সাতান্নতম অধ্যায়ঃ বাইআতে আবু বকর (رضي الله عنه):
প্রসঙ্গঃ খেলাফত ও বাইআত পদ্ধতিঃ
===========
নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইন্তিকালের সময় ঘনিয়ে আসলে হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) হযরত আবুবকর (رضي الله عنه)-কে সংবাদ পাঠান। হযরত হাফসা (رضي الله عنه) সংবাদ দেন নিজ পিতা হযরত ওমর (رضي الله عنه)-কে এবং হযরত ফাতিমা (رضي الله عنها) খবর দেন হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে, (বেদায়া নেহায়া)। তাঁরা কেউ ঐ সময় উপস্থিত ছিলেন না। ইত্যবসরে হুযুর (رضي الله عنه)-এঁর ওফাত শরীফ সংঘটিত হয়।
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সংবাদ পেয়ে সানাহ্ নামক মহল্লায় তাঁর স্ত্রী বিনতে খারেজার গৃহ হতে তড়িৎ গতিতে চলে আসেন এবং নবী করিম [ﷺ]-এঁর চাদর মোবারক সরিয়ে ইন্নালিল্লাহি বলে হুযুরের [ﷺ] কপাল মোবারক তিনবার চুম্বন দিয়ে বলেন – “ইয়া রাসুলুল্লাহ। আপনি হায়ত মউত-উভয় অবস্থায় কত পবিত্র”! এ কথা বলে তিনি সোজা মসজিদে নববীতে চলে যান এবং ক্রন্দনরত অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামকে শান্তনা দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন। কেননা, নবী করিম [ﷺ]-এঁর কাফন দাফনের পূর্বেই ইসলামী রাষ্ট্রের পরবর্তী উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা একান্ত জরুরী ছিল। তা না হলে বৈদেকিশক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মোকাবেলা কে করবে? এবং জানাযার ইনতিযাম কে করবেন?
হযরত ওমর (رضي الله عنه) প্রথমে নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইন্তিকালের কথা স্বীকারই করেননি। তাঁর অবস্থা ছিল তখন ভাব বিহবলতাপূর্ণ। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) যখন কোরআনের আয়াত “ওয়ামা মোহাম্মদুন ইল্লা রাসুল” তিলাওয়াত করে শুনালেন – তখন হযরত ওমর ও অন্যান্য সকলের বিহবলতা কেটে যায় এবং ভবিষ্যৎ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেন। হযরত ওমর (رضي الله عنه) মত প্রকাশ করেন যে, যেহেতু হুযুর [ﷺ]-এঁর নির্দেশে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ইমামতি করেছেন, সুতরাং রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব ও খিলাফতের জন্য তিনিই যোগ্যতম ব্যক্তি। একথা বলে হযরত ওমর (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর হাত ধরে বলে উঠলেনঃ- فاخذ عمر بيده و قال بايعتك ـ فبا يعه الناس (بخارى)
“হে খলিফাতুর রাসুল! আমি আপনার নিকট আনুগত্যের বাইআত করছি।” এভাবে মসজিদে উপস্থিত মোজাহিরগণ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর হাতে বাইআত করেন- (বোখারী)। সোমবারের অবশিষ্ট দিন ও রাত মসজিদে নববীতে বাইআতের কাজ চলতে থাকে।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে মদিনার বনু সায়েদার দরবার হলে আনসারগণ একত্রিত হয়ে খেলাফতের বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের মতামত ছিল – মোহাজিরগণের খলিফা হবে একজন, আর আনসারগণের খলিফা হবেন আনসারদের মধ্য হতে অন্য একজন। হযরত সাআদ ইবনে ওবাদা আনসারী (رضي الله عنه) ছিলেন এই প্রস্তাবের উদ্যোক্তা। এমন সময় হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) এবং অন্যান্য সাহাবীগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের কথা শুনে বললেন – এক রাজ্যে দু’খলিফা মনোনীত হওয়ার অর্থ – নিজেরই নিজেদেরকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা। তিনি নবী করিম [ﷺ]-এঁর বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন – হুযুর [ﷺ] বলেছেন – “আল খিলাফাতু মিন কোরাইশিন” অর্থাৎঃ- “আমার পরবর্তী খলিফা হবে কোরাইশদের মধ্য হতে।”
আনসারদের মধ্যে অনেকেরই এ হাদীসটির কথা স্মরণ ছিলনা। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর মুখে এ হাদীস শুনে সকলের হুঁশ হলো এবং একটি বিপর্যয় থেকে উম্মত রক্ষা পেল। দুই খলিফার প্রস্তাবক হযরত সাআদ ইবনে ওবাদা (رضي الله عنه) সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন – “আনতুমুল উমারা ওয়া নাহনুল ওযারা” অর্থাৎ “আপনারা মোহাজির কোরাইশগণ হবে শাসক এবং আমরা আনসারগণ হবো উযির বা পরামর্শদাতা।” একথা বলেই তাঁরা সবাই হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর হাতে হাত দিয়ে বাইআত করলেন। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সকিফা বনী সায়েদা-এঁর বাইআতের কাজ সমাপ্ত করে মসজিদে নববীতে চলে আসেন এবং মিম্বার শরীফে আরোহণ করে আপন খেলাফতের ঘোষণা দেন ও নীতি নির্ধারণী ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণে তিনি নবী করিম [ﷺ]-এঁর পথ ও মত অনুসরণ করার কথা ঘোষণা করেন। তারপর শোকে বিহবল হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত যোবাইর (رضي الله عنه)-কে ডেকে আনেন এবং তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
“আপনারা দু’জন এখনও বাইআত না করে কি মুসলমানদের শক্তি ও ঐক্য দুর্বল করতে চান”? হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত যোবাইর (رضي الله عنه) তদুত্তরে বললেন – “হে খলিফাতুর রাসুল! আপনার বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমরা আপনার নিকট বাইআত করলাম” (বেদায়া ও নেহায়া)।
এই দুজনের বাইয়াতের মাধ্যমে নবীপরিবারের ঘনিষ্টজনদের বাইআতের কাজ সমাপ্ত হলো। সুতরাং শিয়াদের অভিযোগ খণ্ডন হয়ে গেলো। তারা বলে, হযরত আলী (رضي الله عنه) নাকি হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর হাতে বাইআত করেননি।
প্রসঙ্গঃ বাইয়াতে শেখ-এঁর দলীল
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর হাতে এই বাইআত ছিল খিলাফাত ও ইরাদতাত উভয়টি। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় প্রকারের বাইআত-এঁর এই ধারা হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) পর্যন্ত চালু ছিল। খিলাফতের যুগের পর যখন মুলুকিয়াত বা রাজতন্ত্র শুরু হলো, তখন থেকে বাইআতে খেলাফত চলে যায় বাদশাহদের হাতে এবং বাইআতে ইরাদাত বা আধ্যাত্মিক বাইআত ও তরিকতের বাইআত থেকে যায় ইমাম হাসান-হোসাইন, সালামান ফারছী-প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামের হাতে। অদ্যাবধি আধ্যাত্মিক বাইআত বা তরিকতের বাইআত পীর মাশায়েখ তথা রাসুলের খলিফাগণের হাতে চালু রয়েছে।
পীর তথা নবীজীর খলিফাগণের হাতে বাইআত হওয়া মূলতঃ নবী করিম [ﷺ]-এঁর নিকটই বাইআত হওয়া। আর রাসুলের হাতে বাইআত হওয়া মূলতঃ আল্লাহর কাছেই বাইআত হওয়া (ফাতাহ, ১০ আয়াত) তাফসীরে রুহুল বয়ান সুরা আল ফাতাহ-এঁর তাফসীরে ‘বাইতুশ শায়খ’-এঁর উপর খুব জোর দেয়া হয়েছে। ইসমাইল হক্কী (رحمة الله عليه) বলেনঃ-
يقول الفقير (اسما عيل) ثبت بهذه الاية سنة النبا يعة واخذ التلقين من المشا ئج الكنار-
অর্থ-“সূরা আল ফাতহ-এঁর ১০ নং আয়তা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান মাশায়েখগণের নিকট বাইআত হয়ে তালক্বীন নেয়া সুন্নাত।” কেননা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য পীর অনুসন্ধান করা এবং তাঁদের সান্নিধ্য লাভ করার উপর কোরআন মজিদের সুরা মায়েদা ও সুরা তাওবায়ে তাকিদ ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাফসীরে সাভীতে উল্লেখ আছে – “বাইতে শেখ এবং বাইআতে ইমামও উক্ত ১০ নং আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, ঐ আয়াতটির শানে নুযুল খাস হলেও হুকুম আম।” আরবী এবারতসহ বিস্তারিত বর্ণনা হোদাবিয়ার সন্ধি ৩৯ অধ্যায়ে দেখুন।
বাইআতে ওসমান (رضي الله عنه)-এঁর স্বরূপঃ
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর ইন্তিকালের পূর্বেই তিনি হযরত ওমর (رضي الله عنه)-কে খলিফা মনোনীত করেন। এ ব্যাপারে সমস্ত সাহাবীই একমত পোষণ করেন। হযরত ওমর (رضي الله عنه) দশ বৎসর খেলাফত পরিচালনার পর আঁততায়ীর হাতে ২৩ হিজরীতে শাহাদাত বরণ করেন। ইন্তিকালের পূর্বে মধ্যবর্তী সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনি ৬ জন সাহাবীর মজলিশে সূরার প্যানেল তৈরী করে যান। এই ৬ জনের মধ্যে একজনকে খলিফা মনোনীত করার জন্য তিনি ওসিয়ত করে যান। অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে ৬ জন উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছিলেন – তাঁরা হলেন (১) হযরত ওসমান, (২) হযরত আলী, (৩) হযরত ত্বালহা, (৪) হযরত যোবাইর, (৫) হযরত ছাআদ, (৬) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ ((رضي الله عنه)ম আজমাঈন)।
হযরত ওমর (رضي الله عنه)-এঁর শাহাদাতের ৪র্থ দিনে হযরত ওসমান (رضي الله عنه) খলিফা মনোনীত হন। তাঁর হাতে লোকেরা কিভাবে আইআত হলো-তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
فاخذ (عبد الر حمن بن عوف) بيده فقال هل انت مبايعي على كتاب الله وسنة نبيه صلى الله عليه وسلم وفعل ابى بكر و عمر ـ قال (عثمان) اللهم نعم ـ قال الراوي فرفع رأسه الى سقف المسجد ويده في يد عثمان فقال اللهم اسمع واشهد اللهم اسمع واشهد اللهم اني قد خلعت مافي رقتبى من ذلك في رقبة عثمان ـ قال الراوى وازدحم الناس يبا يعون عثمان حتى غشوه تحت المنبر ـ قال الراوي فقعد عبد الرحمن مقعد النبي صلى الله عليه و سلم واجلس عثمان تحته على الدرجة الثانية وجاء البه الناس يبايعون وبايعه علي بن ابى طالب اولا ويقال اخرا ـ
অর্থঃ- উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه)-যিনি জনমত যাচাই করে হযরত ওসমানের পক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠের মতামত পেয়েছিলেন – তিনি মসজিদে নববীতে লোকজনকে জড়ো করে খলিফা নির্বাচন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হযরত ওসমান (رضي الله عنه)-এঁর হাত ধরে শপথ বাক্য এরূপে পাঠ করালেন-“আপনি কি আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাত মোতাবেক এবং আবু বকর ও ওমরের নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য আমার কাছে শপথ গ্রহণ করতে রাজী আছেন? হযরত ওসমানের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তিনি মসজিদে নববীর ছাদের দিকে মাথা তুলে বললেন – “হে আল্লাহ! তুমি শুন এবং সাক্ষী থাকো, হে আল্লাহ! তুমি শুন এবং সাক্ষী থাকো – আমি আমার কাঁধের বোঝা এবার ওসমানের কাঁধে তুলে দিলাম। বর্ণনাকারী রাবী বলেন – শপথের পর দলে দলে লোকেরা এসে হযরত ওসমানের কাছে বাইআত করতে লাগলো – এমনকি তাঁরা হযরত ওসমানকে মিম্বারের নিচে ঢেকে ফেললো। রাবী বলেন, হযরত আবদুর রহমান তাঁকে তুলে মিম্বারের দ্বিতীয় সিঁড়িতে বসিয়ে নিজে প্রথম সিঁড়িতে নবীজীর বসার স্থানে বসে গেলেন, আর লোকেরা হযরত ওসমানের নিকট বাইআত হতে লাগলো এবং প্রথমেই হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত ওসমানের হাতে বাইআত করলেন – মতান্তরে হযরত আলী (رضي الله عنه) সর্বশেষ বাইআত করেছেন” (বেদায়া-নেহায়া ৭ম খ- ১৩৯ পৃঃ দারুল হাদীস, কায়রো)।
বাইআতে হযরত আলী (رضي الله عنه)-এঁর স্বরূপঃ
হযরত ওসমান (رضي الله عنه)-এঁর শাহাদাতের ৫ দিন পর ৩৫ হিজরীর যিলহজ চাঁদের ১৯ তারিখ শনিবার – মতান্তরে ২৪ তারিখ বৃহস্পতিবার লোকেরা হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে খলিফা নির্বাচিত করেন। সর্বপ্রথম হযরত ত্বালহা (رضي الله عنه) আপন ডানহাত হযরত আলীর হাতে রেখে বাইআত করেন। তারপর আশতার নাখয়ী তারপর সর্বসাধারণ হযরত আলীর হাতে বাইআত করেনঃ-
واخذ الاشتر بيده فبايعه وبايعه الناس ـ
অর্থ-(মিশর, কুফা ও বসরাবাসীগণ খেলাফত গ্রহণের জন্য হযরত তালহা, যোবাইর, সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ, ইবনে ওমর কাউকে না পেয়ে হয়রান পেরেশানীর পর তারা হযরত আলীর নিকট আসলেন) “আশতার হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাত ধরে তাঁর কাছে বাইআত করলেন এবং আগত লোকেরাও তাঁর নিকট বাইআত করলো” (বেদায়া-নেহায়া ৭ম খ- ২১৫ পৃঃ, দারুল হাদীস-কায়রো)।
বাইআতে ইমাম হাসান (رضي الله عنه)-এঁর স্বরূপঃ
হযরত আলী (رضي الله عنه) ৪০ হিজরীতে খারেজী দুশমন আবদুর রহমান ইবনে মুলজিমের খঞ্জরের আঘাতে শাহাদাত বরণ করার পূর্বে লোকেরা তাঁর পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য আরয করেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন – “না, বরঞ্চ রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের সময় যেভাবে কাউকে খলিফা মনোনীত করে যাননি – আমিও কাউকে মনোনীত করবো না। আল্লাহ যাকে তোমাদের জন্য উত্তম মনে করবেন – তাকেই তিনি খিলাফত দিবেন এবং তোমাদেরকে তাঁর মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ করবেন।” শাহাদাতের পর তাঁর জানাযায় ইমামতি করেছিলেন ইমাম হাসান (رضي الله عنه)।
হযরত আলী (رضي الله عنه) এর দাফনের পর কুফাবাসী কয়েস ইবনে সাআদ ইবনে উবাদা ইমাম হাসান (رضي الله عنه)-এঁর খেদমতে এসে বললঃ
ايسط يدك ابايعك على كتاب الله وسنة نبيه فسكت الحسن فبايعه وابايعه الناس بعده ـ
অর্থ- “হে ইমাম পাক! আপনি অনুগ্রহ করে হাত বাড়িয়ে দিন – আমি আপনার নিকট বাইআত হবো আল্লাহর কিতাব ও নবীজীর সুন্নাতের অনুসরণের শর্তে। ইমাম হাসান (رضي الله عنه) চুপ রইলেন। কয়েস ইবনে সাআদ ইমামে পাকের নিকট বাইআত করলেন। অতৎপর কুফাবাসী জনসাধারণ তাঁর নিকট বাইআত করলো।” (বেদায়া-নেহায়া ৮ম খ- ১৫ পৃষ্ঠা দারুল হাদীস-কায়রো)।
পর্যালোচনাঃ অত্র অধ্যায়ে বাইআতে আবু বকর, বাইআতে উসমান, বাইআতে আলী ও বাইআতে ইমাম হাসান রিদওয়ানুল্লাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাঈনগণের হাতে বাইআতের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো। তাদের নিকট ঐ বাইআত ছিল বাইআতে খিলাফত ও বাইআতে ইরাদাত উভয়টি – অর্থাৎ খিলাফত ও মুরিদ হওয়ার বাইআত। তা সর্বজন স্বীকৃত। তাহলে দেখা যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেছালের পর জনসাধারণ বাইআতে আবু বকর, বাইআতে ওমর, বাইআতে ওসমান, বাইআতে আলী ও বাইআতে ইমাম হাসান অনুসরণ করতেন। ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এঁর নামে কুফাবাসীগণ ইমাম মুসলিমের নিকট বাইআত করেছিল। এর পরবর্তী সময়ে ইমাম জয়নুল আবেদীন, ইমাম বাকের, ইমাম জাফর, সাদেক প্রমুখঃ বংশগণ লোকজনকে বাইআত করাতেন নিজেদের নামে। সাহাবা যুগের প্রথম বাইআত ছিল বাইআতে আবু বকর (رضي الله عنه)। হযরত ওমর তাঁর হাত ধরে বলেছিলেন-
فاخذ عمر بيده وقال بايعتك فبايعه الناس ـ
অর্থ-আমি আপনার নিকট বাইআত হলাম।” পরবর্তী বাইআত সমূহেও তাই প্রমাণিত হচ্ছে। এটাই তো “বাইআতে শেখ।” এটা অস্বীকার করা সত্যকেই অস্বীকার করা হবে। বাইআতে শেখের চাইতে বড় প্রমাণ আর কি আছে? যারা বাইআতে শেখ অস্বীকার করেন – তারা মূলতঃ সুন্নাতকেই অস্বীকার করেন। কেননা, চার খলিফার বাইআতের পদ্ধতিই তো সুন্নতী তরিকা। এর ব্যতিক্রম সুন্নাত হতে পারে না। সুতরাং হাত তুলে বাইআত করানো সুন্নাত নয়। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর কাওলুল জামিলে বর্ণিত বাইআত পদ্ধতি ও শব্দাবলী খোলাফায়ে রাশেদীনের বাইআতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
কোন মোহাদ্দেস বা পীর যদি বলে – “বাইআতে রাসুল” ছাড়া পীরের বাইআত নাজায়েজ বা হারাম, তাহলে নাজায়েয বা হারামের দালিলিক ও বাস্তব প্রমাণ দিতে হবে। বিনা দলীলের দাবী গ্রহণযোগ্য নয়।
বিঃ দ্রঃ বাইআতে রিদওয়ান ও বাইআতে আবু বরক – এই দুটি অধ্যায় (৩৯ ও ৫৭ অধ্যায়) খুব ভাল করে স্মরণে রাখলে বিতর্কের আর কোন অবকাশ থাকবে না। বাইআতে শেখ-ই বর্তমানে অনুসরণ করতে হবে। বাইআতে শেখ-ই মূলতঃ বাইআতে রাসুল ও বাইআতুল্লাহ (তাফসীরে রুহুল বয়ান সূরা আল-ফাতাহ্ ১০ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন।)