মুবাহ, মুফসিদ, বাতিল

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মুবাহ: 

মুবাহ হল পালন ও বর্জন উভয়ই বান্দার ইচ্ছাধীন। এর হুকুম পালনে কল্যাণ ও বর্জনে শাস্তি নেই।

হারাম: হারাম হল যার কোন মোকাবিলা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয়। উহার হুকুম আল্লাহ আয্যা ওজাল্লার সন্তুষ্টির লক্ষে ইহা বর্জন করাতে সাওয়ার ও লিপ্ত হওয়াতে শাস্তি রয়েছে এবং বৈধ কিংবা হালাল বলে ধারণা পোষণকারী সকলের সম্মতিক্রমে কাফের হয়ে যায়। কেননা যে ব্যক্তি অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত অবাধ্যতাকে হালাল মনে করে সে আল্লাহ তায়ালার সাথে কুফরি করে। কারণ অবাধ্যতাকে হালাল মনে করা মানে আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম অস্বীকার করা।

মাকরূহ: মাকরূহ যাহার বৈধতা ও অবৈধতা উভয় দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- বিড়ালের উচ্ছিষ্ট কেননা হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, বিড়াল হিংস্র জন্তু তাই বিড়ালের উচ্ছিষ্ট নাপাক ও হারাম। অপবাদিকে উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়শা ছিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি বিড়াল অপবিত্র নয় কেননা উহা তোমাদের মাঝে ঘুরাফেরা করে। এর থেকে বুঝা যায় তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী জন্তুর উচ্ছিষ্ট পবিত্র, হারাম নয় বরং মাকরূহ; কেননা এর থেকে সংযত হওয়া কষ্টকর। এর হুকুম বর্জনে কল্যাণ পালনে শাস্তির আশংকা রয়েছে এবং বৈধতার দলীল বিদ্যমান থাকার কারণে হালাল জানলে কুফরীর হুকুম আরোপিত হয় না; যা সন্দেহ সৃষ্টি করে আর সন্দেহ দ্বারা কুফরী দূরীভূত হয়ে যায়।

জেনে রাখ অবশ্যই মাকরূহ ব্যাপক বিষয় যা সর্ব শ্রেণীকে অন্তর্ভূক্ত করে; কেননা প্রত্যেক বিনষ্টকারী বিষয় মাকরূহ হয় কিন্তু তার বিপরীত নয়। ইহা এ জন্যে ধ্বংসাত্মক বিষয় মাকরূহকে অন্তর্ভূক্ত করে; কেননা আমল বাতিল হওয়া অপছন্দ। আভিধানিক অর্থানুসারে যা প্রিয় এর বিপরীত। অতএব এর অর্থ ব্যাপক (প্রত্যেক অপছন্দ বিষয়)।

মুফসিদ: 

মুফসিদ হল শরীয়ত অনুমোদিত বিষয়াদী ভঙ্গ করা। ইহা ইবাদত ও মুয়ামালাত উভয় বিষয়ে হয়ে থাকে। যেমন- নামায অবস্থায় কথা বলা, বিক্রিত বস্তু ক্রেতার নিকট হস্তান্তরে অপারগ হওয়া। প্রথমত উভয়ের একটিকে বাতিল করা যাতে তাদের দাবীর বিপরীত না হয়; কেননা তাদের দাবী অনুযায়ী পরিশুদ্ধ আমল যাতে আরকান, শর্ত ও মনোনীত গুণাবলী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি সেখানে কোন মন্দ বিষয় থাকে তাহলে সে আমল অশুদ্ধ প্রমাণিত হয়। যদি মন্দ কাজটি মৌলিক বিষয় হয় তখন তাকে বাতিল বলে গন্য করা হয়। ইবাদতে যেমন- রুকন ও শর্তবিহীন নামাজ এবং মুয়ামিলাতে যেমন- শরাব বিক্রি করা। উহা গুণগত মন্দ হলে ফাসেদ হিসাবে গণ্য হবে। যেমন- ওয়াজিব বর্জন করা, সুদী লেনদেন করা। যদি মৌলিক বিষয়ের সাথে সংযুক্ত বাহ্যিক কোন বিষয় হলে উহাকে মাকরূহ বলা হয়। যেমন অবৈধ পন্থায় দখলকৃত জায়গায় নামায পড়া, আযানের সময় ব্যবসা করা।

জেনে রাখো ফিকাহ দু’ধরণের এক একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার হক দুই একনিষ্ঠভাবে বান্দার হক। প্রথম প্রকারের নাম ইবাদাত যার প্রকার সমূহ হেদায়া নামক গ্রন্থের প্রথম খণ্ড কিতাবুল ওয়াকফ পর্যন্ত ব্যাপৃত ও দ্বিতীয় প্রকারের নাম মুয়ামিলাত যা দ্বিতীয় খণ্ডে বর্ণিত।

বাতিল: 

তাঁর বাণী, সঠিক পথ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নামই বাতিল। অর্থাৎ মূল উদ্দেশ্য থেকে বের হয়ে যাওয়া। যেমন- তাঁর বাণী, ইবাদাত ও মুয়ামিলাতে; নামায অবস্থায় কথা বলা বিক্রিত বস্তু হস্তান্তরে অপারগ হওয়া। এর হুকুম ইচ্ছাকৃত পালনে শাস্তি, ভুলবশত পালনে শাস্তি মওকুফ। আমদান শব্দের অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে করা; যদি কেউ ফরয নামাযে এক রাকাত বা দু’রাকাত বৃদ্ধি করে আদায় করে ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করে এতে কোন অসুবিধা নেই। এর উদাহরণ অনেক বিদ্যমান। তার বাণী সাহওয়ানের মর্ম হল ভুলবশত অনিচ্ছাকৃত কোন কাজ করলে ক্ষমাকৃত। কেননা হুযুর (ﷺ) এর বাণী, আমার উম্মত হতে ভুল ভ্রান্তিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। শরয়ী বিধান অনুযায়ী কৃত অন্যায়ের জন্য যে শাস্তি অবধারিত ছিল তা ভুলে অনিচ্ছায় সংঘটিত হওয়ায়, ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। সুকর্মে কল্যাণের সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে। শরীয়ত অনুমোদিত মূল উদ্দেশ্য নামায, আরকান সমূহ সময়মত জামাতের সাথে আদায় করণ, কেননা নামায ঈমানের পর সর্বপেক্ষা বড় আরকান। যেমন- আল্লাহ তায়ালার বাণী- “অত:পর তারা তাওবা করেছেন ও নামায কায়েম করেছেন।’’ জেনে রাখো, নামায চারটি বিষয়ের অন্তর্ভূক্তকারী ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব। প্রথমত এ চার প্রকার শরাহ মোতাবেক ইহা ছাড়াও আরো চার প্রকার অনুসারী হিসাবে বিদ্যমান। প্রত্যেক প্রকারের তফসিলী বিবরণ প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রকার সংখ্যা, প্রকারভেদ ও প্রকারের সীমাবদ্ধতা সংক্ষিপ্তকারে কিন্তু অর্থসহকারে মুমিনদের সহজার্থে ধারাবাহিকভাবে আটটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

জেনে রাখো, ফরয দু’প্রকার; ফরযে আইন ও ফরযে কেফায়া। ফরযে আইন যার বাস্তবায়ন প্রত্যেকের ওপর আবশ্যক। একজনের আদায় দ্বারা অন্য জনে মুক্তি পাবে না। যেমন- ঈমান ও অন্যান্য আবশ্যকীয় বিষয়। ফরযে কেফায়া যার বাস্তবায়ন সকল মুসলমানের ওপর কর্তব্য; তবে কেউ আদায় করলে বাকীরা মুক্তি পাবে। যেমন- জিহাদ ও জানাযার নামায। নামাযের ফরজিয়ত কিতাবুল্লাহ (কোরআন) দ্বারা প্রমাণিত।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment