ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো সালাত। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে–
أَوّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَلَاتُهُ
অর্থ: কিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজেরর মাধ্যমে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৯৪৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮৬৬]
হযরত উমর (রাদিআল্লাহু তা’আলা আ’নহু) এর প্রসিদ্ধ বাণী–
إِنّ أَهَمّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصّلَاةُ. فَمَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا، حَفِظَ دِينَهُ. وَمَنْ ضَيّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করলো, যত্ন সহকারে তা আদায় করলো, সে তার দ্বীনকে হেফাযত করলো। আর যে তাতে অবোহেলা করলো, (দ্বীনের) অন্যান্য বিষয়ে সে আরো বেশি অবোহেলা করবে। [মুয়াত্তা মালেক, বর্ণনা ৬; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, বর্ণনা ২০৩৮]
নামাজ মূলত আল্লাহ্ প্রদত্ত এক মহান নিয়ামত। রাব্বুল আ’লামীনের এক বিশেষ উপোহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ও উন্নতো এক আদর্শ জীবনের অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকাশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য খুলে দেয় চিরোস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার।
নামাজ হচ্ছে হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত-ব্যাবস্থা। নামাজের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে।
নামাজ এমন এক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পূর্ণ যে, খাঁটি মুসোল্লী নামাযের বাইরের পরিবেশেও এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষের দৃষ্টিতে নামাজের ভাব-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। অদৃশ্য থেকে মূলতো নামাজই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তার রাত-দিনের সকল গতিবিধি। শয়তানের ধোঁকায় যদি মুসোল্লী কখনো কোনো অন্যায় বা অশোভনীয় কাজে লিপ্ত হতে চায় তখন নামাযের তরবিয়তে দীক্ষিতো বিবেক তাকে বলে, তুমিই বলো, একটু পরে যখন তুমি সালাতে তোমার মহান প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন কি তোমার এই ভেবে লজ্জাবোধ হবে না যে, কেমন কালো মুখ ও কলুষিতো হৃদয় নিয়ে তুমি আপন মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছ? যিনি অন্তর্যামী, তোমার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে সম্যক অবোগতো। যিনি ছাড়া তোমার আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি তোমার একমাত্র আশ্রয়দাতা, যাঁর সামনে তোমাকে বার বার দাঁড়াতে হবে। যার কাছে তোমার সকল চাওয়া-পাওয়া। প্রতিটি মুহূর্তে তুমি যাঁর মুখাপেক্ষী।
এগুলো জানার পরও কি তুমি তাঁর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে? সালাত এভাবে মুসোল্লীকে উপোদেশ দিতে থাকে এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়। আল্লাহ্ তা’আলার ঘোষণা–
اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ
নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরতো রাখে। *[সূরা আনকাবূত : ৪৫]
ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মতো অনুসারে আয়াতের মর্ম হলো, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে নামাজ। এ কারণে নামাজ যেন মুসোল্লীকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমার কৃতো ইবাদতসমূহের প্রকৃতো হকদার।
তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছো, যা তাঁর বড়োত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। [রুহুল মাআনী, ১০/৪৮২]
প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাযে প্রতি রাকাতে বান্দাহ বলতে থাকে–
مٰلِكِ یَوْمِ الدِّیْنِ (আল্লাহ) কর্মফল-দিবসের মালিক।
আর তাঁর স্মরণ হতে থাকে, তাকে কাল কর্মফল দিবসে মালিকের সামনে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং তাঁর নাফরমানী থেকে, তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচতে হবে। কোনো গোনাহ যদি নামাযের আগে হয় তাহলে তাঁর গোনাহের কথা স্মরণ হয় ও লজ্জাবোধ হয়; বান্দা অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার সংকল্প করে। তেমনি যদি কোনো গোনাহের নিয়ত থাকে তখন বান্দার মনে হয়, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো; কাল কিয়ামতের দিনও তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। তাহলে কীভাবে আমি নামাযের পর অমুক গোনাহ করার কথা ভাবতে পারি! এভাবে নামায বান্দাকে গোনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং কৃত গোনাহ থেকে পবিত্র করে।





Users Today : 281
Users Yesterday : 767
This Month : 14703
This Year : 186574
Total Users : 302437
Views Today : 22432
Total views : 3599175