জনৈক আযহারী এক বক্তব্যে বলেছিলো, “আল্লামা তো আল্লাহ। তাই মানুষকে আল্লামা বলা যাবে না।” অথচ সেই ব্যক্তিই আবার তথাকথিত এক মুফাসসিরের ব্যাপারে বলেছিলো, “ঘরে ঘরে আল্লামা অমুক চাই।” তার এই বক্তব্যের জবাবে প্রথমত আমি বলবো, আল্লামা যদি আল্লাহই হন, তাহলে সে আরেকজন মানুষকে আল্লামা বললো কী করে? আর দ্বিতীয়ত বলবো যে আল্লামা নিয়ে তার বিশ্লেষণটাই ভুল। মূলত সে علامة এবং علام এর তফাতই জানে না।
মানুষকে যে আল্লামা বলা হয় তার আরবী বানান হলো علامة এটি اسم فاعل مبالغة এর ছিগা। এর অর্থ অধিক জ্ঞাত। শেষের ة টি مبالغة এর জন্য। সুতরাং শব্দটি مذكر বা পুরুষ বাচক। আর এই আল্লামা গাইরুল্লাহর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। শেষের ة টি تاء تأنيث এর সাথে সাদৃশ্যের কারণে আল্লাহ তা’আলার ক্ষেত্রে ة বিহীন علام ব্যবহৃত হয়।
একই ভাবে তারা বলে আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাওলানা বলা যাবে না। এখানেও তাদের অজ্ঞতার পরিচয় আমরা পাই। ‘মাওলা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রভু, মনিব, বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক, মিত্র ইত্যাদি। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, “মাওলা শব্দের ১৬টি অর্থ আছে।” মাওলা শব্দকে কোন অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে মানুষের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে কিনা। যদি ‘মাওলা’ শব্দ দ্বারা রুবুবিয়াতের অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং তাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী উদ্দেশ্য করা হয়, তবে তা মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার নিষেধ। কিন্তু যদি সাধারণভাবে দায়িত্বশীল বা অভিভাবক বা অন্য কোনও অর্থ উদ্দেশ্যে করা হয় তবে ব্যবহার করা নিষেধ নয়।
মূলত তাওহীদের মূল বক্তব্যই তারা বুঝে না। ফলে সর্বত্র তারা শিরকের গন্ধ পায়। এমনকি আমাদের ঈমানী কালেমার মধ্যেও নাকি তারা শিরক খুঁজে পেয়েছে। এই কালেমা যেভাবে আছে সেভাবে নাকি কুরআন হাদিসে কোথাও নেই। তাদের এই বক্তব্যের জবাবে আমি দুইটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি যেখানে কালিমাটি হুবহু এভাবেই আছে-
عَنْ أَبِي الْحَمْرَاءِ خَادِمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَمَّا أُسْرِيَ بِي إِلَى السَّمَاءِ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ فِي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ
المعجم الكبير للطبراني
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيئَةَ قَالَ: يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي، فَقَالَ اللَّهُ: يَا آدَمُ، وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ: يَا رَبِّ، لِأَنَّكَ لَمَّا خَلَقْتَنِي بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِيَّ مِنْ رُوحِكَ رَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ عَلَىَ قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تُضِفْ إِلَى اسْمِكَ إِلَّا أَحَبَّ الْخَلْقِ إِلَيْكَ، فَقَالَ اللَّهُ: صَدَقْتَ يَا آدَمُ، إِنَّهُ لَأُحِبُّ الْخَلْقِ إِلَيَّ ادْعُنِي بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ
المستدرك علي الصحيحين – 4228, دلائل النبوة, الخصائص الكبري
এছাড়াও আরো অনেক বর্ণনা আছে যা উল্লেখ করলে লেখার কলেবর বেড়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের অপব্যাখ্যা থেকে মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন।
উত্তর প্রদান করেছেন
মাওলানা আরিফুল ইসলাম আশরাফী






Users Today : 313
Users Yesterday : 767
This Month : 14735
This Year : 186606
Total Users : 302469
Views Today : 32534
Total views : 3609277