বিষয় নং-১৭: হাত পা চুম্বন করা:

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দেওবন্দীদের এবং আহলে হাদিসদের মুরব্বীরা হাত পা চুম্বন করাকে নাযায়েজ এবং শিরক বলে থাকে। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত একে জায়েয এবং মুসতাহসান বলে থাকেন। কেননা হাদিসে পাকে আছে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) রাসূলে কারিম (ﷺ)’র হাত ও পা মুবারকে চুম্বন করতেন এবং নিজেরাও পরস্পরের সাক্ষাতে এরূপ করতেন।

হুযূর পুর নূর (ﷺ)’ সম্মানার্থে সায়িদ্যাতুননিসা ফাতেমা (رضي الله عنه)’ আমল:

ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইমাম বুখারী (رحمة الله), ইমাম আবু দাউদ (রহ), ইমাম খতীব তিবরিযি (رحمة الله), সারকারে গাউসে পাক (رحمة الله), শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) এবং শাহ ওয়ালিউল্লাহ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, হযরত উম্মুল মু‘মিনীন মা আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) যখন মা ফাতেমা (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ আসতেন। তখন তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন। 

فَأَخَذَتْ بِيَدِهِ فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِي مجلسِها

-‘‘অতঃপর তাঁর হাত মুবারকে চুম্বন করে নিজের জায়গায় বসাতেন। আর হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) যখন রাসূল (ﷺ)’র দরবারে আসতেন, তখন রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে তাঁর হাতে চুমু দিতেন এবং নিজ স্থানে বসাতেন।’’ ২২২

  • ২২২. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ১৩৮ পৃ., ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/৩৩৫ পৃ. হা/৫২১৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ছাপা ৪০২ পৃ.) ৩/১৩২৯ পৃ. হা/৪৬৮৯, শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২য় খণ্ড ১৪৮ পৃ., শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দীসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, (ফার্সী) ২য় খণ্ড ৫৪২ পৃ., শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী, গুনিয়াতুত তালেবীন, ৩১ পৃ., ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/১৬২ পৃ. হা/১৩৫৭৮ এবং আল-আদাব, ১/৯৭ পৃ. হা/২৪১ এবং শুয়াবুল ঈমান, ১১/২৭০ পৃ. হা/৮৫২৯

সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’ আকিদা: ২২৩

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর  (رضي الله عنه) বলেন,

فَقَبَّلْنَا يَده

-‘‘আমরা রাসূল (ﷺ)’র হাত মুবারক চুম্বন করেছি।’’ ২২৪

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২২৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) সুন্নত পালনে খুবই মনোযোগী ছিলেন। (সিরাতে বুখারী, ১ম খণ্ড, আবদুস সালাম মুবারকপুরী ওহাবী) দেওবন্দীদের বিগদ্ধ লেখক “রশাদ” বলেন, তিনি এমন পর্যায়ের সুন্নতের অনুসারী ছিলেন যে, রাসূল (ﷺ) যেখানে অবতরণ এবং নামায পড়তেন। তিনিও সেখানে নামায পড়তেন। তিনি মুসলমানদের ইমাম এবং প্রসিদ্ধ মুফতি ছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ)’র অনেক হাদীস বর্ণনা করেন। (মাহে নামা রশাদ শিয়ালকোট, ৫২ পৃষ্ঠা, জুলাই ১৯৭৩ ইং)
  • ২২৪. ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, তৃতীয় খণ্ড, ৪৬ পৃ. হা/২৬৪৭ এবং ৪/৩৫৬ পৃ. হা/৫২২৩, ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৫৪১ পৃ. হা/৯৭২, ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ২৬২ পৃ. হা/৭৫২, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৫৪১ পৃ. হা/৩৩৬৮৬, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১১/৬৯ পৃ. হা/২৭০৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/১১৫৬ পৃ. হা/৩৯৫৮, ইমাম বায়হাকী, আল-আদাব, ১/৯৭ পৃ. হা/২২৬, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/১৬২ পৃ. হা/১৩৫৮৪ এবং শুয়াবুল ঈমান, ১১/২৯৩ পৃ. হা/৮৫৫৯

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━

প্রিয় পাঠক! ওহাবীদের মুজাদ্দিদ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহহাব নজদীর ছেলে আবদুল্লাহও এই বর্ণনাটি তার ফতোয়ার মধ্যে এনেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল ওয়া মাসায়েল, ১ম খ-, ৮২ পৃ.)

