পোষ্ট নং: ৮
প্রোজেক্ট: মিলাদুন্নবীর স্থলে মাজিউন্নবী প্রমাণের অপচেষ্টা।
🖋️🖋️মুহাম্মদ হাসান ক্বাদেরী
বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর
📝 আ’লা_হযরতের_নামে_মিথ্যা_অপবাদ
লেখক তার বইয়ের ৭ম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন- আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, আহমদ রেজা খান বেরলভী (রাঃ) তাঁর রচিত কিতাব নূরুল মোস্তফার ও ফাতাওয়াই আফ্রিকার-৯৯ পৃষ্ঠার মধ্যে, আল্লাহর হাবীবকে আল্লাহর জাতি নূরের তাজাল্লি বলেছেন হাদিস শরীফের আলোকে।
✒️ এ বক্তব্যটি আলা হযরতের নামে মিথ্যা অপবাদ। কারন আলা হযরত কোনো কিতাবে আল্লাহর হাবীবকে আল্লাহর জাতি নূরের তাজাল্লি বলেননি। বরং বলেছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ হলেন نور ذاتى (জাতি নূর) এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি এর ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করে দিয়েছেন। আর এটাও বলে দিয়েছেন- রাসূলুল্লাহ ﷺ কে نور ذاتى বা জাতি নূর দ্বারা কেউ যদি আল্লাহর জাতের অংশ মনে করে তাহলে সে কাফের মুশরিক হবে। যা ইতিপূর্বে তার উদ্ধৃতি সহ দেওয়া হয়েছে। আর ফতোয়ায়ে আফ্রিকা ৯৯ পৃষ্ঠায় আলা হযরত (রহঃ) এর উক্তিটি যা তাঁর কিতাব হতে হুবহু কমেন্টস বক্সে দেওয়া হলো। 📝📝📝📝
[প্রশ্ন নং ৬২] হুজুর আকদাস ﷺ বলেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এবং আমার নূর দ্বারা সকল জাহানের সৃষ্টি করেছেন। জায়েদ প্রশ্ন করেছে যে, ঐ নূরে মোহাম্মদী কত বড় ( যার দ্বারা সকল জাহানকে সৃষ্টি করা হয়েছে।) উত্তরে জবাব, এর মধ্যে কি সন্দেহ থাকতে পারে। একটি মোমবাতি আলোকিত কর। অতপর লাখো কোটি মোমবাতি এর থেকে আলোকিত করেন।( যে মোমবাতি হতে আলো নিয়ে অন্যান্য মোমবাতি আলোকিত করলেও) ঐ মোমবাতির আলো কমে যাবে না। তদ্রুপ নূরে মুহাম্মদি ﷺ এর পবিত্র নূর কমে যায়নি।
,, জায়েদের আপত্তটি মূর্খ সূলভ আর প্রশ্নকারীর উত্তর সঠিক ও জ্ঞান মূলক। মহান আল্লাহ অধিক জ্ঞাত। উল্লেখ্য যে ﷺ এর বাণী নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এর মর্ম হলো – আল্লাহ তায়ালা কোন মাধ্যম ব্যতীত আমাকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আগেই আলা হযরত সহ ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক এর ব্যাখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আলা হযরতের নামে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আল্লাহর জাতের অংশ সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই।
[خلق শব্দের ভুল ব্যাখ্যা]
লেখক তার বইয়ের ৭ পৃষ্ঠাসহ কয়েক স্থানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শানে خلق শব্দটি সৃষ্টি অর্থে না করে প্রকাশ অর্থে করেছেন। অথচ কোন অভিধানে এবং কোন জ্ঞানবান ব্যক্তি এ জাবৎ خلق অর্থ সৃষ্টি না করে প্রকাশ অর্থে করেননি। এমন অর্থ করার উদ্দেশ্যে হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সৃষ্টি না বলা এবং মহান আল্লাহর জাতের অংশ সাব্যস্ত করা যা সম্পূর্ণ গোমরাহী। লেখকের ভঙ্গিমায় বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শানে মিলাদ (জন্ম) ও খালক (সৃষ্টি) এর ব্যবহার বেআদবী বা তার মর্যাদার হানী। তাই তার শানে خلق এর অর্থ সৃষ্টি না করে প্রকাশ এবং মিলাদ (জন্মগ্রহণ) ব্যবহার না করে শুভাগমন ব্যবহার করেছেন।
আসলে লেখকের বুঝা উচিৎ, যার শানে যা রয়েছে তার শানে তা বলা ও বিশ্বাস করাই হলো প্রকৃত আদব। আর তা না বলে অন্যাটা বলাই হলো বেয়াদবি এবং অতিভক্তি চোরের লক্ষন।
✒️এবার আসুন কোরআন হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে خلق বা সৃষ্টি বলা।
লেখক তার বইয়ের ৩০ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন- পবিত্র কোরআনের কোথাও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শানে সৃষ্টি শব্দটি উল্লেখ নেই। এ কথাটি লেখকের চরম বোকামি। বরং লেখকের বলা উচিৎ ছিল আমার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমার জানা নেই। কেননা সূরা আর রহমান এর শুরুতে الرحمن علم القران خلق الانسان علمه البيان আয়াতের ব্যাখ্যায় আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান (রাঃ) বলেন-
[পরম দয়ালু আল্লাহ আপন মাহবুবকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানবতার প্রান মুহাম্মদ ﷺ কে সৃষ্টি করেছেন, যা সৃষ্টি হয়েছে এবং যা সৃষ্টি হবে সব কিছুর বর্ণনা তাকেই শিক্ষা দিয়েছেন।]
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে সাভীতে আছে-
قيل هو محمد ﷺ لانه الانسان الكامل والمر اد بالبيان علم ما كان وما يكون وما هو كائن
[বলা হয় خلق الانسان দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুহাম্মদ ﷺ কেননা তিনি হলেন الانسا الكا مل তথা সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শবান বাহ্যিক মানবীয় আকৃতির মানুষ। আর البيان দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- পূর্ব ও পরবর্তী সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান।]
অতএব প্রমাণিত হলো কোরআন মাজিদে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শানে خلق বা সৃষ্টির শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-
كنت اول الناس فى الخلق واخرهم فى البعث(كنز العمال ١١ /٩٠٤)
]আমি হলাম সৃষ্টিতে মানুষের প্রথম এবং প্রেরণে সবার সর্বশেষ।] আরো এরশাদ হচ্ছে:-
كنت اول النبيين فى الخلق واخر هم فى البعث (الديلمى ٣/٩٨٢)
[সৃষ্টিতে আমি হলাম সর্ব প্রথম নবী এবং প্রেরণ হলাম তাদের সর্বশেষ নবী।] আর সোমবার রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এরশাদ করেন فيه ولدت وفيه انزل على [এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিন আমার উপর অহী অবর্তীণ করা হয়।( মুসলিম ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ৩৬৮, হাদিস নং ১৬১)]
কোরআন মাজিদ ও হাদিস শরীফের অগণিত দলীল রয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত সবই তাঁর সৃষ্টি। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ মহান আল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে বিশ্বাস করা ঈমানের অপরিহার্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা কেয়াছ অনুমান করা স্পষ্ট কুফরী ও পথ ভ্রষ্টতা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। কেউ যদি অজ্ঞতা বশত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত خلق অর্থ ظهر (প্রকাশ হয়েছে) অর্থ করে তা সম্পূর্ণ বোকামি হবে। কেননা خلق (সৃষ্টি করা) শব্দটি