আমাদের প্রিয় নবী ﷺ নাকি গুনতে (গণনা করতে) জানতেন না..(নাউজুবিল্লাহ)। আরিফ আজাদ সাহেব আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীকে নিরক্ষর প্রমাণ করতে গিয়ে “তাফসীরে বাগাউয়ী” এর রেফারেন্স দিয়ে ভুল অনুবাদ করে লিখেছে “তিনি পড়তে, লিখতে আর গুনতে জানতেন না।” (নাউজুবিল্লাহ)
আরেক আবে হালাও ইতিপূর্বে বলেছে “আলিফ বা তা ছা, কোনটারে জিম বলে, কোনটারে হা বলে তিনি ﷺ বুঝতেননা। এক দুই তিন কিভাবে লেখে, লেখা থাকলেও ওটা পড়তে পারতেন না। লিখিত কোন জিনিস রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর কাছে রহস্যের মত ছিল, পড়তেই জানতেন না, কেন জানতেন না!! আল্লাহ ওনাকে শিখাননি” (নাউজুবিল্লাহ)।
এই পোস্টে আমরা দেখব আমাদের নবী ﷺ কত সুন্দর করেই গণনা করতে পারতেন এবং লিখিত কোন জিনিস রহস্যের মত ছিল কিনা তাও জানতে পারব,
ইন শা আল্লাহ।
আরিফ আজাদ সাহেব আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীকে নিরক্ষর প্রমাণ করতে গিয়ে “তাফসীরে বাগাউয়ী” এর যে ভুল অনুবাদ দিয়েছে তার প্রকৃতরূপ এই যে, সেখানে উল্লেখ রয়েছে,
قال ابن عباس رضي الله عنهما هو نبيكم كان أمياً لا يكتب ولا يقرأ ولا يحسب.
যার প্রকৃত অর্থ হবেঃ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, তিনি (ﷺ) হলেন উম্মী নবী। যিনি
{(لا)/না, (يكتب)লিখেন}= লিখেন না
{(ولا)/না, (يقرأ)পড়েন}= পড়েন না
{(ولا)/না, (يحسب) গণনা করেন}= হিসাব/গণনা করেন না।
শুধু আরিফ আজাদ নয়, এমনকি ভন্ড আহলে হাদিসদের এপগুলোতেও সুনান আবূ দাউদের ২৩১৯ নং হাদিসের অনুবাদ করা হয়েছে এভাবে- “আমরা ‘উম্মী জাতি, লিখতে জানি না, হিসাব করতেও জানি না।” (নাউজুবিল্লাহ)
এমনকি দেখলাম কওমীদের দ্বারা পরিচালিত “মাযহাব ও আহলে হাদিস” পেইজেও ঐ ভন্ড আহলে হাদিসদের অনুবাদ করা সূনান আবূ দাউদের হাদিসখানা আমার নবী লিখতে জানতেন না প্রমাণ করতে ব্যবহার করেছে।
অথচ উক্ত প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর ১৯১৩ নং হাদিসে আবার অনুবাদ করেছে নবী ﷺ বলেনঃ আমরা উম্মী জাতি। আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না। মাস এরূপ অর্থাৎ কখনও ঊনত্রিশ দিনের আবার কখনো ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।
ভন্ড কওমী এবং আহলে হাদিসদের এ কেমন মুনাফিকী!! লিখি না, হিসাব করিনা আর লিখতে পারিনা, হিসাবও করতে পারিনা কি এক!!!
এবার আমরা দেখব আমাদের নবী ﷺ হিসাব করতে পারেন কিনা..
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করাও সহজ, কিন্তু এ দুটি অভ্যাস অনুশীলনকারীর সংখ্যা কম। (১) প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আল্লাহু আকবর এবং দশবার আলহামদুলিল্লাহ্ বলা। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এগুলো #তাঁর_হাতের_আঙ্গুল_দিয়ে_গণনা_করতে_দেখেছি। তিনি বলেনঃ তা মুখে পড়লে হয় একশত পঞ্চাশ [১০+১০+১০= ৩০, ৩০× ৫= ১৫০] এবং মীযানে হয় এক হাজার পাঁচ শত।
(২) সে শয্যা গ্রহণকালে সুবহানাল্লাহ (৩৩), আলহামদু লিল্লাহ (৩৩) ও আল্লাহু আকবার (৩৪) একশতবার (৩৩+৩৩+৩৪= ১০০) পড়লে তা তার মুখে হয় একশত এবং মীযানে হয় এক হাজার। তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে প্রতিদিন দু হাজার পাঁচ শত (১৫০০+১০০০) গুনাহ করবে? তারা বলেন, কেউ এ দুটি অভ্যাস কেন অনুশীলন করবে না। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন শয়তান তার নিকট এসে বলে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ করো, এমনকি বান্দা (নামাজ থেকে) বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বুঝতে পারে না (যে, সে কত রাকআত পড়ছে)। অনুরূপভাবে সে তার বিছানায় অবস্থানকালেও শয়তান সেখানে আসে এবং তাকে ঘুম পারাতে থাকে, অবশেষে সে (তাসবীহ না পড়ে) ঘুমিয়ে যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৯২৬, সূনান আবূ দাউদ ৫০৬৫, সূনান আত তিরমিজী ৩৪১০)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আঙ্গুলে গুনে গুনে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি। ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা। (সূনান আবূ দাউদ ১৫০২, সূনান আত তিরমিজী ৩৪১১)
শুধু তা-ই নয়, আরো দেখুনঃ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে বলেনঃ হে ‘আব্বাস! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দান করবো না? আমি কি আপনাকে উপহার দিবো না? আমি কি আপনার দশটি মহৎ কাজ করে দিবো না? আপনি যখন সে কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন, তখন আল্লাহ আপনার প্রথম ও শেষ, অতীত ও বর্তমান, ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃত, ছোট ও বড় এবং প্রকাশ্য ও গোপন সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
ঐ দশটি মহৎ কাজ হচ্ছেঃ আপনি চার রাক‘আতের ক্বিরাআত হতে অবসর হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় বলবেন, ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল-হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’’ পনের বার, অতঃপর রুকূ‘ করুন এবং রুকূ‘ অবস্থায় তা পাঠ করুন দশবার, আবার রুকূ‘ হতে মাথা উঠিয়ে তা পাঠ করুন দশবার, অতঃপর সিজদায় যান এবং সাজদাহ্ অবস্থায় তা পাঠ করুন দশবার, অতঃপর সাজদাহ্ হতে মাথা উঠিয়ে তা পাঠ করুন দশবার। আবার সাজদাহ্ করুন, সেখানে তা পাঠ করুন দশবার। অতঃপর সাজদাহ্ হতে মাথা তুলে তা পাঠ করুন দশবার, #এ_নিয়মে_প্রত্যেক_রাকআতে_তাসবীহের_সংখ্যা_হবে_৭৫_বার (১৫ + ১০×৬ = ৭৫) এবং তা করতে থাকুন পূর্ণ চার রাক‘আতে।
আপনার পক্ষে সম্ভব হলে উক্ত নামাজ দৈনিক একবার আদায় করুন। অন্যথায় সপ্তাহে একবার, তাও সম্ভব না হলে মাসে একবার, এটাও সম্ভব না হলে বছরে একবার, যদি তাও না হয় তবে সারা জীবনে অন্তত একবার আদায় করুন। (সুনান আবূ দাউদ ১২৯৭)
এবার দেখুন, আমার নবীর কাছে লিখিত কোন জিনিস রহস্যের মত লাগত কিনা..! এক দুই তিন লেখা থাকলে ওটা পড়তে পারতেন কিনা..!
আল-বারাআ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দু’টি সামরিক বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং একদলের সেনাপতি বানালেন আলী (রাঃ)-কে এবং অপর দলের অধিনায়ক বানালেন খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)-কে। তিনি আরো বলেনঃ যখন যুদ্ধ শুরু হবে তখন আলী হবে (সমগ্র বাহিনীর) প্রধান সেনাপতি। রাবী বলেন, আলী (রাঃ) একটি দুর্গ জয় করেন এবং সেখান হতে একটি যুদ্ধবন্দিনী নিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে খালিদ (রাঃ) এক চিঠি লিখে আমার মাধ্যমে তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকটে পাঠান যাতে তিনি আলী (রাঃ)-এর দোষ চর্চা করেন।
রাবী বলেন, আমি চিঠি নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকট হাযির হলাম। তিনি চিঠি পড়ার পর তার (মুখমণ্ডলের) রং বিবর্ণ হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি এমন লোক প্রসঙ্গে কি ভাবো যে আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলও যাকে ভালোবাসেন? রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ্ তা’আলার অসন্তোষ ও তার রাসূলের অসন্তোষ হতে আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় চাই। আমি একজন বার্তাবাহক মাত্র। (এ কথায়) তিনি নীরব হন। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭২৫)
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি জান্নাতের একটি দরজায় লেখা দেখলাম, দান-খয়রাতে দশ গুণ সওয়াব এবং কর্জে (কর্জ দানে) আঠারো গুণ! আমি বললামঃ হে জিবরাঈল! কর্জ দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম হওয়ার কারণ কি? তিনি বলেন, ভিক্ষুক নিজের কাছে (সম্পদ) থাকতেও ভিক্ষা চায়, কিন্তু কর্জদার প্রয়োজনের তাগিদেই কর্জ চায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৪৩১)
আমাদের নবী কি আলিফ বা তা ছা, কোন-টারে জিম বলে কোন-টারে হা বলে বুঝতেননা…!
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (সূনান আত তিরমিজী ২৯১০, মিশকাত ২১৩৭)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের সকলকে ধোঁকাবাজদের থেকে, শানে রিসালাতে যারা বেয়াদবী করে তাদের থেকে হেফাজত করুক।