মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা প্রসঙ্গে
حَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ بُنْدَارٍ الزَّاهِدُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ بَكْرٍ الْبَالِسِيُّ، ثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، ثَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ أَبِي الْحَسَنِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَتَحَلَّقُونَ فِي مَسَاجِدِهِمْ وَلَيْسَ هِمَّتُهُمْ إِلَّا الدُّنْيَا لَيْسَ لِلَّهِ فِيهِمْ حَاجَةٌ فَلَا تُجَالِسُوهُمْ
-“হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ) বলেছেন: লোকদের মাঝে এমন এক যুগ আসবে যখন কিছু লোক মসজিদ সমূহে বৃত্তাকার হয়ে বসবে। তাদের ঐ বসার মধ্যে দুনিয়া ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকবেনা। তোমরা তাদের সাথে বসবেনা।” ৬৭৬৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৭৯১৬; হাফিজ ইবনে হাজার: ইত্তেহাফুল মিহরাত, হাদিস নং ৮১৯; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২৬৪২৪; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৬৮ পৃ:;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ -“এই হাদিসের সনদ ছহীহ্।” ৬৮৬৮, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৭৯১৬;
এ বিষয়ে আরেকটি ছহীহ্ হাদিস উল্লেখ করা যায়,
أَخْبَرَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ النَّصْرِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو التَّقِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: سَيَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ يَكُونُ حَدِيثُهُمْ فِي مَسَاجِدِهِمْ لَيْسَ لِلَّهِ فِيهِمْ حَاجَةٌ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম ( ﷺ) বলেছেন: শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায় হবে যারা মসজিদ সমূহে বসে (দুনিয়াবী) কথা বার্তা বলবে, কিন্তু সেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য থাকবেনা।” ৬৯৬৯, ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৬৭৬১; ইমাম মুনযেরী: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, হাদিস নং ৪৫৬; হাফিজ ইবনে হাজার: ইত্তেহাফুল মিহরাত, হাদিস নং ১২৬৮৬; ইমাম যায়লায়ী: তাখরিজু আহাদিসুল কাশ্শাফ, ২য় খন্ড, ৫৬ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মেরআত শরহে মেসকাত, ৭৪৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
এ বিষয়ে আরেকটি ছহীহ্ হাদিস উল্লেখ করা যায়,
حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَكُونُ حَدِيثُهُمْ فِي مَسَاجِدِهِمْ فِي أَمْرِ دُنْيَاهُمْ، فَلَا تُجالِسُوهُمْ، فَلَيْسَ لِلَّهِ فِيهِمْ حَاجَةٌ
-“হযরত হাছান ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন, লোকদের উপর এমন এক যুগ আসবে যখন লোকেরা তাদের মসজিদ সমূহে দুনিয়াবী কথা বলবে। যখন এমন যুগ আসবে তখন তোমরা তাদের সাথে বসবেনা। কেননা ইহার মধ্যে আল্লাহর জন্য কোন প্রত্যাশা নেই।” ৭০৭০, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ৩৫৩১০; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ২৭০১; মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৭৪৩; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ৩২৪৭; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২৬৪৪২; ইমাম গাজ্জালী: এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: খাছাইছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৬৮ পৃ:;
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাফিজ ইরাকী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর অভিমত,
قال العراقي: أخرجه البيهقي في الشعب من حديث الحسن مرسلاً وأسنده الحاكم في حديث أنس وصحح إسناده ولابن حبان نحوه من حديث ابن مسعود اهـ.
-“হাফিজ ইরাকী বলেন: ইমাম বায়হাক্বী তার ‘শুয়াইবুল ঈমান’ গ্রন্থে হযরত হাছান ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে মুরছাল রূপে ইহা বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম ( رَحْمَةُ الله عليه) এর হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর সনদকে ছহীহ্ বলেছেন। ইবনে হিব্বান ( رَحْمَةُ الله عليه) এর ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর হাদিসটির সনদটিও অনুরূপ ছহীহ্।” ৭১৭১, ইমাম ইরাকী: তাখরিজু আহাদিসুল এহইয়া, ১ম খন্ড, ২১৯ পৃ: হাদিস নং ১;
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেছেন,
قَالَ ابْنُ الْهُمَامِ فِي شَرْحِ الْهِدَايَةِ: الْكَلَامُ الْمُبَاحُ فِي الْمَسْجِدِ مَكْرُوهٌ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ
-“আল্লামা কামালুদ্দিন ইবনুল হুমাম ( رَحْمَةُ الله عليه) তার ‘শরহে হেদায়া’ কিতাবে বলেছেন: জায়েয কথা বার্তাও মসজিদে বলা মারুরুহ (তাহরিমী), এতে নেক আমল সমূহ খেয়ে ফেলে।” ৭২৭২, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৭৪৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন,
لِأَنَّ الْمَسْجِدَ لَمْ يُبْنَ إِلَّا لِلْعِبَادَاتِ، -“কেননা মসজিদ এবাদত ব্যতীত অন্য কাজের জন্য তৈরী করা হয়নি।” ৭৩৭৩, ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৭৪৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) আরো উল্লেখ করেছেন,
قَالَ النَّوَوِيُّ: يُكَرَهُ رَفْعُ الصَّوْتِ فِي الْمَسْجِدِ بِالْعِلْمِ وَغَيْرِهِ، وَقَالَ ابْنُ حَجَرٍ سُئِلَ مَالِكٌ عَنْ رَفْعِ الصَّوْتِ فِي الْمَسْجِدِ بِالْعِلْمِ فَقَالَ: لَا خَيْرَ فِيهِ بِعَلَمٍ وَلَا بِغَيْرِهِ،
-“ইমাম নববী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: মসজিদে (মসজিদে নববী) ইলমী বিষয়ে ও অন্যান্য বিষয়ে উচু আওয়াজে কথা বলা মাকরুহ (তাহরিমী)। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন: ইমাম মালেক ( رَحْمَةُ الله عليه) কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, মসজিদের মধ্যে উচু আওয়াজে জ্ঞানের বিষয়ে কথা বলা কিরূপ ? তিনি বলেন: ইলমী ও অন্যান্য বিষয়ে উচু আওয়াজে কথা বলাতে কোন কল্যাণ নেই।” ৭৪৭৪, ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৭৪৪ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
অতএব, মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলা জায়েয নয়, আর এ কারণেই আল্লাহর নবী ( ﷺ) এই কাজকে ঘৃণা করেছেন ও তাদের সাথে বসতে নিষেধ করেছেন।