“নবীজি (ﷺ) কি মুয়াবীয়া (রাঃ) কে বদদোয়া দিয়েছেন?”
__________________________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা সাহাবা ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বিরোধীতায় এতটাই সীমা অতিক্রম করেছে যে, সাহাবাদের ফাজায়েল সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে খুদ সাহাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। এবং তাদের মতানুসারে এমন একটি হাদীস সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে। কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখা যায় এসব দলিল আমাদের জাম’আতের ( আহলুস সুন্নাহ) কিছু নামধারী সুন্নি শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুসরণ, অনুকরণে সাহাবীদের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করছে। এবং তাঁরা এটা প্রমাণ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালায় যে, সহীহ মুসলিমের ঐ হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ ক্বাতীবে ওহী, উম্মাতের মামা সাইয়্যিদুনা আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে বদ’দোয়া তথা অভিশাপ দিয়েছেন। (মাআ’জাল্লাহ)।
এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে শিয়া, রাফেদ্বীরা মুহাদ্দীসদের বিরুদ্ধেও ঘৃণ্য মিথ্যাচার করেছেও বটে। যে সব ব্যক্তিরা ঐ হাদীসটি পেশ করে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর সমালোচনা বা তাকে গালমন্দ করছে! ওদের হেদায়াত কামনা এবং যারা এটা নিয়ে ভ্রান্তিজনক পরিস্থিতির স্বীকার, তাদের ভ্রান্ততা দূর করার সুবাদে আজকের এই লিখা। আল্লাহ সুবহানা ওয়াতআ’লা আমাদের সত্য গ্রহণে কবুল করুন। আমীন।
তাদের দেয়া হাদীস এবং তাঁর অনুবাদ নিম্নরূপ –
حدثنا : محمد بن المثنى العنزي ح ، وحدثنا : إبن بشار واللفظ لإبن* المثنى قالا ، حدثنا : أمية بن خالد ، حدثنا : شعبة ، عن أبي حمزة القصاب ، عن إبن عباس ، قال : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فتواريت خلف باب قال : فجاء فحطأني حطأة وقال : أذهب وإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل قال : ثم قال : لي أذهب فإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل فقال : لا أشبع الله بطنه قال : إبن المثنى قلت لأمية :ما حطأني قال : قفدني قفدة ، حدثني : إسحق بن منصور ، أخبرنا : النضر بن شميل ، حدثنا : شعبة ، أخبرنا : أبو حمزة سمعت إبن عباس يقولا : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فإختبأت منه فذكر بمثله.
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে হাদিস শরীফটি বর্ণিত তিনি বলেন আমি বাচ্চাদের নিয়ে খেলছিলাম প্রিয়নবী এসে আমাকে বললেন তুমি গিয়ে মুয়াবিয়াকে ডেকে আনো তখন আমি ডাকতে গেলাম এবং বললাম প্রিয়নবী আপনাকে ডাকছেন তখন তিনি জবাব দিলেন- আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা। প্রিয়নবীকে এটা বলাতে আবারো আমাকে পাঠালেন তখনও তিনি বললেন আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা অবশেষে প্রিয়নবী তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন “আল্লাহ তার পেট কখনো ভরাবেন না”।
( সহীহ মুসলিম -২৬০৪)
* হাদীসটির তাহকীক –
_____________________
* প্রথমত, উপরের হাদীসটি সহীহ তথা যথাযোগ্য সঠিক, কিন্তু এর অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার করা হয়েছে।
* দ্বিতীয়ত, শিয়া, রাফেদ্বীদের মূল বক্তব্য হল যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম এই হাদীসে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: কে ” لا أشبع الله بطنه ” বলে লা’নত তথা অভিশাপ দিয়েছেন। ( লানাতুল্লাহে আ’লাল কাযেবীন) মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত।
* হাদীসটির অনুবাদে মিথ্যাচার –
________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা হাদীসটিকে বানোয়াট এবং নিজেদের মত করে অনুবাদের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। মূলত, মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির মূল অনুবাদের সাথে শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুবাদের আকাশ’পাতাল বিস্তর পার্থক্য। চলুন প্রকৃত অনুবাদ দেখে নিই –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﺍﻟْﻌَﻨَﺰِﻱُّ، ﺡ ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺑَﺸَّﺎﺭٍ، – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻻِﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃُﻣَﻴَّﺔُ ﺑْﻦُ ﺧَﺎﻟِﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻟْﻌَﺐُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼِّﺒْﻴَﺎﻥِ ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺘَﻮَﺍﺭَﻳْﺖُ ﺧَﻠْﻒَ ﺑَﺎﺏٍ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﺠَﺎﺀَ ﻓَﺤَﻄَﺄَﻧِﻲ ﺣَﻄْﺄَﺓً ﻭَﻗَﺎﻝَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ – ﻗَﺎﻝَ – ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﻗُﻠْﺖُ ﻷُﻣَﻴَّﺔَ ﻣَﺎ ﺣَﻄَﺄَﻧِﻲ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﻔَﺪَﻧِﻲ ﻗَﻔْﺪَﺓً
অনুবাদ –
