আমার ইমাম আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, পরওয়ানায়ে শাময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, ইমাম আহমদ রযা খাঁন ইশকে মোস্তফা’র মধ্যে ডুবে মেরাজে মুস্তফা এর দৃশ্য অবলোকন করে “কসীদায়ে মেরাজিয়া”র লিখেছেন–
মেরাজের রাতে হুযুর সায়্যিদে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরশে মুয়াল্লায় উপস্থিত হলে তখন ঐ সম্মানিত মেহমানের খুশি ও আনন্দের জন্য সমস্ত উপকরণ একত্রিত করা হলো। মেরাজের রাতে সমস্ত ফেরেস্তা ও সমস্ত আসমানে যার যার সূর ও ছন্দে বুলবুলির মতো সংগীত গাইছে এবং বলছে যে, মেরাজের রাতের কেমন বাহার, হে বাহার! তোমায় এই আনন্দ মোবারক। আর হে বাগান! তোমাকেও আবাদ ও বাহার মোবারক, মেরাজের রাতে আসমান ও জমিনে উভয়ের উপর আনন্দ জোয়ার বইছে এবং সাড়া জাগাচ্ছে।
মেরাজের রাতে নূর ওয়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেরাজের খুশিতে নূরের বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে। (যেমন নতুন দুলার আগমনে ফুল বর্ষণ করা হয়) মেরাজের রাতে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে ঐ নূরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সুঘ্রান সুবাশ ছড়াচ্ছে এবং খুব উৎফুল্ল, যেমনি ভাবে বিবাহের ঘরে হয়ে থাকে।
মেরাজের রাতে খুশিতে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরানী চেহারা থেকে এই পরিমাণ নূর বিচ্ছুরিত হচ্ছে যে, যেটা আরশ পর্যন্ত সমস্ত আসমান আলোকিত করে দিয়েছে। মেরাজের রাতে এই পরিমাণ আলো ঝলমল করছে যে, এমন মনে হচ্ছে; সব জায়গায় আয়না লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কা’বা শরীফ এক নতুন দুলহানের মতো সুন্দর হয়ে গেছে। মেরাজের রাতে তার সৌন্দর্য্যের মধ্যে উৎসাহ ও যৌবন এসে গেলো এবং হাজরে আসওয়াদের উপর উৎসর্গ হয়ে যাবো যে, যেটা কা’বার মাঝখানে একটি তিলের মতো। মেরাজের রাত এর মধ্যে লাখো সাজ সজ্জার রং ভরে গেছে। মেরাজের রাতে মেরাজের দুলা , প্রিয় মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক ও সম্মানীত এবং পবিত্র চক্ষুদ্বয়ে বিশেষ আলো রয়েছে। মেরাজের রাতে খুশির মেঘ দলবদ্ধ হয়ে আসছে, অন্তরের ময়ূর তার রং দেখাচ্ছে। মেরাজের রাতে নাতের মাধুর্য্য এমন পরিণত হয়েছে হেরমও উন্মত্ততায় ছিলো।
মেরাজের রাতে কা’বার ছাদের উপর তৈরীকৃত সোনালী নালা যেটান নাম “মীযাবে যর” ঝুমুরের মতো মনে হচ্ছে। মেরাজের রাতে কা’বায়ে মুয়াজ্জমা চমকাচ্ছে এবং এর সুরবিত গিলাফ রাতের শীতল হাওয়ায় উড়াচ্ছে এবং এর থেকে সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। মেরাজের রাতে সুঘ্রাণে মিশ্রিত কা’বার গিলাফ উন্মত্ত হয়ে আন্দোলিত হচ্ছে । মেরাজের রাতে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ও সুউচ্চ চুঁড়া এত সুন্দর দেখাচ্ছে যে,
বাহ! বাহ! কি বলবো। মেরাজের রাতে সকালের বাতাস তার সবুজের মধ্যে এমন দোলা দিচ্ছে যে, এমন মনে হচ্ছে; যেরূপ পাহাড় সমূহ সবুজ রঙ্গের উড়না উড়িয়ে রেখেছে। মেরাজের রাতে নদীর অবস্থা এটাই ছিলো যে, নদীরা গোসল করে প্রবাহিত পানির উজ্জ্বল পোশাক পরিধান করেছে। মেরাজের রাতে মেরাজের দুলা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অভ্যর্থনা জানাতে, চাঁদের চাঁদনীর পুরনো বিছানা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আলোকিত সৃষ্টির চোখের স্বর্ণ ও রেশমের সূতা দিয়ে তৈরীকৃত বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হয়ে ছিলো।
আজও আশেকানে রাসুলের অন্তরকে খুশির হাওয়া আন্দোলিত করে যায় মেরাজ এর রজনীতে। নিয়ে আসে ইবাদতে নতুন রঙ। শুরু হয়ে যায় মাহে রামাদানের প্রস্তুতি। মুখ বারবার বলে ওঠে–
‘ওহ সারওয়ারে কিশওয়ারে রিসালাত
জু আরশ পর জলওয়া গর হুয়ে থে’
আমার প্রিয় রব তায়ালা কত সুন্দরই না বলেছেন–
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। -সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ১