মানুষের উপর কি বদ নজর লাগে?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মানুষের উপর কি বদ নজর লাগে?

বদ নজরের প্রভাব সত্য। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- 

وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ 

অর্থ –আর কাফিররা যখন উপদেশবাণী শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, ‘এ তো এক পাগল’।

(সূরা আল-কলম, আয়াতঃ ৫১)

হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এবং মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, (لَيُزْلِقُونَكَ) “তোমার প্রতি বদনজর দিবে।” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রুগী বানিয়ে দিবে যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাযত না থাকে। আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে।যেমন এ ব্যাপারে হাদীসও রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)

বদ নজরে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা-

হযরত জিবরাইল (আলাইহিস সালাম)নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এই দু’আর মাধ্যমে ঝাড়তেন,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ جِبْرِيلَ، أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ اشْتَكَيْتَ فَقَالَ ‏ “‏ نَعَمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

আবি সাঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ্!(দরুদ) আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন?তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল)বললেনঃ আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নযর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।

(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৫৫১২, ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)

বদ নজরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

#প্রথম পদ্ধতি-

যে ব্যক্তি নজর লাগিয়েছে যদি তার সম্পর্কে জানা যায়, তবে তার গোসল করা পানি নিয়ে রোগীর পিঠে ঢেলে দিবে। তাতে আল্লাহ তায়ালার হুকুমে সে আরোগ্য লাভ করবে।

আবু উমামা বিন সাহাল বিন হুনাইফ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা সাহাল বিন হুনাইফ মদিনার খাররার নামক উপত্যকায় গোসল করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। যখন তিনি গোসলের জন্য জামা খুললেন তখন তার শরীরে আমের বিন রাবীয়ার (রা.) দৃষ্টি পড়ে। যেহেতু সাহাল বিন হুনাইফ (রা.) সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন, তাই আমের দেখামাত্র বলে উঠল।আজকের মতো এমন (সুন্দর) চামড়া আমি কখনও দেখিনি; এমনকি অন্দর মহলের কুমারীদেরও না। তার এ কথা বলার সাথে সাথে সাহাল তৎক্ষণাৎ বেহুশ হয়ে পড়ে যায় এবং প্রচণ্ড আকারে রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।

এরপর রাসুলুল্লাহ (দরুদ) কে বিষয়টি জানানো হয় এবং বলা হল যে, সে তার মাথা উঠাতে পারছে না।

রাসুলুল্লাহ (দরুদ) জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি কারো প্রতি বদ নজরের সন্দেহ কর? উত্তরে লোকজন বলল, হ্যাঁ আমের বিন রাবীয়ার ওপর সন্দেহ হয়। এটা শুনে নবী (দরুদ) তাকে ডেকে পাঠালেন এবং তার ওপর রাগাম্বিত হয়ে বললেন, কেন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজের ভাইকে হত্যা করে।তুমি তার জন্য বরকতের দু’আ কেন করনি?এখন তার জন্য গোসল কর।অতঃপর আমের নিজের হাত,চেহারা,দু’পা, দু’হাঁটু,দু’কনুই ও লুঙ্গির আভ্যন্তরীণ অংশ একটি পাত্রে ধৌত করলেন।অতঃপর সেই পানি সাহাল বিন হুনাইফের পিঠে ঢেলে দেয়া হল।এরপর সাথে সাথে সুস্থ হয়ে গেল।

(আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)

লুঙ্গির অভ্যন্তরীণ অংশ নিয়ে আলেমগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেন, তা দ্বারা শরীরের অংশ বুঝানো হয়েছে। আর কেউ এটাও বলেছেন যে, এর অর্থ লজ্জাস্থান। এটাও বলা হয়েছে যে, কোমর কাজী ইবনুল আরবী বলেন, এর দ্বারা লুঙ্গির নিম্নের সংশ্লিষ্ট অংশ বুঝানো হয়েছে।

বদ নজরের গোসলের পদ্ধতি

আল্লামা ইবনে শিহাব যুহরী বলেন, গোসলের পদ্ধতি যা আমরা আমাদের উলামাদের নিকট থেকে শিখেছি তা হলো- যে ব্যক্তির পক্ষ হতে নজর লেগেছে তার সামনে এক পাত্র পানি দেয়া হবে। এরপর সেই ব্যক্তি পানি নিয়ে পাত্রে কুলি করবে। এরপর পাত্রে নিজের মুখ ধুবে। বাম হাতে ঢেলে ডান হাতের কজি ও ডান হাতে ঢেলে বাম হাতের কজি পর্যন্ত একবার করে ধৌত করবে, তারপর বাম হাত দিয়ে ডান কনুই এবং ডান হাত দিয়ে বাম কনুইয়ে ঢালবে। এরপর বাম হাতে ডান পায়ে আর ডান হাতে বাম পায়ে ঢালবে। এরপর বাম হাতে ডান পায়ের হাঁটু আর ডান হাতে বাম পায়ের হাঁটুতে ঢালবে। আর সব যেন পাত্রে হয়। এরপর লুঙ্গী বা পায়জামার ভেতরের অংশ পাত্রে ধৌত করবে নিচে রাখবে না। অতঃপর সকল পানি রোগীর মাথায় একবারে ঢালবে। –সুনানে কুবরা, ইমাম বাইহাকি ৯/২৫২

এই গোসলের বিধিবদ্ধতার প্রমাণ

১। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নজর লাগা সত্য, আর কোনো কিছু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করতো তবে তা বদ নজর হতো। আর তোমাদের মধ্যে কাউকে যখন (এর জন্য) গোসল করতে বলা হয় তখন সে যেন গোসল করে। -মুসলিম: ১৪/১৭১

২। আয়েশা (রা.) বলেন, (নবীযুগে) নজর যে ব্যক্তি লাগিয়েছে তাকে ওযু করতে বলা হতো। আর সেই ওযু করা পানি দিয়ে নজর লাগা ব্যক্তিকে গোসল দেয়া হতো।” –সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৮০

উল্লিখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা নজরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বদ নজরকারীর ওযু ও গোসল সাব্যস্ত হয়।

চিকিৎসার দ্বিতীয় পদ্ধতি:

রোগীর মাথায় হাত রেখে নিম্নের দু’আ পড়ুন-

 بسم الله أرقيك ولله يشفيك من كل داء يؤذيك ومن كل نفس أو عين حاسد الله يشفيك بسم الله أرقيك 

অর্থঃ আল্লাহর নামে তোমায় ঝাড়-ফুক করছি। আর আল্লাহই তোমাকে কষ্টদায়ক রোগ থেকে মুক্তি দিবেন। আর সকলের অনিষ্ট ও হিংসুক বদ নজরকারীর অনিষ্ট থেকে তোমাকে আরোগ্য দিবেন। আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ছি। -সহীহ মুসলিম: ২১৮৬

তৃতীয় পদ্ধতি:

রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দু’আ পড়ুনঃ

 بسم الله يبريك من كل داء يشفيك ومن شر حاسد اذا حسد ومن شر كل ذى عين 

অর্থঃ আল্লাহর নামে ঝাড়ছি, তিনি তোমাকে মুক্ত করবেন এবং তিনিই প্রত্যেক রোগ থেকে তোমাকে আরোগ্য দিবেন এবং হিংসাকারীর হিংসার অনিষ্ট থেকে যখন স

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment