দু’আ’র কবুলের রহস্য

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আপনি কি মনে করেন আপনার দুআ কবুল হচ্ছে না..!

প্রিয় নবী ﷺ বলেনঃ কোন মুসলিম দু‘আ করার সময় কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু‘আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির একটি দান করেন- (১) হয়তো দ্রুত (ইহকালেই) তার দুআ কবুল করেন, (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং (৩) অথবা অনুরূপ কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূর করে দেন। সাহাবীগণ বললেন, তবে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি ﷺ বললেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ ২২৫৯, ইমাম বুখারী রহঃ আল আদাবুল মুফরাদ ৭১৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৩, মুসনাদে আহমাদ ১১১৩৩)

সুতরাং দুনিয়াবী কোন বিষয়ের জন্য দুআ করার পরও যদি তার ফল আমরা না পাই তাহলে আমরা নারাজ

হব না বরং কিয়ামতের ময়দানে এর ফল পাওয়ার আশায় আরো বেশি খুশি হব। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ কিয়ামত দিবসে বিপদে পতিত (ধৈর্যধারী) মানুষদের যখন প্রতিদান দেয়া হবে, তখন (পৃথিবীতে) বিপদমুক্ত মানুষেরা আকাঙ্ক্ষা (পরিতাপ) করবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের চামড়া কেটে টুকরা টুকরা করে দেয়া হত। (মিশকাত ১৫৭০,

সূনান আত তিরমিজী ২৪০২)

এছাড়াও দুআ করাও একটি ইবাদত।

নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আল্লাহ’র বাণী “তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”— (সূরা মু’মিন ৬০) প্রসঙ্গে বলেনঃ দু’আ-ই একটি ইবাদত। তারপর তিনি পাঠ করলেনঃ “তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকারবশে আমার ইবাদতে বিমুখ, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে” (সূরা মু’মিন/গাফির ৬০)। (সূনান আত তিরমিজী ২৯৬৯, সূনান আবূ দাঊদ ১৪৭৯, সূনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, মিশকাতুল মাসাবীহ ২২৩০)

আবার কিছু কারণ রয়েছে যার দরুণ দুআর ফল পাওয়া যাবে না অর্থাৎ দু’আ কবুল করা হবে না। যেমনঃ আল্লাহ’র প্রশংসা (হামদ) ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর উপর দরুদ (ও সালাম) না পড়া, অমনোযোগী হয়ে দুআ করা… এছাড়াও যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করুক তার উচিত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু‘আ করা।

একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ (মসজিদে) বসা অবস্থায় ছিলেন। সে সময় জনৈক লোক মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করল, তারপর বলল, “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর”। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ হে নামাজী! তুমি তো তাড়াহুড়া করলে। যখন তুমি নামায শেষ করে বসবে সে সময় শুরুতে আল্লাহ’র যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং আমার উপর দরূদ (ও সালাম) প্রেরণ করবে, তারপর আল্লাহ’র নিকটে দু’আ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর অপর লোক এসে নামাজ আদায় করে প্রথমে আল্লাহ’র প্রশংসা করল, তারপর নবী ﷺ এঁর উপর দরূদ পেশ করল। নবী ﷺ তাকে বললেনঃ হে নামাযী! এবার দুআ কর কবুল করা হবে।

(সূনান আত তিরমিজী ৩৪৭৬)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ বান্দার (প্রতিটি) দু‘আ কবুল করা হয়, যে পর্যন্ত না সে গুনাহের কাজের জন্য অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য এবং তাড়াহুড়া করে দু‘আ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেন, (দু‘আ করে) এমনভাবে বলা যে, আমি (এই) দু‘আ করেছি। আমি (তার জন্য) দু‘আ করেছি। আমার দু‘আ তো কবুল হতে দেখছি না। অতঃপর সে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দু‘আ করা ছেড়ে দেয়। (সহিহ মুসলিম ৬৮২৯, মিশকাতুল মাসাবীহ ২২২৭)

বুখারীত এভাবে এসেছে,

নবী ﷺ বলেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু‘আ কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবুল হলো না। (সহীহ বুখারী ৬৩৪০)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ’র কাছে দুআ কর। তোমরা জেনে রাখ যে, নিশ্চয় উদাসীন ও অমনোযোগী মনের দুআ আল্লাহ কবুল করেন না। (সূনান আত তিরমিজী ৩৪৭৯)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু‘আ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ ২২৪০, সূনান তিরমিযী ৩৩৮২)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment