দেওবন্দী এবং আহলে হাদিস পন্থীরা রাসূলে পাক (ﷺ) কে হায়াতুন্নবী বলাকে অস্বীকার করে, আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত রাসূলে পাক (ﷺ) কে হায়াতুন্নবী হিসেবে স্বীকার করেন। ৩২১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩২১.
❏ ইমাম বায্যার এবং আবূ ই‘য়ালা (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – ﷺ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (عليه السلام) তাঁদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।’’
(ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হা/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ., ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১ পৃ. হা/১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হা/৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহা: হাদিস নং- ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সাহীহুল জামে : হা/২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯ পৃ. হা/৪০৩)
❏ অপরদিকে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বলেন,
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আবু ই‘য়ালা ও ইমাম বায্যার (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম আবু ই‘য়ালার বর্ণনার সকল রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
(ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হা/১৩৮১২)
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
فَإِنْ صَحَّ فَالْمُرَادُ أَنَّهُمْ لَا يُتْرَكُونَ يُصَلُّونَ إِلَّا هَذَا الْمِقْدَارَ ثُمَّ يَكُونُونَ مُصَلِّينَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى
-‘‘নিশ্চয় বিশুদ্ধ কথা হলো এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য এ নির্ধারিত দিন ছাড়া তাঁরা (কবরে) সালাত বন্ধ করেন না, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁরা মহান রবের দরবারে সালাত আদায় করেন।’’ (জামেউল ওসায়েল, ১/৫৩ পৃ.)
❏ ইমাম ইবনুল হজ্জ (رحمة الله) ‘আল-মাদখাল’ গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) তার ‘মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরীফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-
وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ.
-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযূর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’
(আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃ., আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল, ১/২৫২ পৃ., আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ.)
❏ এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,
وَالْأَنْبِيَاءُ أَوْلَى بِذَلِكَ، فَهُمْ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ، وَمَا نَبِيٌّ إِلَّا وَقَدْ جَمَعَ مَعَ النُّبُوَّةِ وَصْفَ الشَّهَادَةِ، فَيَدْخُلُونَ فِي عُمُومِ لَفْظِ الْآيَةِ.
-‘‘আম্বিয়ায়ে কেরাম জীবিত থাকার ব্যাপারে শহীদগণ অপেক্ষা উত্তম, উন্নত ও শ্রেষ্ঠতম। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রত্যেক নবীর মধ্যে নবুওয়াত ও শাহাদাত উভয় গুণকে একত্রিত করেছেন। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরামও আয়াতের ব্যাপকতায় অন্তর্ভূক্ত।’’ (আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী, আল-হাভীলিল ফাতাওয়া, ২/১৮০ পৃ., আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : শরহুস সুদুর : ২৫৬ পৃ.)
❏ আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতি (رحمة الله) সর্বশেষ হায়াতুন্নবী (ﷺ)-এর হাদিসের মানের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন-
حَيَاةُ النَّبِيِّ ﷺ فِي قَبْرِهِ هُوَ وَسَائِرِ الْأَنْبِيَاءِ مَعْلُومَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْأَدِلَّةِ فِي ذَلِكَ وَتَوَاتَرَتْ الْأَخْبَارُ، وَقَدْ أَلَّفَ الْبَيْهَقِيُّ جُزْءًا فِي حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ فِي قُبُورِهِمْ، فَمِنَ الْأَخْبَارِ الدَّالَّةِ عَلَى ذَلِكَ
-“হায়াতুন্নবী (ﷺ) তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় রওযা মোবারকে জীবিত এবং সমস্ত নবীগণই জীবিত যা অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল প্রমাণ অকাট্য এবং এ প্রসঙ্গে অনেক মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত হয়েছে।” (আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : আল হাভীলিল ফাতাওয়া : ২/১৭৮ পৃ.)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আমাদের নবীসহ সকল নবীগণ তাদের আপন আপন মাজারে জীবিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে এটা অস্বীকার করবে সে কাফির তাতেও কোনো সন্দেহ নেই, কেননা এ বাতিল আক্বিদা ধারণ মানে মুতাওয়াতির হাদিসের বিরোধীতা করা।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ
-“এবং যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না, তারা জীবিত হ্যাঁ তোমাদের খবর নেই।’’ ৩২২
- ৩২২. সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৫৪
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এর আকিদা:
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফেজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ أَنَّهُمْ أَحْيَاءٌ مِنْ حَيْثُ النَّقْلِ فَإِنَّهُ يُقَوِّيهِ مِنْ حَيْثُ النَّظَرِ كَوْنُ الشُّهَدَاءِ أَحْيَاءٌ بِنَصِّ الْقُرْآنِ وَالْأَنْبِيَاءُ أَفْضَلُ مِنَ الشُّهَدَاءِ
-“আমি (ইবনে হাজার আসকালানী) বলি, পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে প্রমাণিত হল শহীদগণ জিন্দা। সুতরাং যুক্তিগত ভাবে এটা ও প্রমাণিত হল যে, শহীদগণের চেয়ে মর্যাদাবান নবীগণ (عليه السلام) অবশ্যই জিন্দা।’’ ৩২৩
- ৩২৩. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী শরহে সহীহুল বুখারী, ৬/৪৮৮ পৃ.
আল্লাহু তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ
-“এবং তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করো, যাদেরকে আমি আপনার পুর্বে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি, আমি কি পরম দয়াময় (আল্লাহ) ব্যতীত অন্য কোন খোদা স্থির করেছি, যেগুলোর উপাসনা করা যায়?’’ ৩২৪
- ৩২৪. সুরা যুখরূফ, আয়াত নং-৪৫
এই আয়াত সম্পর্কে দেওবন্দীদের শায়খুত তাফসীর মওলবী আহমদ আলী সাহেবের খলিফা মওলবী নাহেদুল হুসাইন সাহেব বলেন-
يَسْتَدِلُّ بِه عَلٰى حَيٰوةَ الْاَنْبِيَاءِ (عليه السلام)
-‘‘এই আয়াতের কয়েকটি তাফসীরে ওলামায়ে কেরাম বলেন, নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা।’’ (মুশকিলাতুল কুরআন, ২৩৪ পৃ.)
হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী বলেন-‘‘এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা। কারণ যে সকল মানুষ মৃত্যু বরণ করেন তাদের কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা অথবা এর হুকুম দেয়া সঠিক নয়।’’
সকল মুফাসসিরগণ এরূপ তাফসীর এবং তারজুমা করেছেন। নিম্মে কতিপয় মুফাস্সিরের নাম উল্লেখ করা হল। ৩২৫
- ৩২৫. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৬ পৃ., আল্লামা আলূসী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ২৫ খণ্ড ৮৯ পৃ., তাফসীরে জুমাল আলাল জালালাইন, ৪র্থ খণ্ড ৮৮ পৃ., শায়খ জাদাহ হানাফী হাশিয়ায়ে বায়জাবী, ৩য় খণ্ড ২৯৮ পৃ. আল্লামা খিফফাজী মিসরী, হাশিয়ায়ে বায়জাবী, ৭ম খণ্ড ৪৪৪ পৃ. রহমতে কায়েনাত ১৫৬ পৃ.
নবীয়ে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ)’র আকিদা:
أَتَيْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
-‘‘রাসূলে মূসা (عليه السلام) এর পাশ দিয়ে গমন করেছি। দেখলাম তিনি একটি লাল টিলার উপর দাঁড়িয়ে তাঁর কবরে নামায পড়ছেন।’’ ৩২৬
- ৩২৬. ইমাম মুসলিম : কিতাবুল ফাযায়েল : ৪/১৮৪৫ পৃ. : হা/২৩৭৫, ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৩/১৪৮ পৃ:, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ:, ইমাম সুবকী : সিফাস সিকাম: ১৩৭ পৃ. ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈ আসমা : ৮/২৫০ পৃ:, ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈল আসমা : ১০/৩০৪ পৃ:, ইমাম সুয়ূতি : হাবীলিল-ফাতওয়া : ২/২৬৪ পৃ:, ইমাম সাখাভী : ক্বওলুল বদী : ১৬৮ পৃ, ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল-মুসান্নাফ : ৩/৫৭৭ পৃ. হা/৬৭২৭
সহীহ হাদিসের মধ্যে আছে একদা রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) ছিলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি দেখলাম যে, হযরত মূসা এবং হযরত ইউনুস (عليه السلام)
لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ
বলছেন। (সহীহ মুসলিম)
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَإِنَّهُ مَشْهُودٌ تَشْهَدُهُ الْمَلَائِكَةُ، وَإِنَّ أَحَدًا لَنْ يُصَلِّيَ عَلَيَّ إِلَّا عُرِضَتْ عَلَيَّ صَلَاتُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهَا قَالَ: قُلْتُ: وَبَعْدَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: “وَبَعْدَ الْمَوْتِ، إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ”، فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ
-‘‘জুম‘আর দিন আমার উপর বেশি করে দরুদ শরীফ পাঠ কর। কেননা এদিন উপস্থিতির দিন। এদিন ফেরেশতারা উপস্থিত হন। তোমাদের যে কেউ আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে তা আমার কাছে পাঠানো হয় তার পাঠ বন্ধ হওয়া পর্যন্ত। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার ইন্তেকালের পরেও। তদুত্তরে রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহু তা‘য়ালা যমিনের জন্য নবীগণ (عليه السلام) দের শরীর মুবারক ভক্ষণ করাকে হারাম করেছেন। সুতরাং সমস্ত নবী (عليه السلام)গণকে রিযিক দান করা হয়।’’ ৩২৭
- ৩২৭. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৫২৪ পৃ. হা/১৬৩৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪৩১ পৃ. হা/১৩৬৬, আহলে হাদিস আলবানীও একে সহীহ বলেছেন।
হযরত আউস বিন আউস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) ছাড়াও হযরত আউস বিন আউস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন সমস্ত দিনের মধ্যে জুম‘আর দিন সবচেয়ে উত্তম। এদিনে হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনই তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে। এদিনই ফুৎকার দেয়া হবে এবং এদিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فِيهِ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ- يَعْنِي بَلِيتَ-؟ قَالَ: “إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ
-‘‘সুতরাং এদিন তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়, কারণ তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, কিভাবে আমাদের দরুদ প্রেরণ করা হবে আপনি তো রওযায়ে পাকে থাকবেন। তদুত্তরে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা নবীগণের শরীর মুবারককে ভক্ষণ করতে জমিনের উপর হারাম করেছেন।’’ ৩২৮
- ৩২৮. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১২০ পৃ.) ১/৪৩১ পৃ., হা/১৩৬৬, আবু দাউদ শরীফ ২য় খণ্ড, ৬৩৬ পৃ. হা/১৫৩১, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ২/২৬২ পৃ. হা/১৬৭৮, ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/৫৫৬ পৃ. ৭৭ পৃ. হা/১৬৩৭, ইমাম দারমী, আস-সুনান, ২/৯৮১ পৃ. হা/১৬১৩, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক ১ম খণ্ড ২৭৮ পৃ. বায়হাকী, আস-সুনানুস সুগড়া, ১/২৩৩ পৃ. হা/৬০৫, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/৯৭ পৃ. হা/৪৭৮০, মুসনাদে বায্যার, ৮/৪১১ পৃ. হা/৩৪৮৫
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (رحمة الله):
হাফেজুল হাদিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) বলেন,
صَحَّ عَنْهُ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم – أَنَّ الأَرْضَ لَا تَأْكُلُ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاء عَلَيْهِم الصَّلَاة وَالسَّلَام وَأَنَّ النَّبِي – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَدْ اجْتمع بِهِمْ لَيْلَة الْإِسْرَاء بِبَيْت الْمُقَدّس وَالسَّمَاء خُصُوْصًا بِمُوسَى عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام فَتُحَصَّلُ مِنْ جُمْلَة هَذَا الْقَطْعِ بِأَنَّهُمْ غَيَّبُوْا عَنَّا بِحَيْثُ لَا نَدَرُكُهُمْ وَإِنَّ كَانُوْا مَوْجُوْدِيْنَ أَحْيَاءٌ وَذَلِكَ كَالْحَالِ فِي الْمَلَائِكَة عَلَيْهِم الصَّلَاة وَالسَّلَام فَإِنَّهُم مَوْجُوْدُوْنَ أَحْيَاءٌ لَا يَرَاهُمْ أَحَدٌ مِنْ نَوْعِنَا إِلَّا مَنْ خَصَّهُ الله تَعَالَى بِكَرَامَتِه وَإِذَا تَقَرَّرَ أَنَّهُمْ أَحْيَاءٌ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ পবিত্র বাণী, নবীগণ (عليه السلام)-এর শরীর মুবারককে জমিন ভক্ষণ করেন না। একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, সমস্ত নবীগণ জিন্দা। তাঁরা কেবল আমাদের থেকে অদৃশ্য, আমরা তাঁদেরকে অনুভব করেও পারি না। ফেরেশতাগণের ব্যাপারটিও অনুরূপ তারাও জিন্দা। তবে আমরা তাদেরকে দেখতে পাই না। তবে আল্লাহ তা‘য়ালা যাদেরকে দয়া করেছেন তারা তাদেরকে দেখেন। সুতরাং একথা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হল যে, সমস্ত নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা।’’ ৩২৯
- ৩২৯. আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১২/২৫১ পৃ.
মোল্লা আলী কারী হানাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
উম্মতে মুহাম্মদীর বিগদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে বলেন-
(قَالَ) ، أَيْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ) ، أَيْ: مَنَعَهَا وَفِيهِ مُبَالَغَةٌ لَطِيفَةٌ (أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ) ، أَيْ: مِنْ أَنْ تَأْكُلَهَا، فَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ فِي قُبُورِهِمْ أَحْيَاءٌ…..فَمُحَصِّلُ الْجَوَابِ أَنَّ الْأَنْبِيَاءَ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ، فَيُمْكِنُ لَهُمْ سَمَاعُ صَلَاةِ مَنْ صَلَّى عَلَيْهِمْ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা জমিনের উপর নবীগণ (عليه السلام)’র শরীর ভক্ষণ করাকে হারাম করেছেন। আর এটা এজন্য যে, নবীগণ (عليه السلام) রওযা শরীফে জিন্দা। একথাটি রাসূলে পাক (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) এর একটি প্রশ্নের উপরে বলেছেন। তাঁরা প্রশ্ন করেছেন যে, ইন্তেকালের পরেও কি দরুদ শরীফ পাঠানো হয়? ……সুতরাং এই হাদিসে পাক থেকে দূঢ়ভাবে একথা বুঝা গেল যে, ইন্তেকালের পরেও যারা দরুদ শরীফ পাঠ করবে তা রাসূল (ﷺ) নিজ কানে শুনেন।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাতে শরহে মিশকাত, ৩য় খ- ১০১৭ পৃ., হা/১৩৬১-এর আলোচনা।)
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)-এর আকিদা :
তিনি বলেন-
ازيں جا معلوم مى شود كہ حيات انبياء حيات جسمى ودنياوى است نہ بمجرد وبقا ئے ارواح
-‘‘এর থেকে বুঝা গেল নবীগণ (عليه السلام) স্বশরীরেই জিন্দা কেবল আত্মা নয়। (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, ফার্সী, ২য় খ-, ৯৬০ পৃ.)
শায়খে মুহাকিক আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর অপর অনাবদ্য গ্রন্থ তাকমিলুল ঈমানে বলেন,
انبياء عليه السلام كو موت نهيں وه زنده اورياقى ہيں ان كے واسطے وہى ايك موت سے جو ايك دنعه اپكى اس كے بعد ان كى روحيں بدن مي لوٹادى جاتى ہيں اور جو حيات ان كو دنيا مي تہى دبى عطا فرما تے ہيں
-‘‘নবীগণ (عليه السلام) মৃত নয় বরং জীবিত। তাঁদের সাময়িক মৃত্যু আসে। এরপর তাঁদের রূহ মুবারক পুনরায় ফেরত দেন। অতঃপর তাঁরা দুনিয়ার হায়াত পুনরায় লাভ করেন।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, তাকমিলুল ঈমান, ৫৮ পৃ.)
আল্লামা শামী হানাফী (رحمة الله)-এর আকিদা :
তিনি বলেন-
أَنَّ الْأَنْبِيَاءَ – عَلَيْهِمْ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ
-‘‘নিশ্চয় সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ সমাধীতে জীবিত।’’ (ইবনে আবেদীন শামী, রদ্দুল মুহতার, ৪/১৫১ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: وَمَا أَفَادَهُ مِنْ ثُبُوتِ حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ حَيَاةً بِهَا يَتَعَبَّدُونَ، وَيُصَلُّونَ فِي قُبُورِهِمْ، مَعَ اسْتِغْنَائِهِمْ عَنِ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ كَالْمَلَائِكَةِ أَمْرٌ لَا مِرْيَةَ فِيهِ،
-‘‘ইবনে হাজার (رحمة الله) বর্ণনা করেন, নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা হবার বড় প্রমাণ হল তারা নিজ নিজ কবর শরীফে ইবাদত করেন নামায পড়েন। তবে ফেরেশতা গণের যেভাবে পানাহারের প্রয়োজন হয় না।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাতে শরহে মিশকাত, ৩য় খ- ১০১৭ পৃ., হা/১৩৬১-এর আলোচনা।)
সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ পন্থিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।