মসনদের মায়া
আ.ন.ম সিরাজুম মুনির
ক্লাস ফাইভ বা সিক্সের কথা, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতো তোমার লক্ষ্য কি? – হিচকিচানো ছাড়া সোজা বলে দিতাম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবো। ইন্টারে উঠে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্নে বুঁদ হওয়ার পাশাপাশি পরিকল্পনা করতে থাকি; বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের মাধ্যমে অনেক টাকা কামাবো, তা দিয়ে শেষমেশ ক্ষমতা দখল করবী। ক্ষমতা পেয়ে কি করব? যত ভাল কাজ আছে – গরীব মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করব, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব, দেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করবো আরো কতো কি এরপরেই ঠিক মমতাময়ী জননীর ‘কিরে বেলা তো পার হয়ে গেলো আর কতো ঘুমাবি’ সেই কন্ঠে স্বপ্নেরা ইতি ঘটাতো….. আল্লাহ তা’য়ালা এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ এর অসীম দয়ায় যখন আমি দ্বীন বোঝা শুরু করলাম তারপর আমার মাথা থেকে অর্থ আর ক্ষমতা দু’টোর ভূতই নেমে গেছে। অথচ মজার ব্যাপার (কেবলই আমার কাছে, আপনাদের নিকটে কিনা তা কি আমি বলতে পারবো!) হলো, এই দু’টোর একটাও আমি আমার নিজের সুখের জন্য চাইতামনা, চাইতাম ধর্মের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।
শাসনভারের জন্য শুধু আমার মত অবার্চীন না অনেক রথী-মহারথীই স্বপ্ন দেখেছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করেছে আমার মতো শুধু স্বপ্নই দেখে যাননি অবশ্য। কেন? টোলকেইনের এই কবিতাটা কিছুটা চিন্তা জাগানিয়া –
Three Rings for the Elven-kings under the sky,
Seven for the Dwarf-lords in their halls of stone,
Nine for Mortal Men doomed to দিএ
One for the Dark Lord on his dark থ্রনে
In the Land of Mordor where the Shadows lie.
One Ring to rule them all, One Ring to find them,
One Ring to bring them all and in the darkness bind them.
দুনিয়াজুড়ে বিশটা আংটি থাকলেও মূল ক্ষমতা ‘লর্ড অফ দ্য রিং’ এরই। যুগে যুগে মানুষ নানামুখী সমস্যার সমাধান খুঁজে চলেছে একটি কেন্দ্রবিন্দুতে। জীবনের নানা ফ্রন্টে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার মত কঠোর পরিশ্রম সে করতে চায়নি। গরিবী হঠাতে আলাদীনের চেরাগ, সব রোগ সারানোর ঔষধ প্যানাসিয়া কিংবা লোহাকে সোনা করে দেয়া পরশ পাথর – বার বার সে খুঁজে ফিরেছে এমন ‘একটা’ কিছুকে যা খুব সহজেই বহুবিধ সমস্যার সমাধান করে দেবে, একাইযা রা সমাজের মানুষের দুঃখ-কষ্ট, অত্যাচার-অনাচার আর শ্রেণী বৈষম্যের অবসান ঘটাতে চিন্তা রাজ্যের দুয়ার খুলেছেন, কিভাবে সমাজে শান্তি-সাম্য আনা যায় তা ভাবতে গিয়ে তারা একটিই সমাধান পেয়েছেন – ক্ষমতা। মার্ক্সের সাম্যবাদ কী লিঙ্কনের গণতন্ত্র – সবেরই মূলমন্ত্র হল ক্ষমতা করায়ত্ত করা। গদি দখলের পিছনের দর্শনটা অবশ্য বেশ সরল – যত ভালো কথা বলিনা কেন, আমার কথা কেউ শোনেনা। কিন্তু রাজার কথা দশে শোনে। সুতরাং আমার কথা সবাইকে শোনাতে হলে আমাকে রাজা হতে হবে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন আদেশ একমাত্র রাজাই করতে পারে। তাই শাসনভারের চেরাগের পিছনে ছুটেছে সবাই। প্লেটোর ‘দ্য রিপাবলিক’, এরিস্টটলের ‘পলিটিক্স’, থমাস হোবসের ‘লেভিয়া উত্থান’, ম্যাকিয়াভেলির ‘প্রিন্স’, কিংবা চাণক্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ সবগুলোতেই আছে রাষ্ট্র ক্ষমতার সিলভার বুলেট ব্যবহার করে কিভাবে সব সমস্যার বর্মকে ছিদ্র করে দেয়া যায়। প্রাচ্য কী পাশ্চাত্য সবার ভাবনা এখানে মিলে একাকার হয়ে গেছে। নানা যুগের নানান আদর্শের বিপ্লবীদের কাছে তাই যখন প্রশ্ন করা হয়েছে কেন তুমি তোমার আশেপাশের মানুষদের দুঃখ লাঘবে কিছু করোনা? তারা বলেছে:
– আগে রাজা হয়ে নেই তারপরে ও কাজ করা যাবে। কষ্ট না থাকলে তো লোকে বিপ্লব করতে চাইবেনা।
– আচ্ছা তোমার রাজা হবার ইচ্ছাতে যদি এখনকার রাজা বাদ সাধে?
– তাকে সরিয়ে দিতে হবে (সরানোর পদ্ধতি নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে)
– কিন্তু সরানোর সময় যদি সমাজে গোলযোগ বেধে যায়? সমাজের যদি ক্ষতি হয়?
– কুছ পরোয়া নেহি। বাম দাদারা দেয়ালে লিখছেন – বিপ্লব ধ্বংস নয়, সৃষ্টির প্রসববেদনা মাত্র (যার সে বেদনা ওঠে সেই জানে) রাজা-হবু রাজায় যুদ্ধ হবে, উলু খাঁগড়ার প্রাণ যাবে। আধুনিক যুগে এর নাম ‘কোল্যাটেরাল ড্যামেজ’ উলু-খাঁগড়ার জান বা মাল খুবই ইনসিগনিফিক্যান্ট জিনিস, তুচ্ছার্থে শূণ্য বিভক্তি – সমাজের ‘গ্রেটার গুডের’ জন্য কিনা একে উপেক্ষা করা চলে।
দার্শনিক হল সে, যে তার সীমিত বুদ্ধিকে সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট মনে করে। অন্যদিকে আরেক দল মানুষ প্রবৃত্তির অনুসরণের পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তার দেয়া জ্ঞানের আলোয় পথ খোঁজেন। এরা হলেন নবি-রাসুলগণ ও তাঁদের অনুসারীরা। আর্থ-সামাজিক দুর্যোগ ঠেকাতে তারা মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে ডাকলেন। কেন?
আল্লাহ বলেন –
জলে-স্থলে যে বিপর্যয় (ফাসাদ -> হত্যা, লুন্ঠন ইত্যাদি সামাজিক অনাচার কিংবা ঝড়, অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়) নেমে আসে তা মানুষের নিজের হাতের কামাই। মানুষকে আল্লাহ তার অপকর্মের স্বাদ দেন যেন সে পাপ থেকে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চায়।*১
মানবজীবনের দুর্ভোগের সাথে তাওহিদের সম্পর্কটা লক্ষণীয়। এর আগের আয়াতে আল্লাহ তাওহিদ আর রুবুবিয়াতের শিক্ষা দিচ্ছেন – আল্লাহ হচ্ছেন তিনি যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, জীবিকা দিচ্ছেন, মৃত্যু দিচ্ছেন, আবার পুনরুত্থিত করবেন। আর কোন সত্ত্বা কি আছে যে এই কাজগুলো করতে পারে? না নেই। মানুষ যাদের সাথে আল্লাহর শরীক করে আল্লাহ তাদের চেয়ে কত পবিত্র, কত উর্ধ্বে! তারপর আল্লাহ মানুষকে শেখালেন তাওহিদ আল উলুহিয়্যাতের কথা – যে আমাদের কর্তব্য আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া, একমাত্র তার ইবাদাত করা। নইলে কি হবে? এর পরের আয়াতে আল্লাহ বললেন – যাও পৃথিবী ঘুরে দেখ, দেখ তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের পরিণতি কি হয়েছে! মিসরের পিরামিড কী সিন্ধুর মহেন-জো-দারো, কুমিল্লায় ময়নামতি কী বগুড়ার মহাস্থানগড় – অতীতে প্রাণবন্ত এসব জনপদের মানুষগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে আল্লাহর ইবাদতে খাদ মেশানোর ফলে। আর আমাদের সাবধান করতে পুরোনো ভাঙা-চোরা দালান আর স্তম্ভগুলো থেকে গেছে!
এ জন্যেই সমস্ত নবি-রাসুলগণ ইবাদাতে আল্লাহর একত্বের দিকে মানুষকে ডেকেছেন, পাশাপাশি ডেকেছেন তাঁদের অনুসরণে সৎ জীবন-যাপন করার জন্য। এভাবেই সমাজ স্থিতিশীল হবে, অবিচার-অনাচার হটে যাবে।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় মুসলিম উম্মাহর চিন্তাশীলরা ভাবতে শুরু করলো যে সমাজের মঙ্গল করতে হলে আগে ক্ষমতা দখল করতে হবে, শাসনতন্ত্র/হুকুমাত/খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গদিতে বসে জনগণকে হুকুম করলেই জনগণ সুরাসুর করে তাওহিদ মেনে নেবে। চুরি-মিথ্যা-ঘুষ-সুদ-ব্যভিচার ছেড়ে ভালো হয়ে যাবে! সমাজের সব অনাচার চলে যাবে, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! অথচ যখন কুরাঈশদের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বললো—
হে মুহাম্মদ! আমাদের পিতৃপুরুষদের নিন্দা করেছ, আমাদের ধর্মের সমালোচনা করেছ, আমাদের বিবেক-বোধকে অপমান করেছ, আমাদের উপাস্যদের অস্বীকার করেছ, আমাদের বিভক্ত করেছ। কিসের জন্য এমন করছ? তুমি যদি সম্পদ চাও তবে আমরা আমাদের সকলের সম্পদ এক করে তোমাকে দিয়ে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী বানিয়ে দেব। তুমি যদি ক্ষমতা চাও তবে তোমাকে আমাদের নেতা হিসেবে মেনে নেব। তুমি যদি রাজত্ব চাও তবে তোমাকে আমাদের রাজা হিসেবে গ্রহণ করব…
আল্লাহু আকবার! রাসুলুল্লাহ ﷺ এর উত্তরে বলেন –
তোমরা যা ভাবছো তেমনটি নয়। আমি তোমাদের কাছে যা এনেছি তা সম্পদের লোভে আনিনি। আমি তোমাদের নেতা হতে চাইনা, রাজাও না। বরং আল্লাহ আমাকে কিতাবসহ তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন একজন রাসুল হিসেবে। তিনি আমাকে আদেশ করেছেন তোমাদের সুসংবাদ এবং সাবধানবাণী পৌছে দিতে। আমি সে কাজ করেছি এবং তোমাদের উপদেশ দিয়েছি। এখন তোমরা যদি আমার কথা মেনে নাও তবে তা তোমাদের এই জীবন এবং পরকালের জন্য উত্তম। আর যদি তোমরা প্রত্যাখ্যান কর, তবে আমি আল্লাহর আদেশের জন্য ধৈর্য ধারণ করব যতদিন তিনি তোমাদের এবং আমার মাঝে ফয়সালা করে না দিবেন।*২
তিনি তো ভাবলেননা যে আগে রাজা হয়ে নেই তারপর এক হুকুমে কা’বা ঘর মূর্তিছাড়া করবো। সরকারী আদেশে মেয়েদের জীবন্ত পুঁতে ফেলা বন্ধ করে দেবো। চুরি করলে হাত কাটার হুকুমেই সব দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। মদ খেলেই চাবুক – কোন বেটা আর মদ খাবে? নেতাকে দেখে সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে শুরু করবে। না! না! না! তিনি এই মিথ্যা আশাতে রাজা হতে চাননি। কারণ, এভাবে পরিবর্তন সম্ভব নয়।
সম্রাট আকবর মোগল সাম্রাজ্যের খাঞ্জাচি, নবরত্নের বুদ্ধি, মানসিংহের সমরশক্তি দিয়ে ‘দ্বীনে ইলাহি’ প্রচার করেছিল; অথচ আজ এ ধর্মের কোন অস্তিত্ব নেই। সত্যি সত্যি যদি শাসন ক্ষমতা ইসলাম প্রচারের জন্য দরকার হত তাহলে আল্লাহ তো মুহাম্মদ ﷺ’কে রোম বা পারস্যের সম্রাটের ঘরে আর্বিভাব ঘটাতে পারতেন! আমাদের পার্থিব বুদ্ধি বলবে – আসলেই তো তাহলে ইসলাম আরো তাড়াতাড়ি, আরো সহজে দিকে-দিকে ছড়িয়ে পড়তো। কিন্তু আল্লাহ আমাদের জন্য উদাহরণ রেখে দিলেন – সৈন্যবাহিনীর মদদ ছাড়া, ব্যাংক-মিডিয়া-শিল্পের ঐশ্বর্য ছাড়া, সামাজিক প্রতিপত্তি ছাড়াই একজন মানুষ কিভাবে ঈমান, চরিত্র আর পরিশ্রম দিয়ে সারা পৃথিবীতে ইসলাম ছড়িয়ে দিতে পারে।
এসব ইতিহাস থেকে শিক্ষণীয় – ধর্ম কখনো মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া যায়না। ইসলামি শরিয়ত কখনোই টপ টু বটম এপ্রোচে কার্যকর হবেনা, হবে বটম টু টপ এপ্রোচে। এজন্য ক্ষমতার হাতছানিকে উপেক্ষা করে রাসুলুল্লাহ ﷺ ১৩ বছর ধরে জনে-জনে তাওহিদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন। মদিনার মানুষরা তাওহিদ উপলব্ধি করার পর স্বঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে শাসনভার অর্পণ করেছিলেন। আগে ক্ষমতা পরে ইসলাম এটা কখনোই হবার নয়। হলে তালিবানরা ক্ষমতা হারানোর সাথে সাথে কাবুলের সেলুনে দাড়ি শেভ করার লাইন পড়তো না। তথাকথিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে পালিয়ে মানুষ পশ্চিমে যেতোনা।
ইসলাম জোর করে মানানো যায়না, যদি স্বেচ্ছায় কেউ তা গ্রহণ না করে। মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার অর্থ ইচ্ছেটা তার ভিতরে জাগিয়ে তোলা। তার ঘুমন্ত বিবেককে নাড়া দিয়ে বলা কেন ইসলাম তার জন্য সর্বোত্তম জীবন-বিধান। তাকে বুঝিয়ে বলা ইসলাম মানলে তার কি লাভ, সমাজের কি লাভ। তাকে বোঝানো ইসলাম না মানলে ব্যক্তিগত কি ক্ষতি হয়, সামষ্টিক কি ক্ষতি হয়। ইসলামের দাওয়াত দেয়া অর্থ মানুষকে হালাল-হারামের লিস্ট ধরিয়ে দেয়া নয়। তাকে বোঝানো যে যেই মহান আল্লাহ তোমাকে তৈরী করলেন, দেখা-শোনা-বোঝার শক্তি দিলেন সেই আল্লাহর কাছে কি তুমি কৃতজ্ঞ হবেনা? তিনি ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে যে জিনিসগুলো থেকে তোমাকে বেঁচে থাকতে বলছেন তাতো তোমার ভালোর জন্যই; তুমি কি নিজের এই ভালোটা বুঝবেনা?
ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদের মত ক্ষমতা একটা উপকরণ, উদ্দেশ্য নয়। টাকা থাকলে দান-খয়রাত করা যায় সুতরাং আল্লাহর আদেশ নিষেধের তোয়াক্কা না করে, পরিবারকে বঞ্চিত করে, খালি টাকাই কামাতে হবে – এটা তো কোন সুস্থ যুক্তি নয়। ঠিক তেমনি আগে শাসন ক্ষমতা পরে বাকি ইসলাম – এটাও ইসলামি দর্শন নয়। আল-কুরআন আমাদের স্পষ্ট শিক্ষা দেয় যে সকল রাজত্বের মালিকানা একমাত্র আল্লাহর – তিনি যাকে খুশি রাজত্ব দেবেন, যার কাছ থেকে খুশি রাজত্ব কেড়ে নেবেন।*৩ মানুষের ইচ্ছার এখানে কানাকড়ি মূল্য নেই।
এ কথা সত্য যে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে আল্লাহর ইসলামের প্রভূত উপকার করিয়ে নেন কিন্তু এটাও সত্য যে এই ক্ষমতা ব্যবহার করে ইসলামের উপকার করতে পারবে একমাত্র যোগ্যতাধারীরা। এই যোগ্যতাটা কি সেটা আল্লাহ আয্-যিলযালে জানিয়েছেন –
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে তাদের আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন।*৪
আল্লাহু আকবার! ইসলাম কত সহজ – জনপ্রতিনিধি হতে আমাদের মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা করতে হবেনা, মিছিল করে সাহায্য চাইতে হবেনা, হরতাল করে মানুষকে কষ্ট দিতে হবেনা, রাতের আঁধারে দেয়ালে পোস্টার মারতে হবেনা, তাকফির-গীবত করতে হবেনা, রমনায় বোমা মারতে হবেনা – খালি ঈমান আনতে হবে আর সৎকর্ম করতে হবে! আর সত্যি যে আমরা ঈমান এনেছি তার প্রমাণ হবে যে আমরা ক্ষমতার জন্য লালায়িত হবোনা, আল্লাহর সন্তুষ্টির মুখাপেক্ষী হব। আল্লাহ পাক যদি কখনো চান তবে তিনি আমাদের কাউকে দিয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করিয়ে নিতে ক্ষমতা দিতে পারেন, কিন্তু এই গুরু দায়িত্বের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা যাবেনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মুহাম্মদ ﷺ শিখিয়ে গেছেন–
কখনো দায়িত্ব চেয়ে নিও না। যদি তোমার চাওয়ার ফলে তোমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে তুমি একা হয়ে যাবে। আর যদি না চাইতেই তোমাকে দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হয় তবে আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন।*৫
ইসলামকে আমরা সবাই বিজয়ী দেখতে চাই। তাই আজ সময় এসেছে একটু থেমে নিজেকে মনের খবর জিজ্ঞেস করা। আমার দল মসনদে থাকবে এটাই যদি আন্তরিক কামনা হয়, তবে আমার এ বাসনাটা ইসলাম সম্মত কিনা তা বিবেচনা করা উচিত।
আল্লাহ আমাদের মন থেকে আল্লাহর এবং তার মনোনীত প্রিয় রাসুল ﷺ’র সন্তুষ্টি তথা জান্নাত ছাড়া আর সব কিছুর লোভ সরিয়ে দিন এই দু’আ করি। আমিন।
_________________________
১। সুরা রুম, আয়াত- ৪১
২। সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত- ৯০
৩। সুরা আল-ইমরান, আয়াত- ২৬
৪। সুরা নুর, আয়াত- ৫৫
৫। সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাত