মদীনায় মৃত্যুবরণ করা এবং জুমাবারে মৃত্যুবরণ করা কেমন সৌভাগ্যের…!
এমন এক সৌভাগ্যবান সম্পর্কে কিছু কথা…
হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) প্রায়ই এই বলে দুআ করতেন,
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ
অর্থাৎ ‘ধন্য আমায় করো প্রভু তোমার পথের শাহাদাতে, মৃত্যু হয় গো যেন তোমার নবীর মদীনাতে। [সহীহ বুখারী ১৮৯০; কিতাবু ফাদ্বায়িলি মাদীনাহ (মদীনার মর্যাদার অধ্যায়)]
হযরত উমার (রাঃ) এঁর পুত্র আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ কেউ মদীনাতে মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম হলে সে যেন সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। কারণ যে ব্যক্তি সেখানে মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করব। (সূনান আত তিরমিজী ৩৯১৭, সূনান ইবনু মাজাহ ৩১১২)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু‘আর দিন অথবা জুমু‘আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা) তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। [মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৭, সুনান আত তিরমিযী ১০৭৪, মুসনাদে আহমাদ ৬৫৮২]
মদীনায় অবস্থান করে সেখানে মৃত্যুবরণ করলেই কি শাফায়াত নসিব হয়ে যাবে…?? সকল মদীনাবাসী-ই কি এই সৌভাগ্য অর্জন করবে..? জুমাবারে মৃত্যুবরণ করলেই কি কবরের শাস্তি থেকে বেঁচে যাওয়া যাবে… না, এতটা সহজ না….
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যদি রুকন ও মক্কামে ইব্রাহীমের মাঝখানে অবস্থান করে, অতঃপর (তাতে) নামাজ আদায় করে এবং রােজা রাখে, অতঃপর (এমতাবস্থায়) মারা গেল যে, সে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এঁর পরিবার বর্গের (আহলে বাইত) সাথে হিংসা পােষণকারী, (তাহলে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। [আল মু’জামুল কাবীর-১১: ১৪২ (১১৪১২), আল মুসতাদরেক হাকিম -৩:১৬১ (৪৭১২)]
হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, আমরা কুরায়শ গোত্রের লোকদের সমাবেশে তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা তাদের আলোচনা বন্ধ করে দিত। আমরা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ﷺ -এঁর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ লোকেদের কী হল যে, তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে আমার আহলে বাইতের কোন লোককে দেখলে তারা তাদের কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়? আল্লাহ্র শপথ! কোন ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না যতক্ষণ সে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য এবং আমার সাথে তাদের আত্মীয় সম্পর্কের কারণে তাঁদেরকে (আহলে বাইতকে) ভালোবাসবে না। (সূনান ইবনে মাজাহ ১৪০, মুসনাদে আহমাদ ১৭৭৫, সূনান আত তিরমিজী ৩৭৫৮, মিশকাত ৬১৪৭)
মাওলা আলী রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (বংশধর)ও আনসারদের অধিকার সম্পর্কে জানেনা সে নিশ্চয় তিনজনের একজন। ১. হয়ত সে মুনাফিক, ২. অথবা সে জারজ, ৩. অথবা সে নাপাকীর সন্তান; অর্থাৎ তার মা তাকে ঋতুকালীন (হায়েজ) অবস্থায় গর্ভধারণ করেছেন। [শুয়াবুল ঈমান- ইমাম বাইহাকী রহঃ ২:২৩২ (১৬১৪), আল ফেরদৌস- ইমাম দায়লামী রহঃ ৩:৬৬২ (৫৯৫৫), আল কামেল- ইবনুল আদি রহঃ ৩: ১০৬০]
এজন্যই হয়ত আবূ বকর রাঃ সতর্ক করে দিয়ে বলেন,
মুহাম্মাদ ﷺ এঁর পরিবার পরিজনের (আহলে বাইত) প্রতি তোমরা অধিক সম্মান প্রদর্শন করবে। (সহীহ বুখারী ৩৭১৩)
শুধু তা-ই নই, তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এঁর সন্তুষ্টি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্জন কর। (সহীহ বুখারী ৩৭৫১)
৪ঠা জ্বিলহজ্জ। সিদ্দিকে আকবর আবূ বকর (রাঃ) এঁর বংশধর, ইমাম আহমদ রযা খান ব্রেলভী (রহঃ) এঁর খলিফা এবং শায়খ মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী (হাফিঃ) এর সম্মানিত পীর,
মাওলানা জিয়াউদ্দিন মাদানী রহঃ (যিনি কুতুবে মদীনা নামে পরিচিত) এঁর ওফাত দিবস।
১৮৭৭ সালে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম নেয়া এই বুযূর্গ মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ইমাম আলা হযরত রহঃ এঁর খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। শিয়ালকোটে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর তিনি ইলম হাসিলের জন্য দিল্লীতে সফর করেন, অতঃপর ৪ বছর হযরত মাওলানা অছি আহমদ মুহাদ্দিসে সুরতী রহঃ এঁর সাহচর্যে থেকে ইলমে দ্বীন হাসিল করেন। ২৪ বছর বয়সে করাচীতে চলে আসেন, সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর গাউসে আজম আব্দুল কাদের জিলানী রাঃ এঁর শহর তথা বাগদাদে এসে হাজির হন। গাউছে পাকের শহরে ৯ বছর কাটানোর পর সকলের কাঙ্ক্ষিত পবিত্র মদীনাতুল মুনাওয়ারায় হাজির হন। এখানে ৭০ বছর অতিবাহিত করার পর ১৯৮১ সালে, আরবী জ্বিলহজ্জ মাসের ৪ তারিখ শুক্রবারে ওফাত বরণ করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে দাফন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।