১.আমরা জানলাম জুমার দিন ঈদের দিন। এখন এই দিনটি এত ঈদের ও মর্যাদাবান হওয়ার মৌলিক কারন হলো পাঁচটি-
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الأَيَّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ يَوْمِ الأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيهِ خَمْسُ خِلاَلٍ خَلَقَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ وَأَهْبَطَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ إِلَى الأَرْضِ وَفِيهِ تَوَفَّى اللَّهُ آدَمَ وَفِيهِ سَاعَةٌ لاَ يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا الْعَبْدُ شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ مَا لَمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيهِ تَقُومُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُقَرَّبٍ وَلاَ سَمَاءٍ وَلاَ أَرْضٍ وَلاَرِيَاحٍ وَلاَ جِبَالٍ وَلاَبَحْرٍ إِلاَّ وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَة
🕋 নবিজী (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয়ই জুমআর দিন, দিন সমুহের মধ্যে আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ট দিন এবং আল্লাহর নিকট তা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা থেকেও অধিক মর্যাদাবান এজন্য যে, তাতে পাঁচটি বৈশিষ্ট আছে-
১.এই দিনে আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২.এবং আদম (عليه السلام) কে দুনিয়াতে প্রেরন করা হয়েছে তথা এই দিনে ওনার আগমন হয়েছে।
৩.এই দিনে ওনার ইন্তেকাল হয়েছে।
৪.এমনকি এই দিনে এমন একটি সময় আছে যে মুহুর্তে বান্দা কোন হারাম বস্তু ছাডা যা কিছু আল্লাহ কাছে যা চাইবে আল্লাহ তা দিবেন।
৫.এবং এই দিনে কিয়ামত হবে।
বাকী হাদীস………………………………..।
📌[সুনান ইবনে মাজাহ-কিতাবু ইকামাতিস সালাতি ওয়াস সুন্নাতি,বাবু ফাদলিল জুমআ,হাদীস নং ১১৩৭;
আলবানী (নামদারী আহলে হাদীস)-সহীহ জামেউস সাগীর,হাদীস নং ২২৭৯]
🕋 ভিন্ন শব্দে হাদিসটি সুনান ইবনে মাজার একই পরিচ্ছেদে এসেছে।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ)). فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تُعْرَضُ صَلاَتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرَمْتَ- يَعْنِي بَلِيتَ-. فَقَالَ: ((إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ)).
📌[সুনান ইবনে মাজাহ-কিতাবু ইকামাতিস সালাতি ওয়াস সুন্নাতি,বাবু ফাদলিল জুমআ,হাদীস নং ১১৩৮]
এবার লক্ষ করুন আদম (عليه السلام) এর একই দিনে সৃষ্টি ও আগমন এবং ইন্তেকাল সম্পর্কে নবিজীর জানা সত্তেও তিনি জুমার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার জন্য বলেছেন। তাই নবিজীর এই বানী থেকে বুঝা গেলো নবীদের একই দিনে আগমন ও ইন্তেকাল হলে এক্ষেত্রে আগমনটাই পালন করতে হবে তথা ঈদ পালন করতে হবে।
এবার চিন্তা করে দেখুন আদম (عليه السلام) এর আগমনের দিন যদি ঈদের দিন হতে পারে তাহলে আমাদের নবিজীর আগমনের দিন কত বড ঈদের দিন হতে পারে একটু ভেবে দেখুন।তাই বলা হয় সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মিলাদুন্নাবী।
🕋 তাই আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
হাবিব,আপনি বলে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমত [রাসুল (ﷺ)] কে উপলক্ষ করে তারা যেন খুশি উদযাপন করে এবং সেটা হবে তাদের সমস্ত জমাকৃত অর্জন থেকে উত্তম।
[সুরা ইউনুস -আয়াত নং ৫৮]
🕋 এ আয়াতের আয়াতের তাফসীরে ইমাম সৈয়দ মাহমুদ আলুসী বর্ণনা করেন,ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন আলোচ্য আয়াতে রহমত হলো নবিজী (ﷺ)।
সুত্র:-মাহমুদ আলুসী-রুহুল মাআনী ৬/১৩৩ পৃ:;
🕋 আল্লামা আলুসী (رحمة الله) আরো বর্ণনা করেন-
খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) ইবনে আসাকীর (رحمة الله) সাহাবী ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন,ফদ্বল (অনুগ্রহ) দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে।
সুত্র:-তাফসীরে রুহুল মাআনী ৬/১৩৩ পৃ;
🕋 আহলে বায়তের অন্যতম সদস্য ইমাম আবু জাফর বাকের (رضي الله عنه) বলেন-
এখানে ফদ্বল দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে।
সুত্র:-ইমাম তিবরিযি-মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮;
🕋 বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দীস ও তাফসীরকারক ইমাম যওজী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
আলোচ্য আয়াতে রহমত দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে, যেমনটি তাবেয়ী দাহ্হাক (رحمة الله) তার শায়েখ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।
সুত্র:-ইমাম যওজী-যা’দুল মাসীর ফি উলুমুত তাফাসীর ৪/৪০পৃষ্টা;
সম্মানীত পাঠকগন, অত্র আয়াতের একটা তাফসীর আমরা সাহাবীয়ে রাসুল থেকে পেয়ে গেলাম যে ফদ্বল আর রহমত দ্বারা নবিজীকেও বুঝানে হয়েছে।আর এটা মনে রাখতে হবে সাহাবীদের তাফসীর হলো মারফু হাদীসের ন্যায়।
🕋 ইমাম হাকেম নিশাপুরী বর্ণনা করেন -وتفسيرُ الصحابي عندهما مُسْنَدٌ ইমাম বোখারী ও মুসলিমের নিকট সাহাবীদের তাফসীর মারফু হাদীসের ন্যায়।
সুত্র:-মুসতাদরাক-কিতাবুল ইলম ১/২১১,হাদীস নং ৪২২;
অতএব, আল্লাহ তাআলা যেহেতু বলে দিয়েছেন নবিজীকে উপলক্ষ করে খুশি তথা ঈদ উদযাপন করার জন্য তাই আমাদের উচিৎ ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহ আলাইহী ওয়াসাল্লাম পালন করা কারন এই আয়াতে ফদ্বল ও রহমত দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে, যা সাহাবী ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বানী থেকে সুস্পষ্ট।
🕋 এজন্য বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ ইমাম তাহাবী (رحمة الله) ইমাম শাওয়াফে (رحمة الله) এর কওল নকল করে লিখেন-
ان افضل الليالي ليلة مولده صلى اللّٰه عليه وسلم ثم ليلة القدر
নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলো মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর রাত এরপর লাইলাতুল কদর।
সুত্র:-ইউসুফ নাবহানী-যাওয়াহিরু বিহার ৩/৪২৬,মারকাযে আহলে সুন্নাহ বি বারকাতে রেযা,গুজরাট হতে প্রকাশিত।
🕋 এমনকি শায়েখ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) লিখেন-
“শবে কদর হতে মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর রাত উত্তম।”
সুত্র:-ইউসুফ নাবহানী-আনোওয়ারে মুহাম্মাদীয়া ২৮ পৃঃ,দারুল কুতুব ইলমিয়্যা,বয়রুত লেবানন।
🕋 বোখারীর ব্যখ্যাকার ইমাম কস্তুলানী (رحمة الله) তিনিও বলেছেন,
“শবে কদর হতে মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর রাত উত্তম।”
এবং এর পিছনে তিনটি কারনও তিনি উল্লেখ করেছেন।
ইমাম কস্তুলানী-মাওয়াহেবে লাদুনীয়া ২৮/১৪৫,মাকতুবাতুত তাওফীকিয়া, কায়রো, মিশর।
এমনকি ঈসা (عليه السلام) এর জন্য আসমান থেকে আল্লাহর নেয়ামত খাদ্য পাঠানোর দিন যদি ঈদের দিন হতে পারে যা সুরা মায়েদার ১১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তাহলে আমাদের নবিজীতো সকল নেয়ামতের মধ্য শ্রেষ্ট নেয়ামত।এমনকি নবিজীকে আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমীনের সমস্হ ধনভান্ডারের চাবি সমুহও দান করে দিয়েছেন তাহলে ওনার আগমনের দিন কেন ঈদের দিন হতে পারবেনা! বরং নবিজীর আগমনের দিন সকল ঈদের চাইতেও শ্রেষ্ট ঈদের দিন এবং তা পালন করা আমাদের অর্জিত সমস্ত কিছু চাইতে উত্তম হবে।
অতএব, প্রমানীত হলো সকল ঈদে সেরা ঈদ ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহ আলাইহী ওয়াসাল্লাম।
পোষ্টটি ঈমানী দায়িত্ব মনে করে সর্বমহলে কমপক্ষে ১০০ জনের কাছে শেয়ার করুন।