মোতায়াদ্দি তথা যার কর্মকর্তা দ্বারা সম্পন্ন হয়। আর ظهر (প্রকাশ হওয়া) হলো লাজেম তথা যার কর্ম নেই বরং কর্তাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমন অর্থ করা স্পষ্ট কুফরী। কেননা মহান আল্লাহই একমাত্র তার অস্তিত্বে স্বয়ং প্রকাশমান এবং তিনিই সকলকে সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। অপর দিকে কেউ যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মীলাদকে অস্বীকার করে তাও হবে কুফরী ও বোকামি। কেননা মহান আল্লাহর গুন হলো لم يلد ولم يولد (না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন এবং না তিনি কারো থেকে জন্ম গ্রহণ করেছেন) আল্লাহ তায়ালার গুনে কাউকে গুনান্বিত করা শিরক। কিন্তু কেউ যদি এ কথা বলেন যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিলাদ শরীফ বা জন্ম অন্য কোনো মানুষের ন্যায় নয় বরং তিনি নূরানী শরীর মোবারক নিয়ে অতুলনীয় ভাবে নূরানী জন্মগ্রহণ করেছেন। এতে কোন অসুবিধা নেই। প্রকৃতপক্ষে এটাই হলো তার শান।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অতুলনীয় সৃষ্টি ও মিলাদ শরীফ সম্পর্কে শায়েরে রাসূল হাস্সান ইবনে সাবেত (রাঃ) কতইনা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন তার কবিতার মাধ্যমে:-
واحسن منك لم تر قط عينى* واجمل منك لم تلد النساء
خلقت مبر امن كل عيب* كانك خلقت كما تشاء-
[ আপনার চেয়ে অতিসুন্দর আমার চক্ষু কখনো দেখিনি এবং আপনার সাথে অধিক সুন্দর কাউকে কোনো মহিলা প্রসব করেনি। আপনাকে সকল প্রকার দোষক্রটি হতে মুক্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে। মনে হয় আপনি যেমন চেয়েছেন তেমনি করে আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।]
📝হুবহু তার বই থেকে দেওয়া লেখকের ১১ নং দলিল:
يا هل الكتب قد جاء كم رسو لنا يبين لكم
হে কিতাবী গণ! নিঃসন্দেহে তোমাদের নিকট আমার এ রাসূল শুভাগমন করেছেন যিনি তোমাদের নিকট আমার বিধান সমূহ সু-স্পষ্ট রূপে বর্ণনা করেন। সূরা মায়দা শরীফ ১৯ নম্বর আয়াত শরীফ।
✒️ দলিলের জবাব:- (১) লেখক তার মতের পক্ষে দলিলের ফিরিস্তি বৃদ্ধি করার জন্য সূরা মায়েদার একই আয়াতকে ৯,১১,ও ১২ নং দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। ৯ নং দলিলের জবাবে ১১ও১২ নং দলিলের জবাব দেওয়া হয়েছে।
(২) লেখকের অবগতির জন্য আরো বলতে হয় যে, উক্ত আয়াত মিলাদ শরীফ যাকে আপনি মাজিউন্নবী ﷺ নামে বাজারজাত করতে চান, এর দলীল হতে পারে না। কারন তিনি আহলে কিতাবদের নিকট মিলাদ শরীফের দিন সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে যাননি।
📝 লেখকের ১৩ নং দলিল:-
فقد كذ بو ابا الحق لما جاء هم- فسوف يا تيهم انبؤ اما كا نو ابه يستهزء ون
অতঃপর নিঃসন্দেহে তাঁরা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যখন তাদের নিকট এসেছে। সুতরাং অদুর ভবিষ্যতে তাদের নিকট খবর আসবে ঐ বিষয়ে যা নিয়ে তাঁরা ঠাট্টা- বিদ্রপ করতো।( সূরা আনআম ৫ নং আয়াত শরীফ)
✒️ দলিলের জবাব:- রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিলাদ শরীফের সময় তাঁরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন এবং ঠাট্টা বিদ্রুপ করেনি। বরং মিলাদ শরীফের ৪০ বছর পর যখন তিনি তাদের নিকট গিয়েছেন তখন করেছে। তাই এ আয়াত লেখকের পক্ষে দলিল হতে পারে না।
