নামাযের প্রায় ৯৬টি সুন্নাত
তাকবীরে তাহরীমার সুন্নাত সমূহ
(১) তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, (২) এ সময় হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা। (অর্থাৎ না একেবারে মিলিয়ে রাখবেন, না ফাক রাখবেন) (৩) উভয় হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলোর পেট কিবলামূখী রাখা। (৪) তাকবীরের সময় মাথা না ঝুঁকানো, (৫) তাকবীর শুরু করার পূর্বেই উভয় হাতকে কান পর্যন্ত উঠিয়ে নেয়া, (৬) কুনূতের তাকবীর ও (৭) দুই ঈদের তাকবীর গুলোতেও এগুলো সুন্নাত। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা) ইমামের উচ্চস্বরে اَللهُ اَكْبَرُ বলা, (৯) سَمِـعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه এবং (১০) সালাম বলা (প্রয়োজনের অতিরিক্ত আওয়াজকে উঁচু করা মাকরূহ) (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা) (১১) তাকবীরের পরপরই হাত বেঁধে ফেলা সুন্নাত। (অনেকেই তাকবীরে উলার পর হাত ঝুলিয়ে দেয় অথবা কনুই ঝুলিয়ে দেয় অথবা কনুই দু’টি পিছনের দিকে একবার ঝাঁকি দিয়ে তারপর হাত বাঁধে। তাদের এ কাজ সুন্নাতের পরিপন্থী) । (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২২৯ পৃষ্ঠা)
কিয়াম (দাঁড়ানোর) সুন্নাত
(১২) পুরুষের নাভীর নিচে হাত বাঁধা (এটা এভাবে করবেন, ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির জোড়ার উপর রাখবেন, কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলিকে কব্জির উভয় পার্শ্বে এবং অবশিষ্ট আঙ্গুলিকে হাতের কব্জির পিঠের উপর বিছিয়ে রাখবেন। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৯৪ পৃষ্ঠা) (১৩) প্রথমে সানা পড়া, (১৪) অতঃপর তা’আউয (অর্থাৎ اَعُوْذُ بِا للهِ مِنَ الشَّیْطٰنِ الرَّجِیْم) পড়া (১৫) অতঃপর তাসমিয়াহ (অর্থাৎ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْم) পড়া, (১৬) এ তিনটি সুন্নাত একের পর এক তাড়াতাড়ি বলা, (১৭) এসব কিছুকে নীরবে পড়া। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২১০ পৃষ্ঠা) (১৮) আমীন বলা, (১৯) সেটাকেও নীরবে বলা (২০) তাকবীরে ঊলার পরপরই সানা পড়া (প্রাগুক্ত) । (নামাযে তাআউয ও তাসমিয়াহ কিরাতের আনুসাঙ্গিক বিষয়। যেহেতু মুক্তাদির জন্য কিরাত নেই তাই তাআউয ও তাসমিয়াহও মুক্তাদীর জন্য সুন্নাত নয়। হ্যাঁ, যে মুক্তাদীর রাকাত বাদ পড়েছে সে আপন অবশিষ্ট রাকাত আদায় করার সময় তা পাঠ করবে। (ফতহুল কাদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা) (২১) “তাআউয” শুধুমাত্র প্রথম রাকাতে আর (২২) তাসমিয়াহ প্রত্যেক রাকাতের শুরুতে পড়া সুন্নাত। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা) রুকূর সুন্নাত, (২৩) রুকূর জন্য ‘اَللهُ اَكْبَرُ’ বলা। (ফতহুল কদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা) (২৪) রুকূতে তিনবার سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم বলা, (২৫) পুরুষদের জন্য উভয় হাঁটুকে হাত দ্বারা ধরা এবং (২৬) আঙ্গুল সমূহ ভালভাবে ছড়িয়ে রাখা, (২৭) রুকুতে পা সোজা রাখা, (২৮) রুকূতে পিঠকে এমনভাবে সোজা করে বিছিয়ে দেয়া যেন এ অবস্থায় তার পিঠের উপর পানি ভর্তি একটি পাত্র রেখে দিলে তা স্থির হয়ে থাকে এদিক সেদিক হেলবে না। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২৬৬ পৃষ্ঠা) (২৯) রুকূতে মাথা উঁচু নিচু না হওয়া, পিঠ বরাবর থাকা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “ঐ ব্যক্তির নামায যথেষ্ট নয় (অর্থাৎ পরিপূর্ণ নয়) যে রুকূ ও সিজদাতে পিঠ সোজা করে না।” (সুনানুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১২৬ পৃষ্ঠা) রহমতে আলম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আরও ইরশাদ করেন: “রুকূ ও সিজদা পুরোপুরিভাবে আদায় করো। আল্লাহ্ তাআলার শপথ! আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকেও দেখি। (মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, ১৮০ পৃষ্ঠা) (৩০) উত্তম হচ্ছে এটাই, اَللهُ اَكْبَرُ বলে রুকূতে যাওয়া যখন রুকূ করার জন্য ঝুঁকতে আরম্ভ করবেন তখন থেকে তাকবীর শুরু করে রুকূর শেষ সীমান্তে পৌঁছে তা সমাপ্ত করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা) এ দূরত্বটাকে পূর্ণ করার জন্য “اَللهُ”শব্দের لام কে দীর্ঘায়িত করুন।اَكْبَرُ এর ب কে এবং অন্যান্য হরফকে দীর্ঘায়িত করবেন না। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৭২ পৃষ্ঠা) যদি اٰللهُ বা اٰكْبَرُ বা اَكْبَارُ বলে তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা)
কওমার সুন্নাত, (৩১) রুকূ থেকে উঠার সময় হাত দুটি ঝুলিয়ে রাখা, (৩২) রুকূ থেকে উঠার সময় ইমামের জন্য سَمِـعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলা, (৩৩) মুক্তাদীর জন্য اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد বলা, (৩৪) একাকী নামায আদায়কারীর জন্য উভয়টি বলা সুন্নাত, رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد বললেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে কিন্তু رَبَّنَا এরপর “وَ” হওয়া উত্তম। সাথে اَللّٰهُمَّ মিলানো এর চাইতে উত্তম আর উভয়টি মিলানো সর্বাপেক্ষা উত্তম অর্থাৎ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد বলা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩১০পৃষ্ঠা) (৩৫) একাকী নামায আদায়কারী سَمِـعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলতে বলতে রুকূ থেকে উঠবেন, যখন একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন তখন اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد বলবেন। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)
সিজদার সুন্নাত
(৩৬) সিজদাতে যাওয়ার জন্য এবং (৩৭) সিজদা থেকে উঠার জন্য “اَللهُ اَكْبَرُ” বলা। (ফাতহুল কদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃষ্ঠা) (৩৮) সিজদায় কমপক্ষে তিনবার سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى বলা। (প্রাগুক্ত) (৩৯) সিজদাতে উভয় হাতের তালু জমিতে রাখা। (৪০) হাতের আঙ্গুল সমূহ মিলিতভাবে কিবলামূখী করে রাখা, (৪১) সিজদাতে যাওয়ার সময় প্রথমে উভয় হাঁটু, তারপর (৪২) হাত, অতঃপর (৪৩) নাক, এরপর (৪৪) কপাল জমিতে রাখা, (৪৫) সিজদা থেকে উঠার সময় এর বিপরীত করা অর্থাৎ (৪৬) প্রথমে কপাল, তারপর (৪৭) নাক, অতঃপর (৪৮) হাত, এরপর (৪৯) উভয় হাঁটু উঠানো, (৫০) পুরুষের জন্য সিজদাতে সুন্নাত হচ্ছে-বাহু পাজর হতে এবং (৫১) উরু দুটি পেট থেকে আলাদা রাখা। (ফতহুল ক্বাদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা) (৫২) উভয় হাতের কব্জি জমিনের উপর বিছিয়ে না দেয়া, তবে যখন কাতারে থাকবেন তখন বাহুকে পাজর থেকে পৃথক রাখবেন না।) (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা) (৫৩) সিজদাতে উভয় পায়ের দশটি আঙ্গুলের পেট এভাবে মাটির উপর লাগানো যেন দশটি আঙ্গুলই কিবলামূখী হয়। (ফতহুল কদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৬৭ পৃষ্ঠা)
জালসার সুন্নাত, (৫৪) দুই সিজদার মাঝখানে বসা। (এটাকে জালসা বলে) (৫৫) জালসার মধ্যে ডান পা খাড়া করে বাম পাকে বিছিয়ে তার উপর বসা, (৫৬) ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী রাখা, (৫৭) উভয় হাত উরুর (রানের) উপর রাখা। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা)
দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠার সুন্নাত
(৫৮) দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠার সময় হাতের পাঞ্জা ব্যবহার করা, (৫৯) উভয় হাঁটুর উপর হাত রেখে দাঁড়ানো সুন্নাত। অবশ্য দূর্বলতা বা পায়ে ব্যথা ইত্যাদি অপারগতার কারণে জমিনের উপর হাত রেখে দাঁড়ালেও ক্ষতি নেই। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা)
কা’দা বা বৈঠকের সুন্নাত