হযরত আশবাহ (رضي الله عنه)’ আকিদা

হযরত মা’জিদাতুল আবদী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, হযরত আশবাহ (رضي الله عنه) একদা রাসূল (ﷺ)’র দরবারে হাজির হয়ে 

حَتى أَخذ بِيد النَّبِيِّ ﷺ فَقبَلهَا

তাঁর হাত মুবারক ধরে চুম্বন করেন।’ তখন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন, 

إنَّ فِيك لَخُلقَين يُحبُهما اللَّهُ وَرَسُولُهُ

-‘‘তোমার মধ্যে এমন দুটি অভ্যাস আছে, যা আল্লাহ ও তাঁর হাবীবের কাছে প্রিয়।’’  ২২৫

  • ২২৫. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৩০৩ পৃ. হা/৫৮৭, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১২/২৪৩ পৃ. হা/৬৮৪৯

প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল হাত চুম্বন করা মন্দও নয়, শিরকও নয়, বরং উত্তম কাজ। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) একে উত্তম বলেছেন।

হযরত জারেঈন (رضي الله عنه)’ আকিদা:

ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنْ زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا، فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهُ،

-‘‘হযরত যারে‘ঈন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, যিনি আবদুল কায়েসের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন,  যখন আমরা মদীনা মনোওয়ারায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তাড়াতাড়ি অবতরণ করতে লাগলাম। অতঃপর আমরা হুযূর (ﷺ) এর পবিত্র হাত ও পা মুবারককে চুমু দিয়েছিলাম।’’ ২২৬

  • ২২৬. ইমাম বুখারী : তারীখুল কাবীর : ৪/৪৪৭ পৃ. : হা/১৪৯৩, ইমাম বুখারী : আদাবুল মুফরাদাত : ২৩৮ পৃ: হা/৯৭৫, ইমাম ইবনে আবি শায়বা : আল মুসান্নাফ : ৮/৫৬২ পৃ., ইমাম আবু দাউদ : আস সুনান : ৪/৩৫৭ পৃ. : কিতাবুল আদাব : হা/৫২২৫, ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ৫/২৭৫ পৃ. : হা/৫৩১৩, ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ১/১৩৩ পৃ. : হা/৪১৮, ইমাম বায়হাকী : আস সুনানে কোবরা : ৭/১০২ পৃ. : হা/১৩৩৬৫, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ১১/২৯৪ পৃ.,  হা/৮৫৬০, ইমাম শায়বানী : আহাদিসুল মাসানী : ৩/৩০৪ পৃ. : হা/১৬৮৪, ইবনে হাজার আসকালানী : তালখীসুল হুবাইর : ৪/৯৩ পৃ. : হা/১৮৩০, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী : আদ-দিরায়্যাত ফি তাখরীজ আহাদিসুল হিদায়াত : ২/২৩২ পৃ. হাদিস: ৬৯১, ইমাম খতিব তিবরিযী  : মিশকাত: ৩/১৩২৮পৃ. হা/৪৬৮৮ (মুসাফা ও মু‘আনাকা অধ্যায়), ইমাম মিয্যী : তাহজীবুল কামাল : ৭/২৬৬ পৃ. রাবী: ১৯৪৬, ইমাম যায়লাঈ : নাসীমুর রিয়াদ্ব : ২/২৩২.পৃ., ইমাম আবি আছেম, আস্-সুন্নাহ,  হা/১৯০, ইমাম শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : আশিআতুল লুমআত, ৩/৫০৮ পৃ., হা/৪৬৮৮, মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৭/৫৬২ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী : ৮/৮৫ পৃ., ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুওয়াত : ৫/৩২৭ পৃ.

হযরত ছাফওয়ান বিন আসসাল (رضي الله عنه):

ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ ؓ، أَنَّ قَوْمًا مِنَ الْيَهُودِ قَبَّلُوا يَدَ النَّبِيِّ ﷺ وَرِجْلَيْهِ

-‘‘হযরত সাফওয়ান বিন আস্সালাম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় ইয়াহুদীদের একটি জামাত (দল) রাসূল (ﷺ) এর হাত ও পা মোবারকে চুমু খেয়েছেন।’’ ২২৭

