণ করতে চাইবে। মূলকথা আমাদেরকে বিশ্বাস রাখতে হবে এই জীবন চক্রের মধ্যেই আমাদের প্রতিটা সফলতা খুঁজে নিতে হবে। আর এই জীবন চক্রটির প্রকৃত নাম হল “ইসলাম”(A complete code of Life)।

যখন আমাদের মধ্যে এই বিশ্বাস স্হাপন হবে যে ‘ইসলাম’ ই সকল সমস্যার সমাধান! তখন যে কোনো বিষয়ে আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর দেওয়া সমাধান এর কাছে। তাহলে এই ‘সমকামীতা’ সম্পর্কে আমার দ্বীন (ইসলাম) কি বলে (?) তা জানাই মুখ্য। কেননা আমি ইতোমধ্যেই নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করেছি এবং ‘ইসলাম’ কে আল্লাহর পক্ষ থেকে একমাত্র ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়েছি। তাই বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানীরা কি তথ্য দেয় সে দিকে তাকিয়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই!

আরেকটু জানার জন্য বলে রাখা উচিত যে, যখনই বিজ্ঞান আল্লাহর কোনো সত্যিকার নিদর্শন প্রমাণ করেছে তখন তারা এইটাকে নিজেদের কৃতিত্ব আর প্রকৃতির নিয়ম বলে চালিয়ে দেয়। এছাড়াও এর বিরুদ্ধে নানা শয়তানী যুক্তিসহ থাকে বহু ভ্রাণ্ত মত। আর এসব মতামতকে শয়তান ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের মনে সৃষ্টি করে নানা সন্দেহ। অথচ এতসব মতের বিপরীতে ইসলামের দিকে তাকালেই পাওয়া যায় চুড়ান্ত সমাধান। তাই এই ‘সমকামিতার’ বিপক্ষে কোন মনীষি কি বললো সে দিক না তাকিয়ে ইসলামের দিকে তাকানোই যথেষ্ট। কেননা ঐ মনিষী আর বিজ্ঞানীর কথা যখন আমাদের দলিল হবে তখন তার বিপরীতে আরো শত শত বিজ্ঞানী আর মণীষি রূপক শয়তানের অনুসারীর অভাব হবে না!

এখন আসা যাক এই নেক্কারজনক পাপ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে (?) আর এর সমাধানই বা কি (?)

এ জঘন্য কর্মটি যে গুরুতর অপরাধ তার নিদর্শন মহাগ্রন্থ আল-কুর’আন ই স্পষ্ট রয়েছে। যা গঠেছিল লূত (আ.) এর সম্প্রদায়ের মধ্যে। আর ঐ সম্প্রদায়ের চুড়ান্ত পরিণতি হয়েছিল ধ্বংস। এবং আল্লাহ নিজেই তাদেরকে সীমালঙ্ঘনকারী বলে ঘোষণা দিয়েছেন!

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি লূত (আ.) কে প্রেরণ করেছি। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” -(সূরা আ’রাফ: ৮০-৮১)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

“অবশেষে আমার আদেশ চলে আসল, তখন আমি উক্ত জনপদের উপরকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।” -(সূরা হুদ: ৮২)

অর্থাৎ ঐ সম্প্রদায় চুড়ান্ত গজবে পতিত হয়েছে। আর ঐ সময়টা ছিলো সূর্যোদয়ের সময়। যখন জিবরীল (আ.) ঐ জনপদটিকে উপরে নিয়ে উল্টিয়ে জমিনে চাপা দিয়ে দেন এবং উপর থেকে শক্ত পাথর নিক্ষেপ করেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

তাইতো, জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমার উম্মত সম্পর্কে যে সব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হচ্ছে পুরুষে পুরুষে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া।” -(ইবনু মাজাহ, মিশকাত / ৩৪২১)

সুতরাং এই নিকৃষ্ট কাজটি যে কোনো একটি সম্প্রদায়ের জন্য অভিশাপস্বরূপ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! বরং এই নোংরামীর শেষ পরিণতি যে ধ্বংস তা প্রমাণে ক’ওমে লূত (আ.) এক বিরাট ও স্পষ্ট নিদর্শন। যেহেতু সমস্যার পেছনে শয়তানের ইন্দন ও বাসনা রয়েছে, সেহেতু এর সমাধানও ইসলাম দিয়েছে। এবং তা খুবই স্পষ্ট ও যথার্থ। তাহলে দেখি এর সমাধান হিসেবে ইসলাম কি নির্ধারণ করেছে-

ইকরামাহ (রা.) ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা যাদেরকে লূতের সম্প্রদায়ের অনুরূপ আচরণ করতে দেখ, সে পাপাচারী এবং যার উপর ঐ কুকর্ম করা হয়েছে উভয়কে হত্যা কর”। -(ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান, মিশকাত হা/ ৩৫৭৫)

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ঈমাম শাফেই (রহ.) এবং আলেমদের একটি জামাত বলেছেন ‘লাওয়াতাতকারীকে’ হত্যা করতে হবে, সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক। ঈমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন যে, তাকে উপর থেকে নিচে নিক্ষেপ করতে হবে এবং এক এক করে পাথর বর্ষণ করতে হবে যেভাবে লূত (আ.) এর ক’ওমের প্রতি করেছিলেন। -(তাফসীর ইবনে কাসীর)

সুতরাং ‘সমকামীদের’ মতো নোংরা ও বর্বর মানুষদের মুসলিম সমাজে বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ নেই! যদিও দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নিজেদের মুসলিম দাবি করে আসছে, আধো তাদের কতটুকু ধর্মীয় অনুভূতি আছে তা প্রশ্নের দাবি রাখে(!) আর না হয় কি করে এই দেশের এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘রূপবান’ নামক সমকামী ম্যাগাজিন নিয়ে আসতে সাহস করে(?) কিভাবে সমকামীতার দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে(?) যেখানে শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু (!) সেখানে প্রকাশ্য উৎসাহ কি করে সম্ভব (??) এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে অবশ্যই আপনাকে ইসলামের শত্রু পক্ষকে চিনতে হবে! এবং তাদে উদ্দেশ্য ও চাওয়া কি সে সম্পর্কে সচেতন হতে হবে!

হে আল্লাহ আমাদেরকে ‘ইসলামিক জ্ঞান’ দান করুন এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করার মানসিকতা তৈরী করুন। আমাদেরকে প্রকৃত বন্ধু এবং শত্রু চেনার সামর্থ্য দান করুন। আমাদেরকে সঠিকপথগামী করুন। আমীন ।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment