পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
৫ই রবিউল আউয়াল
আলোচনায়ঃ- হযরতুল আল্লামা,মুফতীয়ে আযম বাংলাদেশ,আলহাজ্ব মাওলানা কাজী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ সাহেব।
অধ্যাপক,ফিক্হ বিভাগ,জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়া,চট্টগ্রাম।
১.হযরত আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র নিকট নূরে পাক এর শুভাগমন।
হযরত ক্বাব উল আখবার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,যখন হযরত আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নূরে পাক শুভাগমন করলেন,তখন তিনি ‘হিজরের’মধ্যে নিদ্রা অবস্থায় ছিলেন।নিদ্রা হতে জাগ্রত হয়ে দেখলেন যে, ‘তাঁর দুই নয়নে সুরমা দেয়া হল এবং তার শরীরে তৈল দেয়া হল।’তিনি নিজেকে সৌন্দর্য্য ও আলোকসজ্জল পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখে অবাক হলেন এবং এভাবে তাঁকে কে করে দিলেন,তা তিনি জানেন না।
অতঃপর তাঁর চাচা(মুত্তালিব) তাঁকে কোরাইশের কোন এক গণকের নিকট নিয়ে গেলেন।ঐ গণক এটা দেখে পরামর্শ দিল যে,তাঁকে যেন অতি সত্বর শাদী করিয়ে দেয়া হয়।এরপর তাঁর চাচা তাঁকে শাদী করালেন।
২.নূরে পাকের বরকতে শরীর থেকে সুঘ্রানের আভাস
নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর বরকতে হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শরীর মুবারক হতে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ পাওয়া যেত।আর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নূরে পাক তাঁর কপালে সর্বদা চমকিত।
৩.নূরে পাকের উসিলায় কোরাইশদের অভাব-অনটন দূরীভূত
কোরাইশদের নিকট যদি কোন অভাব-অনটন দেখা দিত,তখন তারা হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নিয়ে মক্কা শরীফের ‘সবীর’ পাহাড়ে যেত এবং তাঁকে উসিলা করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ করত আর বৃষ্টির জন্য দোয়া করত।ফলে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর বরকতে আল্লাহ তাঁদের দোয়া কবুল করে বৃষ্টি বর্ষন করেন।
৪.নূরে পাকের উসিলায় কাবা শরীফের হেফাজত
ইয়ামেনে আবরাহা বাদশাহ কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য যখন মক্কা নগরীতে অগ্রসর হল,তখন কোরাইশদের নিকট এ খবর পৌছলে তাদেরকে হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু অভয় দিলেন যে, এ আল্লাহর ঘরে আবরাহা পৌছতে পারবে না।কেননা এ কাবা ঘরের একজন মালিক আছেন;যিনি এটাকে হেফাযত করবেন।অতঃপর আবরাহা বাদশা কোরাইশদের সব উট-ছাগল ছিনতাই করে নিয়ে গেল।তন্মধ্যে হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ৪০০(চারশত)উষ্ট্রী রয়েছিল।তখন তিনি কোরাইশদের নিয়ে মক্কা শরীফের ‘সবীর পর্বতে’ আরোহন করেন।এমন সময় তাঁর ললাট মুবারকে নূরে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নব চন্দ্রের ন্যায় ঘুরতে ছিল এবং ঐ নূরে পাকের কিরণ সেখান থেকে খানায় কাবার মধ্যে পড়ল।খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর ঝলক দেখে কোরাইশদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা এখন ঘরে ফিরে যাও,আল্লাহর শপথ!বিজয় তোমাদের সুনিশ্চিত’।
৫.আবরাহা দূত কর্তৃক নূরে পাকের সত্যতার স্বীকৃতি
আবরাহার প্রেরিত এক ব্যক্তি মক্কা শরীফে প্রবেশ করার পর যখন হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নূরানী চেহারা মুবারকের উপর তাঁর নজর পড়ল,তখন ‘সে কাতর হয়ে গেল,তার মুখ বন্ধ হয়ে গেল,সে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলল এবং বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গরগর শব্দ করতে লাগল।’এরপর হুশ ফিরে আসলে খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কদমে পাকে লুটিয়ে পড়ল এবং সে বলল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আপনি কোরাইশদের সত্যিকারের সরদার।’
৬.আবরাহার হাতী কর্তৃক নূরে পাকের প্রতি সালাম আরয
বর্ণিত আছে যে,হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর উটের ব্যাপারে ফয়সালা করার জন্য আবরাহা বাদশার নিকটে যখন হাযির হলেন,তখন আবরাহার বড় শুভ্র হাতীটির নজর খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নূরানী চেহারা মুবারকের উপর পড়ার সাথে সাথে ঐ হাতীটি উটের ন্যায় বসে গেল এবং তাঁর সামনে সিজদারত অবস্থায় মস্তক অবনত করে নতশীরে তাঁর প্রতি সম্মান দেখাচ্ছিল।এমতাবস্থায় আল্লাহর হুকুমে ঐ হাতীর বাকশক্তি(মুখের আওয়াজ)খুলে গেল।তখন বলল,
السلام علی النور الذی فی ظہرک یا عبد اللہ
“হে কোরাইশদের সরদার আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু ! আপনার পৃষ্ঠ মুবারকে যে নূর পাক রয়েছে,সেই নূরানী সত্ত্বার প্রতি আমার অসংখ্য সালাম প্রেরণ করছি”
৭.নূরে পাকের উসিলায় আবরাহা বাহিনী সমূলে ধ্বংস
অতঃপর আবরাহা বাদশা তার বাহিনী নিয়ে খানায়ে কাবার দিকে অগসর হবার চেষ্টা করে আরাফাতের ময়দানের ‘ওয়াদিয়ে মুহাসসরের’নিকট পৌছলে আরব সাগর হতে হাজার হাজার পাখি আসতে লাগল আর প্রত্যেক পাখির নিকট ৩টি করে পাথরের ছোট ছোট কণা ছিল।এ সব পাখি শত্রুদের প্রতি কংকরগুলো নিক্ষেপ করল।আর আবরাহার সব বাহিনী ধ্বংস হয়ে গেল।এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে সূরা ফীল নাযিল হয়।
৮.নূরে পাকের উসিলায় সংস্কার কাজে অবদান
হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর বরকতে অনেক বিশেষত্বের অধিকারী হয়েছেন।কাবা শরীফের মুতাওয়াল্লী হওয়া এবং হজ্ব পালনকারীর দেখাশুনা করার দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত ছিল।তিনি নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর বরকতে অনেক গুনের অধিকারী ছিলেন।তিনি শরাব পান,ব্যাভিচার এবং উলঙ্গঁপনা অবস্থায় কাবা শরীফের তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ করেছেন।
(সর্বোপরি,হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ললাট হতে দোজাহানের রহমত,হাবীবে খোদা,হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর মুবারক হযরত খাজা আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ললাটে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মানবীয় সূরতে গোটা সৃষ্টি জগতকে আলকিত করে এই ধরাধামে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা হিসেবে তাশরীফ আনেন।)
এই জন্যই তো কবি বলেছেন,
নূর নবী এসেছে,নূর নিয়ে এসেছে
তাই বলে আজ কুল কায়নাত খুশির ঢেউয়ে ভেসেছে।
সহায়ক গ্রন্থসমূহ
*আনোয়ারে মুহাম্মদীয়া
*যুরকানী,ইবনে হেশাম
*মায়ারেজুন নবুয়ত
*মাওয়াহেবে লাদুনিয়া
পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!