  • ২২৭. ইমাম ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : ২/১২২১পৃ. : হা/৩৭০৫, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/৩২ পৃ. হা/৫৮, ইমাম তিরমিযী : আস্-সুনান, ৫/৭২ পৃ. হা/২৭৩৩, ইমাম নাসায়ী : আস-সুনান : ৭/১১১ পৃ. হা/৪০৭৮, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : ৪/২৩৯ পৃ., আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/১২৭ পৃ. হাদিস:৩, আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৫/২৯২ পৃ. হাদিস:২৬২০৭, যায়লাঈ, নাসিবুর রায়্যাহ, ৪/২৫৮পৃ. তিনি তিরমিযির হাসান, সহীহ বলা মতকে মেনে নিয়েছেন, ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : কিতাবুল ঈমান : হা/২০, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী,  আল-দেরায়া ফি তাখরীজে হেদায়া,  ২/২৩২ পৃ., শায়খ মাহমুদ মুহাম্মদ খলিল,  আল-মুসনাদিল জামে,  ৭/৫০৪ পৃ., আলবানী, দ্বঈফু সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩৭০৫, তিনি বলেন, সনদটি দ্বঈফ। ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ২য় খণ্ড, ২৭১ পৃ., শরফে ফিকহুল আকবর, ২২ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহু আলাল আলামীন, ১১৮ পৃ.

হযরত উসামা (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

শায়খুল মুহাদ্দেসীন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী  (رحمة الله) ২২৮

তিনি তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ “মাদারেজুন নবুওয়াতে” বর্ণনা করেন যে, হযরত উসামা (رضي الله عنه) ১১ রবিউল আউয়াল শরীফ রাসূল (ﷺ)’র দরবারে হাজির হন। তার সৈন্যদল প্রেরণের অনুমতির জন্য তিনি এসে রাসূল (ﷺ) সামনে দাঁড়িয়ে নিজ মাথা অবনমিত করে রাসূল (ﷺ) মাথা মুবারক এবং হাত মুবারক চুম্বন করেন।

(মাদারেজুন নবুওয়াত, ২য় খ- ৪৮৬ পৃ.)

  • ২২৮. ওহাবীদের বরণ্য মওলবী ইবরাহীম মীর শিয়ালকুটি বলেন যে, শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) থেকে আমি অধমের ইলম অর্জন, হাদিসের খেদমত, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য কামালিয়তের ফলে তাঁর সম্পর্কে উত্তম আকিদা পোষণ করি। আমার কাছে তাঁর অনেক কিতাব আছে, এর থেকে আমি উপকৃত হই। (তারীখে আহলে হাদীস, ৩৯৮ পৃ.)

হযরত ওয়াযে বিন আমের (رضي الله عنه)’ আকিদা

হযরত ওয়াযে বিন আমের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)’র নিকট উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ইতোপূর্বে আমরা রাসূল (ﷺ) কে দেখিনি। (আমরা তাঁর কাছে অপরিচিত ছিলাম), তখন কেউ একজন বললেন, 

ذَاكَ رَسُولُ اللَّهِ، فَأَخَذْنَا بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ نُقَبِّلُهَا

-‘‘ইনিই রাসূল (ﷺ), তখন আমরা তাঁর মুবারক হাত ও পা ধরে চুম্বন করলাম।’’  ২২৯

  • ২২৯. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৩৩৯ পৃ. হা/৯৭৫

ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ “খাসায়েসুল কুবরা” গ্রন্থে বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)’র নিকট একদা এক মহিলা তার স্বামী সম্পর্কে অভিযোগ করে।

রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কী তোমার স্বামীর উপর অসন্তুষ্ট?  সে বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা পরস্পরের মাথা নিকটবর্তী কর।  এরপর রাসূল (ﷺ) তাদের মাথা এমনভাবে মিলিত করলেন যে, স্ত্রীর কপাল স্বামীর কপালের সাথে মিলে গেল। এরপর রাসূল (ﷺ) তাদের মধ্যকার হৃদ্যতা এবং মুহাব্বতের জন্য দোয়া করলেন। এর কিছুদিন পর মহিলাটি হুযুর (ﷺ)’র  দরবারে এসে হুযুর (ﷺ)’র হাত মুবারকে চুম্বন করলেন। হুযুর (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামী এখন তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেন? উত্তরে মহিলাটি বললেন, তিনি বাচ্চা ছেলের মতও নয়, বৃদ্ধের মতও নয়, বরং একজন ছোট বাচ্চার চেয়েও তিনি আমাকে মুহাব্বত করেন।

হুযুর (ﷺ) তখন বললেন: 

أشهد أَنِّي رَسُول الله

-‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল।’’ তখন হযরত উমর (رضي الله عنه) বললেন, 

أشهد أَنِّي رَسُول الله

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ২৩০

  • ২৩০.ইমাম সুয়ূতি, খাছায়েসুল কুবরা, ২/২৯১ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুন নবুওয়াত, ১৬৫ পৃ., ইমাম মুকরিযি, ইমতাউল আসমা, ১২/৬৫ পৃ., ইবনে কাসির, মু‘যিজাতুন্নবী (ﷺ), ১/২০৭ পৃ.