ইবনে আব্বাস রাযি: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , একবার আমি শিশুদের সাথে খেলছিলাম । এ সময় রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । আমি তখন দরজার আড়ালে লুকিয়ে রইলাম । অতঃপর নবীজি সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে স্নেহভরে চাপড় দিয়ে বললেন , যাও , মুয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো । ইবনে আব্বাস রাযি: গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: খাচ্ছেন। ইবনে আব্বাস রাযি: বলেন , অতঃপর আমি নবীজী সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এসে বললাম , তিনি ( মূয়াবীয়া রাযি:) খাচ্ছেন । তখন নবীজি সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আবার আমাকে বললেন , আবার যাও, মূয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। এবারও মুয়াবীয়া রাযি:কে তিনি খেতে দেখলেন, ইবনে আব্বাস রাযি: বলেন, এবারও আমি গিয়ে ফিরে এসে বললাম , তিনি খাচ্ছেন । এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন , “আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ।
( 2604 صحيح مسلم)
* হাদীসটির অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার –
_______________________________
উল্লেখ্য যে, এই হাদীসের ( আরবী মতনানুসারে) কোথাও লিখা নেই যে, ইবনে আব্বাস রাযি: হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে এটি বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল আপনাকে ডাকছেন এবং এর উত্তরে মুয়াবীয়া রাযি: নাকি জবাব দিলেন যে, আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা..! লানাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন, মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত। কতবড় মুনাফিক হলে অনুবাদে খেয়ানত করতে পারে তাঁর উপর ইবনে আব্বাস রাযি: এবং হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর উপর এতবড় তোহমৎ লাগাতে পারে। বরংচ, এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে
ওয়াসাল্লাম বলেন –
ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” .
ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ ”
যাও মুয়াবীয়াকে ডেকে নিয়ে আসো। ইবনে আব্বাস রাযি: গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: খাচ্ছেন, তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন যে, তিনি খাচ্ছেন। আবারও আল্লাহর রাসূল বলেন,
ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ
যাও আবারও ডেকে আসো… এবারও ইবনে আব্বাস রাযি: দেখেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: খাচ্ছেন। তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন, তিনি খাচ্ছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ বল্লেন, ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক।
অতএব, এই হাদীসে কোথাও প্রমাণ হয়না যে, হজরতে ইবনে আব্বাস রাযি: মুয়াবীয়া রাযি:কে গিয়ে এই খবর দিলেন, রাসূলুল্লাহ তাকে ডাকছেন বা এটাও প্রমাণ হয়না যে, মুয়াবীয়া রাযি: উত্তরে, ” আমি খাচ্ছি, এখন যেতে পারবোনা ” বলেছেন। এমন কোন বক্তব্যও হাদীসে উল্লেখ নেই। মূর্খরা হাদীস বুঝেনা ওরা এটাও দেখেনা যে, ইবনে আব্বাস রাযি: মুয়াবীয়া রাযি:কে ডাকেনি বরং তিনি হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে খেতে দেখে ফিরে আসেন। যদি হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে ইবনে আব্বাস রাযি: রাসূলুল্লাহ ডাকার ব্যাপারটা জানাতেন তবেঁ অবশ্যই হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর বক্তব্যটাও ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসে আনতেন বরং কথা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সালল্লহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এবং ইবনে আব্বাস রাযি: এর মাঝে। যেমনটা আমি তাহকীক করে দেখালাম।
অতএব হাদীসটিতে স্পষ্টতরভাবে বুঝা গেলো, হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকার ব্যাপারটা জানতেন না। কারণ ইবনে আব্বাস রাযি: মুয়াবীয়া রাযি:কে খেতে দেখে ফিরে আসেন। এবার হয়তোবা কৌতূহলজনক প্রশ্ন জাগতে পারে আপনাদের..! যদি আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: নাই বা জানতেন যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকছেন! তবেঁ কেনইবা আল্লাহর রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মুয়াবীয়া রাযি:কে ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ” বল্লেন কেন?
* হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাললল্লাহু আলাইহে মুয়াবীয়া রাযি:কে ” ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ” বলার কারণ –
_____________________________
* ইমাম নববী রহ: এই সম্পর্কে লিখেন –
ﺃَﻥَّ ﻣَﺎ ﻭَﻗَﻊَ ﻣِﻦْ ﺳَﺒِّﻪِ ﻭَﺩُﻋَﺎﺋِﻪِ ﻭَﻧَﺤْﻮِﻩِ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻤَﻘْﺼُﻮﺩٍ ﺑَﻞْ ﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﺟَﺮَﺕْ ﺑِﻪِ ﻋَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻓِﻲ ﻭَﺻْﻞِ ﻛَﻠَﺎﻣِﻬَﺎ ﺑِﻠَﺎ ﻧِﻴَّﺔٍ ﻛَﻘَﻮْﻟِﻪِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ ﻭَﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻻ ﻳﻘﺼﺪﻭﻥ ﺑﺸﺊ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﻘِﻴﻘَﺔَ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
যেসব হাদীসে ( সাহাবাদের ব্যাপারে) রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার যে ” বদ’দোয়া ” বুঝা যায়, মূলত সেগুলো ঐ’রকম বাক্য যা আরব লোকেরা অনর্থকতা বা রসিকতাছলে বলতো। যেমন, একটা হাদীসে কোন একজন সাহাবী রাযি:কে তালিম দিতে গিয়ে রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল বল্লেন, ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ তোমার ডান হাতের অমঙ্গল হোক বা একবার উম্মুলমুমীনিনা আম্মাজান আয়েশা রাযি: এর উদ্দিশ্যে রাসূলুল্লাহ বলেন, ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ বা ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ তোমার বয়স বেশি না হোক এবং সাইয়্যিদুনা মুয়াবীয়া রাযি: এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম বলেন “ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর পেট না ভরাক, মূলত এসব ঐরকম পর্যায়ের যে, আহলে আরবগণ যা ” বদদোয়া ” হিসেবে মুরাদ নিতো না।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫২)
* ইমাম নববী রহ: আরও লিখেন –
ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﻬِﻢَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﻥَّ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻣُﺴْﺘَﺤِﻘًّﺎ ﻟِﻠﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻠِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺧَﻠَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﺟﻌﻠﻪ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔﻻﻧﻪ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔِ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﺩُﻋَﺎﺀً ﻟَﻪُ
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীস থেকে এটাই বের করেছেন যে, হজরত মুয়াবীয়া রাযি: ” বদদোয়া ” এর মুখাপেক্ষী ছিলেন না। এটার একমাত্র কারণ হতে পারে যে, ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে ঐ বা’বে উল্লেখ করেছেন। তবেঁ ইমাম মুসলিম রহ: ছাড়া অধিকাংশ আহলে ইলমগণ এই হাদীসকে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব বা ফজিলত অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ আল্লাহ রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার এই বাক্যটি সত্যিকারে মুয়াবীয়া রাযি:র জন্য দোয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫৬)
* আল্লামা হাাফিজ ইবনে কাছীর রহ: মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির ব্যাপারে লিখেন –
ﻓَﺮَﻛَّﺐَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻝِ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔً ﻟِﻤُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ،
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে প্রথম হাদীসের তুলনায় পরে এনেছেন। এবং এই হাদীস থেকে সায়্যিদুনা মুয়াবীয়া রাযি: এর ফজিলত প্রমাণিত হয়।
( ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ 8/120 )
* ইবনে বাত্তাল রহ; এমন একটি রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যার লিখেন –
ﻫﻰ ﻛﻠﻤﺔ ﻻ ﻳﺮﺍﺩ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺗﺴﺘﻌﻤﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺪﺡ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻟﻠﺸﺎﻋﺮ ﺇﺫﺍ ﺃﺟﺎﺩ : ﻗﺎﺗﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺃﺟﺎﺩ
মূলত, এসব এমন বাক্য যা দ্বারা ” বদ’দোয়া ” মুরাদ নই। এগুলো শুধু মাত্র সুনাম করার অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন, কোন শায়ের যখন সুন্দর করে শে’র পড়ে তখন আরবীয়রা বলে যে, আল্লাহ তাকে মারুক! সে কত সুন্দর শে’র পড়লো।
( শরহে সহীহ বুখারী ৯/ ৩২৯)
* আবু মানসুর মুহাম্মদ বিন আহমদ রহ: এই সম্পর্কে লিখেন –
ﮬﺬﺍ ﻋﻠﯽ ﻣﺬﮬﺐ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﻓﯽ ﺍﻟﺪﻋﺎ ﻋﻠﯽ ﺍﻟﺸﯽﺀ ﻣﻦ ﻏﯿﺮ ﺍﺭﺍﺩۃﻟﻮﻗﻮﻋﮧ , ﻻ ﯾﺮﺍﺩ ﺑﮧ ﺍﻟﻮﻗﻮﻉ
এমন বাক্যগুলো আরবীয়দের মাঝে এভাবে প্রচলিত যে, যেখানে তাঁরা কারো ব্যাপারে বদদোয়ার মত শব্দ করে কিন্তু এখানে সেই ইচ্ছে ( বদদোয়া) থাকতো না অর্থাৎ বদদোয়া কবুল হওয়ার চিন্তা আনতো না।
( ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺍﻟﻠﻐﺔ ১/১৪৫ )
* লা’মাজহাবীদের শায়খুল মুহাদ্দীস জনাব আলবানী সাহেবও এই হাদীসের মূল রহস্য বুঝেছিলেন। শুধু বুঝলো না শিয়া খবিসরা। আলবানী এ সম্পর্কে লিখেন –
ﻭﻗﺪ ﻳﺴﺘﻐﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻔﺮﻕ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﺘﺨﺬﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻣﻄﻌﻨﺎ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ،ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻳﺴﺎﻋﺪﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ، ﻛﻴﻒ ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ
ﻛﺎﺗﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
কিছু গুমরাহ ফেরকারা এই হাদীসকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে হজরত মুয়াবীয়া রাযি:র নিকৃষ্টতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। যদিওবা এই হাদীসে এমন কোন কথা নেই যা ওনার সমালোচনার সৃষ্টি করবে। এই হাদীস থেকে মুয়াবীয়া রাযি: এর মন্দতা কিভাবে প্রমাণিত হবে..! যেখানে এটাই উল্লেখ্য যে মুয়াবীয়া রাযি: রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার কাতীবে ওহী ছিলেন।
( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻭﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻓﻘﻬﻬﺎ ﻭﻓﻮﺍﺋﺪﻫﺎ পৃষ্ঠা ৮২)
* সহীহ মুসলিমের আরেকটি হাদীস দেখলে বুঝতে আরেকটু সহজ হবে –
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻣَﻌْﻦٍ ﺍﻟﺮَّﻗَﺎﺷِﻲُّ – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻟِﺰُﻫَﻴْﺮٍ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﻤَﺮُ، ﺑْﻦُ ﻳُﻮﻧُﺲَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ ﺑْﻦُ ﻋَﻤَّﺎﺭٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﻧَﺲُ ﺑْﻦُ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋِﻨْﺪَ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻳَﺘِﻴﻤَﺔٌ ﻭَﻫِﻲَ ﺃُﻡُّ ﺃَﻧَﺲٍ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﺁﻧْﺖِ ﻫِﻴَﻪْ ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺒِﺮْﺕِ ﻻَ ﻛَﺒِﺮَ ﺳِﻨُّﻚِ ” . ﻓَﺮَﺟَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺗَﺒْﻜِﻲ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻴَّﺔُ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟْﺠَﺎﺭِﻳَﺔُ ﺩَﻋَﺎ ﻋَﻠَﻰَّ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨِّﻲ ﻓَﺎﻵﻥَ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮُ ﺳِﻨِّﻲ ﺃَﺑَﺪًﺍ – ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺮْﻧِﻲ – ﻓَﺨَﺮَﺟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣُﺴْﺘَﻌْﺠِﻠَﺔً ﺗَﻠُﻮﺙُ ﺧِﻤَﺎﺭَﻫَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻘِﻴَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺩَﻋَﻮْﺕَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺘِﻴﻤَﺘِﻲ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺯَﻋَﻤَﺖْ ﺃَﻧَّﻚَ ﺩَﻋَﻮْﺕَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨُّﻬَﺎ ﻭَﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﻗَﺮْﻧُﻬَﺎ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﻀَﺤِﻚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ” ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺃَﻣَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤِﻴﻦَ ﺃَﻥَّ ﺷَﺮْﻃِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﺃَﻧِّﻲ ﺍﺷْﺘَﺮَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﺃَﺭْﺿَﻰ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺮْﺿَﻰ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻭَﺃَﻏْﻀَﺐُ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻐْﻀَﺐُ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻓَﺄَﻳُّﻤَﺎ ﺃَﺣَﺪٍ ﺩَﻋَﻮْﺕُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺑِﺪَﻋْﻮَﺓٍ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻬَﺎ ﺑِﺄَﻫْﻞٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺠْﻌَﻠَﻬَﺎ ﻟَﻪُ ﻃَﻬُﻮﺭًﺍ ﻭَﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﻗُﺮْﺑَﺔً ﻳُﻘَﺮِّﺑُﻪُ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
সাইয়্যিদুনা আনাস রাযি: হতে বর্ণিত,
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা যিনি হজরত আনাস রাযি: এর মাতা ছিলেন। ওনার ঘরে একটা মেয়ে ছিলো। রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ঐ মেয়েটাকে দেখে বল্লেন, এটাকি তুই ? তুই তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস..! তোর বয়স না বাড়ুক। এটা শোনামাত্র ঐ মেয়েটি কান্না করতে করতে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহার কাছে গেলো। উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, বেটি কি হয়েছে? মেয়েটি বল্লো আমার ব্যাপারে রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসলল্লাম বদদোয়া করেছেন যে, আমার বয়স যাতে না বাড়ে..! এখন তো আমার বয়স আর কখনই বাড়বেনা। তা শুনে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা তাড়াতাড়ি নিজের চাদর মাটির সাথে লাগাতে লাগাতে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার সামনে হাজির। রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন..উম্মে সুলাঈম.! কি হলো?
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলআল্লাহ.! আপনি কি ঐ মেয়েটিকে বদদোয়া দিয়েছেন যে, যাতে তাঁর বয়স না বাড়ুক? তখন রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মুচকি হেঁসে উত্তর দিলেন, হে উম্মে সুলাঈম.! আপনি কি জানেন? আমি আমার আল্লাহর কাছ হতে এই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি এবং দোয়া করেছি যে, আমি একজন মানুষ এবং মানুষেরই মত খুশি হই আবার অখুশি। যদিওবা, যে কারোই জন্য বদদোয়া করবো, যেটার সে মুখাপেক্ষী নই তবেঁ ঐ বদদোয়াটি তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
এবং ঐ বদদোয়াটি রোজ কেয়ামতের দিন নিজেদের মুক্তি লাভের ওসীলা হিসেবেও সাব্যস্ত হবে।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০৩)
* সহীহ মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীস লক্ষ করা যায় –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﺮِﻳﺮٌ، ﻋَﻦِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﻀُّﺤَﻰ، ﻋَﻦْ ﻣَﺴْﺮُﻭﻕٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺟُﻼَﻥِ ﻓَﻜَﻠَّﻤَﺎﻩُ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻻَ ﺃَﺩْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒَﺎﻩُ ﻓَﻠَﻌَﻨَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَّﻬُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﺮَﺟَﺎ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦْ ﺃَﺻَﺎﺏَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻫَﺬَﺍﻥِ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻌَﻨْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَﺒْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ” ﺃَﻭَﻣَﺎ ﻋَﻠِﻤْﺖِ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺭَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﺑِّﻲ ﻗُﻠْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻓَﺄَﻯُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻟَﻌَﻨْﺘُﻪُ ﺃَﻭْ ﺳَﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻓَﺎﺟْﻌَﻠْﻪُ ﻟَﻪُ ﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﺃَﺟْﺮًﺍ
উম্মুল মুমীনিনা হজরত আয়শা রাযি:আনহা হতে বর্ণিত যে, দু’জন ব্যক্তি রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসালল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন, এবং রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার সাথে কি জেন আলাপ করলেন( রাবীর মতে)। আমি ওসব কথা বুঝতে পারিনি। ঐ’দুজন ব্যক্তির কথাগুলোর কারণে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার রাগ আসলো এবং তিনি ঐ ব্যক্তিদের বদদোয়া দিলেন। যখন ঐ দু’জন ব্যক্তি রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার দরবার হতে চলে গেলেন তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলআল্লাহ..! এতটা কষ্টও কি কেও পায়, যতটা সে পেয়েছে? রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বল্লেন, কি বুঝাতে চাও? আমি ( রাবী) আরজ করলাম, আপনি ওনাদের বদদোয়া করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বল্লেন, তোমার কি ঐ অঙ্গীকার মনে নেই.! যেটা আমি আমার আল্লাহর সাথে করেছি? আমি আমার আল্লাহর সাথে এই অঙ্গীকারের আবদ্ধ হয়েছি যে, হে আল্লাহ..! আমি একজন মানুষ.! যদি আমি কোন মুসলমানের জন্য বদদোয়া করি তবেঁ সেটা তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হয়ে যায়।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০০)
* অতএব.! প্রমাণিত হল যে, যদি রাসূল সাললল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রেগে গিয়ে কোন সাহাবীর জন্য বদদোয়া করেন তবেঁ ঐ বদদোয়াটি ঐ সাহাবীর জন্য মাঘফেরাতের ওসীলা হয়ে দাঁড়াবে। ( সুবহানআল্লাহ)
আর এটাও স্পষ্টতর যে, হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার রাগ বা নারাজ হওয়ার কোণ দলিলও নেই। আচ্ছা, যদি এটা কিছুক্ষণের জন্য মানাও হয় যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রেগে গিয়ে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে বদদোয়া করেছেন.! তবুও উপরে উল্লেখিত সহীহ হাদীসগুলোর ভিত্তিতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব তথা ফজিলতও প্রমাণিত হয়।
মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালীসিতে তেও ঐ হাদীসের বর্ণনাও ঠিক এমনই এসেছে। ( মুসনাদ ২৮৬৯ নং হাদীস)
* দেখুন মুসনাদে আবি দাউদে লিখা আছে –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳُﻮﻧُﺲُ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻫِﺸَﺎﻡٌ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻋَﻮَﺍﻧَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌَﺚَ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ ………
রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর প্রতি এই বার্তা পাঠালেন যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামাকে যাতে মুয়াবীয়া রাযি: ওহী লিখতে সহযোগীতা করে।
( ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﺍﻟﻄﻴﺎﻟﺴﻲ হাদীস ২৮৬৯)
অর্থাৎ, ঐ হাদীস হতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর ” কাতীবে ওহী ” হওয়া প্রমাণিত হয়। এটি ওনার জন্য একটি বড় ফজিলত বা মানাকেবের দিকে নির্দেশ করে। এজন্য….
* ইমাম ইবনে আসাকীর রহ: এই হাদীসের ব্যাপারে লিখেন –
ﻭﺃﺻﺢ ﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ
হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব বা ফজিলত সম্পর্কে সবচেয়ে সহীহ হাদীস হল এটিই।
( তারিখে দামেস্ক, ইবনে আসাকীর, ৫৯/১০৬)
* পরিশেষে, মোদ্দাকথা এটাই যে, হজরতে ইবনে আব্বাস রাযি: কর্তৃক হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ডাকার কারণ তিনি ” ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ ” ওহী লিখক। এবং এই কাজের জন্যই তিনি হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:এর খোজ নেন। এবং হাদীসে উল্লেখ্য
“ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ ”
বাক্য দ্বারা আমীরে মুয়াবিয়া রাযি: এর প্রতি বদদোয়াও প্রমাণ হয়না বরং এসব এমন বাক্য যা ইমাম নববী রহ:, ইবনে বাত্তাল রহ:, ইবনে কাসীর, ইবনে আসাকীর প্রমুখ ইমামগণ এটাকে আহলে আরবদের রসিকতা বা কৌতুকপূর্ণ বাক্যের সাথে নিসবত করেছেন যেরুপ উপরে উল্লেখিত দলিলগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এত স্পষ্টতর প্রমাণ থাকার পরও যদি কেও এই হাদীসকে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:এর মানাকেব এবং ফাজায়েলের দলিল না মানে, তবেঁ তাঁর চাইতে বড় জালেম আর মূর্খ দুনিয়াতে নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়া, রাফেদ্বীদের মিথ্যাচার হতে হেফাজত করুন। আমীন।
______________________
Sifat Sultan Alif.
Researcher – Ala Hazrat Research Academy.