📝 লেখকের ১৪,১৫,১৭ও১৯ নং দলিল:
(١٤) لقد جاءت رسل ربنا با لحق و نو دوا ان تلكم الجنة اور ثتمو ها بم كنتم تعملون
(١٥) قد جاء ت رسل ربنا با لحق
(١٧) ولقد جاء تهم رسلهم با لبينت
(١٩) و جاء تهم رسلهم با لبينت
✒️ দলিল গুলোর জবাব:- (১) লেখক এই আলোচ্য বিষয়ের ৪ টি আয়াতের অংশবিশেষ কে দলীল হিসেবে এনেছেন যা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। কেননা উক্ত আয়াত সমূহ জান্নতবাসীদের অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো নবী রাসূলের উম্মতের বক্তব্য নয়
(২) রাসূলগণের মিলাদ শরীফের সাথে উক্ত আয়াত গুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
📝 লেখকের ১৬ নং দলিল:
او عجبنم ان جاء كم ذكر من ربكم على رجل منكم لينذ ركم ولتتقوا ولعلكم تر حمون
✒️ দলিলের জবাব:- লেখক এমন দিশেহারা হয়ে গেছেন যে, কোরআন মাজিদের যেখানেই جاء (এসেছে) শব্দ আছে এটাকেই নিজের মনগড়া মতের দলীল মনে করেছেন। দলীল হিসেবে আনীত আয়াতে কাফেরদের কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, যখনই তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট যিকির তথা উপদেশ বা হেদায়াতের বানী আসে তখনই তোমরা একে মিথ্যা প্রতিপন্ন কর। আয়াতে মাজিউন্নবী বা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগমনের কথা নেই।
📝 লেখকের ১৮ নং দলিল:
لقد جاء كم رسول من انفسكم عنر يز عليه ما عنتم حريص عليكم با لمو منين رءوف رحيم
✒️ দলিলের জবাব:- দলীল হিসেবে আনীত আয়াতের মর্ম হলো- রাসূলুল্লাহ ﷺ আরবের কাফিরদের নিকট যখন তাঁর রেসালাতে প্রকাশ করলেন তখন তাঁরা তাকে অস্বীকার করে বসলো। অথচ তাঁরা তাঁর সর্বাধিক উচ্চ বংশীয় মর্যাদা, সত্যতা, বিশ্বস্ততা, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি, প্রশংসিত চরিত্র ইত্যাদি সৎগুণাবলী সম্পর্কে অবহিত আছে। তাই তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, তোমাদের সুপরিচিত ও তোমাদের কল্যাণ কামনা কারি মুহাম্মদ ﷺ তোমাদের নিকট এসেছেন। তোমাদের উচিত তার প্রতি ঈমান আনা। উক্ত আয়াতটিকে লেখক যে অর্থে দলিল হিসেবে এনেছেন তা কোনো ক্রমেই প্রমাণ করে না।
📝 লেখকের ২০ নং দলিল:
ولكل امة رسول فاذاجاء رسو لهم قضى بينهم با لقسط وهم لا يظلمو ن
✒️ দলিলের জবাব:- উপর্যুক্ত দলীল আমাদের নবী মুহাম্মদ ﷺ এর প্রসঙ্গে নয় বরং অন্যান্য নবী রাসূলের প্রসঙ্গে অবর্তীণ হয়েছে। তাই এগুলোকে নিজের মতের পক্ষে দলিল মনে করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। লেখকের ৬০, ৬১,৬২ও ৬৪ নং দলিল গুলি ২০ নং দলিলের ন্যায় অপ্রাসঙ্গিক দলিল কেননা এগুলো অন্যান্য নবী রাসুল প্রসঙ্গে।
📝 লেখকের ২৩ নং দলিল:
فمن اهتد ى فا نما يهتد ى لنفسه ومن ضل فا نما يضل عليها وما انا عليكم بو كيل
✒️ দলিলের জবাব:- ২৩ নং দলিলের মর্ম হলো- যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর ঈমান এনে হেদায়াত পায় সে নিজেরই উপকার করলো এবং যে ব্যক্তি তাকে অমান্য করে পথভ্রষ্ট হয়,সে নিজেরই অপকার করলো। আশ্চর্য লাগে লেখক কিভাবে এ আয়াতকে নিজ মতের পক্ষে দলিল হিসেবে আনলেন। অথচ কোনো দিক দিয়েই এ আয়াত লেখকের মতকে প্রমাণ করে না।
📝 লেখকের ২৫,২৬,২৭,২৮ নং দলিল:
(٢٥) اذجاء همالهد
যখন তাহাদের নিকট হিদায়েত এসেছে।(সূরা বণী ইসরাঈল)
