বর্তমানে নয় যুগযুগ ধরে অনেক বাতিল পন্থীরাও নিজেদেরকে আহলে সুন্নাহ বা হক পন্থী বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু দেখতে হবে যে আহলে সুন্নাহের মূল নীতি অনুসারে সে আছে কিনা। এ কয়েক শতাব্দী ধরে একটি ফিতনা খুব প্রবল বেগে গজিয়ে উঠছে তাদের নাম আহলে হাদিস। তারাও সুযোগ বুঝে নিজেদেরকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী বলে দাবি করে। কিন্তু আক্বিদা ও মূল নীতির ক্ষেত্রে তারা আহলে সুন্নাহ এর ধারেকাছেও নেই। তারা চার মাযহাব মানাকে অস্বীকার করে, অথচ অতীতের অসংখ্য উলামায়ে কেরামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, চার মাযহাবকে অস্বীকারকারী আহলে সুন্নাহ থেকে খারিজ বা বাতিল পথভ্রষ্ট। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-
هُوَ مَذْهَب الْأَئِمَّة الْأَرْبَعَة وَغَيرهم من أهل السّنة وَالْجَمَاعَة
-‘‘চার মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণ এবং অন্য মুজতাহিদ ফকিহ ইমামদের মাযহাব হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত।’’
➤আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২/২৩৮পৃষ্ঠা।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
وَمَذْهَبِ الْحَنَفِيَّةِ مِنْ جُمْلَةِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ،
-‘‘হানাফী মাযহাব হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অর্ন্তভুক্ত।’’
➤মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাতুল মাফাতিহ, ৮/৩৩৭৪৮পৃষ্ঠা, হা/৫৩৭৬ এর আলোচনা।
তাই বুঝা গেল যারা মাযহাব অস্বীকার করে তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী নয়; বরং সে পথভ্রষ্ট। এ প্রসঙ্গে ইমাম সাভী সূরা কাহাফ আয়াত ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-
وَلَا يَجُوْزُ تَقْلِيْدُ مَا عَدَا الْمَذَهِبِ الْاَرْبَعَةِ وَلَوْ وَافَقَ قَوْلَ الصَحَّابَةِ وَالْحَدِيْثِ الصَّحِيْحِ وَالْاَيَةِ فَالْخَارِجُ عَنِ الْمَذَاهِبِ الْاَرْبَعَةِ ضَالٌّ مُضِلٌّ وَرُبَمَا اَدَّاهُ ذَالِكَ اِلَي الْكُفْرِ لِاَنَّ الْاَخْذَ بِظَوَاهِرِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ مِنْ اُصُوْلِ الْكُفْرِ
-‘‘চার মাযহাব ছাড়া অন্য কোন মাযহাবের তাকলীদ বা অনুসরন জায়েয নয়। যদিও সে মাযহাব সাহাবিদের উক্তি, সহীহ হাদীস ও কুরআনের আয়াতের সহিত সাঙ্গতি পূর্ণ হয়। যে এ চার মাযহাবের কোন একটির অনুসারী নয়, সে পথভ্রষ্ট এবং পথ ভ্রষ্টকারী। কেননা হাদিস ও কুরআনের কেবল বাহ্যিক অর্থ গ্রহণই হলো কুফরীর মূল।’’
➤ইমাম সাভী : তাফসীরে সাভী : ৪/১৫পৃষ্ঠা,
তাই মাযহাবের প্রত্যেক ইমামকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বিদা। আজ পর্যন্ত কোন মুজতাহিদই বলেননি যে তারা ভুল করেছেন। তবে ডা. জাকির নায়েক বলে,‘‘আমি জানি সব মানুষই ভুল করতে পারেন। ইমাম আবু হানিফা ভুল করেছেন, ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) ভুল করেছেন, ইমাম মালেক ও ইমাম হাম্বলী (র)-ও ভুল করেছেন।’’
➤ জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ৫/৯২পৃষ্ঠা, পিস পাবলিকেন্স, কম্পিউটার মার্কেট, বাংলাবাজার, ঢাকা।
ইমাম তাহাবী (رحمة الله) {৩২১হি.}আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা বর্ণনা করেন-
وَعُلَمَاءُ السَّلَفِ مِنَ السَّابِقِينَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ أَهْلِ الْخَيْرِ وَالْأَثَرِ وَأَهْلِ الْفِقْهِ وَالنَّظَرِ لَا يُذْكَرُونَ إِلَّا بِالْجَمِيلِ وَمَنْ ذَكَرَهُمْ بِسُوءٍ فهو على غير السبيل
-‘‘পূর্ববর্তী যুগের ‘সালাফে সালিহীন’ (নেককার পূর্ববর্তীগণ) ও তাঁদের অনুসারী পরবর্তীকালের কল্যাণময় আলেমগণ, মুহাদ্দিস ও হাদিস অনুসারীগণ এবং ফকীহ-মুজতাহিদ ও ফিকহ-অনুসারীগণ, তাদের সকলকেই যথাযোগ্য সম্মান ও প্রশংসার সাথে স্মরণ ও উল্লেখ করতে হবে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের সম্পর্কে কূটুক্তি বা বিরূপ মন্তব্য করে সে ভ্রান্ত পথের অনুসারী।’’
➤ইমাম তাহাবী, আকিদাতুত তাহাবী, (শুধু মতন), ১/৮২পৃষ্ঠা, ক্রমিক:৯৭।
তাই ডা. জাকির নায়েকও সেই ভ্রান্ত পথের অনুসারী হয়েছেন চার মাযহাবের ইমামসহ অন্যান্য বুযর্গদের সমালোচনা করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।