প্রথম হাদিসঃ প্রতিটি কাজ তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল
١- عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: “إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إلَى مَا هَاجَرَ إلَيْهِ” . (متفق عليه)
অনুবাদ: উমার বিন খাত্তাব رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে বলতে শুনেছি – প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল, আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে হিযরত করবে তার হিযরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে হিযরত হিসেবেই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি হিযরত করবে দুনিয়া অর্জন করা অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্যেশ্যে, তার হিযরত সে হিসেবেই গণ্য হবে, যার উদ্যশ্যে সে হিযরত করেছে।
[সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: কিতাব, ১/৩০ হা: ৫৪; সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: ইমারাহ ৩/১৫১৫ হা: ১৯০৭ সুনানে তিরমিজি, অনুচ্ছেদ: ফাযায়েল ও জিহাদ ৪/১৭৯ হা: ১৬৪৭]
——————————
———————————-
দ্বিতীয় হাদিসঃ ইসলামের ভিত্তী পাচঁটি
٢- عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ . (متفق عليه)
অনুবাদ: ইবনে ওমার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন- ইসলামের ভিত্তী পাচটি, ১: সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসুল, ২: নামাজ কায়েম করা, ৩: যাকাত প্রদান করা, ৪: হজ্ব আদায় করা, ৫: রমাজানে রোযা পালন করা।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: অজু, ৪/১৬৪১ হা: ৪২৪৩; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ১/৪৫ হা: ১৬]
তৃতীয় হাদিসঃ ঈমানদারের তিনটি বৈশিষ্ট
٣- عن أَنسٍ رضي اللَّه عنه عن النبي ﷺ قال : ” ثَلاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيَمَانِ : أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِواهُما ، وأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لا يُحِبُّهُ إِلاَّ للَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَه أَنْ يَعُودَ في الكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ في النَّارِ” . (متفق عليه)
অনুবাদ: হযরত আনাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট থাকবে সে ঐ বৈশিষ্টের কারণে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। সেগুলো হলোঃ ১- যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অন্য কিছুর চাইতে সবচেয়ে প্রিয় হবে, ২- যে ব্যক্তি কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই ভালোবাসবে, ৩- যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহে কুফর থেকে মুক্তি লাভের পর পুরনায় কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করবে, যেভাবে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ঈমান ১/১৪ হা: ১৬, ১/১৬ হা: ২১; সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ঈমান ১/৬৬ হা: ৪৩; সুনানে তিরমিজি, অধ্যায় ঈমান হা: নং ১০; সুনানে নাসাঈ ৮/৯৪ হা: ৪৯৮৭]
চতুর্থ হাদিসঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসার প্রতিদান
٤- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : جَاءَ أَعْرَابِيا قَالَ لرَسُولُ اللَّهِ ﷺ ، مَتَى السَّاعَةُ ؟ قَالَ : وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا ؟ قَالَ حِبُّ اللَّهَ وَرَسُو له ، قَالَ : فَأَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ
অনুবাদ: হযরত আনাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট একজন আরব আসল এবং জিজ্ঞাস করল কিয়ামত কখন হবে? নবীজী ﷺ বললেন, তুমি কি অর্জন করেছ? সে বলল আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করলেন, তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই তোমার হাশর হবে।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: সাহাবীদের ফাযায়েল ৩/১৩৪৯ হা: ৩৪৮৫; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: আদব ৪/২০৩২ হা: ২৬৩৯; সুনানে তিরমিজি, অধ্যায়: যুহুদ ৪/৫৯৫ হা: ২৩৮৫]
পঞ্চম হাদিসঃ নবী ﷺ এর ভালোবাসাই ঈমানের মূল
٥- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللّه عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قال: ” لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكونَ أحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِه وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ “. (متفق عليه)
অনুবাদ: হযরত আনাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন, তোমরা কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ হতে সর্বাধিক প্রিয় না হব।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ঈমান ১/১৪ হা: ১৫; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ১/৬৭ হা: ৪৪]
ষষ্ঠ হাদিসঃ সর্বোত্তম আমল
٦- عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “أَفْضَلُ الأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ“
অনুবাদ: হযরত আবু যর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন, সর্বোত্তম আমল হচ্ছে, আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে অপছন্দ করা।
[সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায় সুন্নাহ ৪/১৯৮ হা: ৪৫৯৯; মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৫/১৪৬ হা: ২১৩৪১; মুসতাদে বাযযার ৯/৪৬১ হা: ৪০৭৬]
সপ্তম হাদিসঃ দুনিয়াটা মুমিন ও কাফেরের জন্য কেমন?
٧- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ :قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন, দুনিয়াটা ঈমানদারের জন্য কারাগার আর কাফেরের জন্য জান্নাত।
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায় যুহুদ ৪/২২৭২ হা: ২৯৫৬; সুনানে তিরমিজি, অধ্যায় যুহুদ ৪/৫৬২ হা: ২৩২৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: যুহুদ ২/১৩৭৮ হা: ৪১১৩]
অষ্টম হাদিসঃ সর্বোত্তম ব্যক্তি
٨- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ ؟ قَالَ : أَتْقَاهُم
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন, যে (আল্লাহ ভীরু) মুত্তাকি।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: আম্বিয়া, ৩/১২২৪ হা: ৩১৭৫; অধ্যায় মানাকিব ৩/১২৮৭ হা: ৩৩০১; সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: ফাযায়েল, ৪/১৮৪৬ হা: ২৩৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৬/৩৪৭ হা: ৩১৯১৯; মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/৪৩১ হা: ৯৫৬৪]
নবম হাদিসঃ ইহসানের পরিচয়
٩- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “الْإِحْسَانُ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ “
অনুবাদ: হযরত আনাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেন, ইহসান হচ্ছে তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর যদিও তুমি তাঁকে দেখতে নাও পাও, তাহলে মনে করবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।
[মুসনাদে ইবনে রাবিহ, ১/৪২ হা: ৫৬ ইবনে রজব হাম্বলি কৃত জা’মিউল উলুম ওয়াল হিকাম ১/৩৬]
দশম হাদিসঃ নবী ﷺ এর রাত্রীকালিন কঠোর ইবাদত
١٠- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ كَانَ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ: «أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا
অনুবাদ: হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ عَنْهَا থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم রাতে ইবাদতের জন্য এমনভাবে দন্ডায়মান থাকতেন যে, নবীজীর পা মোবারক ফুলে যেত। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ عَنْهَا আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেন আপনি এমনটা করছেন, যেখানে আল্লাহ পাক আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করলেন আমিকি এটা পছন্দ করবনা যে, আমি শুকরগুজার বান্দাহ হই?
[সহীহ বুখারী, অধ্যায় তাফসির ৪/১৮৩০ হা: ১৮৩০ হা: ৪৫৫৭; সহীহ মুসলিম, অধ্যায় কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বৈশিষ্ট 4/২১৭২; সুনানে তিরমিজি, অধ্যায়: সালাত ২/২৬৮ হা: ৪১২]
১১তম হাদিসঃ হাদিস প্রচারের হুকুম ও মিথ্যা হাদিস প্রচারের ভয়াবহতা
١١- عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما : أنَّ النبيَّ – صلى الله عليه وسلم قَالَ : “بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً ، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ” رواه البخاري.
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عنهما থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেন যে, তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত (বাক্য) হলেও মানুষের নিকট পৌছে দাও। আর তোমরা বনি ঈসরাঈল থেকে হাদিস বর্ননা কর, এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল (মিথ্যা হাদিস বর্ননা করল), সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নিল। [সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদঃ আম্বিয়াদের হাদিস হাঃ ৩২৭৪; সুনানে তিরমিজি, অনচ্ছেদঃ ইলম হাঃ ২৬৬৯; মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/১৫৮; সুনানে দারেমী হাঃ ৫৪২]
১২তম হাদিসঃ নবীজী হচ্ছেন বন্টনকারী
١٢-عَنْ مُعَاوِيَةَ، خَطِيبًا يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ: «مَنْيُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ، وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللَّهُ يُعْطِي (متفق عليه)
অনুবাদ: হযরত মুয়াবিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে বলতে শুনেছি রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে, আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞ্যান দান করেন। আর নিশ্চয় আমিই হচ্ছি বন্টনকারী আর আল্লাহ হচ্ছেন দাতা।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ইলম, ১/৩৯ হাঃ ৭১, ৩/১১৩৪ হাঃ ২৯৪৮ অধ্যায়ঃ কিতাব ও সুন্নাহকে শক্তভআবে আকড়ে ধরা, ৬/২৬৬৭ হাঃ ২৮৮২; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, ২/৭১৮ হাঃ ১০৩৭; সুনানে তিরমিজি, অধ্যায়ঃ ইলম ৫/২৭ হাঃ ২৬৪৫; ইবনে মাজাহ ১/৮০ হাঃ ২২০-২২১; নাসাঈ কৃত সুনানে কুবরা ৩/৪২৫ হাঃ ৫৮২৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২/৯০০ হাঃ ১৫৯৯; মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/২৩৪ হাঃ ৭৯৩]
১৩তম হাদিসঃ পবিত্রতা,তাসবিহ, সালাত, ধৈর্য এবং কোরআনের ফযিলত
١٣ –عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ،وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآنِ -أَوْ: تَمْلَأُ- مَا بَيْنَالسَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ،وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَك أَوْ عَلَيْك، كُلُّ النَّاسِيَغْدُو، فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا”. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
অনুবাদ: আবূ মালিক আল আশ’আরী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেনঃ পবিত্রতা হল ঈমানের অংশ। “আলহামদু লিল্লা-হ” মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হামদুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। “সালাত”হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। “সদাকাহ” হচ্ছে দলীল। “ধৈর্য” হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর “আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমাল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।
[সহীহ মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ অজুর ফযিলত হাঃ ২২৩; সুনানে নাসাঈ হাঃ ৩৯৪০; বায়হাকী সুনানে কুবরা ৭/৭৮; মুস্তাগরেক হাকেমঃ ২/১৬০; মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৩/১৯৯ হাঃ ১৩০৮৮]
১৪তম হাদিসঃ মৃত্যুর পরেও সে সকল আমলের সওয়াবের ধারা বন্ধ হয় না
١٤- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ, رَسُولَ اللَّهِﷺ ، قَالَ : ” إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلا مِنْثَلاثٍ : صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ” رَوَاهُ مُسْلِمٌ
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেন যে, যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলের (সওয়াবের) ধারা বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতিত (এ তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয় না)। ১/ সদকায়ে জারিয়াহ, ২/ এমন ইলম যা দ্বারা উপকার লাভ করা যায়, ৩/ এমন সু-সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে।
[সহীহ মুসলিম, অছিয়ত অধ্যায়, হাঃ ১৬৩১; সুনানে তিরমিজি, আহকাম অধ্যায় ১৩৭৬; সুনানে নাসাঈ, অছিয়ত অধ্যায় হাঃ ৩৬৫১; সুনানে আবু দাউদ ২৮৮০; মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/৩৭২]
১৫তম হাদিসঃ দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মূল
١٥–عن أَنسٍ رضي اللَّه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: “الدُّعَاءُ مُخُ الْعِبَادَةِ
অনুবাদ: হযরত আনাস বিন মালেক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেন যে, দোয়া হচ্ছে ইবাদাতের মগজ (মূল) ।
[তিরমিযী ৫/৪৫৬, হাদিস ৩৩৭১; দায়লামী ২/২২৪, হাদিসঃ ৩০৮৭; হাকেম তিরমিযী, নও্যাদিরুল উসূল, ২/১১৩;
ইবনে রজব, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম ১/১৯১; মুনযরী, আস-সুনান, কিতাবুদ দাওয়াত, ৪/৪৪৮, হাদিসঃ ২১৩৯]
১৬তম হাদিসঃ দোয়া কবুলের সময়
١٦ –عن أبي أمامة رضي الله عنه قال: قيل «يَا رَسُولَاللهِ ﷺ أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟» قَالَ: “جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ،وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ” رواه الترمذي و النسائي
অনুবাদ: হযরত আবু উমামা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে আরজ করা হল, হে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা, কোন সময়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়ে থাকে। তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করলেন, রাতের শেষাংশে এবং ফরজ নামাজের পরে। (সুনানে তিরমিজিঃ ৩৪৯৯ ও নাসাঈ)
১৭তম হাদিসঃ জানাজার নামাজের পর দোয়া
١٧ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ : ” إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ ” رواه أبو داود
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়ে নিবে, (সাথে সাথে) তার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করবে। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৪৯৭, আবু দাঊদঃ ৩১৯৯)
১৮ তম হাদিসঃ কবর যিয়ারতের ফযিলত
١٨ – عَنْ بريرة رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُاللَّهِ ﷺ: “كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَزُورُوهَا،،رواه مسلم والترميذي و زاد فَإِنَّها وَتُذَكِّرُكم الآخِرَةَ،
অনুবাদ: হযরত বুরায়রাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেন যে, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। (সহিহ মুসলিম) সুনানে তিরমিজিতে এ বাক্যটা যুক্ত হয়েছেঃ “কেননা এটি তোমাদের পরকালকে স্মরন করিয়ে দিবে।” (সহিহ মুসলিমঃ ১৭৮, ১৮৮ ও সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৫৭১)
১৯তম হাদিসঃ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর রওজ্বা যিয়ারতের ফযিলত
١٩ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : مَنْ زَارَقَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي
( رواه الدار قطني و البيهقي)
অনুবাদ: হযরত ইবনে ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেন যে ব্যক্তি আমার রওজ্বা যিয়ারত করল, তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে গেল। (দ্বারে-কুতনী ও বায়হাকী)
২০তম হাদিসঃ মক্কা অথবা মদিনায় ইন্তেকালের ফযিলত
٢٠ – عَنْ حَاطِبٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِوَسَلَّمَ : ” مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي ، فَكَأَنَّمَا زَارَنِي فِيحَيَاتِي ، وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بُعِثَ يَوْمَ الْقِيَامَةِمِنَ الْآمِنِينَ ” ( رواه الدار قطني و البيهقي)
অনুবাদ: হযরত হাতেব رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আমি দুনিয়া পর্দা করার পরে আমার রওজ্বা যিয়ারত করে সে যেন আমার হায়াত অবস্থায়ই আমার যিয়ারত (সাক্ষাত) করল। যে ব্যক্তি হারামাঈন শারিফাঈন (মক্কা ও মদিনা) এর যে কোন একটিতে ইন্তেকাল করল, কিয়ামত দিবসে নিরাপত্তা প্রাপ্ত বান্দাদের সাথে সে উত্থিত হবে। (দ্বারে-কুতনী ও বায়হাকী)
২১ তম হাদিসঃ নামাজে আস্তে আমিন বলা
٢١- عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ َقرَأَ : ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ) فَقَالَ ” آمِينَ ” . وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَه. رواه الترمذي و أحمد و الحاكم
অনুবাদ: হযরত ওয়ায়িল বিন হুযর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নামাজে (গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম, ওলাদ্দ-ল্লিন) পড়লেন- অতঃপর বললেন, “আমিন”। নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমিন বলার সময় স্বরকে নিচু করলেন (আস্তে পড়লেন)। [সুনানে তিরমিজি- ২৪৭, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল- ৪/৩১৬, মুস্তাদরাক হাকেম- ২৯১২]
২২ তম হাদিসঃ ইমামের পিছনে কেরাত না পড়া
٢٢- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا. رواه أَبُو دَاوُد و ابن ماجه و أحمد
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেছেন, যাকেই ইমাম বানানো হয়, তাকেই (নামাজে) পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হয়। যখন সে তাকবির বলে তখন তোমরাও তাকবির বল। যখন সে কেরাত পড়বে, তখন তোমরা চুপ থাক। [ইবনে মাজাহ- ৮৪৬, আবু দাউদ- ৬০৪, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/৩৭৬]
২৩ তম হাদিসঃ নামাজে শুধুমাত্র একবার হাত উত্তোলন করা
٢٣- عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: «أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ؟ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ . رواه الترمذي و أَبُو دَاوُد و النسائي
অনুবাদ: হযরত আলকামা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নামাজ আদায়ের পদ্ধতি শিক্ষা দিব না? বর্ণনাকারী বলেন, অত:পর তিনি নামাজ পড়লেন এবং একবার ব্যতিত তিনি তার হাত উত্তোলন করলেন না। (শুধু একবার হাত উত্তোলন করেন)। [আবু দাউদ- ৭৪৮ তিরমিজি- ২৫৭ নাসাঈ- ১০২৬]
২৪ তম হাদিসঃ নামাজে নাভির নিচে হাত বাধা
٢٤- عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ َضَعَ يَمِينَهُ عَلَى شِمَالِهِ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ -مصنف ابن ابی شیبه. آثار السنن للنیموی، (حاشيه) فیض الباری علی صحیح البخاری للکشمیری
অনুবাদ: হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুযর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তাঁর পিতা বলেন, আমি নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে নামাজে ডানহাত বামহাতের উপর নাভির নিচে রাখতে দেখেছি। [মুসান্নেফে আবি শাইবা ৩/৩২০ হা: ৩৯৫৯]
২৫ তম হাদিসঃ তাবারির নামাজ বিশ রাকাত
٢٥ – عن ابن عباس رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ . رواه ابن أبي شيبة و عبد بن حميد و الطبراني والبيهقي
অনুবাদ: হযরত ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত। নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পবিত্র রমজান মাসে বিশ রাকাত নামাজ (তারাবিহ) আদায় করতেন। অতঃপর বিতির পড়তেন। [মাসান্নেফে আবি শাইবা- ৭৬৯২, মাসনাদে ইবনে হুমায়েদ- ৬৫৩, তারবানীর মু’জামুল কাবির- ১২১০ ও মু’জামে আউসাত ৭৯৮, বায়হাকীর সুনানে কুবরাহ ২/৪৯৬ হা: ৪৩৯১]
২৬ তম হাদিসঃ শবে বরাতের ফযিলত
٢٦- عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: يَطْلُعُ اللَّهُ تَعَالَى إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ . رواه ابن حبان
অনুবাদ: হযরত মুয়াজ বিন জাবাল رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেছেন, শাবানের মধ্যতম রজনীতে (১৫ই শাবান) আল্লাহ পাক বান্দাহদের উপর রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং মুশরিক ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। [সহিহ ইবনে হিব্বান, ১২/৪৮১ হা:৫৬৬৫]
২৭ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ এর পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন
٢٧- عن ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ” مَا وَلَدَنِي مِنْ سِفَاحٍ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ شَيْءٌ ، مَا وَلَدَنِي إِلا نِكَاحٌ كَنِكَاحِ الإِسْلامِ . رواه الطبرني و البيهقي و ابن عساكر
অনুবাদ: হযরত ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেছেন, আমার সম্মানিত পিতা-মাতার মধ্যে জাহেলী যুগের বিন্দু পরিমান খারাপ কিছু ছিলনা। এবং আমার জন্ম ইসলাম সম্মত বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে হয়েছে। [তাবরানী মুজামুল কাবির ১০/৩২৯, হা:১০৮১২, বাযহাকী সুনানে কুবরা- ৭/১৯০ হা: ১৩৮৫৪, ইবনে আসবাকির তাবিখে দামেস্ক- ৩/৪০০]
২৮ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ নিজের আগমনের দিনে রোযা রাখতেন
٢٨- عن أبى قتادة حينما سُئِلَ النبي ﷺ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ. رواه مسلم
অনুবাদ: হযরত কাতাদাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত। একদা নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে প্রতি সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমাকে নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে অথবা আমার উপর কোরআন অবতীর্ন করা হয়েছে। [সহিহ মুসলিম, কিতাবঃসিয়াম, ২/৮১৯ হাঃ ১১৬২, নাসাঈ কৃত সুনানে কুবরা ২/১৪৬ হাঃ ২৭৭৭, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৫/২৯৭ হাঃ ২২৫৯৪]
২৯ তম হাদিসঃ সাহাবায়ে কেরাম নবীজি ﷺ এর সম্মানে ক্বিয়াম করতেন
٢٩- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَجْلِسُ مَعَنَا فِي الْمَجْلِسِ يُحَدِّثُنَا فَإِذَا قَامَ قُمْنَا قِيَامًا حَتَّى نَرَاهُ قَدْ دَخَلَ بُيُوتَ أَزْوَاجِهِ رواه أَبُو دَاوُد
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাদের সাথে মসজিদে নববীতে বসে দ্বীনি বিষয়ে আলোচনা করতেন। যখন তিনি দাঁড়াতেন, আমরাও দাঁড়িয়ে যেতাম। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দাড়িয়ে থাকতাম যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা দেখতাম তিনি তাঁর কোন এক বিবির ঘরে প্রবেশ করছেন। [আবু দাউদ ও বায়হাকী]
৩০ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠের ফযিলত
٣٠- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اَللَّهِ ﷺ “إِنَّ أَوْلَى اَلنَّاسِ بِي يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ, أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً”. رواه الترمذي و ابن حبان
অনুবাদ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّمএরশাদ করেছেন, কিয়ামতের ময়দানে সে ব্যক্তি আমার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী থাকবে যে ব্যাক্তি (দুনিয়াতে) আমার উপর সবচেয়ে বেশি দুরূদ ও সালাম পেশ করেছে। [তিরমিজি- ২/৩৫৪ হাঃ ৪৮৪, সহিহ ইবনে হিব্বান- ৩/১৯২ হাঃ ৯১১, বায়হাকীর সুনানে কুবরা- ৩/২৪৯ হাঃ ৫৭৯১]
৩১ তম হাদিসঃ সৃষ্টকুলে নবীজি ﷺ এর মত কেউ নেই
٣١–عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : ” نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ ، قَالُوا : فِإِنَّكَ تُوَاصِلُ ، قَالَ : أيُّكُمْ مِثْلِي ؟ ، إِنِّي أَبِيتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ . (متفق عليه)
অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ সওমে ওয়েসাল (এমন রোজা যার কোন সেহরিও নেই ইফতারও নেই) রাখতে নিষেধ করেছেন।তখন কিছু সাহাবী নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! আপনি নিজেওতো সওমে ওয়েসাল পালন করেন। নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ আমার মত? আমিতো এমন ভাবে রাত্রিযাপন করি যেন আমার রব আমাকে খাওয়ান এবং পান করান। [সহিহ বোখারী, রোজা অধ্যায় ২/৬৯৩ হাঃ ১৮৬১ সহিহ মুসলিম ২/৭৭৪ হাঃ ১১০২ সুনানে আবু দাউদ ২/৩০২ হাঃ ২৩৬০ সুনানে কুবরা নাসাঈ ২/২৪১ হাঃ ২৩৬৩ মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১/৩০০ হাঃ ৬৬৭ মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/১০২ হাঃ ৫৭৯৫ সহিহ ইবনে হিব্বান, ৮/৩৪১ হাঃ ৩৫৭৫]
৩২ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ কখন নবুয়্যত লাভ করেছেন?
٣٢-عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ
অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামগন আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ! আপনার উপর কখন নবুয়্যতের দায়িত্বারোপ করা হয়েছে? নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করলেন, যখন আদম عَلَيْهِ السَّلَام শরীর ও রুহের মধ্যবর্তী স্তরে ছিলেন। (অর্থাৎ যখন আদম عَلَيْهِ السَّلَام এর রুহ ও শরীরের মধ্যে কোন সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি, আমি তখনও নবী ছিলাম)। [সুনানে তিরমিজি, ৫/৫৮৫ হাঃ ৩২০৯ মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল হাঃ ২৩৬২০ মুস্তাদরাকে হাকেম হাঃ ৪২০৯-৪২১০ মুসান্নেফে ইবনে শাইবা ৩৬৯/৭ হাঃ ৩৬৫৫৩]
৩৩ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ এর পাঁচটি নাম
٣٣- مُحمّدِ بنِ جُبَيْرِ بنِ مُطْعِمٍ عن أَبِيهِ قال, قال رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم:” إِنّ لِي خمسة أَسْمَاءَ: أَنَا مُحمّدُ، وَأَنا أَحْمَدُ، وَأَنَا الْمَاحِي الّذِي يَمْحُو الله بِي الْكُفْرَ، وَأَنَا الْحَاشِرُ الّذِي يُحْشَرُالنّاسُ عَلَى قَدَمَيّ، وَأَنَا الْعَاقِبُ
অনুবাদঃ হযরত মুহাম্মাদ বিন যুবাইর বিন মুতঈম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি তাঁর বাবা থেকে বর্ননা করেন, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করেন, আমার পাঁচটি নাম আছে। আমি ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত) ও ‘আহমদ’ (অধিক প্রশংসিত)। আর আমি ‘মুহঈ’ (মোচনকারী) কেননা আল্লাহ তায়ালা আমার দ্বারা কুফরকে মিটিয়ে দিবেন। আমি ‘হাশের’ (সমবেতকারী)। সকল লোককে আমার কদমে সমবেত করা হবে (কিয়ামতের ময়দানে)। এবং আমি ‘আক্বিব’ সর্বশেষ আগমন কারী (শেষ নবী)। [সহিহ বোখারী ৩/১২৯৯ হাঃ ৩৩৩৯, ৪/১৮৫৮ হাঃ ৪৬১৪, সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: ফাযায়েল ৪/৮২৭ হাঃ২৩৫৪ সুনানে তিরমিজি ৫/১৩৫ হাঃ ২৮৪ সুনানে নাসাঈ ৬/৪৮৯ হাঃ ১১৫৯০ মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২/১০০৪ মসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৪/৮০, ৮৪ সহিহ ইবনে হিব্বান ১৪/২১৯ হাঃ ৬৩১৩]
৩৪ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ এর উছিলায় দোয়া
٣٤- عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ أَنَّ رَجُلًا ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي قَالَإِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قَالَ فَادْعُهْ قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ {اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ يَا مُحّمَّدَ ! إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِيَاللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ
অনুবাদঃ হযরত ওসমান বিন হুনাইফ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করল, আমার চোখে জ্যাতি ফিরে পাবার জন্য দোয়া করুন। নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বললেন, তুমি যদি চাও আমি তোমার জন্য পরে দোয়া করি তাহলে সেটা তোমার জন্য মংগল জনক হবে। আর যদি চাও এখনি দোয়া করি তাহলে সেটাই করা হবে। সে আরজ করল আক্বা صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এখনই দোয়া করুন। নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ তাকে ভালোভাবে অজু করার এবং দু’রাকাত নামাজ পড়ার হুকুম করলেন। এবং বললেন- এই ভাবে দোয়া কর ” হে আল্লাহ ! আমি আপনার দিকে মনোনিবেশ করছি, এবং আপনার নিকট প্রার্থনা করছি নবী-(صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) এর উছিলায়। হে মুহাম্মাদ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)! আপনার উছিলায় আমি আমার প্রভুর কাছে হাজ্বত পেশ করছি, আমার আবেদন যেন মঞ্জুর করা হয়। হে আল্লাহ আমার হক্বের উপর আমার আক্বা ও মাওলা صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর সুপারিশ কবুল করুন। [সুনানে তিরমিজি ৫/৫৬৯ হাঃ ৩৫৭৮, সুনানে নাসাঈ ৬/১৬৮ হাঃ ১০৪৯৪-১০৪৯৫, সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৪৪১ হাঃ১৩৮৫, সহিহ ইবনে খুযাইমা ২/২২৫ হাঃ ১২১৯, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৪/১৩৮ হাঃ ১৭২৪০-১৭২৪২, মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪৫৮/৭০০/৭০৭ হাঃ ১১৮০, ১৯০৯, ১৯২৯]
৩৫ তম হাদিসঃ নবীজি ﷺ মাক্বামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত হবেন
٣٥- عَنْ آدَمَ بْنِ عَلِيٍّ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: ” إِنَّ النَّاسَ يَصِيرُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ جُثًا، كُلُّأُمَّةٍ تَتْبَعُ نَبِيَّهَا يَقُولُونَ: يَا فُلاَنُ اشْفَعْ، يَا فُلاَنُ اشْفَعْ، حَتَّى تَنْتَهِيَ الشَّفَاعَةُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَلِكَيَوْمَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ المَقَامَ المَحْمُودَ
অনুবাদঃ হযরত আদম বিন আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْا থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْا কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মানুষেরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক উম্মত তাদের নিজ নিজ নবীর পিছনে থাকবে এবং আরজ করবে, হে অমুক! আমাকে শাফায়াত করুন। এমনিভাবে শাফায়াতের কথা নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর কাছে এসে সমাপ্ত হবে। তাই ঐদিনে আল্লাহ পাক নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ কে মাক্বামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। [সহিহ বোখারীঃ কোরআনের তাফসির অধ্যায়, ৪/১৭৪৭ হাঃ ৪৪৪১, সুনানে কুবরা নাসাঈ ৬/৩৮১ হাঃ ২৯৫]
৩৬ তম হাদিসঃ নবীজী ﷺ এর ইলমে গায়েবের অধিকারী
٣٦- عَنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ قَامَ فِينَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِحَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
অনুবাদঃ হযরত ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ আমাদের সামনে দন্ডায়মান ছিলেন। নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতিদের জান্নাতে প্রবেশ করা এবং দোযখীদের দোযখে পর্যন্ত সব কিছু বলে দিলেন। যে সেটা মুখস্ত করতে পেরেছে সে করেছে, যে ভুলে যাওয়ার সে ভুলে গেছে। [সহিহ বোখারীঃ সৃষ্টির শুরু অধ্যায়, ৩/১১৬৬ হাঃ ৩০২০]
৩৭ তম হাদিসঃ সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা কুফরী
٣٧- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَبَّ اَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُاللهِ و المَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ
অনুবাদঃ হযরত ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদের নিয়ে সমালোচনা করে তার উপর আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং সকল মানব জাতির অভিসম্পাদ। [তাবরানী কৃত মুজামুল কাবির, ১২/১৪২, হাঃ ১২৭০৯ মুজামুল আউছাতে আবু সাঈদ খুদরী (رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ) সুত্রে, ৫/৯৪ হাঃ ৪৭৭১ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/৪০৫, হাঃ ৩২৪১৯]
৩৮ তম হাদিসঃ আহলে বায়েত উম্মতের নাজাতের উছিলা
٣٨- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّمَا مَثَلُ أَهْلِ بَيْتِي فِيكُمْكَمَثَلِ سَفِينَةِ نُوحٍ ، مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا غَرِقَ
অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বায়াতের দৃষ্টান্ত হযরত নুহ عَلَيْهِ السَّلَام এর কিস্তির মত। এতে যে আরোহণ করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। [তাবরানী কৃত মুজামুল কাবির, ১২/৩৪, হাঃ ২৩৭৭, ২৬৩৭, ২৬৩৮, ২৬৩২ মুজামুল আউছাত ৪/১০ হাঃ ৩৪৭৮ মুজামুল ছাগির ১/২৪০ হাঃ ৩৯১ মুসতাগরেকে হাকেম ৩/১৬৩ হাঃ ৪৭২০]
৩৯ তম হাদিসঃ উম্মতে মুহাম্মদি কখনও শিরক করবে না
٣٩- عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ : قَالَ قَال رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنِّي فَرَطُ لَكُمْ ، وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ ، وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الْآنَ ، وَإِنِّي أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ أَوْ مَفَاتِيحَ الْأَرْضِ ، وَإِنِّي وَاللَّهِ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بَعْدِي ، وَلَكِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تَنَافَسُوا فِيهَا “
হযরত উক্ববা বিন আমের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত।তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ করেন আমি তোমাদের অগ্রবর্তী ও তোমাদের উপর সাক্ষদাতা।খোদার কসম! অবশ্যই এই মূহুর্তে আমি আমার হাউজ (কাউছার) দেখতে পাচ্ছি এবং অবশ্যই আমাকে জমিনের খাজানার সমূহের চাবি অথবা জমিনের চাবি দেওয়া হয়েছে। খোদার কসম! আমি এ নিয়ে ভীত নই যে তোমরা আমার পরে শিরিকে লিপ্ত হবে। বরং আমি এ নিয়ে ভীত যে, তোমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। [সহিহ বুখারী, অনুচ্ছেদঃ মানাকিব, অধ্যায়:ইসলামে নবুয়্যতের আলামত, ৩/১৩১ হাঃ ৩৪০১ সহিহ মুসলিম, অনুচ্ছেদঃফাযায়েল অধ্যায়ঃ নবী এর হাউজের প্রমান ও বৈশিষ্ট, ৪/১৭৯৫ হাঃ ২২৯৬]
৪০ তম হাদিসঃ শেষ জামানায় দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদীদের আবির্ভাব হবে
٤٠- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنْالْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ
অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্নিত তিনি বলেন নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করেন, শেষ যামানায় এমন কিছু দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদী আত্মপ্রকাশ করবে যারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা) হাদিস বলবে যা না তোমরা কোনদিন শুনেছ, না তোমাদের বাপ দাদারা শুনেছে। সুতরাং তোমরা তাদের নিকট থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকেও তোমাদের কাছ থেকে দূরে রাখ। এতে করে তারা তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না এবং তোমাদেরকে ফেতনায় পতিত করতে পারবে না। [সহীহ মুসলিমঃ ১/২৪, হাদীস নং-৮; আল্লামা তাহাবী, মুশকিলুল আসার, ৬/৪৪৮, হাঃ ২৮৮৪; শাইখ ওলীউদ্দীন, মেশকাতুল মসাবীহ, ১/৩৩ হাঃ ১৫৪; আল মানাবী, ফয়জুল ক্বাদীর ফি শরহে জামে ‘উস্সাগীর, ৬/২৫৮, হাঃ ৮৯৩০]