পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সঃ) উৎযাপন এ বির্তক নয়

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হাদীস শরীফে রাসূল (সাঃ) ফরমান যে, “সর্ব প্রথম আল্লাহ্‌ তায়ালা আমার নূর কে সৃজন করেছেন। আমি আল্লাহ্‌র নূর হতে আর সমগ্র সৃষ্টিরাজী আমার নূর হতে।” [ সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা-৩]
হাদীসে কুদসিতে ইরসাদ হয়েছে, “আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” [সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা-৭০]

আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, “আদম যখন পানি ও কাদার মধ্যে ছিলেন আমি তখনো নবী ছিলাম।” অর্থাৎ আদমের যখন অস্তিত্ব ছিলনা তখনো হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) নবী ছিলেন।

সুতরাং এই ৩টি হাদীস থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার যে আল্লাহ্‌র এই সৃষ্টি জগত সৃষ্টির মূলে ছিলেন আমাদের দয়াল রাসূল (সাঃ) আর সেই জন্য তাকেই সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল। অথচ সব নবীর শেষ নবী হিসেবে এই ধুলির ধরায় তিনি আগমন করলেন হিজরীপূর্ব ৫৩ সালের ১২ই রবিউল আওয়াল রোজ সোমবার সুবেহ সাদিকের সময়। রাসূল কে তার আপন পরিচয়ে জগতে প্রেরনের পূর্বে আল্লাহ্‌ ১লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসূল প্রেরন করেছিলেন মূলত পৃথিবীতে তার আগমনের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য। সৃষ্টির শুরুতেই সমস্ত নবী-রাসূলদের কাছ থেকে তিনি অঙ্গিকার নিয়েছিলেন প্রত্যেকেই যেন তার সজাতির কাছে রাসুল (সাঃ) এর কথা তুলে ধরে।

এ প্রসঙ্গে তিনি এরশাদ করেন, “স্মরণ কর!যখন আল্লাহ নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি এবং অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক রুপে যখন একজন রাসূল (মহাম্মদ-সাঃ) আসবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে ও তাকে সাহায্য করবে। তিনি (আল্লাহ্‌) বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ সম্পর্কে আমার অঙ্গিকার কি তোমরা গ্রহন করলে? সকল নবী-রাসূল বললেন, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি (আল্লাহ্‌) বললেন,তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাক্ষী রইলাম।” (আল ইমরানঃ ৮১)

সুতরাং যে মহামানবকে উদ্দেশ্য করে এই বিশ্ব জাহান সৃষ্টি সেই মহামানব যেদিন সশরীরে এই ধুলির ধরায় আগমন করেছিলেন সেই দিনটি যে স্বয়ং রাব্বুল আলামীনের কাছেও খুশির দিন ছিল একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। অথচ দয়াল রাসূলের আশেকরা যখন এই পবিত্র দিনটিতে খুশি হয়ে ঈদ সমমর্যাদায় দিনটি উদযাপন করতে যায় তখন সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ এই পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নাবী (সাঃ) কে বেদআত হিসেবে আখ্যায়িত করে। বেদআত সংক্রান্ত যত হাদীস আছে তা দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে এই ঈদ-এ-মিলাদুন্নাবী (সাঃ) পালন বেদআত। আমাদের দুর্ভাগ্য যে নিজ ধর্মের কিছু ব্যাক্তি বিশেষের অজ্ঞতার কারনেই মুসলিম জাতি হিসেবে আমরা কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। ইসলাম আজ নানা মত, নানা দলে বিভক্ত। আর এত সব দল-মত যা তৈরি হয়েছে সব-ই যার যার নিজের খেয়াল-খুশি মতো ব্যাখ্যা দেয়ার প্রবণতার কারনেই।
যারা ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী কে যারা বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে তাদের বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু হল, ক) কোরআন-হাদীসে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) বলে কিছু নাই, খ) ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতর এর বাহিরে অন্য কোন দিনকে ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবেনা, গ) রাসূল (সাঃ) এর জামানায় এই ঈদ-এ-মিলাদুন্নাবী (সাঃ) ছিলোনা, ঘ)এই দিনটি রাসূল (সাঃ) এর ওফাত দিবসও বটে।

এই মুসলিম জাতির আজ এতই দুর্দিন যে রাসূল (সাঃ) যে দিনটিতে পৃথিবীতে আগমন করেছেন সেই দিনে খুশী হবে নাকি হবেনা, আনন্দ প্রকাশ করবে নাকি করবেনা তা নিয়েও আজ বিতর্কে জড়ায়। এই পবিত্র দিনটির নামের সাথে “ঈদ” শব্দটা জুড়ে দেয়ার ক্ষেত্রও অনেকের কতই না আপত্তি। এটা আবার কোন ঈদ? ঈদুল আযহা আর ঈদুল ফিতর এর বাহিরে অন্য কোন দিনকে ঈদ হিসেবে মূল্যায়ন করতে তারা নারাজ। আসলে অল্প বিদ্যা সব সময়-ই ভয়ঙ্কর। তাহলে আলোচনায় আসা যাক যে রাসূল (সাঃ) এর জন্মের এই শুভ দিনকে ঈদ বলাটা আসলেই অযৌক্তিক কিনা এবং কোরআন-হাদিস এই পবিত্র দিনটি পালন করাকে সমর্থন করে কিনা।

আল ইজহার- অভিধানে বলা হয়েছে, “আনন্দপূর্ণ সকল সমাবেশে আরব জাতির কাছে ঈদ নামে আখ্যায়িত, কেননা এর প্রত্যাবর্তনে আনন্দের প্রত্যাবর্তন ঘটে।”

মিছবাহুর লুগাত নামক বিখ্যাত অভিধানে বলা হয়েছে, “ঈদ ঐ সকল দিন, যা কোন মার্যাদাশীল ব্যক্তি বা কোন ঐতিহ্যবাহী ঘটনার স্মরণে হয়।”

জামেউল বয়ান ফি তাফসীরুল কুরআন-গ্রন্থে বলা হয়েছে, “কোন নিয়ামত অবতীর্ণ হওয়ার বা কোন নিয়ামত প্রকাশের দিন কে ঈদ বলে।”

ইবনুল আরাবী (রাহঃ) বলেন, “ ঈদকে ঈদ নামে রাখার কারণ হল-প্রতি বছর নব আনন্দ নিয়ে তা ফিরে আসে। (কাওয়ায়েদুল ফিকহ-৩৯৬)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা “আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম” অর্থাৎ “ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম” এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন তাঁর নিকট এক ইহুদী ছিল। সে বলে উঠলো, “ যদি এই আয়াতটি আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো আমরা আয়াত নাযিলের দিনটিকে “ঈদ” বলে ঘোষণা করতাম।” এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিঃ) বললেন, এ আয়াতটি সেই দিন নাযিল হয়েছে যে দিন এক সাথে দু’ঈদ ছিল। যথা- ১.জুমআর দিন এবং ২. আরাফার দিন।” (তিরমীযি শরীফ)।

হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উবায়েদ বিন সাব্বাক (রাঃ)বর্ণনা করেন, হযরত রাসুল পাক (সাঃ) এক জুমআর দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ পাক ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” (ইবনে মাযাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)

উক্ত হাদীস অনুযায়ী জুম’আ ও আরাফার দিবসকেও আরো দুই ঈদ বলা হয়েছে। ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর-এই দুই ঈদ যেভাবে হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত ঠিক সেভাবেই ঈদ হিসেবে জুমাবার ও আরাফার দিনও হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাশাপাশি রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অনুযায়ী বিষয়টা পরিস্কার যে ঈদুল আযহা আর ঈদুল ফিতর ছাড়াও আমাদের ধর্মে আরো ঈদ আছে এবং সেই হিসেবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার বাহিরে আর কোন দিনকে ঈদ বলা যাবেনা-এই বক্তব্যের কোনই যৌক্তিকতা নেই।

কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, “আপনি বলুন! আল্লাহ্‌র এ অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ তা তদের সমস্ত ধনদৌলত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” [সূরা ইউনুসঃ ৫৮] এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ৯ম শতাব্দীর ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রঃ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘আদ্দুররুল মনসূর’ এ উল্লেখ করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, এখানে আল্লাহ এর “অনুগ্রহ” দ্বারা ইলমে দ্বীন এবং “রহমত” দ্বারা নবী কারীম (সাঃ) এর কথা বুঝানো হয়েছে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসি (রহঃ) তাঁর স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই ‘অনুগ্রহ’ হল ইলমে দ্বীন এবং ‘রহমত’ হল নবী কারীম (সাঃ)”। [তাফসীর রুহুল মা’আনী ১১তম খন্ড, পৃঃ ১৮৩]

তাছাড়া দয়াল রাসূল (সাঃ) যে জগতের জন্য সবচেয়ে বড় রহমত এই সম্পর্কে পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন, “হে রাসূল! আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের রহমত হিসেবে প্রেরন করেছি।“ [সুরা আম্বিয়াঃ ১০৭] সুতরাং, জগতের সবচেয়ে বড় রহমত হিসেবে আমাদের দয়াল রাসূল (সাঃ) এর এই দুনিয়ায় আগমনের দিনে যদি আনন্দ প্রকাশ না করি তাহলে আর কবে আনন্দ করবো? এরপরেও কি এ কথা বলার কোন সুযোগ আছে যে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালনের কথা কোরআনে নেই?

কট্টরপন্থী আলেমরা সবসময় এই যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করে যে “ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ)” এর কথা কোরআন হাদীসে কোথাও নেই। কোরআন-হাদীস এক বিশাল জ্ঞান ভাণ্ডার। যুগে যুগে অসংখ্য আলেম এই কোরআন নিয়ে গবেষণা করেছেন, অসংখ্য তফসীর লেখা হয়েছে। এইসব তফসীর থেকে এমন সব তথ্য বেড়িয়ে এসেছে যা শুধু লাইন বাই লাইন পড়ে গেলে কখনও সেই অর্থ বোঝা সম্ভব না। ইসলামের অনেক কিছুকেই ইদানিং বেদআত আর হারামের খাতায় ফেলে দেয়ার ক্ষেত্রে “কোরআন-হাদীসে নেই” এই বুলি আওড়ানো হচ্ছে। কোরআন-হাদীসে কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে এটা করা যাবে আর এটা করা যাবেনা। কিছু বিষয় আছে যার সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজনিয়তা আছে যা কোরানের বিভিন্ন তফসীর গ্রন্থ পড়ে আমরা জানতে পারি।শুধু লাইন বাই লাইন পড়ে গেলে তার প্রকৃত অর্থ বোঝা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন। আর যে সব বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কোরআন-হাদীস এর কোন আয়াত কি উক্ত বিষয়ের সাথে সাঙ্গার্ষিক কিনা। যদি সাঙ্গার্ষিক না হয় তাহলে তা বেদাত-হারাম ঘোষণা দেয়ার আগে ১০ বার চিন্তা করা উচিৎ।

কারণ “কোরআন-হাদীসে নেই”- এই কথার মাধ্যমে এটাই বোঝায় যে কোরআন-হাদীসে বিষয়টি নিষেধ করা হয়েছে। আর আমাদের সমাজের কতিপয় আলেম নামধারী কৌশলে “ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ)” সম্পর্কে এই মিথ্যাচারটিই করে আসছে। কারণ যে যুক্তিতে ওই অন্ধ আলেম সমাজ “ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ)” কে বেদআত এর খাতায় ফেলে দিয়েছে সেই যুক্তিটিকে ভুল প্রমাণ করেই ইসলামের অনেক-কিছুই সেই খোলাফায়ে রাশেদীন এর যুগ থেকে ইসলামে সুপ্রতিষ্ঠিত।

যেমন,

  • রমজান মাসে জামাতের সাথে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ এর নিয়ম ওমর (রাঃ) এর সময় থেকে চালু হয় যা রাসুল (রাঃ) এর জামানায় ছিলোনা।
  • পবিত্র কোরআনকে বই আকারে সংকলিত করা ও একে ৩০ পাড়ায় বিভক্ত করা হয়েছে খোলাফায়ে রাশিদীন এর যুগে করা হয়েছে যা রাসূল (সাঃ) এর জামানায় ছিলোনা।
  • শুক্রবার জুম’আর নামাজের সময় সানী আজান (খুতবার আগে) এর প্রচলন করা হয়েছিল হযরত ওসমান(রাঃ) এর জামানায় যা রাসূল (সাঃ) এর জামানায় ছিলোনা।
  • হাদীস সঙ্কলন শুরু করা হয়েছিল রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের প্রায় ১০০ বছর পর।

এবার বর্তমান যুগের কথায় আসা যাক।

  • আজান দেয়া হয় মাইক ব্যবহার করে যা রাসূল (সাঃ) এর জামানায় ছিলোনা।
  • বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইসলামিক স্কলাররা ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন যা শুনে আমরা ইসলামের অনেক গুরুত্তপূর্ণ বিষয়ে জানতে পারি।

          অর্থাৎ এটাকে ইসলাম প্রচারের একটা ডিজিটাল ফরম্যাট বলা যেতে পারে। রাসূল (সাঃ) এর জামানায় তাকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্ম প্রচার করতে হয়েছে।

          এখন আমরা যদি বেদআত এর দলিল কে এভাবে অপব্যবহার করি তাহলেতো এই সবকিছুই বেদআত।

অনেকে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর বিরোধিতা করে প্রায়ই এই হাদীস কে দলিল হিসেবে দাড় করায়। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে”।-[বুখারী ও মুসলিম]। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেছেন, “আমাদের এ ধর্মে যে নতুন কোন বিষয় প্রচলন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।”-[বুখারী ও মুসলিম] উপরের যে বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার একটাও রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় ইসলামে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সত্তেও তা বেদআত হিসেবে গৃহীত হচ্ছেনা। সুতরাং খুব পরিষ্কার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে হাদীসে “নতুন বিষয়” বলতে সেই বিষয়কে বোঝান হয়েছে যা সম্পূর্ণ রুপে কোরআন-হাদীস বিরোধী। উধাহরন স্বরূপ বাদশাহ আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। দ্বীনে ইলাহী এই ধর্মের নাম ইসলামের অনুরুপ বা মুসলিম ভাবধারার সাথে সামঞ্জস্য থাকলেও দ্বীনে ইলাহী ছিল মূলত ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পারশিকদের সমন্বয়ে একটি সংকর ধর্ম। দ্বীনে ইলাহী ধর্মের অনুসারীরা বলত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আকবারু খলিফাতুল্লাহ। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর ইঙ্গিত কোরআন-হাদীসে সুস্পষ্ট। একে বেদআত হিসেবে চালানোর কোন কারন-ই নাই।

সুতরাং রাসুল (সাঃ) যে দিনটিতে এই পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন সেই দিনটিতে যদি তার আশেকরা খুশী হয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দে সামিল হয় সেক্ষেত্রে যারা ইসলাম রক্ষার আজুহাতে অযথা বিতর্কে জড়াচ্ছে তাদের মধ্যে রাসুল (সাঃ) এর প্রেম কতটুকু? কোরআন-হাদীস এর কোন কথা কোন প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করতে হবে এই বিচার-বুদ্ধিটুকু যদি না থাকে তাহলে শুধু মীলাদুন্নবী কেন আরও অনেক বিষয়েই বিতর্ক অনিবার্য। আর যারা বলে যে এই দিন রাসুল (সাঃ) এর ওফাত দিবস-ও বটে তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে এই তথ্যটি ঐতিহাসিক ভুল। রাসূল (সাঃ) এর ওফাত দিবস ১লা রবিউল আওয়াল।

প্রমানসহ বিস্তারিত জানার জন্য নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
Click This Link

ঈদে মিলাদুন্নবী শরীয়তের দুই ঈদের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা ঐ দুই ঈদের পৃথক পৃথক দুটি নাম রয়েছে। শরীয়তের এই দু’টি ঈদ পালনের সাথে ইবাদত শর্ত। সুনির্দিস্ট ইবাদতের মাধ্যমে এই ঈদ দুইটি পালন করা হয়ে থাকে। যেমন, ঈদুল ফিতর আনন্দ উৎসবের কারণ হোল আল্লাহর বান্দা দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা তথা রোযা পালন করার পর ঈদুল ফিতরের দিন তার পুরস্কার লাভ করে । রমজান মাসের রোযাদারকে আল্লাহ পাক ঈদুল ফিতরের দিন নিষ্পাপ ঘোষণা করেন।

এই নিষ্পাপ ঘোষণাটাই বান্দার জন্য খুশীর দিন, ঈদের দিন। আর ঈদুল আযহার দিন বান্দা পশু কুরবানীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে থাকে। আর আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করা একটা খুশীর বিষয়, আনন্দের বিষয়। তাই একে ঈদুল আযহা বলা হয়। আমরা এই ২টি ঈদ পালন করি এবাদতের অংশ হিসেবে। কিন্তু ঈদ- এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর সাথে কোন এবাদত শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া হয়নি। বরং রাসূল (সাঃ) এর দুনিয়াতে আগমনের এই দিনটিতে যদি আমরা খুশী থাকি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই তাহলে কি আল্লাহ ও তার রাসূলের বেজাড় হবার কি কোন কারণ আছে? অনেকে আবার মধ্য পন্থা অবলম্বন করে। তারা সরাসরি ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর বিরোধিতা করেনা কিন্তু কৌশলে এটা বলে যে কোরআন-সুণ্ণাহ সঠিক ভাবে মেনে চলাই রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। আমিও সে কথার সাথে ১০০% একমত।

কিন্তু এটাতো ৩৬৫ দিনের জন্যই প্রযোজ্য। এটা তো শুধু ঐ ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর ১ দিনের জন্য প্রযোজ্য না। আর অনুষ্ঠানটার নাম ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ), সুতরাং কোরআন–সুণ্ণাহ মানার পাশাপাশি আর ২টা ঈদের মত পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইদের দিনের মতই আনন্দ উদযাপন করলেই না ঈদ পালন করা হবে।একজন মুসলিম যে নামাজ-রোজা সহ শরীয়তের সব কিছুই ঠিক মত পালন করে। সে যদি রাসূল (সাঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের এই শুভদিনে মন থেকে খুসি হয়, আর ২টি ঈদের দিনের মতই বাড়ীতে ভাল কিছু রান্না করে, পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেয়, ঈদ এর শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করে, পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় তাহলে বেদআত হিসেবে তার সমস্ত এবাদত পণ্ড হয়ে যাবে এই ধরনের অযৌক্তিক ফতোয়াবাজী অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিৎ।

সমাজের কিতাব সর্বস্ব কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহ-রাসুলের প্রেমের কথা বল্লেও প্রেম কি জিনিস সেই ব্যাপারে কোন ধারনাই নেই, তারাই মূলত এই অপ-প্রচার চালাচ্ছে। এই দলের কাছে নামাজ- রোজা যতটা না গুরুত্ব পায় রাসুলের প্রেম ততটা পায়না। কিন্তু যার ভিতর রাসূলের প্রেম যতটুকু তার ঈমান ততটুকু। সুতরাং এই ঈমানের ভিত্তি মজবুত না করে কোরআন- সুন্নাহর বুলি আওরালে আর কি লাভ? আবু লাহাবের মতো একজন কাফের নিজের অজান্তেই রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছিল বলে আল্লাহ্‌ তাকে তততুকুই প্রতিদান দিয়েছিলেন।

আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানি (রহঃ) তার ফাতহুল বারীর ৯ম খণ্ডে বর্ণনা করেছেন হযরত সুহাইলি (রাঃ) কর্তৃক হযরত হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্ন দেখি যে সে অত্যন্ত আযাবের মধ্যে আছে।” তার নিজের অবস্থা সম্পর্কে আবু লাহাব জানায় “তোমাদের ছেড়ে আসার পর থেকে আমি শান্তির মুখ দেখিনি। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব লাঘব করা হয়।” হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, “তার এই আযাব লাঘবের কারণ হল হযরত রাসূল (সাঃ) এর জন্মদিন ছিল সোমবার।

রাসূল (সাঃ) এর জন্মের শুভ সংবাদ নিয়ে আসায় সে তার দাসী সুয়াইবাকে খুশি হয়ে মুক্তি দিয়েছিল।” যে আবু লাহাব সারাজিবন আমাদের দয়াল রাসুল (সাঃ) এর বিরধিতা করে গেলো এবং যে ছিল একজন কাফের শুধুমাত্র রাসূল (সাঃ) এর জন্মের সংবাদে খুশি হওয়ার কারনে আল্লাহ্‌ প্রতি সোমবার তার আযাব লাঘব করেন। আমরাও যদি রাসুল (সাঃ) এর জন্মের এই শুভ দিনটিতে খুশি হতে পারি এবং অন্য ২টি ঈদ এর মতই পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রকৃত ঈদ এর আনন্দ উদযাপন করতে পারি তাহলে নিঃসন্দেহে তা পরকালে আমাদের মুক্তির ওসিলা হিসেবে কাজ করবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment