ততক্ষণ পর্যন্ত ইলম গায়বের সমর্থনকারদের ভাষ্য সমূহ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের ইলমে গায়েব এর বিষয়টি প্রমাণ করা হলো। এবার এর অস্বীকারকারীদের মাননীয় মুরব্বীদের ভাষ্য সমূহ পেশ করা হচ্ছে, যাদ্বারা ইলমে গায়ব সম্পর্কিত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যায়।
হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত শামায়েলে ইমাদাদিয় গ্রন্থের ১১০ পৃষ্ঠায় বলেছেন, লোকে বলে, নবী ওলীগণ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকার হন না। আমি বলি সঠিক পথের পথিকগণ যে দিকে দৃষ্টি দেন অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত হন। আসলে এ জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান। আঁ হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হুদাইবিয়ার ঘটনা ও হযরত আয়েশা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) সম্পর্কিত ঘটনার ব্যাপারে অজ্ঞাত ছিলেন এ বিষয়টিকে বিরুদ্ধবাদীগণ তাদের দাবীর অনুকুলে মনে করেন। এরূপ ধারণা ভ্রান্ত। কেননা কোন কিছু জানার জন্য একাগ্রতা প্রয়োজন। (আনোয়ারে গায়বিয়া গ্রন্থের ২৫ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত।)
মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব লাতায়েফে রশিদিয়া গ্রন্থের ২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ নবীগণ সব সময় অদৃশ্য বিষয়াদি দর্শন করেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে রয়ে সবকিছুর প্রতি সজাগ ও সচেতন থাকেন। যেমন নবী আলাইহিস সালাম ফরমানঃ-
لَوْتَعْلَمُوْنَ مَااَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًاوَّلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا
অর্থাৎ আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে এবং বেশী করে কাঁদতে। আরও ইরশাদ করেছেনঃ اِنِّىْ اَرى مَالَاتَرَوْنَ (নিশ্চয়ই আমি যা দেখি তা তোমরা দেখ না (আনোয়ারে গায়বিয়া ৩২পৃষ্ঠা।)
মৌলভী আশরাফ আলী থানবী সাহেব তকমীলুল ইয়াকীন গ্রন্থের (হিন্দুস্থান প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত) ১৩৫ পৃষ্ঠায় বলেনঃ শরীয়তে বর্ণিত আছে যে, রসুল ও ওলীগণ অদৃশ্য বিষয় ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর খবর দিয়ে থাকেন। কেননা যখন আল্লাহ তাআলা গায়ব ও ভবিষ্যতের বিষয়াদি জানেন, সেহেতু সবকিছুই তার জানা মতে, তারই ইচ্ছানুসারে, তারই উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাং আল্লাহ যদি তার রসুল ও ওলীগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তাকে গায়ব বা ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর খবর দেন তবে প্রতিবন্ধকতা কিসের? যদিওবা আমরা এ ধারণা পোষণ করি যে গায়বী বিষয় সমূহের কোন কিছু সত্ত্বাগতভাবে জানা মানব প্রকৃতি সজ্ঞাত নয়, কিন্তু আল্লাহ যদি কাউকে অবহিত করেন তখন প্রতিরোধ করার কে আছে? সুতরাং যা কিছু তারা জানেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক জানানোর ফলেই জানতে পেরে অন্যান্যদেরকে খবর দেন। উনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি সত্ত্বাগত ইলমে গায়েবের দাবীদার। মুহাম্মদী শরীয়তে (বান্দার জন্য) সত্বাগত ইলমে গায়বের দাবী করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের মধ্যে গণ্য হয় এবং যে এরূপ দাবী করে তাকে কাফির বলা হয়।
মৌলভী কাসেম নানুতবী তাহযীরুন নাস গ্রন্থের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, ‘পূর্ববর্তীদের জ্ঞান এক ধরনের আর পরবর্তীদের জ্ঞান ভিন্ন ধরনের। ক্ন্তিু সে সমুদয় জ্ঞান আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর মধ্যে পুঞ্জিভূত করা হয়েছে। অতএব রসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হলেন প্রত্যক্ষ জ্ঞানী এবং অন্যান্য নবী ও ওলীগণ হলেন পরোক্ষ জ্ঞানী।
এ বক্তব্যের শেষ অংশটুকুর প্রতি লক্ষ্য করা দরকার যে, মৌলভী কাসেম সাহেব হুযুর আলাইহিস সালামের মধ্যে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণের জ্ঞানের সামবেশ স্বীকার করেছেন। পূর্ববর্তীগণের মধ্যে হযরত আদম (আঃ), হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম), হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) আরশ বহনকারী ও লওহে মাহফুজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণও অন্তর্ভক্ত। সুতরাং উল্লেখিত সবার জ্ঞানের তুলনায় হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান বেশী হওয়া চাই। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান সম্পর্কে আমি পূর্বেই আলোকপাত করেছি। -সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-
বিরুদ্ধবাদীগণের ভাষ্য থেকে ইলমে গায়েব এর সমর্থন প্রসঙ্গে আলোচনা। পার্ট-10
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।