উহুদের যুদ্ধ চলাকালীন সময় আমার নবী কারিম (ﷺ) এর একজন আনসারীয়া মহিলা সাহাবী খবর পেয়েছে যে,
যুদ্ধের ময়দানে নবী কারিম (ﷺ)কে শহিদ করে দিয়েছে।এই খবর পেয়ে তিনি ছুটতে লাগলেন। উক্ত যুদ্ধে সেই আনসারী মহিলা সাহাবী এর বাবা, ভাই, স্বামী এবং সন্তান অংশগ্রহণ করেছেন। মাঝপথে সংবাদ এসেছে তার বাবা, ভাই, স্বামী এবং সন্তান জিহাদের ময়দানে শাহাদাত বরণ করছেন। এই সংবাদ পাওয়ার পরেও এই মাহিলা সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, আমার নবী কেমন আছেন সেটা বলো?
উত্তরে বললেন – জীবিত আছেন। মহিলা সাহাবী বলেন- আমি শুনেছি শহিদ হয়েছেন। আমি তোমাদের কথায় আমার মনে শান্তনা পাব না। মহিলা সাহাবী বিশ্বাস করতে না পেরে আবারো ছুটতে লাগলেন স্বচক্ষে দেখার জন্য।
গিয়ে দেখেন প্রিয় নবী (ﷺ) ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রক্তাক্ত চেহেরা মুবারাক নিয়ে বসে আছেন। মহিলা সাহাবী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র নূরানী চেহেরা মুবারাকের দিকে তাকিয়ে বললেন-
➥ ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) – আমি আমার সন্তান হারিয়েছি, তবুও বুকের ব্যথা বুকে চাপা দিয়েছি।
➥ আমার স্বামী শহিদ হয়েছেন, ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের কষ্ট-বেদনা আমি বুকে দাপন করে দিয়েছি।
➥ আমার ভাই শাহাদাত বরণ করেছে, ভারাক্রান্ত এই মনকে শান্তনা দিয়েছি।
➥ প্রিয় বাবাকেও যুদ্ধে হারিয়েছি, সেই দুঃসহ যন্ত্রণাও হৃদয়ে দাফন করে দিয়েছি।
➥ ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আমার অন্তর বিচ্ছেদের তাড়নায় ছিন্ন-ভিন্ন। তবুও যখন স্বশরীরে এসে আপনার চাদঁ মাখা বদন মুবারাক পুনরায় দেখতে পেলাম, খোদার কসম- আমার অন্তরে আর কোনো কষ্ট নেই। 😥😥😥😥
সুবহানাল্লাহ। একজন নারী তার জীবনে চলার মত চার চারটি অবলম্বন হারিয়েছে, এর পরেও আমার নবী কারিম (ﷺ) এর নূরানী চেহেরা মুবারাক তার সীমাহীন দুঃখ-কষ্টকে দূর করে দিয়েছে। এটাই আমার নবীর প্রতি উম্মাতের ভালবাসার নিদর্শন। একজন আশেকে রাসুল (ﷺ) এর উচিৎ এরকম বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
আজকাল দেখা যায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কোন অবমাননার কারণে সাথে সাথে সবাই প্রতিবাদ করতে মাঠে নেমে যায়, কিন্তু নবী কারীম (ﷺ) এর অবমাননার প্রতিবাদে যাদের উপস্থিতি দেখা যায় না Shame on them! কবরে তাদেরকে কোন নেতা সেদিন বাঁচাবে? তারা কি মৃত্যুবরণ করবে না? ৫০ বছর? ৬০ বছর? ১০০ বছর? এরপর কি হবে তোমার? কি হবে বলো না? পঁচা গলা দেহগুলো এমন ভাবে মাটির সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যার অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না।
উম্মত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অবমাননায় কি কর্তব্য পালন করেছ তাঁর (ﷺ) এর কদমে হাজির হয়ে সেই জবাবদীহি করতে হবে। সেদিন যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে উম্মত বলে স্বীকৃতি না দেন তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী আর কে আছে- যে আমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে?
তাইতো কবি কাজী নজরুলের ভাষায় –
“রাসূলের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মন,
মুসলিম নয় মুনাফিক তুই, রাসূলের দুশমন।”