🕋 আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বল না, বরং তারা জীবিত তবে তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারোনা-{সূরা বাকারা-১৫৪}
🕋 কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে, “এবং এভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তাদের (একদল) বলল, ’তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ কর! তাদের রব (খোদা)-ই তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তারা বলল, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।” [সূরা কাহাফ, ২১ আয়াত]
🕋 ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন, “কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে এই মানুষগুলো ছিলেন ’আল্লাহর আরেফীন (আল্লাহ-জ্ঞানী), যাঁরা এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন’।” [তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা]
🕋 ইমাম রাযী (রহ:) আরও লেখেন: “এবং আল্লাহর কালাম – ‘(এ বিষয়ে) যারা ক্ষমতাশালী’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ‘মুসলমান শাসকবৃন্দ’, অথবা আসহাবে কাহাফ (মো’মেনীন)-এর বন্ধুগণ, কিংবা শহরের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা নিশ্চয় তাদের স্মৃতিস্থানের ওপরে মসজিদ নির্মাণ করবো’ – এই আয়াতটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, ‘আমরা যাতে সেখানে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি এবং এই মসজিদের সুবাদে আসহাবে কাহাফ তথা গুহার সাথীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে পারি’।” [তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা]
আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (রহ:)-এর মাযার-রওযা অবশ্য অবশ্যই নির্মাণ করা জায়েয বা বৈধ, অজ্ঞ কিছু ভাইয়েরা হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝে একটিহাদীসকে মাযার বিরোধী বলে অপ প্রচার চালাচ্ছে দেখুনএর সঠিক ব্যাখ্যা:-
০১.হাদীশ শরীফ-প্রখ্যাত তাবেয়ী আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী বলেন, আমাকে আলী (রাঃ) বললেনঃ
أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَ“
তোমাকে কি আমি এমন একটি কাজ দিয়েপাঠাবো না যে কাজ দিয়ে আমাকেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠিয়েছিলেন? তা হল কোন (মুশরিকদের) প্রতিকৃতি ও মূর্তি পেলে তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলবে, আর (মুশরিকদের কোন) উঁচু কবর দেখলেতা সমান করে দেবে-(মুসলিম শরীফ)
০১.হাদীসটির ব্যাখ্যা
➡️এগুলো কাফিরদের- মুশরিকদের কবর ছিল বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার হাফিজুল হাদিস ইমাম হাজর আসকালানী (রহ) বলেন, নবীগনও তাদের অনুসারীগনের কবর বাদ দিয়ে মুশরিকদের কবরগুলোকে ধ্বংশ করা হয়েছিল কেন্না এগুলো উপরে ফেলার কারন ছিল নবীজী(সা)এর মানহানী করত।
(দলিল-শরহে বুখারী ফতহুল বারী ২ খন্ড ২৬ পৃষ্টা)
হযরত আলী (রা) সম্ভবত তাঁর শাসনামলে, ৩৫থেকে ৪০ হিজরির মধ্যে তাঁর সেনাপতিকে ওই আদেশ দিয়েছিলেন। নিচে এর মতই আরেকটা হাদিস পাওয়া যায় যেখানে রাসুল(সা) মসজিদ নির্মানের জন্যকাফির মুশরিকদের মুর্তিও কবর এর উপরের স্থাপত্য সব ভেংগে সমান করে দিয়েছিলেন।
হাদিসটি নিম্নরূপ *****
🕋 মূসাদ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় পৌঁছে,………. তিনি মসজিদ তৈরীকরার নির্দেশ দেন……… আনাস (রাঃ) বলেন: আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ (স্থাপত্য বা নিদর্শন বা মুর্তি) ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এগুলো ভেংগে দেয়ার) নির্দেশ দিলে(এগুলো ভেংগে) মুশরিকদের কবর,খুড়ে ফেলা হল। তারপর (মুশরিকদের স্থাপত্য/নিদর্শন/মুর্তি) ভগ্নাবশেষ যা ছিল সমতল করে দেয়া হল, খেজুরের গাছগুলো কেটে ফেলা হল এর দুই পাশে পাথর বসানো হল (মসজিদ নির্মানের জন্য)।
(সহীহবুখারী ৪১৬ (৪২০) এবং সহীহ মুসলিম ১০৬৮)
এবার দেখুন এই হাদিসের আদেশের সাথে হযরত আলী (রা) এর শ্রবণকৃত নবীজি (দ.) এর আদেশের কথা মিলে যাচ্ছে। এই আদেশের কথাই হযরত আলী (রা) তাঁর সেনাপতিকে অবহিত করেছিলেন। অন্যকোন সময়ের এরকম কোন আদেশের কথা কোথাও নেই। ফলে ইমামগণ, মুফাসসিরিনে কেরাম এবং মুজতাহিদগণ একমত ছিলেন যে হযরত আলী (রা) এর হাদিসটি।।
মাযার নির্মান-
🕋হযরত উরওয়া (’আলাইহির রাহমাহ) বলেন, ওয়ালিদ ইবনে আব্দিল মালিকের শাসনামলে নবীজীর রওজা শরীফের দেয়াল ধ্বসে পড়লে তারা(কর্তৃপক্ষ) সংস্কার শুরু করলে একটি পা দেখা গেলো। এটি নবীজী (সা:)এর পা মুবারক মনে করে লোকেরা ঘাবড়ে গেলো শনাক্ত করার মতো কাউকে তারা পায় নি তিনি (উরওয়া) বললেন: আল্লাহুর শপথ এটি নবীজীর কদম মুবারক নয়, বরং উমর (রা:)ওনার পা মোবারক। (বুখারী শরীফ-ইস:-১৩০৯নং)
🕋 উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) মক্কায় অবস্থিত তাঁর ভাই হযরত আব্দুর রাহমান বিন আবু বকর (রা) এর কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেন এবং ওনার কবর জিয়ারত করতে মদীনা থেকে ৫০০কিলোমিটার দুরে মক্কায় যেতেন। ৫৮ হিজরি উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা(রা) এর ওফাতের আগ পর্যন্ত এই আমল ছিল। (মুস্তাদরেকে হাকিম, ১ ম খন্ড, পৃষ্টা ৫৩২, হা: ১৩৯৪-
মুন্তাকা শরহে মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক)
➡️ইজমা কেয়াসের দলিল-০১
জামেউল ফতোয়ার বরাতে আহকাম নামক গ্রন্থে উল্লেখ্য আছে যে, যদি মৃত ব্যক্তি ওলি বা উলামা বা ইসলামিক যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হন তাহলে তাদের কবরে উপর ইমারত নির্মান করা বৈধ্য এবং জায়েজ। এতে মাকরুহ হবে না। [সূত্র-ফতোয়ায়ে শামী ১ম খন্ড-৯৩৭ পৃ: মিসরের মূদ্রীত]
➡️ইজমা কেয়াসের দলিল-০২
শায়খ উলামা বা যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বর্গের মাজারে যিয়ারতের উদ্দেশ্য এবং সেখানে বসে আরাম করার উদ্দেশ্যে ইমারত নির্মান করা বৈধ বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন।
(তাফসীরে রুহুল বয়ান-৮৭৯ ও মাজমাউল বিহার ৩য় খন্ড-১৮৭ পৃ:)
➡️ইজমা কেয়াসের দলিল-০৩
মাজারের উপর ইমারত বা গম্ভুজ নির্মান করা সাহাবায়ে কেরামগণ দ্বারা প্রমানিত তা না হলে রাসূল (দ.) ওনার রওযা মোবারকের উপর সর্ব প্রথম উমর (রাঃ) এবং দ্বিতীয়বার ওমর ইবেন আব্দুল আজিজ (রহঃ) ইমরাত ও আলিশান গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন। যা বর্তমানে ও আছে তা মদীনায় গেলেই বোঝা যায়।
[সূত্রঃ ইমাম শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভি (রহ:) : জজবুল কুল্লুব ইয়া দিয়ারিল মাহবুব]