১.নবীজি সাল্লাল্লাহু কী প্রত্যেক ফরয নামাযের পর মুসল্লিদের দিকে ঘুরে বসতেন?
২. ঘুরার কী কোনো নির্দিষ্ট দিক ছিলো, বাঁম দিক থেকে ঘুরতেন বা ডান দিক থেকে ঘুরতেন?
উত্তর: ফজর ও আসরের নামাজের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা ইমাম সাহেবের জন্য সুন্নত। এটি সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিতো।
সাহাবি জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি (রাঃ) বলেন, হুদাইবিয়ায় আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পেছনে ফজরের নামাজ আদায় করি। সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো। নামাজ শেষ হওয়ার পর তিনি সমাবেতো সবার দিকে ফিরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?…’(বুখারি, হাদিস: ৮৪৬)
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী (সাঃ) যখন ফজরের নামাজ শেষ করতেন, তখন সবার দিকে মুখ করে বসতেন। এরপর বলতেন, ‘তোমাদের কেউ কি গতো রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছো?’ (মুসলিম, হাদিস: ২২৭৫)
সুতরাং মসজিদগুলোতে ইমামগণ সাধারণতো যেভাবে মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসেন, সেটা হাদিস ও সুন্নাতসম্মতো। আর ডানে বা বামে সামান্য বাঁকা হয়ে বসার প্রসঙ্গ তখন, যখন ইমামের সোজাসুজি কোনো মাসবুক ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে থাকে এবং ইমাম ও ওই নামাজরতো ব্যক্তির মাঝে কোনো আড়াল না থাকে। কেনোনা নামাজির চেহারা তখন ইমামের চেহারার বরাবর হয়ে যায়। আর এভাবে নামাজির মুখোমুখি হয়ে বসা অনুচিত।
আর যদি এমন হয় যে, ইমামের সোজাসুজি কোনো কাতারে কোনো মাসবুক নামাজ আদায় করছে ঠিক, কিন্তু তার ও ইমামের মাঝখানে অন্য মুসল্লীদের আড়াল রয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে মুসল্লীর দিকে ইমামের ফিরে বসা দূষণীয় নয়। অতএব, এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবেরও মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসতে অসুবিধা নেই।
প্রসঙ্গতো, কিছু হাদিসে রাসুল (সাঃ) নামাজের সালাম ফেরানোর পর বামে বা ডানে ফেরার কথা রয়েছে। তবে এর উদ্দেশ্য হলো, জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়া। মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসা নয়। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরি (রহঃ) ফয়জুল বারিতে বিষয়টি এভাবেই উল্লেখ করেছেন। (তথ্যসূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫৩; শরহু মুসলিম, ইমাম নববি ৫/২২০; উমদাতুল কারি: ৬/১৪৩; ফয়জুল বারি: ২/৩১৬; মুআত্তা মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা: ১৫৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৩১২৮; কিতাবুল-উম: ১/১৫১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৬; বাদায়িউস সানায়ি: ১/৩৯৪; ফাতহুল কাদির: ১/৪২৬; হালবাতুল মুজাল্লি: ২/২২২; আদদুররুল মুখতার: ১/৫৩১-৫৩২)