নারী স্বাধীনতার ধোঁকা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

নারী স্বাধীনতার ধোঁকা

অনুবাদ
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

আধুনিক সভ্যতার বিস্ময়কর দর্শন হচ্ছে, নারী যদি স্বগৃহে নিজের জন্য, স্বীয় স্বামীর জন্য, মাত-পিতা, ভাই-বান, সন্তান-সন্তুতির জন্য রান্না-বান্না করে, তবে এটা হচ্ছে বন্দিত্ব আর লাঞ্ছনা। কিন্তু সেই নারী যখন অপরিচিত পুরুষের খাবার পরিবেশন করে, তাদের কক্ষ ঝাড়ুদেয়, হোটেল আর বিমানে তাদের আপ্যায়ন করে, মার্কেটে মুচকি হাসির মাধ্যমে গ্রাহক আকর্ষন করে, অফিসে মিষ্ট ভাষণের মাধ্যমে নিজ অফিসারের চিত্তমুগ্ধ করে, তখন তাকে বলা হয়- স্বাধীনতা আর প্রগতি, কিন্তু এ কেমন স্বাধীনতা? এ কেমন আত্মমর্যাদাবোধ! তাই ইসলামী শরিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কুরআন-হাদীসের শিক্ষার আলোকে নারীর পর্দার হুকুম কী? তার গুরুত্ব কতটুকু?
উক্ত বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝার পূর্বে একটি বিষয়ের প্রতি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। সেই বিষয়টি হচ্ছে- নারী জাতিকে পর্দা কেন করতে হয়? এবং এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান কী? বিষয়টি ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে নারীজন্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? কেন তাদের সৃষ্টি বা আগমন?

সৃষ্টির উদ্দেশ্য স্রষ্টাকে জিজ্ঞেস করুন
পশ্চিমা চিন্তাধারার মিডিয়া সর্বত্র আজ এ প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে যে, ঘোমটায় আবদ্ধ করে, পর্দায় ঢুকিয়ে ইসলাম নারীদেরকে গলাটিপে হত্যা করেছে। তাদেরকে চার দেয়ালে বন্দী করা হয়েছে। মূলত এসব প্রোপাগাণ্ডা হচ্ছে এ কথার ফলাফল যে, তারা নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। স্পষ্ট কথা হচ্ছে, যদি একথার উপর কারো পূর্ণ ঈমান থাকে যে, বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা, তবে তার সাথে এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকে। আর যদি কথাগুলোর উপর কারো পূর্ণ ঈমান না থাকে, তবে তার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করাটাও অর্থহীন।
বর্তমানে যে বা যারা আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী, ধর্মহীনতার ময়দানে যাদের বিচরণ খুবই তীব্র, তাদেরকেও কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্বীয় নিদর্শন দেখাচ্ছেন। তাই আমার আলোচনা তাদের সাথে, যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী। তাদের সাথে আমার আলোচনা নয়; যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। সুতরাং আমরা যারা বিশ্ব জগতের স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহ তা’আলাকে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি নারী পুরুষের স্রষ্টা তিনিই, তাদের উচিত আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সেই মহান আল্লাহকেই জিজ্ঞেস করা যে, কেন পুরুষ জাতিকে তিনি সৃষ্টি করলেন? নারী জাতিকেই বা সৃষ্টি করলেন কেন? উভয় জাতিকে সৃষ্টি করার পিছনে মৌলিক উদ্দেশ্যই বা কী?

পুরুষ এবং নারী : ভিন্ন ভিন্ন দুটি শ্রেণী
অধুনা বিশ্বে স্লোগান তোলা হচ্ছে যে, ‘নারী ও পুরুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’ পশ্চিমা সভ্যতার নিয়ন্ত্রণহীন দাপটে এ প্রোপাগাণ্ডা আজ পুরো বিশ্বে বিস্তৃত। কিন্তু তারা দেখেনি যে, পুরুষ এবং নারী উভয় শ্রেণী যদি একই প্রকৃতির কাজ করার জন্যে সৃষ্টি হতো, তাহলে সৃষ্টিগতভাবে উভয়ের শারীরিক কাঠামোর মাঝে ভিন্নতা থাকবে কেন? আমরা দেখি, একজন পুরুষ আর একজন নারীর শারীরিক কাঠামো এক নয়। তাদের মেজাজের মাঝেও রয়েছে অনেক তফাৎ। যোগ্যতার মাঝেও বিস্তর ফারাক বিদ্যমান।
আল্লাহ তাআলা উভয়ের সৃষ্টি কাঠামোর মাঝে মৌলিক তফাৎ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ‘নারী পুরুষের মাঝে ব্যবধান নেই’-এ কথা বলা স্বাভাবিক সৃষ্টি পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার নামান্তর। দর্শনকেও অস্বীকার করার নামান্তর। কারণ, উভয়ের মধ্যকার ব্যবধান আমরা তো স্বচক্ষেই দেখতে পাচ্ছি।
নতুন ফ্যাশন নারী পুরুষের এ স্বাভাবিক পার্থক্যকে যতই মিটাবার চেষ্টা করুক না কেন, যথা বর্তমান নারীরা পুরুষের মতো পোষাক পরা শুরু করেছে, পুরুষরাও নারীদের মতো পোশাক পরতে আরম্ভ করেছে। নারীদের চুলের ফ্যাশন পুরুষদের চুলের মতো; পুরুষদের চুলের ফ্যাশন নারীদের চুলের মতো। তবুও শারীরিক অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা উভয় ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী। উভয়ের জীবন-প্রকৃতি আলাদা, যোগ্যতার মাঝে রয়েছে যথেষ্ট স্বাতন্ত্র।

আল্লাহ তাআলাকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যম হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কেরাম
কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা কার কাছে জিজ্ঞেস করবো যে, পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে কেন? এবং নারীকেই বা সৃষ্টি কেন করা হয়েছে? তার স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে, যে সত্তা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে, তিনি পুরুষ এবং নারীকে কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করার মাধ্যম হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কেরাম। একথা  অবশ্যই স্বীকার্য যে, আল্লাহ তাআলা পুরুষকে নারীর তুলনায় অধিক বলবান করে সৃষ্টি করেছেন। আর সাধারণত ঘরের বাইরে কাজগুলো করার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তি ও পরিশ্রম ব্যতীত বাইরের কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয়। তাই পুরুষ জন্মের স্বাভাবিক ‎দাবি এটাই যে, পুরুষ আঞ্জাম দেবে বহিঃবিভাগ, আর নারীর জিম্মায় থাকবে আন্তঃবিভাগ।

হযরত আলী (রা) ও ফাতেমা (রা.)-এর মাঝে কর্মবণ্টন পদ্ধতি
হযরত আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা) সাংসারিক কাজ তাদের মাঝে বণ্টন করে নিয়েছিলেন। হযরত আলী (রা.) সামাল দিতেন ঘরের বহিঃবিভাগ,আর ফাতেমা (রা) সামলাতেন ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজ। তাই ঝাড়– দেয়া, সবকিছু পরিপাটি রাখা, চাক্কি চালিয়ে আটা পেষণ করা, পানি আনা, খাবার পরিবেশন করা ইত্যাদি ছিল হযরত ফাতেমা (রা)-এর কাজ।

নারী ঘরকন্নার কাজ সামলাবে
আপনাদের সামনে একটি আয়াতটি উল্লেখ করা হচ্ছে, সে আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল (সা)-এর পবিত্র বিবিগণকে সরাসরি এবং তাঁদের মাধ্যমে সকল মুসলিম নারীকে পরোক্ষভাবে সম্বোধন করেছেন। আয়াতটি হচ্ছে-

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى …(سورة الاحزاب : 33)

‘হে নারীরা, তোমরা স্বীয় ঘর-বাড়িতে স্থিরতার সাথে অবস্থান করো।’ আয়াতটিতে কথা শুধু এতটুকু নয় যে, নারীরা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে পারবে না; বরং আয়াতটির মাধ্যমে একটি মৌলিক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তা হচ্ছে, আমি (আল্লাহ) নারীজাতিকে সৃষ্টি করেছি যেন তারা ঘরে অবস্থান করে গৃহস্থালী কাজ আঞ্জাম দেয়।

কিসের লালসায় নারীদেরকে ঘরছাড়া করা হয়েছে?
‎যে সমাজে মানবজীবনের পবিত্রতার কোনো মূল্য নেই। যেখানে শালীনতা, সতীত্বের স্থলে চারিত্রিক উষ্ণতা, অশুচি বেহায়াপনাই মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত। বলাবাহুল্য, সে সমাজে নারী-পুরুষের মধ্যকার এ কর্মবণ্টন পদ্ধতি, তাদের পর্দা ও লজ্জাশীলতার কথা শুধু নিরর্থকই নয়, বরং সে সমাজের প্রগতির (!) পথে এক প্রকার  বাধাও বটে। এজন্যই সব ধরনের চারিত্রিক পবিত্রতা হতে স্বাধীনতা লাভের বাতাস যখন পশ্চিমা বিশ্বের সর্বত্র বইতে শুরু করল, তখন এহেন পরিস্থিতিতে পুরুষরাও নারীদেরকে গৃহাভ্যন্তরে ধরে রাখাটা ডবল বিপদ মনে করলো। কারণ, একদিকে তাদের উচ্চাভিলাসী চরিত্র কোনো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িতদ্ব গ্রহণ ব্যতীতই নারীদেরকে আস্বাদন করতে আগ্রহী ছিল। অন্যদিকে তারা তাদের বৈধ স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়াটা এক প্রকার বোঝা মনে করলো।
‎শেষ অবধি উক্ত উভয় সমস্যার যে নগ্ন সমাধান বের হলো, তারই সুন্দর ও নিষ্পাপ নাম হচ্ছে- ‘নারী স্বাধীনতার আন্দোলন’। যার মাধ্যমে নারীদেরকে একথা শেখানো হয়েছে, ‘তোমরা আজও চার দেয়ালে আবদ্ধ রয়েছ। অথচ বর্তমান যুগ হচ্ছে নারী স্বাধীনতার যুগ। সুতরাং এ বন্দি দশা থেকে মুক্তি লাভ করে তোমাদেরকেও পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবনের প্রতিটি ধাপে তোমাদের অংশীদার হতে হবে। আজও তোমাদেরকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলগুলো থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এখনও সময় আছে, তোমরা বের হয়ে এসো। জীবনযুদ্ধে তোমরা তোমাদের সম-অধিকার আদায় করে নাও। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সমূহ সম্মান, বড় বড় পদ…।’
ফলে অবলা নারী জাতি এসব আত্মপ্রবঞ্চনামূলক মুখরোচক স্লোগানে প্রভাবিত হয়ে স্বীয় গ্রহ থেকে বের হয়ে পড়ল। সাথে সাথে প্রচার মাধ্যমে শোর-চিৎকার করে নারী জাতির মনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেয়া হলো যে, শত বছরের গোলামির পর আজ তারা আজাদির স্বাদ পেয়েছে। তাদের কষ্ট-ক্লেশের অবসান ঘটেছে। মূলত এসব মুখরোচক স্লোগানের  আড়ালে তাদেরকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। অফিস গার্লসের মর্যাদা (!) দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য বাজারকে চিত্তাকর্ষক করে তোলার জন্যে তাদেরকে বানানো হয়েছে-সেলস গার্ল ও মডেল গার্ল। তাদের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোর সম্ভ্রমহানী ঘটানোর মাধ্যমে মার্কেটের প্রধান আকর্ষণ করে গ্রাহক ও ভোক্তা সাধারণকে আহ্বান করা হচ্ছে- এসো এবং আমাদের পণ্য কিনে নাও! এমনকি স্বভাবজাত ধর্ম ইসলাম যে নারীর মাথার উপর সম্মান ও শালীনতার মুকুট রেখেছিল, যাদের গলা পরানো হয়েছিল পবিত্রতা ও  সতীত্বের মালা, ঐ নারীকেই আজ অফিসের শোভাপণ্য ও পুরুষের অবসাদ নিরাময়কারী প্রশান্তিদায়ক বস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে…।
প্রিয় বন্ধুরা, তাই সময়ের প্রয়োজনে আজ আমাদের সচেতন হতে হবে। আল্লাহ তাআলা নারীজাতিকে অন্দরমহলের অভিভাবক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন গৃহ-কর্ত্রী হিসেবে। কিন্তু তারা যখন গৃহের বাইরে নেমে গিয়েছে, তখন ফলাফল দাঁড়িয়েছে এই যে, পিতার বাইরে মাতাও বাইরে, বাচ্চা হচ্ছে স্কুলে অথবা কোনো নার্সারীতে! অন্যদিকে ঘরে ঝুলছে তালা। এভাবেই একপর্যায়ে এসে পারিবারিক সংহতিতে ঘুণে ধরার সূচনা হয়। নারীসৃষ্টির উদ্দেশ্য তো ছিলো ঘরোয়া কাজ আঞ্জাম দেয়া। ছেলে-মেয়েরা তাদের কোলে প্রতিপালিত হবে। মায়ের কোল হচ্ছে শিশুর জন্যে প্রথম পাঠশালা। মায়ের কোল থেকেই তো শিশুরা ‘চরিত্র’ শিখবে, জীবন-পরিচালনায় সঠিক পথের দীক্ষা পাবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment