কুখ্যাত কাফের নবীজির পরম দুশমন আস ইবনে ওয়াইলসহ অন্যরা যখন নবীজিকে আবতার বা নির্বংশ বলে উপহাস করল এবং নবীজির পবিত্র হৃদয়ে ব্যাথা দিল।
তখন মাহবুবের মনের ব্যাথা দূর করার জন্য স্বয়ং রাব্বুল আলামীন উক্ত সূরাটি অবতীর্ণ করে এ শান্ত্বনা প্রদান করলেন- হে বন্ধু আপনি কেন এ দুষ্ট লোকের কথায় চিন্তিত হচ্ছেন। আমি তো আপনাকে কাউছার দান করেছি। যা হচ্ছে উভয়জগতের সমস্ত কল্যাণের চাবিকাঠি। আপনি নির্বংশ নন। বরং সেই নির্বংশ, সেই কুখ্যাত, সেই লেজকাটা। যেমন কবি বলেন-
خالق کل نے آپ کو مالک کل بنادیا
دونوں جہاں ہیں آپ کے قبضہ واختیار میں-
অর্থ: সমগ্র সৃষ্টির স্রষ্টা আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। উভয় জাহানই আপনার আয়ত্বাধীন এবং আপনার ইচ্ছাধীন।
সুতরাং হে হাবিব! আপনার প্রভূর উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন ও কুরবানি করুন। অতঃপর এ সূরার সর্বশেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদের কটুক্তির জবাবে বলেন-
ان شانئك هو الابتر
অর্থাৎ হে হাবিব! নিশ্চয় আপনার শত্রুই লেজকাটা বা নির্বংশ।
এ আয়াতে কারীমা দ্বারা নবীজির একটি শান প্রকাশ পেল যে, যদি কেউ নবীজির হৃদয়ে কষ্ট দেয়ার অপপ্রয়াস করে তখন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নবীজির পে জবাব প্রদান করেন।
এ ছাড়া আরো একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে গেল যে, শুধু আস ইবনে ওয়াইল নয় বরং যে ব্যক্তিই নবীজির শানে কটুক্তি, বেআদবি ও শত্রুতা পোষণ করবে সেই হবে নির্বংশ, সেই হবে লেজকাটা, সেই হবে সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে মেয়ে ধন সম্পদ কোন কিছুই কাজে আসবে না। তার নাম স্মরণ করার মত কেউ থাকবে না। তাকে আল্লাহর আযাব-গযব থেকে রা করার জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। সুতরাং সেই হবে নির্বংশ।
এ প্রসঙ্গে ইমাম তাবারী বলেন-
واولى الاقوال فى ذالك عندى بالصواب ان يقال- ان الله تعالى ذكره اخبر ان مبغض رسول الله صلى الله عليه وسلم هو الاقل الاذل المنقطع عقبه فذلك صفة كل من ابغضه من الناس وان كانت الايه نزلت فى شخص بعينه-
অর্থ: আমার নিকট এ ব্যাপারে সবচেয়ে সঠিক ও উত্তম কথা হল- আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াত দ্বারা এ সংবাদ প্রদান করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শত্রুগণই দুর্বল নির্বংশ ও সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। অতএব ইহা এমন প্রত্যেক লোকের চরিত্র বলে গণ্য হবে যারা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে শত্রুতা পোষণ করবে। যদিও আয়াতটি নির্দিষ্ট একজন লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল।
আস ইবনে ওয়াইল কিভাবে নির্বংশ
============
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন হে হাবিব! আপনার শত্র“ই আবতার বা নির্বংশ। এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়, তা হল আয়াতটি নাজিল হয়েছে আস ইবনে ওয়াইলের ব্যাপারে। তার তো পুত্র সন্তান ছিল। তাহলে সে কিভাবে নির্বংশ হল?
এর জবাব হল, এখানে ‘আবতার’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, সে সকল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত। অথবা অর্থ এই যে, তার সন্তানদেরকে ইসলামের হেদায়ত প্রদান করা হবে। যা দ্বারা পিতা ও পুত্রের মাঝে দ্বীনি মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। আর দ্বীনি মতানৈক্য মূলত: মৃত্যুরই শামিল। এজন্যই মুসলমানদের মিরাস, জানাযা, দাফন-কাপন তার কাফির পিতা অথবা পুত্র করতে পারবে না। বাস্তবিকই আসের পুত্র হযরত আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণ করে একজন সম্মানিত সাহাবি হয়েছিলেন। অতএব আস বিন ওয়াইল প্রকৃত পক্ষেই নির্বংশ।
শেষ কথা
=====
আল্লাহপাকের দরবারে লক্ষ কোটি শোকরিয়া। তাঁর অশেষ মেহেরবাণীতে ছাক্বিয়ে কাউছার নবী মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে সামান্য কিছু আলোচনা করেছি। শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর পিয়ারা হাবিবের রেজামন্দী হাসিলের জন্য। হে আল্লাহ তুমি আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল কর। বিনিময়ে কিয়ামতের কঠিন দিনে তোমার হাবিবের হাউজে কাউছার নসিব কর। আমিন।