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন। কোরআন কারিম নিয়ে।(তাফসিরে ইবনে আব্বাস (রাঃ)১৮১পৃষ্ঠা)
(٢٦) اذ جاء هم الهدى
যখন হিদায়েত তাদের নিকট এসেছে।(সূরা কাহহ ৫৫ নং আয়াত শরীফ)
অর্থাৎ কোরআন কারিম অথবা সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরঁ মোবারক সত্তা।(কানযুল ঈমান ৫৪৫ পৃষ্ঠা)
(٢٧) كلما جاء امة رسو لها كذ بوه
যখন কোন উম্মতের নিকট তার রাসূল এসেছেন তখন তাঁরা তাকে অস্বীকার করেছে।(সূরা মু’মিন ৪৪ নং আয়াত শরীফ)
(٢٨) افلم يد بر وا القو ل ام جاء هم ما لم يات اباء هم الا ولين
তবে কি তারা এ বাণীর মধ্যে গভীর চিন্তা করেনি, অথবা তাদের নিকট কি তাই এসেছে। যা তাদের পূর্ব পুরুষদের নিকট আসেনি।
✒️ দলিল গুলোর জবাব:- দলিল গুলো সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দ ১২ রবিউল আউয়াল সম্পর্কে নয়। বরং দুনিয়ার ৪০ বছর পর হায়াতের পর কোরআন মাজিদ নিয়ে ঈমানের দাওয়াত দেওয়ার জন্য ভয় প্রদর্শনকারী রূপে রেসালাত গ্রহণ করার জন্য ইহুদী, নাসারা ও কাফিরদের নিকট শুভাগমনের বর্ণনা প্রসঙ্গের আয়াত। উক্ত দলিল গুলোর ন্যায় নিম্নের ২১,২২,২৪,২৯,৩০, ৩৩,৩৪,৩৫,৩৬,৩৮,৩৯,৪১,৪২,৪৩,৪৪,৪৫,৪৬,৪৭, ৫৮,৫৯,৬৩,৬৫,৬৬ নং দলিল গুলোও অপ্রাসঙ্গিক।
📝 লেখকের ৪৮,৪৯,৫০ নং দলিল:
(٤٨) وما تفرق الذين اوتوا الكتب الا من بعد ما جاء تهم البينة
এবং কিতাবীদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এরপর যে, সেই সু- স্পষ্ট প্রমাণ তাদের নিকট শুভাগমন করেছে।(সূরা বাইয়্যেনাহ ৪ নং আয়াত শরীফ)
(٤٩) لم يكن الذ ين كفروا من اهل الكتب والمشر كين منفكين
কিতাবীগণ এবং মুশরিক নিজ নিজ ধর্মত্যাগী ছিলো না। (সূরা বাইয়্যেনাহ ১ নং আয়াত)
উপরোক্ত আয়াতে কালিমার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-
قبل مجئ محمد عليه السلام مثل عبد الله بن سلام و اصحا به
অর্থাৎ কিতাবীগণ (ইহুদী খৃষ্টান) বলতো আমরা ধর্মত্যাগী নই যেই পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়ায় শুভাগমনের পূর্ব পর্যন্ত তাদের মধ্যে বড় আলেম যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম এবং তাঁর সঙ্গীগণ।
(٥٠) وا لمشركين মুশরিক-
والمشر كين بالله قبل مجئ محمد صلى الله تعالى عليه وسلم مثل ابى بكر واصحابه
✒️ দলিল গুলোর জবাব:- লেখক তার বইয়ের কোথাও عيد مجئ النبى ﷺ (নূরনবী ﷺ এর শুভাগমনের ঈদ) প্রমাণে একটি দলিলও দিতে সক্ষম হননি। কিন্তু ৪৯ নং দলিলে সূরা বাইয়্যেনাহ ১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর তাফসিরে قبل مجئ محمد عليه الصلوة والسلام তাফসীরাংশটি আনতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে مجئ محمد রয়েছে। এটাই হলো লেখকের সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল। একে পুঁজি করে মাঠে ময়দানে তিনি জোড়ালো বক্তব্য পেশ করেন যে, জগৎ বিখ্যাত তাফসিরের কিতাব যার লেখক রাইসুল মোফাসসেরিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুমা ঐ কিতাবে مجئ النبى (মাজিউন্নবী) আছে। এমনকি লেখক তাফসিরে ইবনে আব্বাস কিতাবখানা মূর্খ লোকদেরকে দেখিয়ে তাদেরকে নিজ মতে আনার চেষ্টা করেছেন।
🖋️🖋️ চলবে ৯ পর্ব
আসছে নতুন চমক তাফসিরে ইবনে আব্বাসের নামে ঈদে মাজিউন্নবী প্রমাণের অপচেষ্টা।