উত্তর: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আগে ও পরের সুন্নত সালাতগুলোকে ‘সুন্নতে রাতেবা’ (নিয়মিত সুন্নত) বলা হয়। ফিকহি দৃষ্টিতে এগুলো ‘সুন্নতে মুআক্কাদা’ (গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত) এর অন্তর্ভুক্ত।
কোন ব্যক্তি যদি ফরজ সালাতগুলো আদায়ের পাশাপাশি এ সকল সুন্নত সালাতগুলো যত্নসহকারে আদায় করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অবারিত সওয়াব ও বিশাল মর্যাদা। কোন ওজর বশত: আদায় না করলে গুনাহ হবে না। কিন্তু এগুলো নিয়মিত পরিত্যাগ করা বা সুন্নত পরিত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করা অত্যন্ত বিপদজনক ও বিশাল সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ-এতে কোনও সন্দেহ নাই।
বিস্তারিত নিম্নরূপ:
তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজদ বাসী এক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল।
● রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত।
– সে বলল: ‘আমার উপর এ ছাড়া আরও সালাত আছে কি?’
● তিনি বললেন, ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।
● রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর রমযানের সিয়াম।
– সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরও রোজা আছে?
● তিনি বললেন, না, তবে নফল আদায় করতে পার।
বর্ণনাকারী বলেন,
● রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে জাকাতের কথা বললেন।
– সে বলল, ‘আমার ওপর এ ছাড়া আরও কিছু দেওয়ার আছে?
● তিনি বললেন, না, তবে নফল হিসেবে দিতে পার।
বর্ণনাকারী বলেন,
সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন, وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ “আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশিও করব না এবং কমও করব না।”
তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ “সে সফলকাম হবে যদি সত্য বলে থাকে।”
উল্লেখ্য যে, ফরজ ব্যতিরেকে যত সালাত আছে সবই নফল হিসেবে পরিগণিত।
[সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর: [৪৪] অধ্যায়: ২/ ঈমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
উক্ত হাদিসের আলোকে আলেমগণ বলেন, ফরজ ছাড়া অন্যান্য ইবাদত না করলেও আখিরাতের সাফল্য লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য যথেষ্ট হবে।
❖ সুন্নত সালাত পরিত্যাগ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ:
কেবল ফরজ সালাতগুলোর উপর নির্ভর করা এবং সুন্নত, বিতর ইত্যাদিগুলো বাদ দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, আমরা কেই নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, আমাদের ফরজ সালাতগুলো আল্লাহর নিকট ১০০% গৃহীত হচ্ছে। হতে পারে আমাদের ফরজ সালাতে বিভিন্ন দিক দিয়ে অপূর্ণতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ঘাটতি থেকে যায়। বরং ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনাই ১০০%। অথচ হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা ফরজ সালাতের ঘাটতি পূরণ করবেন ফরজ ছাড়া অন্যান্য সালাতের মাধ্যমে। যেমন: নিন্মোক্ত হাদিস
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ العَبْدُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ، فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ، فَإِنْ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ، قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ؟ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ يكون سائر عَمَلِه على ذلكَ
“কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি সে সঠিক হিসাব দিতে পারে তবে কৃতকার্য হয়ে যাবে। আর যদি ব্যর্থ হয় তবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরজসমূহের মধ্যে কোনও ঘাটতি থাকে তবে বরকতয় মহান আল্লাহ বলবেন : দেখো, আমার বান্দার কোনও নফল আছে কিনা? যদি থাকে তবে তা দিয়ে তার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর একইভাবে তার অন্যান্য আমলের হিসাব নেওয়া হবে।” [তিরমিযী, তিনি এটিকে হাসান বলেছেন। ইবনে মাজাহ, নাসাঈ-আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন]
❖ সুন্নত নামাজের বিশাল মর্যাদা:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,
مَنْ صَلَّى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ ” . قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . وَقَالَ عَنْبَسَةُ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ أُمِّ حَبِيبَةَ . وَقَالَ عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَنْبَسَةَ . وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ سَالِمٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَمْرِو بْنِ أَوْسٍ
দিন ও রাতে যে ব্যক্তি মোট ১২ রাকাত(সুন্নত) সলাত আদায় করে তার বিনিময়ে জান্নাতে ঐ ব্যক্তির জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। উম্মে হাবিবা বলেছেন, আমি যে সময়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এ সলাত সম্পর্কে শুনেছি তখন থেকে আর কখনো তা আদায় করা পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্বাসাহ ইবনে আবি সুফিয়ান বলেছেন, এ সলাত সম্পর্কে যখন আমি উম্মে হাবিবার কাছে শুনেছি তখন থেকে আর ঐ সলাত গুলো কখনো পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্র ইবনে আওস বলেছেন, যে সময়ে এ সলাত সম্পর্কে আমি ‘আম্বাসাহ্ ইবনে আবি সুফিয়ান-এর নিকট থেকে শুনেছি সে সময় থেকে আর কখনো তা পরিত্যাগ করিনি। নুমান ইবনে সালিম বলেছেন, যে সময় আমি এ হাদিসটি ‘আমর ইবনে আওস-এর নিকট থেকে শুনেছি তখন থেকে কখনো আর তা পরিত্যাগ করিনি। [সহিহ মুসলিম অধ্যায়: ফরযের পূর্বে ও পরে নিয়মিত সুন্নতের ফজিলত এবং তার সংখ্যার বিবরণ। হা/১৫৭৯]
উক্ত ১২ রাকাত হল: জোহরের পূর্বে ৪ ও পরে ২, মাগরিবরে পর ২, ইশার পরে ২ এবং ফজরের পূর্বে ২ রাকাত।
তাছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি সুন্নত, নফল ইত্যাদি ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং সফর, অসুস্থতা বা জরুরি কোনও ওজর ছাড়া সুন্নত সালাতগুলো পরিত্যাগ করা মোটেও উচিৎ নয়। বরং এ সব সুন্নত সালাত পরিত্যাগ করা দ্বীনের ব্যাপারে অলসতা ও অবহেলার প্রমাণ বহন করে- যা জান্নাত প্রত্যাশী মুমিনের নিকট কাম্য হতে পারে না।






Users Today : 107
Users Yesterday : 1458
This Month : 7857
This Year : 147334
Total Users : 263197
Views Today : 270
Total views : 3206645