(৬০) পুরুষগণ ২য় রাকাতের সিজদা করে বাম পা বিছিয়ে, (৬১) উভয় নিতম্ব তার উপর রেখে বসা এবং (৬২) ডান পা দাঁড় করে রাখা। (৬৩) ডান পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে রাখা। (ফতহুল ক্বাদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা) (৬৪) ডান হাত ডান উরুর উপর এবং (৬৫) বাম হাত বাম উরুর উপর রাখা। (৬৬) আঙ্গু সমূহকে স্বাভাবিক অবস্থায় (NORMAL) রাখা (অর্থাৎ না অতিরিক্ত ছড়িয়ে রাখা, না একেবারে মিলিয়ে রাখা।) (প্রাগুক্ত)
(৬৭) আঙ্গুলগুলোর মাথা উভয় হাঁটুর পাশে রাখা। এ অবস্থায় হাঁটু আকড়িয়ে ধরা উচিত নয়। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ২৬৫ পৃষ্ঠা) (৬৮) আত্তাহিয়াতের শাহাদাতের সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা। এর পদ্ধতি হচ্ছে, কনিষ্ঠা ও তার পার্শ্ববর্তী আঙ্গুলকে বন্ধ করে নিন, বৃদ্ধাঙ্গুল ও মধ্যমা দ্বারা বৃত্ত তৈরী করুন আর لَآ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠান। এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলকে এদিক সেদিক নড়াচড়া করবেন না এবং اِلَّا বলার সময় নামিয়ে ফেলবেন। অতঃপর সাথে সাথে সমস্ত আঙ্গুলকে সোজা করে নিন। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৬৬পৃষ্ঠা) (৬৯) দ্বিতীয় বৈঠকেও ১ম বৈঠকের মত এবং ‘তাশাহহুদ’ পড়া (৭০) তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ পড়া। (ফতহুল ক্বাদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৭৪ পৃষ্ঠা) দুরূদে ইবরাহীম পড়া সর্বোত্তম। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৮৫ পৃষ্ঠা) (৭১) নফল ও সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদায় কা’দায়ে উলা বা প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ পড়া সুন্নাত। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা। গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩২২ পৃষ্ঠা) (৭২) দরূদ শরীফের পর দোয়া পড়া। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা)
সালাম ফিরানোর সুন্নাত
(৭৩) এই শব্দগুলো বলে দুইবার সালাম ফিরানো اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَةُ الله (৭৪) প্রথমে ডান দিকে, এরপর (৭৫) বাম দিকে চেহারা ফিরানো, (৭৬) ইমামের জন্য উভয় সালাম উঁচু আওয়াজে বলা সুন্নাত কিন্তু দ্বিতীয় সালাম প্রথমটির তুলনায় নিম্নস্বরে বলা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা) (৭৭) প্রথম বারের সালামে “সালাম” শব্দটি বলতেই ইমাম নামায থেকে বের হয়ে গেলেন যদিও “আলাইকুম” এখনো বলেননি। এ সময় যদি কেউ জামাআতে অংশগ্রহণ করে তবে তার ইকতিদা শুদ্ধ হবে না। অবশ্য সালামের পর যদি ইমাম সিজদায়ে সাহু করে তবে ইকতিদা শুদ্ধ হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, তাঁর উপর সিজদায়ে সাহু যদি ওয়াজীব হয়ে থাকে। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৫২ পৃষ্ঠা) (৭৮) ইমাম ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় সম্বোধনের ক্ষেত্রে ঐ মুক্তাদীর নিয়্যত করবে যারা তার ডান দিকে আছে আর বাম দিকে ফিরানোর সময় বাম দিকের মুক্তাদীর নিয়্যত করবে তবে কোন মহিলার নিয়্যত করবে না যদিও তারা জামাআতে শরীক থাকে। সাথে সাথে সালামের মধ্যে কিরামান কাতেবীন ও হিফাযতের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাদের সম্বোধনের নিয়্যত করা। তবে নিয়্যতের মধ্যে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করবেন না। (দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৩৫৪ পৃষ্ঠা) (৭৯) মুক্তাদীগণও প্রত্যেক দিকের সালামে ঐ দিকের মুক্তাদী ও ফিরিশতাদের নিয়্যত করবে আর যেদিকে ইমাম রয়েছে ঐ দিকের সালামে ইমামেরও নিয়্যত করবে আর যদি ইমাম ঠিক সামনা সামনি হয় তবে উভয় সালামে ইমামেরও নিয়্যত করবে এবং একাকী নামায আদায়কারী শুধু উল্লেখিত ঐ ফিরিশতাদের নিয়্যত করবে। (দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা) (৮০) মুক্তাদীর সমস্ত পরিবর্তন (অর্থাৎ-রুকূ সিজদা ইত্যাদি) ইমামের সাথে হওয়া।
সালাম ফিরানোর পরের সুন্নাত
(৮১) সালামের পর ইমামের জন্য ডান অথবা বামদিকে ঘুরে বসা সুন্নাত। তবে ডান দিকে ফিরে বসাই উত্তম এবং মুক্তাদীর দিকে মুখ করেও বসতে পারবে যদি শেষ কাতার পর্যন্ত তার সামনে (অর্থাৎ তাঁর চেহারার বরাবর) কেউ নামাযরত না থাকে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩০ পৃষ্ঠা) (৮২) একাকী নামায আদায়কারী মুখ না ফিরিয়ে যদি সেখানে কিবলামূখী বসেই দোয়া করে তবে তাও জায়েজ হবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৭ পৃষ্ঠা)
ফরযের পরবর্তী সুন্নাত নামাযের সুন্নাত সমূহ
(৮৩) যেসব ফরয নামাযের পর সুন্নাত নামায আছে সেগুলোতে ফরয আদায়ের পর সুন্নাত শুরু করার পূর্বে কোন কথাবার্তা না বলা। (এমন করলে যদিও সুন্নাত নামায গুলো আদায় হয়ে যাবে কিন্তু সাওয়াব কম হবে। সুন্নাতগুলো আরম্ভ করতে বিলম্ব করাও মাকরূহ। তদ্রুপ এ সময় বড় বড় ওযীফা পড়ারও অনুমতি নেই।) (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩১ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা) (৮৪) (ফরযের পর) সুন্নাতের পূর্বে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা উচিত অন্যথায় সুন্নাতের সাওয়াব কমে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৮১ পৃষ্ঠা) (৮৫) সুন্নাত ও ফরযের মধ্যভাগে কথা বললে বিশুদ্ধতম অভিমতানুসারে সুন্নাত বাতিল হয় না ঠিক কিন্তু সাওয়াব কমে যায়। এই হুকুম একইভাবে ঐসব কাজের বেলায়ও যা তাহরীমার পরিপন্থী। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ৫৫৮ পৃষ্ঠা) (৮৬) সুন্নাত সমূহ ঐ জায়গায় না পড়া বরং ডানে, বামে, সামনে বা পিছনে সরে আদায় করা কিংবা ঘরে গিয়ে আদায় করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৭ পৃষ্ঠা) (সুন্নাত আদায়ের জন্য ঘরে যাওয়ার কারণে যে সময়টুকু বিলম্ব হবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। স্থান পরিবর্তন করা বা ঘরে যাওয়ার জন্য নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা কিংবা তার দিকে মুখ করা গুনাহ্। যদি বের হওয়ার জন্য পথ পাওয়া না যায় তবে ঐখানেই সুন্নাত পড়ে নিন।)
সুন্নাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
যে ইসলামী ভাই ফরযের আগের সুন্নাত কিংবা পরের সুন্নাত পড়ে আসা-যাওয়া ও কথাবার্তার মধ্যে লিপ্ত হয়ে যায়, সে যেন আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর এই ফতোয়া থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। যেমন- একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন: “আগের সুন্নাত সমূহের জন্য উত্তম হচ্ছে, ওয়াক্তের শুরুর সময়ে আদায় করা, তবে শর্ত হচ্ছে, ফরয ও সুন্নাতের মধ্যভাগে কোন কথাবার্তা না বলা কিংবা নামাযের পরিপন্থি কোন কাজ না করা। আর পরের সুন্নাত আদায়ের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হচ্ছে, ফরযের সাথে মিলিয়ে পড়া। কিন্তু ঘরে ফিরে এসে পড়াতে যে সময়টুকু ব্যয় হয় তাতে অসুবিধা নেই, তবে অহেতুক কাজে সময় নষ্ট না করা উচিত। কেননা এরূপ করলে তা আগের পরের সুন্নাত উভয়টার সাওয়াবকে নষ্ট করে দেয়। এমনকি সেটাকে সুন্নাত পদ্ধতি থেকে বের করে দেয়।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, নতুন সংস্করণ খন্ড ৫ম, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
পূর্বে বর্ণিত ৮৬টি সুন্নাতের সঙ্গে ইসলামী বোনদের ১০ টি সুন্নাত
(১) ইসলামী বোনদের জন্য তাকবীর তাহরীমা ও কুনূতের তাকবীরের ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো কাঁধ বরাবর হাত উঠানো। (ফতহুল ক্বাদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা) (২) কিয়ামে মহিলা ও খুনছা অর্থাৎ হিজড়াগণ তাদের বাম হাতের তালু বক্ষের (সীনা) উপর ছাতিমের নিচে রেখে সেটার পিঠের উপর ডান হাতের তালু রাখা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৯৪ পৃষ্ঠা) (৩) ইসলামী বোনদের জন্য রুকূতে হাঁটুর উপর হাত রাখা ও আঙ্গুলগুলোকে খোলা না রাখা সুন্নাত। (ফতহুল ক্বাদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৫৮ পৃষ্ঠা) (৪) রুকূতে স্বল্প পরিমাণ ঝুকা (অর্থাৎ শুধু এতটুকু ঝুকা যেন হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে। পিঠ সোজা করবেন না এবং হাঁটুর উপর জোরও দেবেন না, শুধু হাত রাখবেন, হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবেন। উভয় পা সামনের দিকে একটু বাকা করে রাখবেন পুরুষদের মতো একেবারে সোজা করে রাখবেন না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা) (৫) সংকুচিত করে সিজদা করা (অর্থাৎ উভয় বাহু পাজরের সাথে) (৬) পেট রানের সাথে (৭) রান পায়ের গোছার সাথে এবং (৮) পায়ের গোছা মাটির সাথে মিলিয়ে দেওয়া (৯) ২য় রাকাতের সিজদা করে উভয় পা ডানদিকে বের করে দেয়া এবং (১০) বাম নিতম্বের উপর বসা। (ফতহুল কদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা)
নামাযের প্রায় ১৪টি মুস্তাহাব
(১) নিয়্যতের শব্দ সমূহ মুখে উচ্চারণ করা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা) (এটা অর্থবহ তখনই হবে যখন অন্তরে নিয়্যত থাকে অন্যথায় নামাযই হবে না।) (২) কিয়ামের মধ্যে উভয় পায়ের গোড়ালীর মধ্যভাগে চার আঙ্গুলের দূরত্ব থাকা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা) (৩) কিয়াম অবস্থায় সিজদার স্থানে (৪) রুকূ অবস্থায় উভয় পায়ের পিঠের উপর (৫) সিজদাতে নাকের দিকে (৬) বৈঠকে কোলের উপর (৭) প্রথম সালামে ডান কাঁধের দিকে এবং (৮) দ্বিতীয় সালামে বাম কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ২১৪ পৃষ্ঠা) (৯) একাকী নামায আদায়কারী রুকূ ও সিজদার মধ্যে বিজোড় সংখ্যায় তিনবারের বেশি (যেমন- ৫, ৭, ৯ ইত্যাদি) তাসবীহ বলা। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা) (১০) হিলইয়া ও অন্যান্য কিতাবে রয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, ইমামের জন্য তাসবীহ পাঁচবার বলা মুস্তাহাব। (১১) যার কাঁশি আসে তার উচিত যতটুকু সম্ভব কাঁশি না দেওয়া। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ২৭৭ পৃষ্ঠা) (১২) হাই আসলে মুখ বন্ধ করে রাখা। আর না থামলে ঠোঁটকে দাঁতের নিচে চেপে ধরা। এভাবেও যদি না থামে, তবে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাতের পিঠ এবং দাঁড়ানো ব্যতীত অন্যান্য অবস্থায় বাম হাতের পিঠ দিয়ে মুখ চেপে রাখুন। (‘হাই’ থামানোর উত্তম পন্থা হচ্ছে এ কল্পনা করা যে, তাজেদারে মদীনা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ও অন্যান্য নবীগণ عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ وَ السَّلَام এর কখনো হাই আসতো না, اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلَّ তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে।) (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা) (১৩) যখন মুকাব্বির حَیَّ عَلَی الفَلَاح বলে তখন ইমাম ও মুক্তাদী সকলেই দাঁড়িয়ে যাওয়া। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা) (১৪) কোন প্রতিবন্ধক ছাড়া জমিনে সিজদা করা। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৭১ পৃষ্ঠা)
ওমর বিন আব্দুল আযীযের আমল
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন: ‘হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আবদুল আযীয رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সবসময় জমির উপরই সিজদা করতেন। (অর্থাৎ সিজদার স্থানে জায়নামাজ ইত্যাদি বিছাতেন না।) (ইহ্ইয়াউল উলূম, ১ম খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা)





Users Today : 180
Users Yesterday : 317
This Month : 28732
This Year : 168209
Total Users : 284072
Views Today : 2968
Total views : 3348655