‘আপনার জবান মুবারক হতে যা বের হয় তাই হয়ে থাকে’

হযরত মায়িদাতুন আসরী (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “তারীখুল কাবীরে” বলেন, হযরত আবদুল্লাহ বিন সা’দ আবদী (رضي الله عنه) বলেন, আমি হযরত মাজিদাতুল আসরী (رضي الله عنه) কে একথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, 

أَتَينا النَّبيَّ صَلى اللَّهُ عَلَيه وسَلم، فَنَزَلتُ إِلَيهِ فَقَبَّلتُ يَدَهُ.

-‘‘একদা আমরা রাসূল (ﷺ)’র দরবারে এসে তাঁর নিকটে গিয়ে হাত মুবারক চুমু খেলাম।’’ ২৩১

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২৩১. 

ইমাম বুখারী, আত-তারিখুল কাবীর, ৮ম খণ্ড, ৩০ পৃ. ক্রমিক.২০৪৮, 

❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

عن أبي بزة، قال: دخلت مع مولاي عبد اللَّه بن السائب على النبي صلى اللَّه عليه وسلّم فقبّلت يده ورأسه ورجله.

-“হযরত আবি বাযাতা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়িব (رضي الله عنه) এর গোলামের সাথে রাসূল (ﷺ) এর কাছে যাই, অতঃপর আমি রাসূল (ﷺ) এর হাত, মাথা এবং পা মুবারকে চুমু খাই।” 

-‘‘ইবনে হাজার, ইসাবা ফি তামিয়িযিস সাহাবা, ৭/৩৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৬১৯, ইবনে আবি আছির, আসাদুল গাবাহ, ৬/২৯ পৃ. ক্রমিক. ৫৭২৮

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━

দেওবন্দী এবং তাবলীগীদের মাওলানা ইদরীস কান্দলবী তার কিতাব “হায়াতে সাহাবা” এর মধ্যে বলেন, হযরত যায়েদ বিন ছাবেত (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, হযরত সাদ বিন ইবাদাহ (رضي الله عنه) তাঁর ছেলেকে নিয়ে হুযুর (ﷺ)’র দরবারে এসে সালাম জানালেন। হুযুর (ﷺ) বললেন, এখানে বস, এখানে বস। তাকে ডানে বসালেন এবং বললেন, আনসারের জন্য মারহাবা, আনসারের জন্য মারহাবা। হযরত সাদ বিন উবাদাহ (رضي الله عنه) তাঁর ছাহেবজাদাকে হুযুর (ﷺ)’র সামনে দাঁড় করালেন। হুযুর (ﷺ) তাকে বসতে বললে ছাহেবজাদা বসে পড়লেন। তিনি বললেন, কাছে এসো। তখন তিনি আরেকটু কাছে এসে বললেন এবং হাত মুবারক চুমু খেলেন। এসময় রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি আনসারদেও (নানীর বংশের দিকথেকে) আর আনসারের ছেলে আমার কাছে। এটা শুনে হযরত সাদ (رضي الله عنه) বললেন, আল্লাহ তা‘য়ালা আপনার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখুন। যেমনিভাবে আপনি আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন হুযূর পাক (ﷺ) এর পূর্বে বলেছেন যে, আমি তোমাদেরকে সম্মানিত করবো, তোমরা মানুষদেরকে সম্মান দ্বারা দয়া করবে। নিঃসন্দেহে আমার পর তোমরা নিজেদের উপর প্রাধান্য দেখবে। তোমরা তখন ধর্য ধারণ করতে থাকবে শেষে আমার নিকট হাউজে কাউসার পাবে। ২৩২

  • ২৩২. মাওলানা ইদরীস কান্দলবী, হায়াতুস সাহাবা, ২য় খণ্ড, ৪৩০ পৃ.

রাসূল (ﷺ)’ বাণী

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) একটি হাদীস বর্ণনা করেন- 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَن رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي نَذَرْتُ إِنْ فَتْحَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ مَكَّةَ أَنْ آتِيَ الْبَيْتَ فَأُقَبِّلَ أَسْفَلَ الْأُسْكُفَّةِ، فَقَالَ: قَبِّلْ قَدَمَيْ أُمِّكَ وَقَدْ وَفَّيْتَ نَذْرَكَ

-‘‘একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)’র নিকট এসে বললেন, আমি মানত করেছি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা আপনাকে মক্কা শরীফের বিজয় দান করলে, আমি বায়তুল্লাহর চৌকট চুম্বন করব। নবী করিম (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি ঘরে গিয়ে মায়ের পা চুম্বন কর, তোমার মানত পূর্ণ হবে।’’ ২৩৩

  • ২৩৩. ইমাম আবুল কাসেম তামাম বিন বাজলী দামেস্কী, আল-ফাওয়াইদ, ১/৩০০ পৃ. হা/৭৫৭, আল্লামা আইনী, উমদাতুলকারী, ২২/৮২পৃ.

হযরত ছাফওয়ান বিন আস্সাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, এক ইহুদী তার বন্ধুকে বলল, চলো আমরা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত (সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত নং-১০১) সম্পর্কে নবী (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করব-

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ

তারা রাসূল (ﷺ) দরবারে এসে প্রশ্ন করলো। রাসূলে পাক (ﷺ) তাদের উত্তর দিলেন এবং তাদেরকে বললেন- আল্লাহর সাথে শিরক করবে না, অপচয় করবে না, যেনা করবে না, এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করবে না, যাকে  আল্লাহ হারাম করেছেন, কিন্তু বৈধ হলে ভিন্ন কথা, যাদু করবে না, সুদ খাবে না। কোন বড় ব্যক্তিকে নিয়ে এমন  যালেমের কাছে যাবে না, যে তাকে হত্যা করবে। কাউকে  অপবাদ দিবে  না, সতী সাধবী নারীর কাছে সপ্তাহের প্রতিদিন অতিক্রম করবে না। এগুলো শুনে তারা 

فَقَبَّلَا يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ، وَقَالَا: نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيٌّ.

-‘‘রাসূল (ﷺ)’র হাত ও পা মুবারক চুম্বন করে বলতে লাগল আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল।’’  ২৩৫

  • ২৩৫. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩০/১৩ পৃ. হা/১৮০৯২, ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসিল মুখতার, ৮/২৯ পৃ. হা/১৮, তিনি বলেন- إِسْنَاده صَحِيح -‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/৫৭ পৃ., ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ৪/৩০৩ পৃ. হা/৫৩২৪, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ১১৭-১১৮ পৃ., আযিমাবাদী, আওনুল মা‘বুদ, ১৪/৮৯ পৃ., মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ৭/৪৩৭ পৃ., আহলে হাদিস শাইখ ইবনে উসাইমীন, শরহে রিয়াযুস সালেহীন, ৪/৪৪৮ পৃ. হা/৮৮৯-এর আলোচনায় লিখেন- رواه الترمذي وغيره بأسانيد صحيحة -‘‘এ হাদিসটি ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন, সনদটি সহীহ।’’ ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৮১ পৃ. হা/৮৯২৯, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৭/১৫০ পৃ.

হযরত আদ্দাস (رضي الله عنه)’ আকিদা

মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) আদাসের ঘটনা বর্ণনাপূর্বক বলেন- 

فَأَكَبَّ عَدَّاسٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ رَأْسَهُ وَيَدَيْهِ وَقَدَمَيْهِ قَالَ: يَقُولُ ابْنَا رَبِيعَةَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: أَمَّا غُلَامُكَ فَقَدْ أَفْسَدَهُ عَلَيْكَ. فَلَمَّا جَاءَهُمَا عَدَّاسٌ، قَالَا لَهُ: وَيْلَكَ يَا عدّاس! مَا لَك تُقَبِّلُ رَأْسَ هَذَا الرَّجُلِ وَيَدَيْهِ وَقَدَمَيْهِ؟

আদ্দাস হুযুর (ﷺ)’র মাথা মুবারক, হাত ও পা মুবারক ঝুকে চুম্বন করেন, তখন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন, এর কাছে রবীয়ার দুই সন্তানের কোন একজন স্বীয় বন্ধুকে বলেছে যে, এরূপই বুঝা যায় যে, এই মহান ব্যক্তিত্বের সামনে তোমার গোলামের আকল শেষ হয়ে গেছে। আদ্দাস যখন তাদের সামনে আসলেন তখন বলল, আদ্দাস! আফসোস! তুমি এই ব্যক্তির হাত-পা চুম্বন করলে? তখন আদ্দাস বললেন- 

يَا سَيِّدِي مَا فِي الْأَرْضِ شَيْءٌ خَيْرٌ مِنْ هَذَا، لَقَدْ أَخْبَرَنِي بِأَمْرِ مَا يَعْلَمُهُ إلَّا نَبِيٌّ

-‘‘হে আমার মুনিব! পৃথিবীতে তাঁর মতো কোন ব্যক্তিত্ব নেই, এই মহান স্বত্ত্বা আমাকে এমন সংবাদ দিয়েছেন যা কেবল নবীগণই জানেন।’’ ২৩৬

  • ২৩৬. ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা বিআহওয়ালিল মুস্তফা, ১ম খণ্ড, ২১৪ পৃ., ইমাম ইবনে হিশাম, সিরাতে ইবনে হিশাম, ১/৪২১ পৃ., ইমাম সুহাইলী, রাওযুল উনূক, ৪/২৯ পৃ., ইমাম মুকরিযি, ইমতাউল আসমা, ৮/৩০৭ পৃ., ইবনে কাসির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/১৫১ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৪৩৯ পৃ., আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ১/৫০২ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারিখুল খামীস, ১/৩০৩ পৃ., ইবনে আছীর, আসাদুল গাবাহ, ৪/৪ পৃ. ক্রমিক. ৩৬০৩

হযরত জাবের (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

আল্লামা আবদুর রহমান জামী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “শাওয়াহেদুন নবুওয়াত” গ্রন্থে বলেন, হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর নিকট এসে সালাম করলাম যখন তাঁর দৃষ্টিশক্তি চলে গেছে। আমার সালামের উত্তর দিয়ে তিনি আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম মুহাম্মদ বিন আলী বিন হোসাইন (رضي الله عنه)। তখন জাবের (رضي الله عنه)  বললেন, হে প্রিয় বৎস! একটু কাছে আসুন। আমি কাছে গেলে তিনি আমার হাত-পা চুম্বন করলেন। এরপর বললেন, হুযুর  করিম (ﷺ) আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আমি বললাম, হুযুর (ﷺ) এর উপরও সালাত সালাম বর্ষিত হোক।

এরপর আমি বললাম, আপনি এরূপ কেন করলেন? তিনি বললেন, একদা আমি হুযুর পুর নুর (ﷺ) এর দরবারে বসা ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হয়তো তোমার সাথে আমার বংশধরের সাক্ষাৎ হবে। যাঁর নাম মুহাম্মদ বিন হোসাইন (رضي الله عنه)। যাকে আল্লাহ তা‘য়ালা নূর এবং হিকমত দান করেছেন। তাকে আমার সালাম বলবে। (আল্লামা আবদুর রহমান জামী, শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, ১৮১ পৃ.)

উল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হল সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) হুযুর পুর নূর (ﷺ) এর হাত ও পা মুবারক চুম্বন করতেন। তখন আপনাদের সামনে এমন কতগুলো হাদীস বর্ণনা করবো, যেগুলোর মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য সাহাবাগণ (رضي الله عنه) একে অপরের হাত-পা চুম্বন করতেন। ২৩৭

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২৩৭. 

❏ অনেক মুহাদ্দিস সংকলন করেন-

حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ فِي قِصَّةٍ قَالَ: فَدَنَوْنَا مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَبَّلْنَا يَدَهُ وَرِجْلَهُ رَوَاهُ أَبُو دَاوُد.

-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর রেওয়াতের মধ্যে লম্বা কাহিনীর পরে উল্লেখ আছে, তিনি বলেন: অতঃপর তাঁরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর নিকটবর্তী হলেন এবং প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর হস্ত ও পদচুম্বন করলেন। ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।” (আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৯ম খন্ড, ৪৮ পৃ:; ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তালখিসুল হুবাইর, ৪র্থ খন্ড, ২৪৬ পৃ:)।

খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه)-এর সুন্নাত

আমিরুল মুমেনীন ফিল হাদীস ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সকলেই অবগত।

হযরত উমর (رضي الله عنه)এবং আবু উবায়দা বিন র্জারাহ (رضي الله عنه)-এর আক্বিদা

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (رحمة الله) এমন এক ব্যক্তিত্ব যার গবেষণার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে সকলেই একমত। তিনি বলেন-

أَبُو عبيدة بْن الجراح بوسه برد ست  أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ؓ

-‘‘হযরত আবু উবাদাহ বিন র্যারাহ (رضي الله عنه) হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) এর হতে মুবারকে চুম্বন করেছেন।’’  ২৩৮

  • ২৩৮. ইমাম গায্যালী, কিমিয়ায়ে সা‘আদাত, ফার্সী ১৯৪ পৃ: শায়খ শিহাবুদ্দীন সাহারওয়ারর্দী, আওয়ারিফুল মা‘রিফ, ১৬০ পৃ.

এই বর্ণনাটি দেবন্দীদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব নাজদীর ছেলে আবদুল্লাহু তার স্বীয় ফতোয়ার মধ্যে এনেছেন। (মাজমুয়ায়ে বি রাসায়েল মাসায়েলে নজদীয়া, ১ম খ-, ৮২২ পৃ.)

হযরত যায়েদ বিন সাবেত (رضي الله عنه) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

শায়খুল ইসলাম আবুল কাসেম আবদুল করিম হাওয়ায়িনুল কুশাইরী (رحمة الله), শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله), শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজার মাক্কী, আল্লামা ইয়াফায়ী (رحمة الله) গণ তাদের নিজ স্ব-স্ব নির্ভরযোগ্য কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, একদা হযরত যায়েদ বিন ছাবেত (رضي الله عنه) এক বাহনে আরোহন করছিলেন, তখন তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কে বললেন, হে প্রিয় রাসূল (ﷺ) এর চাচাতো ভাই! একটু থামুন! অর্থাৎ লাগম ধরবেন না। তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বললেন, আমাকে আলেমদেরকে সম্মান করার জন্য বলা হয়েছে। এটা শুনে-

فأخذ زيد كفه ويقبلها

-‘‘হযরত যায়েদ বিন সাবেত (رضي الله عنه) তাঁর হাতে চুমু করেন।’’ এরপর তিনি বললেন, 

هَكَذَا أمرنَا أَن نَفْعل بِأَهْل بَيت نَبينَا ﷺ

-‘‘রাসূল (ﷺ) বলেছেন আমরা যেন তাঁর আহলে বায়তকে সম্মান করি।’’  ২৩৯

  • ২৩৯. ইমাম ইবনে আব্দুল বার্, জামেউল ইলমে ওয়া ফাদ্বলিহী, ১/৫১৪ পৃ. হা/৮৩২, ইমাম দিনওয়ারী, মাজালিস, ৪/১৪৬ পৃ. হা/১৩১৪, রিসালায়ে কজীরিয়্যাহ ২৬ পৃ: শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারিজুন্নবু (ফার্সী), ২য় খন্ড, ৬৩০ পৃ. ইবনে হাজার মক্কী, আস-সাওয়াইকুল মুহরিকা, ২/৬৮১ পৃ., ইমাম ইয়াফী, মিরাতুল জিনান, ১/৯৯ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৩/৩৯৬ পৃ. হা/৩৭০৬১, ইমাম ইবনে হাজার, ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ৪/১২৬ পৃ., ইবনে আসাকীর তারিখে দামেস্ক, ১৯/৩২৬ পৃ., ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ২/১১০ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/১৪ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/৮৬ পৃ.

ওহাবীদের মুজাদ্দেদ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহ্হাব নজদীর ছেলে আবদুল্লাহও এই বর্ণনাটি তাঁর ফতোয়ার মধ্যে এনেছেন। ২৪০

  • ২৪০. মারফাত বিনতে কামিল, ইহতিসাব মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব নাজদী, ৪০০ পৃ., মাজমুআতুর রসায়েলে মাসায়েল, ১ম খণ্ড, ৮২ পৃ.

হযরত আনাস (رضي الله عنه) এবং ছাবেত (رحمة الله)’ আকিদা

তাবেয়ী হযরত ছাবেত বুনানী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলেন, 

قَالَ ثَابِتٌ لِأَنَسٍ: أَمَسَسْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِكَ؟

‘আপনি কী রাসূল (ﷺ) এর হাত মুবারক চুম্বন করেছেন?’

قَالَ: نَعَمْ، فَقَبَّلَهَا

-‘‘তিনি বললেন, হ্যাঁ, চুম্বন করেছি, অতঃপর হযরত সাবেত বুনানী (رحمة الله) খাদেমুর রাসূল (ﷺ) হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর হাতে চুমু খেলেন।’’ ২৪১

  • ২৪১. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ১/৩৩৮ পৃ. হা/৯৭৪, তানবীরুল কুলুব, ২০০ পৃ.)

হযরত সালমাহ বিন আকওয়া (رضي الله عنه) এবং আবদুল্লাহ বিন রাজীন (رضي الله عنه)’ আকিদা

হযরত আবদুল্লাহ বিন রাজীন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রবদা নামক স্থান থেকে ফিরছিলাম আমাদের জানা ছিল যে, হযরত সালমাহ বিন আকওয়া (رضي الله عنه) এর নিবাস এখানে, আমরা তাঁর কাছে গিয়ে সালাম করলাম। 

فَأَخْرَجَ يَدَيْهِ فَقَالَ: بَايَعْتُ بِهَاتَيْنِ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَأَخْرَجَ كَفًّا لَهُ ضَخْمَةً كَأَنَّهَا كَفُّ بَعِيرٍ فَقُمْنَا إليها فقبلناها.

-‘‘তখন তিনি তাঁর হাত মুবারক বের করে বললেন, এই হাতেই আমি রাসূল (ﷺ) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেছি। অতঃপর তিনি তাঁর হস্তদ্বয় বের করেন, যেগুলো উঠের বাচ্চার চেয়ে কোমল ছিল। আমরা দাঁড়িয়ে তা চুম্বন করলাম।’’ ২৪২

  • ২৪২. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৫৪১ পৃ. হা/৯৭৩, তাবীরুল কুলুব, ২০০ পৃ.

সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)-এর আকিদা

ফকীহ আবু লাইস সমরকন্দী (رحمة الله) বলেন, নবী করিম (ﷺ)-এর সম্মানিত সাহাবীগণ (رضي الله عنه)’র ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তারা যখন কোন সফর থেকে আসতেন একে অপরের সাথে কুলাকুলি করতেন-

وَيُقَبِّلُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا

-‘‘এবং একে অপরের হাতে চুম্বন করতেন।’’ ২৪৩

  • ২৪৩. বুসতানুল আরেফীন এর হাশিরায়ে তানবীহুল গাফেলীন ১৬০ পৃ. মিশর

হযরত আল্লামা নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) এক বর্ণনায় বলেন,

وَعَنْ جَمِيلَةَ أُمِّ وَلَدِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَتْ: كَانَ ثَابِتٌ إِذَا أَتَى أَنَسًا قَالَ: يَا جَارِيَةُ، هَاتِي لِي طِيبًا أَمْسَحُ يَدِي ; فَإِنَّ ابْنَ أُمِّ ثَابِتٍ لَا يَرْضَى حَتَّى يُقَبِّلَ يَدِي.

-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর মাতা হযরত জামিলাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন হযরত ছাবেত (رضي الله عنه) এর আমল ছিল যে, হযরত আনাস (رضي الله عنه) যখন তাঁর কাছে আসতেন তখন তিনি তাঁর বাঁদীকে বলতেন যে, আমার জন্য খুশবু নিয়ে আস, আমি হাতে লাগাব। কেননা উম্মে ছাবেত (رضي الله عنه)-এর ছেলে যতক্ষণ না আমার হাতে চুমু না দেয় খুশবু হয় না।’’ ২৪৪

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২৪৪. হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ১ম খণ্ড, ১৩০ পৃ. হা/৫৪৬ এবং মাকাসিদুল উ‘লা, ১/৬৮ পৃ. হা/৮৭, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৬/২১২ পৃ. হা/৩৪৯৩, 

❏ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেছেন-

رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى، وَجَمِيلَةُ هَذِهِ لَمْ أَرَ مَنْ تَرْجَمَهَا.

-‘‘হাদিসটি ইমাম আবু ই‘য়ালা (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, এ হাদিসের বর্ণনাকারী জামিলা এর জীবনী আমি দেখিনি।’’ (হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ১ম খণ্ড, ১৩০ পৃ. হা/৫৪৬) 

❏ অথচ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

عاصم بن عمر بن الخطاب القرشي العدوي

أمّه جميلة بنت ثابت بن أبي الأفلح الأنصاري.

-‘‘তাবেয়ী আসেম বিন উমর বিন খাত্তাব কুরশী উদবী (رضي الله عنه) যার মা হলেন উম্মে জামিলা বিনতে সাবিত বিন আবি আফলাহ আনসারী (رضي الله عنه)।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ৫/৩ পৃ. ক্রমিক. ৬১৬৯) 

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━সম্মানিত পাঠক! নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাব হতে প্রমাণিত হল যে, হাত-পা চুম্বন করা সুন্নাতে কওলী, ফেলী এবং তাকরীরী। এটার উপর সিজদা, শিরক, বিদআত এবং হারামের ফতোয়া দেয়া মূলত অজ্ঞতা। দেওবন্দী এবং আহলে হাদীসের অনুসারীরা একে হারাম, বিদআত এবং শিরক বলে, কারণ তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment